Friday, March 17, 2017

ভালবাসা শিরোনামহীন লিখেছেন- sesh rater adhar

ভালবাসা শিরোনামহীন
ভালবাসা শিরোনামহীন
লিখেছেন- sesh rater adhar

- আমি একটা কথা বলব।

বলে হঠাৎ করে মিষ্টির সামনে এসে বসল হৃদ্য।

- এতক্ষণও তো বলতেছিলা।
- হ্যাঁ, অন্য কথা।
- আচ্ছা বল।

মিষ্টি অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাল হৃদ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি। যে হাসি খুব খেয়াল করে না তাকালে দেখা যায় না। হৃদ্য অনেক খেয়াল করেই তাকিয়েছে তাই চোখে পরেছে। অনেক দিন থেকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না কথাটা। রিলেশন হয়ে গেল আজ ৩ মাস, এখন পর্যন্ত বলা হল না। ছিঃ,ছিঃ !কি লজ্জার কথা।

মিষ্টি বলল- কি হল? বল। অমন গাধার মত তাকিয়ে আছ কেন? আমাকে দেখনি কখনও?
- হ্যাঁ বলব। একটু সাহস দাও না আমাকে। খুব ভয় লাগছে।
- খুব সিরিয়াস কোন কথা?
- হ্যাঁ । আমি তোমাকে অনেক ভয় পাই।
-এইটাই তোমার কথা?
- না।
- আসো বুকে ফুঁ দিয়ে দেই। ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না? আমি তো আর তোমাকে খেয়ে ফেলব না। বল। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে।
- i love you.

মিষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে রইল হৃদ্যর দিকে। কথাটা পুরোপুরিও মুখ থেকে বের হয়নি হৃদ্যর, বলার মাঝে আটকে যাচ্ছিল। সামনাসামনি আজ প্রথম বলল ভালবাসার কথা। মোবাইল এ মেসেজ এ কত কিছু বলে, সামনে আসলে চুপ। কোন কথাই বের হয় না।

মিষ্টি বলল- এই কথাটা বলার জন্য এত কিছু?এমন পাগল কেন তুমি? জানো, তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার চেয়ে মায়া হয় অনেক বেশি। তুমি কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতন আচরন করো।সামনাসামনি i love you বলবা, তাও এত কিছু....... পাগল একটা।

মিষ্টি হৃদ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হৃদ্য হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠোঁটের কোণায় সেই হাসি নিয়ে বলল- " এই, উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যাব।"

হৃদ্য উঠে বলল-আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- আমি জানি। চল এখন।

দুজন হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা ধরে।আশেপাশে অনেক মানুষ।কেউ কেউ ওদের দিকে আড়-চোখে তাকাচ্ছে, কেউ কেউ ফ্যালফ্যাল করে। সুন্দরী মেয়ের পাশে ছেলে মানুষ দেখলেই মানুষ ভাবে, কি দেখে এই ছেলের সাথে প্রেম করেছে? তার চেয়ে ভাবনাকর্তা নিজেই কত সুন্দর !!!!

- হৃদ্য, তুমি যাও এখন। রাত হয়ে যাবে বাসায় যেতে তোমার। আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
- আমি আসি সাথে?তোমার হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত যাই?
-না না। ওখান দিয়ে বাজে ছেলেরা বসে থাকে। তোমার সাথে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
- একা থাকলে আরও বেশি বলবে। চল আমি যাই।
- লাগবে না।
- আরে লাগবে। চল তো।

হৃদ্য মিষ্টির সাথে ওর হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত গেল। রাস্তায় বখাটেগুলো ছিল। কয়েকটা বাজে কথাও বলল। সবগুলো গা জ্বালা করার মত। মিষ্টিকেই বলেছে কথাগুলো।

হোস্টেলের সামনে এসে হৃদ্যকে বলল মিষ্টি - শুধু শুধু আসলা তুমি। এসে কি হল? ঐ ছেলেগুলো বাজে কথা বলল আর তুমি বেকুবের মতন শুনলা। তুমি তো দেখতে একেবারে পালোয়ান বীরপুরুষের মতন না যে তোমাকে দেখে কিছু বলবে না ওরা। তুমি ইচ্ছা করলেও ওদের কিছু করতে পারবা না।মানা করলাম, তারপরও আসলা।

হৃদ্যর নিজেকে কিছু সময়ের জন্য অনেক ছোট মনে হতে লাগল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল শুধু।

- আমি দেখতে পালোয়ানের মতন হলে তুমি খুব happy হতে?
- সব মেয়েই চায় তার বয়ফ্রেন্ড এর তাকে সেভ করার মতন, security দেবার মতন abilty থাকুক। তোমার মতন হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শুধু কোথাও বসে থাকতেই ভাল লাগে, কোথাও চলাফেরা করতে না।
- তুমি কি আমাকে নিয়ে unhappy?
-না যা হবার হয়ে গেছে। আমি তোমাকে আমার লাইফ এ মেনে নিছি। যাও বাসায় যাও।
- না বাসায় যাব না।ভার্সিটি খোলা , একেবারে হল এ যাব।
- আচ্ছা দেখে শুনে যেও ।

হৃদ্য চলে গেল।
--------------------------------------------

মিষ্টির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আগে থেকেই হৃদ্যর উপর রাগ উঠে ছিল। তার উপর আবার মোবাইল রিসিভ করছে না। এমনি সারাদিন ২৪ ঘণ্টা মিষ্টিকে কল করতে থাকে হৃদ্য। আজ কি হল? না দিচ্ছে কল না ধরছে। কি বলেছে সন্ধায়? তাতেই এত রাগ করতে হবে? যাহ্‌ না ধরল। মিষ্টিও কথা না বলে থাকতে পারবে।মিষ্টি মোবাইলটা বন্ধ করে রাখল।

হৃদ্য হাসপাতালের বেড এ শুয়েই ডাক্তারকে বলল- ডাক্তার আংকেল, আমার মোবাইলটা ?
- রেস্ট নিন। হাত পা নাড়াতে পারছেন না, মোবাইল চাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুমান।
- please, আমার মোবাইলটা খুব দরকার। একটু দিন না।

ডাক্তার টেবিল এর উপর থেকে মোবাইলটা হৃদ্য কে দিল। মোবাইল পেয়েই মিষ্টিকে ফোন করল। switched off মোবাইল। অনেক বার চেষ্টা করল। নাহ, মোবাইল বন্ধ। পরে একটা মেসেজ করল মিষ্টিকে।

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠল সকাল ১১ টার দিকে। মোবাইলটা অন করল। সাথে সাথেই হৃদ্যর মেসেজ- আমি হাসপাতালে । তোমাদের medical college hospital এ। একটু দেখতে আস না আমাকে ।আব্বু আম্মুকে ভয়ে বলিনি। তুমি please আসো। আমার উপর রাগ করে থেকো না, প্লিজ।

মিষ্টি কিছু সময়ের জন্য অনুভুতিশূন্য হয়ে গেল। তারপর তারাতারি হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখল হৃদ্য বেড এ শুয়ে আছে। নাক, গাল, বাম হাত, ডান পা, মাথায় ব্যান্ডেজ। আর ডান হাত দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মাথার কাছে ওর বন্ধু শিমুল বসে বসে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে হৃদ্যর পাশে বসল।কাঁদোকাঁদো গলায় বলল- কি হইছে তোমার? কিভাবে এই অবস্থা?

হৃদ্য মুখ থেকে আপেল বের করে চুপ করে রইল। মিষ্টি বলল- কি হল? কথা বল না কেন?

শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দাঁড়াল। বলল- তোমরা কথা বল। আমি আসতেছি।

মিষ্টি আবারও জিজ্ঞাসা করল- বল,প্লিজ কি হইছে?কিভাবে?

হৃদ্য এতক্ষণে মুখ খুলল- তোমাকে যে ছেলেগুলো বাজে কথা বলেছিল, তাদের মারতে গিয়েছিলাম। একটাও মারতে পারি নায়। ওরাই উল্টা আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিসে। এলাকার মানুষ এনে পরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিছে।
- তোমাকে ওদের সাথে মারামারি করতে যেতে বলছে কে?
- ওরা তোমাকে বাজে কথা বলল আর আমি শুনব? তুমিই তো বলছ যে তোমার সাহসী বীরপুরুষ ছেলে পছন্দ।আমি না মারতে পারলাম, সহ্য তো করি নায় কথাগুলো। কাপুরুষের মত চলে আসি নায় ওদের ভয়ে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার জন্য সব করতে পারব।বিশ্বাস করো আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি তো একা ওরা অনেকগুলা ছিল,সবগুলোর পাঠার মত শরীর,তাই মেরে দিছে আমাকে । আমাকে ছেড়ে যেও না, please.

মিষ্টি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।দু চোখ দিয়ে টলটল পানি করে পড়ছে।
মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বলল-তুমি এমন পাগল কেন?আমি কি না কি বলছি তাতেই তুমি এমন করবা? তোমার যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যেত? আমাকে এত ভালবাস তো কষ্ট দাও কেন?আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি জানি তুমি অনেক ভাল। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক happy. আমাকে মাফ করবা না বল? আমি অমন কথা আর কখনও বলব না। আর এমন পাগলামি করো না !!!!
- এই কাঁদছ কেন? আমার খারাপ লাগছে।
- আচ্ছা কাঁদবো না আর। তুমি আমাকে শুধু ভালবাসবা অনেক বেশি বাসবা, তাতেই হবে। বাসবা না বল?
- হ্যাঁ, বাসব।
- তাহলে i love you বল।
- i love you.তুমি আমকে ছেড়ে যাবে নাত কখনও?
- কখনও না।

মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বসে রইল।হৃদ্য বলল- আপেল খাব। হাত ছাড়ো।
- না ছাড়ব না। আমি খাইয়ে দেই।এই যে হাত ধরেছি, সারাজীবনের জন্য। আর কখনও ছাড়ব না।

ღjrk
এই সময়ে ৫/১৮/২০১৩ ০১:১০:০০ AM 

No comments:

Post a Comment