Thursday, March 30, 2017

Friday, March 17, 2017

kichu valobasar golpo

https://tinyurl.com/k5226ft

চমকে যাওয়া ভালোবাসা লিখেছেনঃ Mahmud Hasan

চমকে যাওয়া ভালোবাসা
লিখেছেনঃ Mahmud Hasan
মেয়েটা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভাস্কর্যের সামনে দাড়িয়ে আপন মনে নখ কেটেই যাচ্ছে। ঘন ঘন পরছে চোখের পলক। কেমন যেন একটা অস্থির অস্থির ভাব। ভিড়ের একপাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে দেখলে মনে হবে অসহায় চোখে কান্না কান্না ভাব। ভাস্কর্যের বেদীতে দাড়িয়ে নেতাগোছের একটা ছেলে চিৎকার করে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বলছে। ভিড়ের কোলাহলের মাঝে নিজের রেজাল্টটা শুনতে পেল না মেয়েটা। আস্তে আস্তে ভিড় কমে এলো। একটু দ্বিধা, একটু জড়তা কণ্ঠে মেয়েটা ছেলেটার কাছে রেজাল্ট জানতে চাইল। ছেলেটা তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে জানালো সে চান্স পায়নি। কান্না লুকিয়ে মেয়েটা রিক্সায় উঠে গেল। বাসার সামনে রিক্সা থেকে নেমে দেখল সেই ছেলেটিও রিক্সা থেকে নামছে। রিক্সা থেকে নেমেই বলল, আপনি চান্স পেয়েছেন। মেয়েটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিক্সায় উঠে চলে গেল। মেয়েটার মনে হল ছেলেটাকে একটা ঘুষি হাকায়। মাথায় সমস্যা না থাকলে কেউ এমন করে।
এতক্ষন যে পাগল ছেলের পাগলামির কথা বলছিলাম সে ভিক্টোরিয়াতেই পড়ে। বয়সে আমার এক ইয়ার সিনিয়র। প্রথম দিনে ওকে আমার পিছে পিছে বাসায় আসতে দেখে মনে হয়েছিল আর দশটা ছেলের মতই গায়েপরা স্বভাবের। ১৫দিন পর আমাদের ক্লাস শুরু হল। প্রথম দিনই দেখলাম ক্লাসের মধ্যে একদল ছেলে মিছিল নিয়ে হাজির। আর মিছিলের নেতা সে। এরপর প্রায়ই কলেজে দেখা হতো। কিন্তু এমন ভাব করতো যেন প্রথম দেখেছে। সিনিয়র ভাই বলে সালাম দিতে হতো। একদিন আমাকে ডেকে বলল কোন হেল্প লাগবে কিনা। আমাকে সব নোট, চোথা যোগাড় করা, ভাল টিচারের কাছে নিজে যাওয়া, সবই করে দিল। আমার ধারনা ছিল ও আমাকে পছন্দ করে। কিছুদিন পর দেখলাম সবাইকেই একইরকম হেল্প করছে। ক্যাম্পাসের সবাই ওকে পছন্দ করতো। সারাটা দিন মিটিং, মিছিল নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। ফোন করলে ৫ মিনিটের বেশি কথা বলার সময় হতো না।
ওকে প্রথম দেখায় রাগী বলেই মনে হবে। কিন্তু মনটা একেবারে শিশুর মত। ওর কাছে কেউ সাহায্য চেয়ে কাউকে ফেরত যেতে দেখিনি। কাউকে কখনো না বলত না। ওর গুনটাকেই অনেকে দুর্বলতা ভেবে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিতো। মানুষটার একটাই দোষ, রাজনীতির জন্য তার জান-প্রান দিতে প্রস্তুত। অথচ রাজনৈতিক নেতারা তাকে ইউজ করতো সে সেটা বুঝতে পারতো না। ওয়ান ইলাভেনের কিছুদিন আগে পুলিশের লাঠি-চার্জে মাথায় আঘাত পেয়ে কুমিল্লার সিডিপ্যাথ হাসপাতালে ভর্তি হল। ক্লাস ফাকি দিয়ে ওকে দেখতে গেলাম। সেদিনই টের পেলাম মানুষটাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি। কিন্তু এতো সুন্দরীর নয়নের মনি সে কি আমাকে পছন্দ করবে। ও হয়তো আমাকে পছন্দ করে কিন্তু ভালবাসে না, অন্তত ওর সাথে কথা বলে তাই মনে হয়। তাই ভালবাসাটা পাথরচাপা দিয়েই রাখলাম। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় ছুটে গিয়ে বলে দেই মনের কথাটা। ভালবাসা আমার নীরবে বালিশ ভেজানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ও সবসময় চমকে দিয়ে আনন্দ পেত। একবার ভ্যালেন্টাইন ডের সকালে ওকে দেখা করতে বললাম। ও ভীষণ রেগে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে আমাকে বকলো। আমি পুরো স্তব্দ হয়ে গেলাম। মন খারাপ করে রানীর দীঘির পাড়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। হঠাৎ দেখি আমার ডানপাশে একগুচ্ছ গোলাপ। কাউকে দেখলাম না আশেপাশে। কখন যে ও আমার বামপাশে এসে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে টের পেলাম না। আমাকে বলল বকা না দিলে নাকি এই মজাটা পেতাম না। আরেকটা ঘটনা বলি। ও তখন ঢাকা ভার্সিটির বোটানির ২য় বর্ষে আর আমি বগুড়া মেডিক্যালের ১ম বর্ষে। ওকে অনেক বলতাম বগুড়ায় আসার জন্য। তার দলের রাজনৈতিক কাজের জন্য আসতে পারতো না। হয়তো ইচ্ছে করেই আমার অবহেলা করতো। আরেকবার বার্থডেতে ১২ টার পর আমাকে ফোন উইশ করে বলল কাল সকাল ৮টায় সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে যেন ওর গিফট টা রিসিভ করি এবং গিফটটা হবে স্পেশাল। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম কি হতে পারে ওই গিফটটা। জগজিতের গজল, চাইনিজ হ্যাট নাকি সমরেশ সমগ্র? সকাল বেলা ওখানে গিয়ে যে গিফট পেলাম তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। গিয়ে দেখি সে নিজেই কুরিয়ারের দোকানে বসে আছে। আপনারাই বলুন এর ভাল গিফট আর কি হতে পারে? ও মানুষের চমকে যাওয়া আনন্দিত মুখের সেই খুশির অশ্রুতে টলটল চোখটা দেখতে ভালবাসত।
সবকিছু ভালই চলছিল। হঠাৎ ভার্সিটিতে মারামারি লেগে একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ ওকে বেধড়ক পিটাল। তার বেডিং সহ সব জিনিস রাস্তায় ফেলে দিল। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির পর জানা গেল তার পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে। পায়ে অপারেশন করায় তাকে প্রায় ৩ মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। প্রতিটা উইকেন্ডে ছুটে যেতাম ওকে দেখার জন্য। ক্লাসমেটরা জানতো আমি বাসায় যাই। আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন আমি ওকে কতটা ভালবাসি। প্রতিদিন এত কথা বলি, তবুও কখনো ভালবাসার কথা বলতে সাহস করিনি। মাঝে মাঝে মনে হয় ও অনেক নিষ্ঠুর…সবকিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে। একটা মেয়ে তার পিছনে তিন বছর আঠার লেগে আছে…অথচ তার কোন বিকার নেই। আমার প্রথম প্রফ পরীক্ষার পর বাসা থেকে বিয়ের তোরজোড় শুরু হয়ে গেল। প্রফের ১৫ দিনের ছুটিতে বিয়ে নিয়ে মায়ের অনেক প্যানপ্যানানি শুনতে হল। হঠাৎ একদিন মেজাজ খারাপ করে ঠিক করলাম ওকে সবকিছু খুলে বলব, যা আছে কপালে। ও আমার কথা শুনে নির্লিপ্তভাবে বলল সে এনগেজড। আর কিছু বলার রুচি হল না। রিক্সায় উঠে শেষবারের মত তাকালাম। একটু আশা ছিল যে সে হয়তো আমাকে চমকে দিয়ে কিছু একটা বলবে। কিন্তু আশায় গুড়ে বালি। বাসায় এসে চুপচাপ বালিশে মুখ লুকিয়ে কাদলাম। ৪-৫ দিন পর রাতের বেলা মা জোর করে উঠিয়ে ভাত খাওয়ালেন। খাওয়ার পর দেখি মা বায়োডাটা নিয়ে হাজির। নতুন বিয়ের সমন্ধ নিয়ে হাজির। মায়ের উপর প্রচণ্ড রাগ হল।অনেক কষ্টে রাগটা চাপলাম। বায়োডাটা খুলে যা দেখলাম তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ওর ছবি দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললাম। সব ওর পূর্ব পরিকল্পনা। মানুষটা আসলে চমকে দিয়ে চরম আনন্দ পায়। রাতে ফোন দিলে বলল…তুমিতো এনগেজড শুনেই চলে আসলে…কার সাথে এনগেজড সেটাতো শুনলে না।
আমাদের বিয়ের ২ বছর হতে চলল। ও এখন সেনাবাহিনীতে এডুকেশন কোরে কর্মরত আছে। এখন ম্যারেজডেতে এমন ভাব করি যেন ম্যারেজডের কথা দিব্যি ভুলে গেছি। যেভাবেই হোক ও ছুটি ম্যানেজ করে ম্যারেজডেতে আসবেই। আমিও এমন ভাব করি যেন অনেক চমকে গেছি। মানুষটা যে আমার চমকে যাওয়া মুখটা দেখতে ভালবাসে। সেদিন সিএমএইচে গাইনি ডাক্তার একটা সুখবর দিলেন। সামনের সাপ্তাহে তার ছুটিতে আসার কথা। তখনি তাকে সুখবরটা দিবো। কেননা এবারতো আমার চমকে দেবার পালা…কি বলেন আপনারা?

(আমার গল্পগুলি যদি আপনাদের হৃদয় একটুও ছুয়ে যায় তবে নিজেকে সার্থক মনে করবো। আপনাদের ভাল লাগলে ভবিষ্যতে আরও লেখার আগ্রহ বোধ করব। সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ। –মাহমুদ হাসান।)
এই সময়ে ১/০৫/২০১৩ ০৫:৪০:০০ PM 

একটি শীতের সকালের মিষ্টি প্রেম কাহেনী মোঃমাসুদ রানা

একটি শীতের সকালের মিষ্টি প্রেম কাহেনী


একটি শীতের সকালের মিষ্টি প্রেম কাহেনী
মোঃমাসুদ রানা

সকাল সকাল ক্লাসে যেতে কি মজা লাগে কারও।তবুও আবার শীতের কালে।শত কষ্ট হলেও যেতে হবে কেননা আজ ক্লাসে গুরুত্বপূর্ন একটা ক্লাস আছে।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম। ৯ টা বাজে আজ কি রাস্তা ঘাটে লোকজন কম নাকি? বাস-স্ট্যান্ডে যেতেই দেখি বোরকা পরা এক রমনী দারিয়ে আছে।বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।মেয়েটার সাথে বার বার চোখ পরে যাচ্ছে।যাই হোক বাস এসে পরল উঠে পরলাম বাসে মেয়েটাও উঠল।কেন জানি মেয়েটাকে বার বার দেখতে মন চাচ্ছে।কিছুক্ষনের মধ্যে আমার গন্তব্য চলে এলাম।ক্লাসেও মন বসছে না এত একটা ইমপোর্টেন্ট একটা ক্লাসে মন বসাতে পারলাম না।বাসায় ফিরে আসলাম।রাতে শুধু মনে হচ্ছে কাল কি তার দেখা পাব?কি জানি ? এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।সকালে এক ধীর বিশ্বাস নিয়ে বাস-স্ট্যান্ডে গেলাম।গিয়ে দেখি আজও সেই মেয়ে আজব তো মনের কথার সাথে দেখি মিলে গেছে।তাহলে কি আমার ঘন্টা বেজে গেছে?আজও তাকে দেখছি তবুও জানি কেন মনে হচ্ছে তাকে যদি সবসময় দেখতে পারতাম।ওর মুখটা কখনো দেখতে পারিনি শুধু চোখ ছাড়া।পরের দিন এর কথা বাস-স্ট্যান্ডে গেলাম দেখি ও নাই ওর জায়গায় বাংলার নায়িকাদের পেছনে ফেলবে মডেলিং এক কন্যা।দেখে মেজাজটা যে কি খারাপ লাগছে।যাই হোক কন্ট্রল করলাম।দেখি মেয়েটা আমার দিকে আসছে।আরে আমার কাছে আসছে কেন?
এই যে ভাইয়া একটু শুনবেন আপনি কোথায় যাবেন জানতে পারি?
আমি ভাবলাম হাইজাকার হতে পারে কেননা আজকাল মেয়েদের বিশ্বাস নেই।
আমি ভদ্রভাবেই বললাম বনানীতে যাব।
ও আচ্ছা আমিও তো যাব ভাইয়া ঐখানে আমার ক্লাসে ।
কি করেন আপনি মেয়েটা জিজ্ঞাসা করল আমাকে?
মেজাজটা যে আর কন্ট্রল করতে পারলাম না বলেই ফেললামশ আপনার কি আমার করা নিয়ে নিয়ে। আপনার সমস্যা কি?
দেখলাম মেয়েটা কেদেই দিল ।আর সেখান থেকে চলে গেল।
নিজের প্রতি খুব খারাপ লাগল।কি দরকার ছিল বকা দেওয়ার।
পরের দিন আবার মেয়ে দুটোকে খুজতে আসলাম।খুব খারাপ লাগল কাউ কে না পেয়ে ক্লাসে না গিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
প্রায় ১ মাস হয়ে গেল কারো দেখা পেতাম না
একদিন দেখি সেই বোরকা পরা মেয়েটি।আমার প্রেমের থামা ঘড়িতে মনে হয় কে জানি ১০০০ বোল্টের ব্যাটারি লাগিয়ে দিছে। কথা বলব কি না বলব এটা ভেবে একসময় সাহস করে বলেই ফেললাম আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন। মেয়েটা আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে উলটা আমাকে বকা দিল।জানি না কেন আজ কেদে ফেললাম।নিজের কাছে নিজেকে ক্ষমা করতে পারলাম না।বাসায় চলে এলাম।
আজ ৩ দিন হয়ে যাচ্ছে কোথাও যাচ্ছি না।সারাদিন ঘরেই বসে থাকি।
কেন জানি মনে হচ্ছে ঐ দিন ঐ মেয়েটাকে আমার বকা দেওয়ার কথা।তাহলে এটাই কি তার শাস্তি। যাই হোক মেয়েটার কাছে আমাকে ক্ষমা চাইতেই হবে।
তাই আজ চলে গেলাম বাস-স্ট্যান্ডে।আল্লাহ্‌ র কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম যেন মেয়েটাকে পাই দরকার হলে পায়ে ধরে মাফ চাইব।
কিন্তু মেয়েটাকে পেলাম না।
এইভাবে ১ সপ্তাহ পার হয়ে যায় বোরকা পরা মেয়েটাকেও দেখতে পেলাম না একদিনও।
আজ সেই ২য় দিনের মত লাগছে  কেন আমার।তাহলে কি আজ বোরকা পরা মেয়েটি এসেছে?না কেউ আসেনি।মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাত পাশ থেকে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলাম।পিছনে  ঘুরতেই দেখি সেই মডেলিং মেয়েটা। আল্লাহ্‌ কে কি বলে ধন্যবাদ দিব?আলহামদুলিল্লাহ্‌।
মেয়েটার কাছে গেলাম মেয়েটা আমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করল আজও কি বকা দিবেন নাকি?আমি ভাবলাম আমাকে বোরকা পরা মেয়েটার মত বকা দিবে কিন্তু না।যাই হোক নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলাম মেয়েটার কাছে।
মেয়েটার সাথে পরিচয় হলাম।মেয়েটার নাম রিদি।আর আমার নাম সাকিব।
পরের দিনো আবার রিদি এর সাথে দেখা।ওর সাথে কিছুক্ষন কথা হলো।একি সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
আমি আজোও সেই মেয়েটিকে ভুলতে পারছি না।রিদির সাথে ফোনে কথা বলা শরু হলো।কিছুদিন ধরে।আমাকে সাথে নিয়ে ও মাঝে মাঝে কোথাও ঘুরতে যেত। আমি ওকে আমার বন্ধুই মনে করতাম।এর বেশি কিছু না।
একদিন আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এল তখন আমি বাহিরে ছিলাম তাই আর ওপেন করি নি।বাসায় এসে দেখি রিদি  এর এস,এম,এস।যা দেখলাম আমার টেনশন বেড়ে গেল।সে আমাকে ভালবাসে।আমি কি করব বুঝতে পারলাম না।আমি তো সেই বোরকা পরা মেয়েটাকে ভালবাসি রিদি কে না। রিদির ফোন আসল রিসিভ করি নি।এভাবে অনেকক্ষন কল আসল।একসময় রিসিভ করলাম।ও পাশ থেকে কোন শব্দ হচ্ছে না।
যাই হোক আমাকে আজ সব খুলে বলতেই হবে।আমি সব বললাম ওকে।আমার কথা গুলো শুনার পর সে তার মোবাইল অফ করে দেই।আমার টেনশন আরো বেরে গেল।রাত ৩ টায় আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো রিদির মোবাইল থেকে। আমার সাথে দেখা করবে।
তো যাই হোক দেখা করব রিপ্লাই দিলাম।পরের দিন সকালে সাদা একটা শার্ট পরলাম ওর সাথে দেখা করব বলে।আমি তাকে ফোন দিলাম কোথায় তুমি ও আমাকে বলল পার্কে যেতে ।আমি পার্কে বসে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অনেকক্ষন হয়ে গেল ও আসছে না দেখি।আমি ওর মোবাইলে কল দিলাম দেখি মোবাইল অফ।এমনেই রাতে টেনশনে ঘুমাতে পারিনি।আরো টেনশন বেরে গেল।৩ ঘন্টা হয়ে গেল।আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি।ভাবলাম চলে যাব।পার্কের গেইটে যেতেই দেখি সেই  বোরকা মেয়েটার মত দেখতে একটা মেয়ে আরে এটা তো সেই মেয়েই।আমার দিকে তেরে আসছে আমি মাথা নিচের দিকে দিয়ে রইলাম
এই আমাকে ভালবাস না? মাত্র ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করতে পারলা আমার জন্যে।
বোরকার ঘোমটা খুলে ফেলল।আরে এটা তো রিদি।
আমি আকাশ থেকে পরলাম।আরে আপনি............তুমি...ই।
হে আমি তো কি হইছে। না কিছু হয়নি মানে?এইটুকু বলতেই পারলাম তার আগেই আমার চুল এর অবস্থা শেষ।এক সময় মার থামালো।আমার যে কি আনন্দ লাগছে তা এই মারের কাছে কিছু না।পরে জানতে পারলাম।এসব সে ইচ্ছা করে করছে আমি কেমন তা জানার জন্যে।
আজ ১ বছর হয়ে গেছে আমাদের বিয়ের।একা থাকলে আমার জন্য মনে হয় রিদি বাস-স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছে ।তাই তারাতারি অফিস থেকে বাসাই ফিরে আসি।
ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি রিদি কে অনেক ভালবাসি।
(আমাদের গল্প গুলো ভাল লাগলে লাইক দিয়ে একটিভ থাকুন)

মেঘবৃষ্টি লিখেছেনঃ- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

ღমেঘবৃষ্টিღ
ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০১ღ
মেঘবৃষ্টি
লিখেছেনঃ- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

জানলার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল মেঘ। কি যেন ভাবছিল । 'জানলাটা লাগিয়ে দাও, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে' - হঠাত্‍ মায়ের কথায় চমকে উঠল সে । জানলা দিয়ে আবার তাকাল । এই মধ্য দুপুরেও অন্ধকারহয়ে আছে চারদিক । এমন দিন কখনই ভাল লাগত না তার । কেমন যেন একটা মন খারাপ করা পরিবেশ । এখন অবশ্য তার কোন রকমই লাগেনা । রোদ , বৃষ্টি কোন কিছুই তার মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না । সবসময় একই রকম লাগে । জানলার কাচঁটা টেনে লাগিয়ে দেয় । তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় । এই বারান্দাটা তার খুব প্রিয় । অনেক আনন্দ , অনেক কষ্ট , অনেক কান্নার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বারান্দাটার সাথে । বারান্দাটা তার ঘরের সাথে লাগানো । বারান্দায় আসলেই অনেক কথা মনে পড়ে যায় তার । সন্ধ্যায় বা রাতে লোডশেডিং হলে বারান্দায় শুয়ে আকাশের তারাগুলো দেখতে খুব ভাল লাগত তার । আর মন খারাপ হলেই বারান্দায় এসেবসে থাকত । কত দিন মধ্যরাত পর্যন্ত বারান্দায় বসে কেঁদেছে সে তার কোন হিসাব নেই । এখন আর সে এ বারান্দায় সচরাচর আসে না । বারান্দার সাথে জড়িয়েথাকা দুঃখগুলো মনে করতে চায়না বলেই হয়ত আসে না ।
"মেঘ, তোমার ফোন এসেছে" - মায়ের কথা শুনে ঘরে যায় সে । অনেক দিন হয়ে গেছে মোবাইল ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে । ও কাউকে ফোন করে না । কেউ যদি করে তাহলে ওর বাসার নাম্বারে করে । বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ প্রায় হয় না বললেই চলে ।বন্ধু বলতে স্কুল কলেজের বন্ধুরা । ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কারো সাথে বন্ধুত্ব করেনি সে । একা একা ভার্সিটিতে যায় , ক্লাস করে , তারপর চলে আসে । কারো সাথে তেমন কথা বলে না । অথচ একটা সময় ছিল যখন একদিন বান্ধবীদের সাথে দেখা না হলে বা বাসা থেকে বেরুতে না পারলে হাঁপিয়ে উঠত সে । আর সারাদিন মোবাইলে কথা তো চলতই । মোবাইলে কথা বলার জন্য মার কাছে কম বকা খায়নি সে ।
মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরে সে-
-হ্যালো কে ?
-হ্যালো মেঘ , আমি রূপা । কেমন আছিস তুই ?
-ও , ভাল । তুই ?
-আছি কোনরকম । আমার কথা আর বলিস না । খোঁজ খবর তো নিস না । ঢাকায় থাকা যে কিকষ্টের তা আর কি বলব ! মাঝে মাঝে ইচ্ছেহয় পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে সিলেট চলে আসি । আগের দিনগুলা খুব মিস করি রে । তুইও তো একা হয়ে গেলি । আমাদের কথা কি মনে পড়ে না ?
-হুম ।
-আচ্ছা যাই হোক । শোন , আজকে বিকেলে বের হতে পারবি ? ছুটিতে সবাই এসেছে । সেই কবে সবাই একসাথে হয়েছিলাম । আজ বিকেলে সবাই একসাথে ঘুরব ।
-নারে , আমি আসতে পারব না । শরীরটা বেশি ভাল না ।
-কি হয়েছে ?
-তেমন কিছু না । মাথা ব্যথা ।
-মাথা ব্যথা কমে যাবে । তুই চলে আসিস ।তুই তো এমনভাবে কথা বলতি না ! আগে তো আমরা না চাইলেও জোর করে ঘুরতে বের হতি। ফুচকা না খেলে তো পেটের ভাত হজম হত না । আর এখন বাসা থেকে বের হতে চাইছিস না !
-তোরা যা । আমি আরেক দিন আসব ।
লাইনটা কেটে দিল মেঘ ।
সত্যিই তো , সে তো আগে এরকম ছিল না । আগের মেঘের সাথে এখনকার মেঘের কোন মিলই নেই । যেই মেয়ে কথায় কথায় হাসত , হাসি ছাড়া থাকতে পারত না , সেই মেয়ে এখন হাসতে ভুলে গেছে । শেষ কবে প্রাণ খুলে হেসেছিল তাও মনে করতে পারে না । মাঝে মাঝে ওর মনে হয় জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে । কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে হয় আসলে জীবন তাকে কিছুই দেয়নি । শুধু তার সাথে সব কিছু দিয়ে কেড়ে নেয়ার একটা খেলা খেলে গেছে ।
ছোটবেলা থেকেই মা-বাবার বাধ্য মেয়ে ছিল মেঘ । পড়াশুনাতেও ভাল ছিল । সবার চোখের মণি ছিল সে । গার্লস স্কুলে পড়ার কারণে কোন ছেলে বন্ধু ছিল না । কলেজে উঠার পর কোচিং এ কিছু ছেলের সাথে পরিচয় হয় । ওরা একই কলেজে পরে । ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয় । শুধু মেঘ একানা , রূপা , মনীষা , পায়েল মানে যাদের সাথে মেঘ সবসময় থাকত সবার সাথেই ওদের ভাল একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ।
সবার আগে বন্ধুত্ব হওয়ার জন্যই হোক কিংবা অন্য কারণেই হোক , রিফাত এর সাথেমেঘের বন্ধুত্বটা ছিল একটু বেশি । ওর সাথে মোবাইলে কথাও হত বেশি ।
ভিন্ন ধর্ম তাদের বন্ধুত্বে কখনও প্রভাব ফেলে নি । মেঘ তার সব কথা শেয়ার করত রিফাত এর সাথে । রিফাত এর কেয়ারও করত খুব । কিন্তু সে কখনও ভাবেনি যে এই নিষ্পাপ বন্ধুত্বতা , বন্ধুর ভাল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা,বন্ধুকে অনুপ্রেরণা দেওয়া এ সবকিছুর ফলাফল কখনও খারাপ হবে ।
সবকিছু ভালই চলছিল । সেদিন থেকে সবকিছু ঝাপসা হতে শুরু করল যেদিন মেঘ জানতে পারল যে রিফাত তাকে ভালবাসে । কথাটা রিফাতই তাকে বলেছিল কেঁদে কেঁদে । খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন তার । তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটি তার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে । সেদিন কান্না ছাড়া আর কিছু বলতে পারে নি মেঘ । রিফাত তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু । কিন্তু তাই বলে..... । ওকে বন্ধু ছাড়া কখনও অন্য কিছু ভাবে নি মেঘ । ভাবতে পারবেও না কখনও ।
প্রথমে মেঘ ভেবেছিল এটা হয়ত সাময়িক ভাললাগা । হয়ত কিছুদিন পরে এমনিতেই সবঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু এ ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগে না তার । রিফাতকে বোঝানোর চেষ্টা করে সে । এটা কখনও সম্ভব না । অন্য ধর্মের একটা ছেলেকে কখনই মেনে নেবে না তার পরিবার । আর সবচেয়ে বড় কথা সে কখনও রিফাতকে বন্ধুরচেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারবে না ।
এর মধ্যে আরেকটা ছেলে প্রোপোজ করে মেঘকে । নাম অভি , একই কলেজে পড়ে । মেঘ ওকে সরাসরি না করে দেয় । কিন্তু অভি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে । তাছাড়া কলেজে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকা , ছুটির পর দাঁড়িয়ে থাকা , বাসার সামনে ঘুরাঘুরি করা ইত্যাদি তো আছেই । প্রথম প্রথম মেঘ একদম পাত্তা দিত না ।সবার কাছে শুনেছে অভি ছেলে হিসেবে ভাল । দেখতে ততটা সুন্দর নয় , তবে মেঘ ওকে এ কারণে না করেনি । বাহ্যিক সৌন্দর্যকে কখনও মেঘ গুরুত্ব দেয় নি ।
একদিন অভি মেঘকে কল করে । অনেক কথা বলে । মেঘ বুঝতে পারে যে অভি ওকে সত্যিই অনেক ভালবাসে । কিন্তু তবুও ও অভিকে না করেদেয় । বলে যে তার পক্ষে রিলেশন করা সম্ভব না ।
অনেক দিন কেটে যায় । যেদিন থেকে মেঘ জানতে পারে রিফাত ওকে ভালবাসে সেদিন থেকে সে রিফাতের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় । আগের মত এত কথাও বলে না । এর কারণ রাগ বা অভিমান নয় , কারণ মেঘ চাইত রিফাত যেন তার প্রতি আর দুর্বল না হয় ।
আবার অন্যদিকে অভি মেঘকে ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করত । সঙ্গত কারণেই রিফাত অভিকে পছন্দ করত না । সে চাইত না মেঘ অভির ফোন রিসিভ করুক । মেঘ কোন এক অজ্ঞাত কারণে রিফাতের কথা রাখতে পারত না । অভি ফোন করলে সে রিসিভ না করে থাকতে পারত না । অভির সাথে কথা বলতে ওর ভাল লাগত । ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । কিন্তু রিফাত এটা শুনে কষ্ট পাবে বলে তাকে জানাত না ।
এই লুকোচুরি বেশি দিন চলতে পারে নি । একদিন রিফাত জেনে যায় একথা । মেঘের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে , অনেক কষ্ট পায় । মেঘকে সে বার বার জিজ্ঞেস করে যে তার বারণ করা সত্ত্বেও কেন মেঘ অভির ফোন রিসিভ করল ? মেঘ কোন উত্তর দিতে পারে না । শুধু নীরবে কাঁদে । কি উত্তর দিবে সে ? সে নিজেও তো জানে না কেন সে অভির সাথে কথা বলে ।
এ প্রশ্নের উত্তর সেদিন খুঁজে পেয়েছিল মেঘ যেদিন রিফাত তাকে কসম দিয়ে বলে যে যদি সে অভির ফোন রিসিভ করে তাহলে সে পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতচলে যাবে । একটা কথাও সেদিন মুখ থেকে বের হয়নি তার । শুধু চোখ থেকে অশ্রু নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছিল । সেদিনের পর সে বুঝতে পেরেছিল যে তার মনে তার অজান্তে অভি কতটা জায়গা করে নিয়েছিল । কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস । যে ভালবাসা তার হাতে এসে ধরা দিয়েছিল ,তাকে সে ধরতে পারে নি ।
প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে মেঘ অভির সাখে কোন কথা বলে নি । সেদিন শুধু অভিকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল সে ।নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে ভাল রাখার জন্য নিজের ভালবাসাকে নিজের হাতে ধ্বংস করে দিয়েছিল সে ।
তবে এ ঘটনার পরে রিফাতের সাথেও সে ভালভাবে কথা বলতে পারত না । রিফাতকে কখনও কিছু বলে নি সে । কিন্তু রিফাতের উপর মনে মনে একটা রাগ জমে ছিল । নিজের অজান্তেই কথায় কথায় রিফাতের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলত সে ।
এইচ.এস.সি র পর রিফাত মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায় । মেঘ রিফাতের সাথে যোগাযোগ মোটামুটি বন্ধ করে দেয় । কিন্তু অভির কথা একমূহুর্তের জন্যও ভুলতে পারে নি সে । অভি মেঘের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিল । শুনেছে এখন নাকিঅভির ফ্যামেলি ঢাকায় চলে গেছে ।
এসবের কোন কিছুই মেঘ কখনও কাউকে বলে নি । তার বান্ধবীদের কেউও জানে না । মন খারাপ থাকলেও কাউকে বুঝতে দিত না সে ।সবসময় হৈ হুল্লোর করে কষ্টগুলোকে ঢেকে রাখত ।
তারপর একে একে সবাই আলাদা হয়ে যায় । মেঘ পুরোপুরি একা হয়ে যায় । তখন থেকে আনন্দ জিনিসটা হরিয়ে যায় তার জীবন থেকে । নিঃসঙ্গতা আর অভির কিছু স্মৃতিআজ তার সবথেকে প্রিয় সঙ্গী । একটু একটু করে বুকে জমতে থাকা কষ্টগুলো মাঝে মাঝে ঝেরে ফেলতে ইচ্ছে করে তার । কিন্তু চোখের জলে তার বিন্দুমাত্রও কমে না ।
মধ্যরাতে নির্ঘুম চোখে মেঘ প্রায়ই ভাবে যদি সে আকাশের মেঘ হতে পারত , বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তো পৃথিবীর বুকে , তারপর মিশে যেত মাটির সাথে । খুব ইচ্ছে করে তার আকাশের মেঘ হতে , খুব ইচ্ছে করে ।
.................---¬¬¬¬---..............¬.¬.¬
এই সময়ে ২/১৪/২০১৩ ১০:০৮:০০ PM 

বিষণ্ণ বিকেলে লিখেছেনঃ-Ami Sopnil

ღবিষণ্ণ বিকেলেღ
ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০২ღ
বিষণ্ণ বিকেলে
লিখেছেনঃ-Ami Sopnil

এই শুভ তুমি আমাকে বাসায় দিয়ে আসবা প্লীজ? আমার খুব জ্বর জ্বর লাগছে,একা যেতে পারব না,মম কাতর স্বরে জিজ্ঞাসা করল শুভকে।আচ্ছা তুমি-তো রিতু কে নিয়ে যেতে পার,আমি গেলে একটু কেমন দেখায় না? ইতস্তত হয়ে শুভ জবাব দেয়।শুভর জবাবে হতাশই হতে হয় মমকে।আচ্ছা এই ছেলেটার অনুভূতি বলতে কি কিছুই নেই?কারও জ্বর আসছে শুনলে তো কপালে হাত দিয়ে অন্তত দেখে।এটাও কি বুঝিয়ে দিতে হবে,ভাবে মম।তার জ্বরটর কিছুই না।আজ ১৪ফেব্রুয়ারি ইচ্ছে শুভর সাথে রিক্সায় একটু ঘুরে বেড়াবে।কলেজে ভর্তির সেই প্রথম দিন থেকেই এই অদ্ভুত ছেলেটাকে ভালবেসে বসে আছে সে।ও যেমন হাসি খুশি শুভ ঠিক তার উল্টো,সে চুপচাপ থাকতেই বেশী পছন্দ করে।তাই মমকেই নানা অজুহাতে গিয়ে কথা বলতে হয়।ক্লাস নোট নেয়া,স্যার কি পড়াল,পিকনিকে যাবে কিনা,কলেজে আসেনি কেন নানা অজুহাতে গায়ে পরে কথা বলতে হয় তার।কি আর করা ক্লাসের সবাই বুঝলেও যে বুঝার সেই যদি না বুঝে।রিতু তো প্রায়ই বলে বাদ দে তো ওই বলদটার কথা,কত ছেলে পরে আছে তোর জন্য আর তুই কিনা ওই হাবাগোবা বলদটাকে নিয়ে আছিস।মম কাউকে বুঝাতে পারেনা।ছেলেটার গম্ভীর হয়ে চুপচাপ থাকাটাই যে ওর বেশী ভাল লাগে।ভাল লাগে ছেলেটা যখন এলোমেলো চুল নিয়ে ক্লাস এ এসে একটা কোনায় বসে থাকে,টিফিন পিরিয়ডে মাঠের এক কোনায় বসে আকাশ দেখে।ইচ্ছে করে গিয়ে বলতে,এই আমাকে তোমার আকাশটা দিবে?
রিতু তার বয়-ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে যাবে,সো তোমাকেই যেতে হবে বলে রিক্সা থামায় মম,শুভর হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠায়।এই তুমি রিক্সার পাশঘেষে আছ কেন?আমার ছোঁয়া লাগলে কি তোমার কুষ্ঠ হবে?? বলে হাঁসতে থাকে মম।লজ্জায় শুভর গাল লাল হয়ে যায়।মমর ইচ্ছে করে ছেলেটার গাল ছোঁয়ে সব লজ্জা ভেঙ্গে দিতে কিন্তু কি আর করা এমন একটা ছেলেকে সে ভালবেসেছে তার কাছে যদি বলা হয় আমার না রাতে ঘুম হয়না,খেতে ইচ্ছে করেনা,খালি উদাসী হয়ে যাই,মন খুব খারাপ থাকে,কি করব বলত? সে নিশ্চিত বলবে তো আমি কি করব,ডাক্তার দেখাও।মমর অনেক ইচ্ছে ছেলেটার হাত ধরে রেল লাইনে হেটে দিগন্তে হারিয়ে যেতে,বাদল দিনে এক ছাতার নিচে গা ঘেঁসে অনেক টা পথ হেটে যেতে মাঝে মাঝে মাথার উপর থেকে ছাতা সরিয়ে দিবে বৃষ্টি ভিজবে বলে।জোছনা রাতে সাগর তীরে শুভর কোলে মাথা রেখে জোছনা পোহাবে আর বিয়ের পর দুজন মিলে ভুত এফ এম শুনবে।ভুতের ভয়ে যখন মমর শরীর থরথর করে কাঁপবে তখন শুভ দুহাতে শুক্ত করে তার বুকে জড়িয়ে রাখবে,মম তখন শুভর বুকে মাথা রেখে নিঃচিন্তে ঘুমিয়ে পরবে।মম সব সময় নিজে রান্না করবে আর ওরা একি প্লেট এ একসাথে খাবে এজন্য মা রান্না ঘরে আসতে দিতে না চাইলেও সে রান্না শিখছে।এখন অনেক কিছুই বানাতে পারে সে।একদিন শুভর জন্য তার প্রিয় খাবারটা রান্না করে নিয়েও এসেছিল কিন্তু সেদিন শুভ কলেজে আসেনি।সেদিন যা কান্না করেছিল মম।আজ ভালবাসা দিবস,সবাই যার যার মত ভালবাসার মানুষের সাথে ঘুরতে বের হয়েছে তারও ইচ্ছে ছিল শুভর সাথে ঘুরে বেড়াতে কিন্তু শুভকে বললে তো সে আর যাবে না তাই জ্বরের অভিনয়টা করতে হল।সেতো একটা মেয়ে,আর একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে একটা ছেলেকে প্রপোজ করবে।সে যদি না করে দেয়,আর কথা না বলে,এমনিতেই ফাজিল তিথি শুভর সাথে টাঙ্কি মারার চান্স এ থাকে।ওর কাছে থেকে নোট নিয়ে যায়,রাতে ফোন দেয়,সারাক্ষণ শুভর আশপাশে থাকার চেষ্টা করে।দেখে মাঝে মাঝে গা জ্বলে যায় মমর।কিন্তু কি করবে সে কান্না করা ছাড়া।এসব ভাবতে ভাবতেই বাসার সামনে চলে আসে ওরা।পথে তেমন কোন কথাও হয়না।শুভ বাসায় আস,আম্মুর সাথে দেখা করে যাও বলে মম।আরেক দিন যাবে বলে হাটা শুরু করে শুভ।পাশেই ওর বাসা হেটেই যাওয়া যায়।শুভর চলে যাওয়া দেখে মমর মনে হচ্ছিল হৃদয়ের একটা বড় অংশ যেন ওর কাছ থেকে দুরে হারিয়ে যাচ্ছে,মনে অসাড় একটা অনুভূতি।কি করবে বুঝতে পারছিল না সে।দম বন্ধ হয়ে আসছে মমর,কিছুতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না,ভীষণ কান্না পাচ্ছে ।সে কি আবার শুভ কে ডাকবে? শুভ একা যেও না আমাকেও সাথে নিয়ে যাও প্লিজ?আমার পৃথিবী যে এখন তোমাকে ঘিরে ।
বাসায় এসে শাওয়ার নিতে নিতে অনেক কাঁদল সে,কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিল না,এমন কেন হচ্ছে,ও তো ভালই ছিল,কেন ভালবাসতে গেল,সে তো কার জন্য কাঁদতে চায় না,চায় না কারো ভালবাসায় হারাতে তবুও এমন কেন হয়।বালিশে মাথা গুজে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় আসল সে।বিষণ্ণ বিকেল।এই সময় টা ওর মন খারাপ থাকে খুব,নিজেকে খুব একা মনে হয়।ঝুপ করে সন্ধ্যা নামলেও মন কিন্তু আর ভাল হয়না।রাতের ঘুম নাই হয়ে গেছে সেই কবে।নিজেকে ইদানীং জম্বি জম্বি লাগে তার,সাজতে ইচ্ছে করে না,কার জন্য সাজবে সে? কত দিন শপিং করে না।শপিং এ গেলে খালি শুভর জন্য টি শার্ট কিনতে ইচ্ছে করে,শুভর জন্য অনেক গুলো কিনে রেখেছে কিন্তু দিতে পারেনি ভয়ে,যদি ফিরিয়ে দেয়।বন্ধুদের সাথে আড্ডাও এখন পানসে মনে হয়।বই মেলায় যাবে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছে না।
ক্ষুধা লেগেছে, ফ্রিজ থেকে খাবার বের করতে গিয়ে শুনে ওর নামে একটা গিফট এসেছে। কে দিতে পারে ভাবতে ভাবতে গিয়ে প্যাকেট টা হাতে নিল দেখে।নাম নেই।প্যাকেট খুলে দেখে অনেক সুন্দর একটা ব্রেসলেট।জিনিশটা অনেক পরিচিত লাগল। নিচে একটা ছোট্ট চিরকুট।লিখা মম প্রথম তোমাকে যেদিন দেখি কলেজে ভর্তি ফর্ম নেবার সময়,সেদিন তোমাকে মোটেও আমার ভাল লাগেনি।একটা মেয়ে এতটা চঞ্চল হয় কিভাবে? আমার যে চুপচাপ শান্ত মেয়ে ভালো লাগত। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার দিন তুমি যখন আমার সামনের কোনে বসে চুপচাপ পরীক্ষা দিচ্ছিলে তখন আমি পরীক্ষা ভুলে তোমার দিকে স্মমোহনের মত তাকিয়ে ছিলাম।সেদিন থেকে তোমার কথা বলা,বন্ধুদের সাথে তর্ক,তোমার হাসি, তোমার স্নিগ্ধটা, তোমার সব কিছুই আমার আমার ভীষণ ভাল লাগতে শুরু করে।তখন আমার মনে হয়েছিল তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।তোমার হাত ধরে তোমার কথা শুনেই সারাটা জীবন আমি কাটিয়ে দিতে পারব।আমি জানিনা তুমি আমাকে কতটুকু পছন্দ কর বা সেটা শুধু ক্লাসমেট হিসেবেই নাকি অন্য কিছু সেই ভয়ে কখনো বলা হয়নি।আমার যে হারাবার ভয় বেশী।আচ্ছা ব্রেসলেট টা পছন্দ হয়েছে?মনে আছে আমারা সব ক্লাস মেটরা সেদিন বসুন্ধরা সিটি গিয়েছিলাম,একটা দোকানে তুমি ব্রেসলেট টা পছন্দ করেছিলে,টাকা ছিল না বলে কিনতে পারনি,সেদিনই আমি কিনে রেখেছিলাম কিন্তু ভয়ে দিতে পারিনি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও,যদি জিজ্ঞেস কর কোন অধিকারে তোমাকে দিতে গেলাম।মম কত রাত যে কেটে গেছে তোমার ভাবনায়।প্রতিটা মুহূর্তে ভাবি শুধু তোমায়। তুমি যদি সামনে থাক তাহলে আমার পৃথিবী আলোকিত থাকে,চলে গেলেই মন খারাপের দেশে হারিয়ে ফেলি নিজেকে।মম এর নাম যদি ভালবাসা হয়,মনের অজান্তে আমি তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।আমি জানিনা না তোমাকে পাব কিনা তবুও আমি তোমার বাসার নিচে অপেক্ষা করছি প্লিজ একটু আস।নাইবা ভালবাসলে তবুও আজকের মত তোমাকে দেখি।নিচে লেখা নামটা দেখে ভীষণ বিরক্ত হয় মম।সাজেদুল ইসলাম।ক্লাসে সাজেদ নামে দুইজন আছে দুটাই পেইন সারাক্ষণ ভ্যান ভ্যান করে।কোন গাধা টা এটা দিল ভাবছে সে।এই গাধাটা কি জানে না সে যে শুভকে পছন্দ করে? ক্লাসের সবাই যেখানে জানে সেখানে না জানার তো কথা না।নাকি শুভকে যে পছন্দ করে সেটাকে মজা হিসেবে ভেবেছে।এখন নিচে গিয়ে বুঝিয়ে বলে আসতে হবে।কারো ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে খারাপ ই লাগবে ওর।
সিঁড়ি থেকে নেমে দেখে টি শার্ট পরা একটা ছেলে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে পার্কিং লটে,আশে পাশে আর কেউ নেই।ওর দিকে মুখ ফিরে তাকাতেই কি যেন হয়ে যায় মম দৌড়ে ছেলেটার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে,দু হাতে শুক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মমর প্রথম ভালবাসা আজ পাশে এসেছে।অভিমানে বলে এত দিন বলনি কেন?আমি যে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।আমাকে এত কষ্ট দিতে পারলে তুমি।হতভম্ব ছেলেটা আলিঙ্গন থেকে বের হতে চায়,মম আরও শুক্ত করে জড়িয়ে রাখে।কেউ দেখলে দেখুক।এই ছেলেটা ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে,সেই শাস্তি আজ তাকে পেতেই হবে।কোন ভাবেই ছাড়বে না সে।এখন মনে পড়ল শুভর ভালো নাম সাজেদুল ইসলাম।অপ্রত্যাশিত আনন্দে মমর চোখে পানি চলে আসে।অবাক হয়ে দেখে লাজুক ছেলেটার চোখেও পানি।এই গাধা তুমি কাঁদছ কেন? শুভ জবাব দেয় আমার বাবুই টা যে কাঁদছে। মমর বিকেলটা এখন আর বিষণ্ণ নেই,মেঘমুক্ত ভালবাসাময়।

এই সময়ে ২/১৪/২০১৩ ১০:১০:০০ PM 

হয়নি বলা ভালোবাসি তোমায় লিখছেন-এহসান আহমেদ

ღহয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়ღ
ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৩ღ
হয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়
লিখছেন-এহসান আহমেদ

হানিফ পরিবহন এর বাসে বসে ঢাকা থেকে খুলনা যাচ্ছি । জীবন এ কখনই এত দূর যাওয়া হয় নি । খুয়েট এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুলনা যাচ্ছি তো , আসলে জীবন যুদ্ধে পদার্পণ করতে যাচ্ছি তাই কিছুটা ভয় লাগসে । কিন্তু কখনও ভাবি নাই যে এই জীবন যুদ্ধের মাঝে যে আমার জীবন টা বদলে যাবে ?
সকাল ৭ টার বাস তাই সকাল সকাল এ বাবা মার কাছ থেকে দুয়া নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে আমার বাস এ উঠার কথা তাই বাস ছাড়ার আধা ঘণ্টা আগেই বাস কাউন্টার এ এসে পরলাম । যেহেতু আমি আজ অনেক নার্ভাস তাই সিগরেট টা কেন যেন তাই একটু বেশি খাচ্ছিলাম । বাস কাউন্টার এর পাশে একটা চায়ের দকান ছিল তাই ওখানে দারিয়ে আনমনে সিগরেট টা টানছিলাম , হটাত একটা ডাকে পেছনে তাকালাম , দেখলাম একটি মেয়ে আমাকে বলছে “ ভাইয়া হানিফ পরিবহন এর বাসের কাউন্টার কোনটা ? আমি কিছুটা অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে চেয়ে ছিলাম , মেয়ে টি আবার জিজ্ঞাস করল ? আসলে আমি ছোটবেলা থেকে মেয়েদের পচাতে ভালবাসি , এবার ভাবলাম কি আজিব মেয়ে তার চোখের সামনেই কাউন্টার কিন্তু সে দেখতেই পারছে না, তখন আমার মন চাইছিল মেয়েটার সাথে একটু দুষ্টামি করতে কিন্তু কেন জানি মেয়েটার নিস্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা বলতেই পারলাম না তাই বাধ্য হয়ে বলে দিলাম যে কাউন্টার টি আমার পিছনে । তখন মেয়েটি মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে বলল সরি ভাইয়া “আমি না আসলে এরকম ই চোখের সামনেই সবই থাকে কিন্তু দেখেও চিনতে পারি না”
আমি বললাম হা এটা অবশ্য একটি ভাল দিক ই বটে , মেয়ে টি আর কোন কিছু জিজ্ঞাস না করে কাউন্টার এর বেতর চলে গেল আমিও বাস এর অপেক্ষায় দারিয়ে আছি ।
একটুখন বাদেই খুলনার বাস এসে গেল, আমিও যথারিতি আমার সিট এ বসে পরলাম। এরপর যা হল সেটা কল্পনাতেও কখনও ভাবি নাই ! দেখলাম সেই মেয়েটি আমি যে বাস এ যাচ্ছি সেই বাস এ উঠছে এবং একসময় মেয়েটা আমার পাশের সিট এ এসে বসলো ! আমি চুপ চাপ ভদ্র ছেলের মত বসে রইলাম ! আমি বাইরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে সব দেখসি হটাত মেয়েটা বলল “সবকিছুই কত দ্রুত ছুটে চলসে তাই না” আমি বললাম হাঁ তা তো অবশ্যই সবকিছুই খুব দ্রুত ছুটে চলছে, আমি আপনি সবাই ! তারপর মেয়েটা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছিল আর আমি যেন কেন টা খুব অবাক হয়ে সুনসিলাম আর ভাবসিলাম এমন মেয়েও হয় পৃথিবীতে ? যে কিনা এক মুহূর্তের মধ্যে কাওকে আপন করে নিতে পারে ! আসলে আমার ও কেন জানি মেয়েটার সম্পরকে জানতে ইচ্ছা করছিল তাই আমিও তার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম , কথায় কথায় জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সোহানা , উত্তরায় থাকে এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ এ পরে , মেয়ে টা বলল তার কোন মা নাই, ছোট বেলায় তার মা মারা যায় তাই তার বাবা আর একটা বিয়ে করে কিন্তু তার সৎ মা তাকে একদম এ দেখতে পারে না । এছারা সে আর অনেক কথাই বলল যেগুলো বলতে পারলাম না। সে আজ তার নানুর বাড়ি যাচ্ছে যশরে তার মামার বিয়েতে ! যেতে যেতে পাটুরিয়া চলে এলাম , চরম যানজট থাকায় ফেরিঘাট এ ৬ ঘণ্টার ও বেশি সময় লেগে গেল। এর মধ্যে মেয়েটার সাথে আরও অনেক কথাই হল সে আমার সব কিছু জানতে চাইল , কি করি কই থাকি আর কত্ত কি। আমি বার বার কেন যেন তার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকি , অনেকে বলতে পারেন যে বাস এর মধ্যে কোন মেয়ের সাথে কয়েক ঘণ্টার পরিচয় ! এর মাঝে কি তার সাথে কি প্রেম এ পরা যায় ? যারা এই প্রশ্ন টা করবেন তাদের বলছি > আমি কখনও কারও প্রেম এ পরি নি , প্রেম কি জিনিস সেটা হয়ত বুঝি না কিন্তু এটুক বলতে পারি কারও প্রেম এ পরতে হয়ত বেশি সময় লাগে না ।
যাই হোক আমাদের বাস ছুটে চলসে গন্তব্বের উদ্দেশে সাথে সাথে আমারাও । রাস্তা যত ফুরিয়ে আসছিল আমার বুকের বেতর টা যেন কেমন লাগসিল, আমি আনমনে তার ভাবসি আর সে অনরগল বলেই যাচ্ছে। হটাত মেয়েটা চুপ আমি, তার দিকে তাকাতে দেখি সে আমার দিকে চেয়ে আছে । আমাকে জিজ্ঞাস করল আপনার কি মন খারাপ ?? আমি বললাম না তো , সে বলল তাহলে চুপ করে কি ভাবছেন ? আমি বললাম কাওকে হারাবার প্রহর গুনছি ! জানেন মেয়েটা আর কোন কথাই বলে নি বাকি সময় টা জুড়ে। আমি বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম , একাবার লক্ষ করে বুজেছি যে মেয়ে টা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন প্রায় বিকাল এবং বাস টা প্রায় এর যশোর এর কাছাকাছি । একসময় বুজলাম মেয়েটা ঘুমাচ্ছে আমার কাঁধ এ মাথা রেখে। আমি আর কিছু বললাম না কিন্তু কেন জানই খুব ভাল লাগছিল ও অনেক খারাপ ও লাগছিল। যাইহক একসময় বাস টা যশোর এসে পরল, যশোর এর যাত্রী রা সবাই বাস থেকে নামছিল কিন্তু সে তখন ও অঝর ঘুম এ মঘ্ন আমার কাঁধ এ মাথা রেখে । আমি তার ঘুম ভাঙ্গালাম , সে নিজেকে আমার কাঁধ এ পেয়ে অনেকটা লজ্জা পেল,আমাকে সরি বলল।আমি তাকে বললাম its ok । সে তার ব্যাগ নিয়ে বাস থেকে নেমে যাচ্ছিল , কেন জানি বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছিল , আর আমার মনটা তত বার এ দুকরে কেঁদে উঠছিল, মন বলছিল এই দেখাই কি শেষ দেখা ? আর কি দেখা হবে না , আর কি কোনদিন তার কাছ থেকে এইভাবে তার কথা সুনতে পারব না ? কখনও কি সে আমার কাঁধ এ মাথা রেখে ঘুমাবে না ??? আমি কি তার প্রেম এ পরেছি নাকি এ শুদুই অনুভূতি ?? যদি তাই হয় তবে সে কেন পেছন ফিরে তাকাল ?? আমি তার চোখে দেখেছি কাওকে ফেলে যাওয়ার কষ্ট! আমি না আজ ও রাতে ঘুমতে পারি না ? বার বার তার ওই নিষ্পাপ মুখখানি আমার চোখে ভেসে আসে ? কেন আমি তাকে ভুলতে পারি না ? সে কি কি আমার মত কষ্টে আছে ? সে কি আমার কথা ভাবে ? আমি আজও তার অপেক্ষায় আছি , আজ প্রতিদিন বাস এ তাকে খুজি আর ভাবি কখন সে আমার পাশের সিট এ এসে বসবে ?
তাই তো আজও রাতে কাঁদি একা একা আর বলি “হয়নি বলা ভালোবাসি তোমায়” !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

নির্বাক ভালবাসা…....... লিখেছেনঃ অনিক বাসাক

ღনির্বাক ভালবাসা….......ღ
ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৪ღ
নির্বাক ভালবাসা….......
লিখেছেনঃ অনিক বাসাক

দোকান এ দাড়িয়ে খেলনা দেখছি । আজ পাশের বাড়ির এক ছোট্ট বোন এর ৩ তম জন্মদিন। ওদের বাড়ির সাথে আমাদের অনেক ভাল সম্পর্ক। তাই যেতে ই হবে। তার উপর ছোট্ট মণিটা আধো আধো করে বলে গিয়েছে যে ভাইয়া ভাইয়া তুমি আসবে কিন্তু। না হলে আমি কান্না করব..................
তো না গিয়ে কিভাবে থাকব। কিন্তু কি যে খেলনা দিব পাচ্ছি না ভেবে। হটাত একটা পুতুল এর দিকে চোখ আটকে গেল। ঠিক যেমন রূপকথার গল্পে থাকে। অনেক ক্ষণ কেমন যেন আনমনে তাকিয়ে থাকলাম... আমার এতটাই ভাল লাগল যে আমি দুই টা কিনে ফেললাম। একটা গিফট দিব আর একটা রেখে দিব। যেদিন আমার ভালবাসার মানুষ এর সাথে দেখা হবে সেদিন তাকে দিব।

এতক্ষণ এ চোখ পরল ঠিক পাশে দারিয়ে থাকা এক রাজকন্যার দিকে। ঠিক আমি যে পুতুল টা কিনলাম ঠিক সেই রকম। চোখ যেন পরতেই চায় না। সে ও কি যেন গিফট কিনছে আর আমার দিকে চেয়ে মিট মিট করে হাসছে............ একটা ছেলে কে এভাবে পুতুল কিনতে দেখলে হয়ত হাসি পাবার ই কথা...... হা হা হা হা ...।।

আমি তার থেকে একটু আরাল এ দাঁড়ালাম, আর তাকে আরাল থেকে দেখতে লাগলাম। একটু পর সে চলে গেলে আমি ও চলে আসলাম। আর দু চোখ এ নিয়ে এলাম কোন এক অজানা রাজকন্যার সুন্দর ওই মুখ এর স্বপ্ন । কিছু তেই যেন ওই চোখ এর চাহুনি, ওই ভাবে পিট পিট করে হাসা , কিছু ই ভুলতে পারছি না.........।

সন্ধার পর জন্মদিন এর অনুষ্ঠান এ গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমি যেন কি দেখে চমকে গেলাম। যেন অনেক গুল সোনার ভিতর একটা হীরের টুকরো ঝলমল করছে। এত্ত গুল ছোট্ট শিশুর মাঝে তাকে যেন আর ও অনেক মিষ্টি লাগছে। হম। এই সেই মেয়েটি যাকে আমি আজ দেখেছিলাম। .....................

তাকে এখানে পাব এ তো কল্পনার ও বাহিরে। একজন এর থেকে জানতে পারলাম এটা এই বাড়ির অ্যান্টির কেমন যেন কাছের আত্মীয় ,। সোফা তে বসে আমি একমনে সুধু তাকে ই দেখে যাচ্ছি , যার জন্মদিন এ এসেছি সে যে কখন এসে ঠিক টার জন্য আনা উপহার টা আমার হাত থেকে নিয়ে গেছে তাও ঠিক পাই নি।

একটু পরে খাবার দেওয়া হলে মেয়েটা কোথাও জায়গা না পেয়ে আমার পাশে এসে বসে। আমার মন এর ভিতর তখন যেন ঝড় শুরু হয়ে গিয়েছে। চেষ্টা করছি কথা বলার পারছি না। শেষ এ কষ্ট করে হুট করে বলে ফেললাম কেমন আছেন? মেয়ে টা চমকে ওঠার মতন করে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল।
আমি ভাবলাম আমাকে চেনে নি হয়ত। তাই দোকানের দেখাদেখির কথা টা বললাম। আবার ও প্রশ্ন করলাম যে কেমন আছেন? কিন্তু কোন উত্তর নাই।
নিজেকে কেন যেন অপমানিত মনে হচ্ছে। আর ও কিছু বললাম কিন্তু কোন উত্তর দিল না।
নাহ এই রকম অপমান আর ভাল লাগল না। আমি বেশ জোরে করে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম – এই যে আপনি নিজেকে কি মনে করেন? অনেক সুন্দরী তাই এতো অহঙ্কার? বোবা নাকি যে একটা কথারও কি উত্তর দিতে পারলেন না। বোবা হয়ে আছেন কেন? .........।

আমার বলা টা মনে হয় অনেক বেশি জোরে হয়ে গিয়েছিল। তাই তো দেখলাম সবাই আমার দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু সবচে অবাক হলাম যখন দেখলাম মেয়েটার চোখ এ জল। সে মুখ টা চেপে ধরে দৌরে পাশের ঘর এ চলে গেল। কিছু ই বুঝতে পারলাম না।

পরিবেশ টা স্বাভাবিক করে যার জন্মদিন তাঁর মা আমার কাছে এলেন। আমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতেই অ্যান্টি বললেন যে তুমি এটা কি করলে?!! তুমি জান ? ও সে সত্যি বোবা। ক্লাস থ্রি তে থাকতে একটা দুর্ঘটনার পর থেকে ও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আর তুমি আজ ওইটাই ওকে সবার সামনে এভাবে মনে করিয়ে দিলে?

অ্যান্টি চলে গেল। আমি যেন আমার নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছিলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে নগণ্য কীট বলে মনে হতে লাগল। একটা তিব্র অপরাধ বোধ আমাকে যেন আঁকড়ে ধরে গলা টিপে মেরে ফেলছে.........।। নাহ... আমি অনেক ভয় নিয়ে আস্তে আস্তে পাশের ঘর এ ঢুকলাম...।।

আমার সেই রাজকন্যা একটা খাট এর উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। সামনে যেতে দেখি সে কাঁদছে। শব্দ করে কান্নার থেকে এই নির্বাক কান্না যে এতটা তিব্র বেদনার হয় আজ প্রথম বুঝলাম...............
আমি রাজকন্যার পা এর সামনে মেঝেতে বসে পরলাম। আমাকে দেখে ই ও নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করল। আমি দু হাত জোর করে ওর সামনে বসে রইলাম। ইশারা তে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে আমি জেনে শুনে করি নি। কোন দিন ইশারা তে কাউকে কিছু বুঝাই নি। তাই মনে হয় বুঝানোর ব্যাপার টা গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একটা বানর পাগল এর মতন হাত নড়াচ্ছে...............।।
আমার এ রকম দেখে দেখি রাজকন্যা হেসে ফেলেছে............। আমি বুঝাতে পারব না কি সুন্দর সেই হাসি। চোখ এ এখন ও জল গুল লেগে আছে আর মুখ এ সবে মাত্র হাসি ফুটল। মনে হল ভোঁর এ দূর্বা ঘাস এর উপর চিক চিক করা একটা শিশির বিন্দু...।।

রাজকন্যা ইশারা তে বুঝাল যে সে বলতে পারে না কিন্তু শুনতে পারে , তাই আমি মুখ এ বলতে পারি তাকে । সে মেঝে থেকে আমাকে উঠে আসতে বলল। আমি যেয়ে তাঁর পাশে বসি। ধীরে ধীরে কথা সুরু হয়। মানে সে ইশারা তে বুঝাল, আর আমি মুখ এ বলতে লাগলাম । আমি এর আগে অনেক বোবা মানুষ কে দেখেছি কিন্তু তারা ইশারা তে কি বুঝায় টা বুঝি নি। কিন্তু রাজকন্যা যা বুঝাতে চাচ্ছে তাই আমি ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি। কেন এতটা বুঝতে পারছি বুঝতে পারছি না। রাজকন্যা ও কিছুক্ষণ পর জানতে চাইল যে আমি কিভাবে তাঁর সব কথা এত ভাল করে বুঝতে পারছি? আগে নাকি এত জলদি তাঁর কথা কেউ বুজতে পারে নি।
কথা টা শুনে আমার অনেক ভাল লাগল। কিছু ক্ষণ এর ভিতর আমারা অনেক ভাল বন্ধু হয়ে যাই, আমাকে ওই দুই টা পুতুল কেনার কথা জিজ্ঞাসা করল... আমি বললাম যে জীবনে যাকে সবচে বেশি ভালবাসব, যাকে সারা জীবন এর জন্য জীবন সাথী করে নিব তাঁর হাতে ওটা তুলে দিব......... সে দেখি মিটিমিটি করে হাসছে...... আমি তাকে বলি সে ফেসবুক ব্যবহার করে কি না। সে তাঁর আইডি আমাকে দিল। ...........................
অনুষ্ঠান ও এদিকে শেষ,রাজকন্যা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। আমার বুক এর ভিতর টা ধুক করে উঠল...। হয়ত আর দেখা হবে না............
ও টা টা জানিয়ে বাড়ি চলে গেল আর এদিকে আমি তো বাড়ি এসে ই ফেসবুক খুলে রাজকন্যা কে অ্যাড দিলাম। ৩০ মিনিট পর দেখি রাজকন্যা অনলাইন এ ।
সে দিন টা রাতে অনেক ক্ষণ কথা হল চ্যাট এ । রাজকন্যা নিজে থেকেই বলল যে সে নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল কারন তাঁর কথা গুল আমি অনেক ভাল বুঝতে পারি।

আমি তাকে ভয় এ ভয় এ জিজ্ঞাসা করলাম যে তাঁর মোবাইল আছে কি না, তাহলে যখন ফেসবুক এ আসব তখন তাকে মিসস কল দিলাম। সে উত্তর দিল হম আছে তো। কথা বলতে পারি না তাই বলে কি এসএমএস ও লিখতে পারব না? হা হা হা ...............।
সে তাঁর নাম্বার দিল , ওই দিন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।

সকাল এ উঠে কিছু ভাল লাগছিল না। বার বার রাজকন্যার মুখ টা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মাত্র একদিন পরিচয় তাতে ই এই অবস্থা ?...... এ আমার কি হল? তবে কি তাকে মার্কেট এ প্রথম দেখে আমার যে ভাললাগা সৃষ্টি হয়েছিল টা ভালোবাসা তে রুপান্তর হয়েছে? ভাবছিলাম যে তাকে এসএমএস দিব কি না,...।। মোবাইল টা হাতে নিতে ই অবাক!!!!! রাজকন্যার এসএমএস। >>> শুভ সকাল।
আমি আর দেরি না করে এসএমএস দিলাম তুমি কই? কি কর? সকাল এ নাস্তা করেছ?

। এসএমএস সেন্ড করেই আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম... এ আমি কি রকম এসএমএস দিলাম। আমি তাকে প্রথম দিন এই ভালবেসে ফেলেছি তাই বলে কি এই রকম এসএমএস দিতে হয়? রাজকন্যা এখন কি ভাববে? আমাকে অনেক খারাপ ছেলে ভাবছে হয়ত...।। আমি কি তাকে হারিয়ে ফেলব?

ভাবতে ভাবতে রাজকন্যার এসএমএস>> বাব্বা বন্ধু আমার এত চিন্তা? হা হা হা হম খেয়েছি। আমি এখন বাড়িতেই। বসে আছি।

আমি এসএমএস দিলাম যে আমি ফেসবুক এ আছি। তুমি সময় পেলে এস। কিছু ক্ষণ পরে ই সে এল। কথা হল কিছু ক্ষণ। আমার প্রতিটা ক্ষণ যেন এখন সুধু তাঁর জন্য অপেক্ষা করা। সারা দিন ভাবি সুধু সে কখন ফেসবুক এ আসবে। কিচ্ছু আর ভাল লাগে না। সারা দিন সুধু তাঁর কথা। .....................

আমাদের নিয়মিত কথা হতে লাগল ফেসবুক এ ।এর মাঝে ৩ – ৪ দিন তাঁর সাথে দেখা ও করেছি। আমি অনেক অল্প সময় এ ওর সবচে কাছের একজন হয়ে উঠেছি ।
ও নিয়মিত আমার খোঁজ নিত। সকাল এ খেয়েছি কি না, পরেছি কি না, ঠিক মতন ঘুম পারছি কি না সব সব..................... আমার এলোমেলো জীবন টা যেন দূর থেকে ও সাজিয়ে দিচ্ছিল। তবে কি সে ও আমাকে ভালবেসে ফেলেছে?? ভাবতাম কিন্তু সাহস করে বলতে পারি নি......... যদি সে হারিয়ে যায়। আমি কোন দিন তাকে হারাতে চাই না।
আমরা মাঝে মাঝে ই বিকাল এ দেখা করতাম। আমাদের একটাই প্রিয় জায়গা ছিল, লেক এর পার এর ছায়া ঘেরা একটা বেঞ্চ। যে দিন দেখা করতাম ওই জায়গাতেই। ও যখন ইশারা তে আমাক কিছু বলত মনে হত যারা কথা বলতে পারে তাদের সব কথাও আমি এত পরিস্কার বুঝতে পারি না। কত কথা হত আমাদের...... কিন্তু এক অদ্ভুত নিরবতা...।

এদিকে আমার মন এর ভিতর টা অস্থির হয়ে উঠতে থাকে। আমি যতই ভাবি রাজকন্যা কে কিছু বলব না তবু যেন নিজের ভিতর টা আর ও অস্থির হতে থাকে।
ভাবলাম সে কি ভাববে ? আমি জানি আমি তাঁর অনেক অনেক প্রিয় একমাত্র মানুষ কিন্তু কেন? আমি রাজকন্যার সব কথা বুঝতে পারি তাই? নাকি সে আমাকে ভালবাসে? আমি আর এই দ্বিধা সহ্য করতে পারছিলাম না।
কিন্তু তাঁর সামনে গেলে বলতে পারি না। তাই আজ সিদ্ধান্ত নিলাম আজ যে করেই হোক ফেসবুক এ বলে দিব...............।
রাত এ সে ফেসবুক এ আসল। আমি সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে তাকে লিখলাম>>

“রাজকন্যা আমি তোমাকে আমার মনের রাজ্যে রাজকন্যা করে রাখতে চাই! তোমাকে প্রথম যে দিন দেখেছিলাম সেদিন ই ভালবেসে ফেলেছি......। জানি না আমি তোমার যোগ্য কি না। কিন্তু সুধু এই টুকু জেনে রাখ , মন এর যে যায়গা তে ভালোবাসা টা যত্নে রেখে দেই সেই যায়গা তে তোমার নাম লিখা হয়ে গিয়েছে। তুমি আমাকে গ্রহন না করলেও আমি কোন দিন অন্য কাউকে আর ভালবেসে আমার মন এ বসাতে পারব না। ওই যায়গা টা সুধু ই তোমার..........................................।“

অনেক ক্ষণ রাজকন্যার কোন উত্তর পাচ্ছি না। অনেক্ষন পর সে লিখল>
>> তা হয় না। তোমার সুন্দর একটা জীবন এর সাথে আমার নির্বাক জীবন মিলবে না। আজ তুমি যেটা ভালোবাসা ভাবছ তা ভালোবাসা নয়। এটা হল আমার উপর তোমার করুনা। আমি তোমার থেকে এটা আশা করি নি...।। হয়ত আমাদের আর দেখা হবে না.........

রাজকন্যা চুপ হয়ে গেল। আর আমার মনে হতে লাগল আমার ভিতর থেকে কে যেন আমার হৃদয় টা ছিরে নিয়ে চলে যাচ্ছে। জীবনে প্রথম আর শেষ বার এর মতন কাউকে ভালবাসলাম...। আর আজ তাকে হারিয়ে ফেললাম.........।

সারা টা রাত দু চোখ এর জলে কাটল...।। রাজকন্যা কি সত্যি আমাকে ভালবাসে না? নাকি ভালবাসে? না হয়ত সুধু ই বন্ধু ভাবে......
কখন দু চোখ এর পাতা এক হয়ে গিয়েছে জানি না। সকাল এ ঘুম ভাঙতেই মনে হতে লাগল হে সৃষ্টিকর্তা আমার ঘুম কেন ভাঙ্গালে...। তাঁর থেকে সারা জীবন এর জন্য চিরনিদ্রা তে শুইয়ে দিলে ই তো পারতে।

নাহ আজ রাজকন্যার কোন এসএমএস নাই। ফেসবুক খুলে দেখি রাজকন্যা তাঁর আইডি বন্ধ করে দিয়েছে............।

কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারচিলাম না। আজ ভালোবাসা দিবস।। আর আজ ই আমার জীবন থেকে আমার ভালোবাসা হারিয়ে গেল। ভালোবাসা নয়।। সে তো আমার জীবন।। তাই বলা যায় যে জীবন হারিয়ে গেল...।। এভাবে প্রান হীন জীবন রেখে কি লাভ!!

অনেক ভয় নিয়ে রাজকন্যা কে এসএমএস দিলাম যে >> রাজকন্যা বন্ধু হিসাবে তোমার সাথে আমি শেষ বার দেখা করতে চাই...। আমাদের সেই লেক এর ধার এ ...আজ বিকাল ৪ টায়।
আমার বিশ্বাস ছিল সে আসবে। কারন সে যে আমার জীবন। আর আমার জীবন কে আমার থেকে ভাল কে চিনবে।

আমি অপেক্ষা করছি.........।। হম ওই তো আমার রাজকন্যা আসছে...
রাজকন্যা এসে আমার পাশে বসল... কিন্তু আমার দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। কিচ্ছু বলছে ও না।
কি হল তাঁর...।।
আমি আর কিছু বললাম না......... সুধু তাঁর হাত এ সেই পুতুল টা তুলে দিলাম, যেটা আমি কিনছিলাম যে , তাকে ই দিব যাকে আমি আমার জীবন সাথী করে নিব...।

পুতুল টা হাতে নিয়ে রাজকন্যা আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল...। এতক্ষণ পর আমি লক্ষ্য করলাম যে রাজকন্যার চোখ এ জল। তাই তো সে চোখ তুলে তাকাচ্ছিল না...।

সে আমাকে ইশারা তে বলল যে তুমি তো এটা তাকে ই দিতে চেয়েছিলে যাকে তুমি তোমার জীবন সাথী করে নিবে।। তবে আমাকে দিচ্ছ কেন? তুমি তো আমাকে আজ এসএমএস দিলে যে আমাদের আর দেখা হবে না... তবে এটা আমাকে কেন দিচ্ছ?

আমি বললাম হম। সত্যি তো। বন্ধু হিসাবে আমাদের আর দেখা হবেন না। .........।

এখন আমাদের দেখা হবে ভালবাসার মানুষ হিসাবে। কারন তুমি আমার জীবন...। আমার ভালোবাসা। তুমি কথা বলতে পার না তো কি হয়েছে... যারা বলতে পারে তাদের থেকে ও যে আমি তোমার এই নির্বাক কথা অনেক বেশি বুঝি...।। তবে বলা আর না বলার মাঝে পার্থক্য কই। ? আর তোমাকে করুনা কোন দিন ও করি নি। কারন নিজের জীবন কে করুনা করা যায় না। সুধু ই ভালোবাসা যায়। অসীম ভালোবাসা...........................।।

রাজকন্যা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠল...। আজ এই কাঁদা তে শুধু ই ভালোবাসা। আমাকে সে বুঝাল যে সে ও আমাকে তাঁর জীবনে এর থেকে বেশি ভালবাসে। কিন্তু সে চায় নি যেন তাঁর নির্বাক জীবন টার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়.........। তাই বলতে পারে নি...। আর আমার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিল............।।

পাগলী কোথাকার...। একদম পাগলী......।

রাজকন্যার চোখ এর জল মুছিয়ে দিতে ই সে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরল। আর আমার বুক এর ভিতর মাথে রেখে বিন্দু বিন্দু করে চোখ এর জল ফেলতে লাগল............।
কাঁদুক...। কিছু কিছু চোখ এর জল কখনো মুছে দিতে হয় না ..................

আমি ও আমার রাজকন্যার মাথায় একটা আলত করে চুমু দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরি.....................
হোক না নির্বাক ভালোবাসা, তাতে কি...। তাঁর এই নীরবতা যে সব কথা কেও হার মানায়........................।
এই সময়ে ২/১৪/২০১৩ ১০:১৩:০০ PM 

ভালোবাসার লাল গালিচা সংবর্ধনা লিখেছেন- মোঃ মাসুদ রানা

ღভালোবাসার লাল গালিচা সংবর্ধনাღ
ღভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প-০৫ღ
ভালোবাসার লাল গালিচা সংবর্ধনা
লিখেছেন- মোঃ মাসুদ রানা
............................................................।।
“তুজে দেখা তোয়ে জানা না সানাম
পেয়ার হোতা হে দিওয়ানা সানাম”
এই রানা উঠ আর কত ঘুমাবি।লেখা-পড়া নাই সারাদিন টই টই কইরা টোটো কোম্পানির চাকরী করছ।রাতে কি চুরি করছস।
এই অসাম গানের সাথে আমার লাইলী কে নিয়া সপ্ন দেখতেছিলাম বাবা এসে ঘুম ভেঙ্গে দিল।
(বাবা তুমি কি বুঝবা নিজের প্রেম তো ঠিকি করছ,নিজেও তো লাইন মারছ মা তো আমাকে বলছে)
আমার মা-বাবার লাভ মেরেজ।
যাই হোক বাবা আমাকে সকাল সকাল বাজার করতে বলছে। কানে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমাকে বাজার করতে পাঠাবে।যাক পকেটে আরো কিছু টাকা আসবে আগামী কাল ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস আমার জানেমান লাইলী কে নিয়া ঘুরতে পারুম।তারাতারি ফ্রেশ হয়ে ছুটলাম বাজারের দিকে।এমন সময়ে মোবাইলে কল।
আমার জান কল দিয়েছে।
রানা তুমি কোথায়?কাল তোমার জন্য একটা চমক আছে এখন বলব না।
আরে বলবা না তো এখন বললা কেন।আর পারি না তোমাকে নিয়া।আমারে জানের নাম তুষা।
কত কি প্লেন করি রেখিছি কাল কি করব।ফুচকা খাব, ঘাস দিয়ে বানানো একটা পায়েল ওকে পরিয়ে দিব।
বাজার শেষ করে বাসায় আসলাম। দেখি বাবা রিক্সা থেকে নামছে।বাবার হাতে শপিং বেগ।বাসায় ঢুকে দেখি মা এর জন্য নতুন শাড়ী ও নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনেছে।
বুজতে পারলাম না কিছুই।যাই হোক কাল বাসা থেকে সকাল সকাল বের হতে হবে।
রাতে খাবার পর ঘুমাতে যাব এমন সময় বাবা এসে আমাকে বলল।
রানা কাল সারাদিন বাসায় থাকিস তো আমি আর তোর মা একটু বের হব রাত হবে ফিরতে।তোদের খালামণিদের বাসায় যাব। রাহুল কে স্কুল থেকে নিয়ে যাবি আর নিয়ে আসবি।
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল।আমি তো কাল আমার লাইলি কে কথা দিছি ওরে নিয়া সারাদিন ঘুরব।
কি করব কি করব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে চিন্তায় একাই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
যাই হোক আমি একটা অসাধারন ব্যবস্থা করে ফেললাম।রাহুলকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম বাসার চাবিটা হাতে নিয়ে।রাহুল আবার স্কুল এ যেতে পছন্দ করে না।মা-বাবা বের হয়ে যাবার পর আমি রাহুল কে নিয়ে বাসায় এসে পরলাম। রাহুল তো বেজায় খুশি তার স্কুল এ যেতে হবে না।আমি পাশের বাসার ছোট পিচ্চি মেয়েটাকে এনে দিয়ে গেলাম রাহুলের সাথে খেলার জন্য।
।আমি তুষাকে ফোন দিয়ে বললাম তুমি বিকাল ৩ টায় টিএসসিতে আসবে।
আলমারি থেকে একটা লাল পাঞ্জাবি বের করলাম। আর ২ টায় বের হয়ে পরলাম।
যাক ভালই ভালই হচ্ছে সব।তুষার জন্য কতগুলো লাল গোলাপ কিনলাম।আমি পার্কে ঢুকার পর দেখি তুষা বসে আছ।
আমি অনেক অবাক হইলাম।ও একটা নীল শাড়ী পরে আছে। আজ পর্যন্ত কোনদিন তুষা শাড়ি পরেনি। শাড়ি আমার কাছে অনেক পছন্দ। ও কে আমি অনেক বার বলেছি শাড়ী পরার জন্য।আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠল।
তুষার পাশে বসলাম এবং তাকে মন ভরে দেখতে লাগলাম।
ঠিক যেন আমার অপরুপ সুন্দরী বউ।
আমি তুষাকে লাল গোলাপ গুলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার পকেটে রাখা ওর জন্য ঘাসের পায়েল টা পড়িয়ে দিয়ে বললাম
"Love is like a portrait in my mind that transforms into a person whenever I see you. My Valentine."

তুষা প্রায় কেদেই দিল।আমি ওর চোখের পানি মুছতে লাগলাম।
চোখের পানি মুছার পর আমার মাথা টা উপরের দিকে তুলে তো আমি অবাক।তুষার পিছনে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
বা...............বাবা তুমি এখানে? মা তো পাশে থেকে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
তাহলে কি আজ মা-বাবা তাদের ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করতে বের হয়েছে?
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মা বাবার হাত টেনে পার্কের বাহিরে উদ্দ্যেশে যেতে থাকল।বাবা আমাকে বলছে বাবা বাসায় আসো তোমার জন্য আমার লাল গালিচা অসাধারন সংবর্ধনা আছে।তারাতারি চলে এসো।

ভালো লাগলে লাইক দিয়ে আপনাদের মতামত জানান

লেখক/এডমিন>মোঃমাসুদ রানা

ღঅপেক্ষাღ ණলিখেছেনঃ আল আমিন মোহাম্মদ,

অপেক্ষা
ღঅপেক্ষাღ
ණলিখেছেনঃ আল আমিন মোহাম্মদ,

অনেকক্ষণ ধরে কফিশপে বসে আছি।কফি খাচ্ছি আর বাইরের তুষারপাত দেখছি। মওসুম শুরুর এই সময়টায় সিডনীতে তুষারপাতের ঘটনা খুবই সাধারণ। এই দৃশ্যটা অন্য সময় দেখতে বেশ ভাল লাগলেও এখন খুবই বিরক্ত লাগছে। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সবসময়য় সম্ভব না, অন্তত কারো জন্য অপেক্ষা করার সময় তো নয়ই। কিছুক্ষন পরপর গেটের দিকে তাকাচ্ছি । অনেকেই আসছে, যাচ্ছে। কিন্ত না, আমি যাকে খুঁজছি তার দেখা মিলছে না। ও হ্যাঁ, বলা হয়নি, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে আমি আসলে এক ললনার জন্য বসে আছি । সুমনা ওর নাম। ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। অথচ এ পর্যন্ত আমরা কেউই কাউকে দেখিনি । পারিবারিক ভাবেই সবকিছু হয়েছে । অবশ্য এখন দেখাশোনার ব্যাপারটা ফাউ । একারনে প্রথম প্রথম আমি আসতে চাইনি। কিন্ত মা জোর করে পাঠিয়ে দিল। কারন যদি বিয়ের পরে বউ পছন্দ না হয়, তখন তাদের দোষারোপ করব। আমি বলি, কেন তোমরা তো আগেই সবকিছু ঠিক করে ফেলেছ? তাতে কি হয়েছে? যদি তোর পছন্দ না হয় তবে বিয়ে ক্যানসেল। আচ্ছা ঠিক আছে, একদিন গিয়ে দেখে আসব। একদিন নয় তুই আজকেই যাবি। লিঙ্কন স্ট্রীটের ওই কফিশপে ওকে আমি পাঁচটায় আসতে বলেছি। আমি চোখ কপালে তুলে বলি -আজকেই, তাও পাঁচটায়। মা দেখো, এখন বাজে সাড়ে চারটা। এখন বের হতেই বাজবে সোয়া পাঁচটা। আর পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে পাচটা। মা তুমি ওনাকে বলে দাও, আজ না অন্যদিন। মা বিরক্ত হয়ে বলে-ওর অন্যদিন নাকি কাজ আছে। আজকেই ফ্রী। ও,তাহলে তোমার কাছে শুধু ওর কথারই দাম আছে । কাজ হচ্ছে না দেখে আবার বলি, বাইরে তুষার পড়ছে এখন বেরোলে নিশ্চিত ঠান্ডা লাগবে। তাছাড়া আজ আমার অনেক কাজ আছে ইত্যাদি। মা রাগ করে বলেন, তুই আসলেই তোর বাবার মত । খালি ক্যাচক্যাচ করিস। যা বলেছি, তাই কর। আর যদি তোর একদমই ইচ্ছে না থাকে, তবে নিজে ফোন করে ওকে আসতে মানা করে দে। আমি চললাম ।

মা'র কথামতো কফিশপে বসে আছি। এখানে লোকজন খুব একটা নেই। এদিকে সময় যেমন বাড়তে লাগল, বাইরে তুষারপাতও পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। কিন্তু মেয়েটির আসার নাম নেই। আমার রাগ হতে শুরু করলো। মেয়েটি তাহলে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। ঠিক আছে, মহারাণী! সেয়ানা আমিও কম নই। আর আমি তোমার বাধ্যগত ছাত্র নই যে আমি সারাদিন বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। আমি তোমার প্রেমেও পড়িনি যে, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। খালি মায়ের পছন্দ বলে বিয়েটা করার জন্য রাজি হয়েছি।

একঘন্টা পার হয়ে গেছে । ভাবলাম মা'কে জানিয়ে রাখি যে, তার হবু বৌ'মা মনে হয় ভুলে গেছে যে তার বেকুব হবু স্বামী তার দর্শন লাভের আশাই কফিশপে তপস্যা করছে। ফোন দিতেই করা একটা ধমক লাগাল মা, আর কিছুক্ষন কেন অপেক্ষা করছি না? সাথে এটাও বলতে ভুললেন না, যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি, তখন তো আর সময়ের কোন বালাই থাকে না। আমি তাড়াতাড়ি ফোন কেটে ভাবি, বেগম রোকেয়া বৃথা চেষ্টা করেছেন। নারীজাতির উন্নতি হবে কি ভাবে? বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর নারীর জন্য অপেক্ষা কি এক জিনিস? মজনু, দেবদাসের কথা সেই মুহূর্ত্বে মনে করে খুব হাসি পেল। আহ বেকুবগুলো প্রেম করে কি ভুলটায় না করেছিল। হঠাৎ দেখি মায়ের ফোন। মা জানাল, সে আসছে। আমি যেন কোথাও না যাই। ফোন রেখে ভাবি, আমার কপালে সাঙ্ঘাতিক দুঃখ আছে। এই মেয়ে বিয়ে হওয়ার আগেই শাশুড়িকে পটিয়ে ফেলেছে, বিয়ের পরে না জানি আরও কি করবে?
মা'য়ের নিষেধ উপেক্ষা করার মত সাহস আমার নেই। শেষে চোখ বন্ধ করে ভেড়া গোণা শুরু করলাম। হঠাৎ মিহি গলার স্বর শুনে ধ্যান ভাংলো। কি ঘুমুচ্ছিলেন বুঝি?-না একদম না। ‘আমি সুমনা, আপনি নিশ্চয় আকাশ’। ‘জি বসুন প্লিজ’। কথাটা বলতে গিয়ে ওর দিকে ভালোমতো তাকালাম। তাতেই যেন আমার সর্বনাশটা হয়ে গেল। পরিবেশ হালকা করার জন্য ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ভাবে চিনলেন? এই প্রচণ্ড তুষারপাতের বিকেলে বিয়ে পাগল লোক ছাড়া আর কে বাইরে বের হবে বলুন? আর এই শপে এই মুহুর্ত্বে আমি আর আপনি ছাড়া কেউই নেই । তাকিয়ে দেখি আসলেই তো। তাছাড়া অবশ্য আন্টি আপনার একটা ফটো আমাকে দিয়েছিল। তবে আমি খুব সরি। আমার এতটা দেরি করাটা একেবারেই উচিত হয়নি। আসলে কি করবও বলুন? খুবই দরকারি একটা কাজ ছিল । না করে আসলে অনেক ঝামেলা হয়ে যেত। আমি বিগলিত হয়ে বলি, না না ঠিক আছে। কিন্তু মনে মনে ভাবি, সুন্দরী তোমার দেখার পরে একঘন্টা কেন সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারি, ওই মুখের মায়ায় আমি আমি দেবদাস হতেও রাজি। হয়ত আরো কিছু হতে চাইতাম, যদি না ও পাশ থেকে-আপনি কি কিছু বলবেন, না কি? আর কফিশপে ডেকে কি না খেয়ে রাখবেন? আমি ব্যস্ত হয়ে ওয়েটারকে ডাকি। কারন সুন্দরীদের কথা অগ্রাহ্য করতে নেই......



ღভাললাগলে লাইক কমেন্টস শেয়ার করুণღ

ღjrk

ভালোবাসা অবাক চোখে লিখেছেন- Sesh rater adhar

ভালোবাসা অবাক চোখে
ভালোবাসা অবাক চোখে
লিখেছেন- Sesh rater adhar

অনেক দূর থেকে দেখেই রক্তিম নীলিমা আসছে বুঝতে পারল । রক্তিম ১০ টাকার বাদাম কিনে তা খাচ্ছিল। নীলিমা কাছে আসাতেই জিজ্ঞাসা করল-কেমন আছো ? বাদাম খাবা ?
নীলিমা রক্তিম এর দিকে তাকিয়ে রইল । রক্তিম বুঝল না নীলিমার মনের অবস্থা রাগের দিকে না ঠাণ্ডা । আবার জিজ্ঞাসা করল - বাদাম খাবা না?
নীলিমা আবার অনেক রাগে রাগে তাকাল রক্তিমের দিকে ।
রক্তিম বলল- কি হল? কথা বলবা না ?
এতক্ষণে নীলিমা বলল - তুমি ছোলাসহ বাদাম খাচ্ছ কেন ?
- ওহ ! sorry . ভুল হয়ে গেছে ।
-ভুল হয়ে গেছে মানে ? এক ভুল মানুষ কতদিন করে ?
- আমার বাদাম এর ছোলা ছাড়াতে ঝামেলা লাগে ।
- তাহলে বাদাম খেতে কে বলছে ?
- আমার ভাল লাগে ।
- ছোলাসহ খেতে , তাই না ?
- না , খারাপ তো লাগে না । দেখ, বাদাম এর ছোলাও তো টাকা দিয়ে কিনি ।
- চুপ কর । কথা বইলো না ।
- আচ্ছা।

রক্তিম ঠোঁট ২ টা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল । নীলিমা রক্তিম এর পাশে বসল। বসে বলল - মুখটাকে এমন অদ্ভুত করে রাখছ কেন ? হাত নামাও মুখ থেকে ।

রক্তিম হাত নামাল ।

নীলিমা বলল - এবার কথা বল ।
রক্তিম বলল- কি বলব ?
- এতদিন পর দেখা হল, কিছুই বলার নাই ?
- আছে ।
- কি?
- i love u
- তোমাকে না টি -শার্ট পড়ে আসতে বলছি , এই পচা শার্ট পরে আসছ কেন ?
- sorry .ভুল হয়ে গেছে ।
- আমাকে চিনতে পারতেছ ?
- পারব না কেন ?
- না । ভাবলাম তাও ভুলে গেছ নাকি !
- কি যে বল তুমি ? আচ্ছা তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছ?
- না ।
- তাহলে এভাবে কেন কথা বলতেছ ?
- কিভাবে বলতেছি ?
- সবসময় যেভাবে বল সেভাবে বল ।
- আমি সেভাবেই বলতেছি , তোমার ভাল লাগতেছে না ।
রক্তিম কিছু বলল না । চুপ করে রইল । দুজন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নীলিমা বলে উঠল - নাহ ! তুমি এমন কেন ? আমার মনের মতন কিছুই করতে পারো না । তোমার কিছুই মনে থাকে না......
- কি হল আবার ?
- কি হবে , কিছুই হয় নায় । তোমার চুলের ঐ অবস্থা কেন? মানুষের চুলের অবস্থা এমন থাকে? একটা কথা কতদিন তোমাকে বলতে হয় ? আমার সাথে দেখা করতে আসছো এতদিন পর, আজ কে অন্তত চুলটা ঠিক করে আসতে পারতে !
- ভুল হয়ে গেছে sorry !!
- এই এত sorry sorry করবা না'ত ।
- তুমি কি রাগ করতেছ?
- তো কি করব ?
- ভাল করে কথা বল না , Please...
- আমি ভাল করে কথা বলতে পারি না ।

রক্তিম কি বলবে বুঝতে পারল না । তাই আবার চুপচাপ বসে রইল ।
নীলিমার রাগ বোধহয় আরও বাড়ছে । রক্তিম কে বলল - তুমি পাশ থেকে সরো তো । আমার ভাল লাগছে না ।
- কেন?
- তোমাক সরতে বলছি সরো ।
- না আমি তোমার পাশেই বসে থাকব।
- সরতে বলছি না তোমাকে । তোমাকে আমার অসহ্য লাগছে ।
- দেখ , এমন কইরো না please.
- কি করতেছি ? তোমাকে আমার ভাল না লাগলেও ভাল বলতে হবে? তুমি আমার পাশ থেকে সরো তো ।
- plz, আর এমন করব না ।
- কেমন করবা না? তুমি তো আবার এমন করবা । তোমাকে চুল ঠিক করে রাখতে বলছি , একটা দিন করলা না । চুল দেখলে মনে হয় পাখির বাসা । বলছি ছোলাসহ বাদাম না খেতে, তুমি ওগুলা সহই খাবা । বলছি t-shirt পরতে , তুমি পরই না । বল কি t-shirt পরলে নাকি ছাগল এর মতন লাগে।
এই, তোমার কোন প্রবলেম আছে আমার ছাগল কে ভাল লাগলে ??
তোমাকে আমার ভাল লাগলেই তো হল । আর কাকে দেখাতে হবে তোমার?
- কাউকে না ।
-তাহলে আমার কথা শুননা কেন?
- শুনি তো ।
- কি শুনো তুমি? কি শুনো ?
- সবই তো ।
- এই আজ কত তারিখ জানো ?
- জানি তো
- তোমার মনে আছে আজকে কি? আজ কেন তোমাকে আসতে বলছি, আমার সাথে দেখা করতে বলছি?
- কিসের জন্য ?
- তাও জাননা তুমি?
- বল না plz. কেন?

নীলিমা এবার আরও রেগে গেল । কিছুক্ষণ পর কান্না শুরু করে দিল ।
রক্তিম বলল - এই , কি হইছে তোমার ?
বলে রক্তিম নীলিমার মাথায় হাত রাখল । নীলিমা রক্তিম এর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল - plz... তুমি আমাকে ছুঁইও না তো । আমি আর পারতেছি না ।
আমার তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা ইম্পসিবল। তোমার মতন ছেলের সাথে আমি relation রাখতে পারব না । plz leave me...

রক্তিম বলল - প্লিজ এত রাগ করো না প্লিজ ।
- বললাম না তোমাকে আমি তোমার সাথে relation রাখব না । তুমি যাও এখান থেকে ।
রক্তিম কিছু না বলে একটু দূরে সরে গেল । তারপর ব্যাগ থেকে কিছু বের করল । নীলিমার সামনে ৬ টা গোলাপ ধরে বলল- happy propose day !!! এই দিনে এই ছাগলটাকে propose করছিলা । আজ ১ বছর হল । এই ছাগলটা এখনও মানুষ হয় নাই , sorry !!

নীলিমা চোখ মুছে গোলাপ গুলো নিল । একটু হাসি ফুটল নীলিমার মুখে । নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়ে বলল - এতক্ষণে দিলা কেন?
তুমি জানতে, তাই না? তবে আগে বললে না কেন ? আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভাল লাগে তাই না? কেন এমন করলা তুমি?
- তুমিও তো আমকে কষ্ট দিলা । ওওও তোমার জন্য আরও একটা জিনিস আনছি ।
রক্তিম ব্যাগ থেকে একটা চকবার আইসক্রিম বের করল ।

নীলিমা হাতে নিল আইসক্রিমটা । দেখল আইসক্রিম গলে পানি হয়ে গেছে। নীলিমা বলল - এটা তো আগে দিতে পারতে? দেখো কি অবস্থা !!!!
গোলাপ গুলো ও দেখছ ব্যাগ এর ভিতর চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ?
- sorry ! মনে ছিলনা ।
- তোমাকে নিয়ে কি যে করি? তুমি এমন পাগল কেন বলতো?

অবশ্য তোমার পাগলামির জন্যই তোমাকে আমি এত ভালবাসি । i love you. এই যে গলে যাওয়া চকবার , চ্যাপ্টা গোলাপ দিছো তাতে আমার যতটা ভাল লাগছে, ভাল গুলো দিলে এতটা লাগত না ।

বলেই নীলিমা রক্তিমকে জড়িয়ে ধরে বলল - আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি জান ।
- আমিও।

নীলিমা তারপর ২ টা t-shirt বের করল । বলল- নাও, তোমার জন্য আনছি।
এখন থেকে এগুলা পরবে, বুঝছ ? আর যেন ভুল না হয় । আর এগুলা পরলেই আমার কথা বেশি করে মনে পড়বে । মনে হবে আমি তোমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আছি, বুঝতে পেরেছ?
- হ্যাঁ । থাঙ্কস। i love you, জান ।

রক্তিম আবার ও বাদাম নিয়ে ছোলাসহ খাওয়া শুরু করল । নীলিমা হেসে বলল - এই আবার? দাও আমি ছুলে দেই বাদাম আর তুমি খাও ।

নীলিমা বাদাম ছুলে দিতে লাগল আর রক্তিম খেতে লাগল । আবার হয়ত ঝগড়া হবে একটু পর । রক্তিম আবার উলটা পাল্টা কিছু করবে । নীলিমা বলবে রক্তিমকে ছেড়ে যাবার কথা । কিন্তু সব আবার একটু পর ঠিক হয়ে যাবে । এইতো ভালোবাসা । মধুর ভালোবাসা!!!!!!!



ভাললাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!!

ღjrk
এই সময়ে ৫/১০/২০১৩ ০৭:৩৯:০০ PM 

শুন্যতা ✍লিখেছেনঃ অন্ধকারের রাজপুত্র

শুন্যতা
শুন্যতা
✍লিখেছেনঃ অন্ধকারের রাজপুত্র


রাজ আজ বাসায় ফিরছে । ট্রেনের টিকিট না পাওয়াতে বাধ্য হয়ে ছাদে বসে আসতে হচ্ছে তাকে । অবশ্য এর আগে কখনও ছাদে বসার অভিজ্ঞতা ছিল না তাই কেমন যেন ভয় হচ্ছিল তার । কিন্তু আজ ভয়টা তাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না, আজ তার মাথায় অন্যকিছুর একটা মোহ কাজ করছে, কিসের মোহ সেটা বুঝতে তার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । রাজের পুরনো স্মৃতি ভুলে যাওয়ার একটা ছোটখাটো মানসিক রোগ আছে । তবে পুরনো দিনের সাথে মিলে যাওয়া ছোট খাটো কিছু ঘটনা চোখে পরলে আবার সেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায় ।

ট্রেন অবিরাম ছুটে চলছে দিগন্তের পথ ধরে । ধু ধু বাতাসে রাজের চুলগুলো দিব্বি উড়ছে । কখনও বা ধূলি এসে চোখের কোণায় জমছে, রাজ বারবার হাত দিয়ে চোখ মুছে যায় কিন্তু আবার সেই ধূলির পুনারাবৃত্তি ঘটে । নিরুপায় হয়ে ব্যাগের ভেতরে কিছুক্ষন হাতরে সানগ্লাসটা খুঁজে পেলো । সানগ্লাসে চোখ পড়তেই খেয়াল করলো কোণার দিকটায় একটু ফেটে গিয়েছে। সানগ্লাস থেকে মনে পড়ে গেলো এটা অপূর্বের দেয়া গিফট ।

অপূর্ব প্রায় শপিং মলে গিয়ে অযথা ঘুরাঘুরি করতো আর মেয়ে দেখত । একদিন রাজকে কল দিয়ে জোর করে শপিং মলে ডেকে আনে । সেদিন অবশ্য রাজের জন্মদিন এটা সে জানতো না ।

“কিরে সারাদিন ঘরে বসে ডিম পারিস নাকি? এতো করে জোর করতে হয় কেন তোকে? এক ডাকে চলে আসতে পারিস না? শালা আস্ত একটা আঁতেল তুই, এভাবে বন্ধুত্ব চলে নাকি? ”।

“এসব কথা এখন ভালো লাগছে না আমার । আর বন্ধুত্তের লেকচার দিস না আমায় । তুই কোন ধরণের বন্ধু জানা হয়ে গিয়েছে আমার, আজ সবাই আমার জন্মদিনের উইশ করেছে । বাকি ছিলি তুই কিন্তু তুই তো আছিস রমণীদের পিছে পিছে”।

এই বলে রাজ চুপ হল যে আর কথাই বলছিল না অপূর্বের সাথে । অপূর্ব খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো । পরে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য অপূর্ব রাজকে একটা সানগ্লাস গিফট করে দিলো । রাজ নিতে চাইছিল না, অনেক জোরাজোরিতে সানগ্লাসটা খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো ঐদিন । পরে অপূর্ব বুঝতে পারলো কীভাবে রাজের রাগ ভাঙ্গান যায় । রাজ খাবারের প্রতি অনেক দুর্বল কিনা তাই ওকে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে নিয়ে মন ভরে খাইয়েছিল ।

ট্রেনের অনবরত ঝাঁকুনিতে রাজের স্মৃতিচারণা থেমে যায় । দুপুর প্রায় গড়িয়ে পড়লো । রাজের খুব খিদে পেয়েছে । আসার পথে টিফিনে করে কে যেন নুডুলস পুরে দিয়েছিল । নুডুলস খেতে খেতে হঠাৎ হলুদ রঙের টিফিন বক্সের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো,

কলেজ লাইফে মেয়েদের মধ্যে অধরাই রাজের খুব কাছের বান্ধবী ছিল । ওরা একে অপরের সাথে এতোটাই সময় কাটাতো যে অনেকেই ভাবতো এরা সম্ভবত প্রেমিক-প্রেমিকা । তবে এটা নিয়ে ওরা কেউ মাথা ঘামাতো না । অধরা রাজকে অনেক দেখতে পারতো । রাজ নুডুলস খুব পছন্দ করে তাই ২ দিন পর পর একটা হলুদ টিফিন বক্স করে ওর পছন্দের নুডুলস রান্না করে আনত । রাজও অধরাকে নিরাশ করতো না । দোকান থেকে অধরার পছন্দের আইসক্রিমটা কিনে দিতো । এরপর দুইজন হাঁটতে হাঁটতে আর গল্প করতে করতে প্রতিদিন হারিয়ে যেত কোন এক অজানার পথে ।

একদিন শপিং করার কারনে অধরার ব্যাগে জায়গা হচ্ছিল না বলে রাজের ব্যাগে টিফিন বক্সটা রেখেছিল । পরে আর ফেরত দেয়ার কথা মনেই ছিল না।এভাবেই বক্সটা রাজের কাছে থেকে যায় ।

ট্রেন এখন এসে থামল কুলিল্লা জংশনে । অধরাকে নিয়ে অতীতের ঘোরটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো । কোন দিকে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলো খবরও পেলো না ।

ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে । কোথায় যেন একটা ঝামেলা হয়েছে তাই ছাড়তে ঘণ্টা খানেক লাগতে পারে । হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়া শুরু করলো । রাজ তাড়াতাড়ি ট্রেনের ছাদ থেকে নেমে এলো । ছাউনির নিচে এক টং এর দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়লো । এই বৃষ্টিভেজা পরিবেশে এক কাপ গরম চা খেতে পারলে মন্দ হতো না । ভেজা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে দোকানীকে এক কাপ চা দিতে বলল । চায়ের কাপে চুমুক দিতেই হঠাৎ চোখ পড়লো সামনে । দুই বন্ধু চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খুব জমবেশ আড্ডা দিয়েই চলেছে । কেন জানি ব্যাপারটা তার বহু কালের পরিচিত মনে হচ্ছে। খানিকটা চিন্তা করতে গিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো । এক মুহূর্তের জন্য কোন এক গভীর স্মৃতিতে হারিয়ে গেলো ।

“অরণ্য, ওই অরণ্য । ওই ব্যাটা ,রাস্তার এইদিকটায় আমি । ছাতাটা নিয়ে তাড়াতাড়ি আয় , আমি ভিজে যাচ্ছি তো”
“ তুমি ভিজলে আমি কিতা করমু মামা? যাও খিচকাও!! ফুটবল খেলতে বের হইসিলা , আমারে ডাকো নাই ক্যান? অখন বিপদে পরস আর আমারে ডাকো। এতো খাতির নাই মামা, বেশি দরকার হইলে তুমি এইপারে আইসা যাও”
রাজ নিরুপায় হয়ে নিজেই রাস্তা পার হল । শীতের প্রকোপে খুব কাঁপছিল ।
“কিরে মামা এতো কাঁপিস ক্যান? শীত লাগতেসে নাকি?”
“হ্যাঁ,দোস্ত। এতো বৃষ্টির মধ্যে ধুম ধারাক্কা ফুটবল খেলে এখন শরীরের বারোটা বেজে গিয়েছে।খুব ক্লান্ত লাগছে এখন”
“এইসব কথা আমারে ক্যান কও? খেলার টাইমে তো একলা একলা খেলতে গেসিলা। আমারে ডাক দিলে কি ক্ষতি হইত তোমার?” অরণ্য বাগে পেয়ে এখন সব উসুল করছে।
“সরি রে । এতো কিছু খেয়াল ছিল না । প্লীজ রাগ করিস না । খুব ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে আমার , কিছু কর না দোস্ত?”
অরণ্য সব সময় উপরি রাগ দেখিয়ে মজা নিতো কিন্তু শেষমেশ ঠিকই সব কাজ করে দিতো । রাজকে নিয়ে একটা টং এর দোকানে বসে গেলো । রাজ কাঁপতে কাঁপতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর ওদিকে অরণ্য খিলখিল করে হাসছে, মাঝে মধ্যে দু একটা গুঁতোও দিচ্ছে।

এক পশলা বৃষ্টিভেজা বিকেল । দুই বন্ধুর মাঝে চলছে খুনসুটি, চলছে হাসাহাসি । এই খুনসুটির মজা যেন আর শেষ হতে চায় না, এই আনন্দ যেন অনন্তকালের । সেই অন্তরঙ্গ হাসাহাসির কাছে যেন বৃষ্টির টুপটাপ শব্দও ফিকে হয়ে যাচ্ছিল ।

হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে ভ্রম থেকে বেরিয়ে এলো । বৃষ্টি প্রায় অনেকটা কমেছে এখন । চায়ের টাকাটা পরিশোধ করে ট্রেনের দিকে ছুটে গেলো । এখন ছাদে বসাটা খুব একটা সুবিধের হবে না । ট্রেনের ভেতরে একটা সিট খালি পেলো ওটাতেই বসে গেলো । আবার ট্রেন চলা শুরু হল । চলন্ত ট্রেনের জানালা হতে সূর্যাস্ত আর দেখা হল না, মেঘলা আকাশের কোন এক কোণায় লুকিয়ে পড়েছে সন্ধ্যা । সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখ দুটো কখন যে বন্ধ হয়ে গেলো আর খবর পেলো না ।

“শতবর্ষ ধরে থাকা তোমার অপেক্ষা আমি । তোমার ঠোঁটের ওই রহস্যমাখা হাসি, তোমার অগ্নিঝরা আঁখি, তোমার গোধূলি বর্ণ চুল আর আবেগঘন কণ্ঠ। আজ সব আমার ভালোবাসায় জড়ানো সব স্মৃতি, আমার চোখের কোণ থেকে আজও বেয়ে পড়ে অশ্রু হয়ে”, অহনার ডায়েরি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ছিল রাজ ।

অহনা অনেকটা দার্শনিক টাইপ মেয়ে, সবসময় চুপচাপ থাকে আর সারাদিন কি যেন চিন্তা করে । পুরো সার্কেলে ওর প্রভাবটাও খারাপ ছিল না । সবাই যখন কোন সমস্যা নিয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় থাকতো তখন অহনা অনেক ভালো একটা সমাধান সবাইকে বাতলে দিতো । আর এই জন্যই রাজ যেকোনো সমস্যায় আগে অহনার সাথে কথা বলতো কিন্তু রাজের সাথে অহনার সব সময় কোন একটা পয়েন্টে গিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যেত । অনেক তর্কা-তর্কী শেষে রাজ ওর কথাই মেনে নিতো ।

ডায়েরীর লেখাটা পড়া শেষ হতে না হতেই আচমকা ঝড়ো বেগে কে যেন টান দিলো ডায়েরিটা ।
“দেখ ,মানুষের ডায়েরি এভাবে লুকিয়ে পড়া খুব বাজে একটা ব্যাপার । তুই আমার ভালো বন্ধু মানলাম কিন্তু তাই বলে...... প্লীজ সামনে থেকে এরকম আর করিস না” , অহনা অনেকটা রাগত স্বরে বলল ।
“এতো পার্ট নাও কেন আপু? এতো রোম্যান্টিক কথা কার জন্য লেখা হচ্ছে শুনি? তলে তলে এতদূর । হুম! বুঝি সব বুঝি । কবি- সাহিত্যিক মানুষ প্রেমে পড়লে এমন সব লুতুপুতু লেখাই লিখে। তোর মজনুটা কে একটু শুনি?”।

ঐদিন অবশ্য কোন কারনে অহনার মাথা খুব খারাপ ছিল । রাজের ঠেস মারা কথাটা গায়ে কাঁটা হয়ে লেগেছিল কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটা দিলো । অহনাকে থামানোর জন্য রাজ হঠাৎ পেছন থেকে হাত ধরে ফেলে । এক মুহূর্তও দেরি হল না,রাগের মাথায় রাজকে সজোরে এমনভাবে ধাক্কা দিয়ে বসলো যে ধাক্কাটা পাবার পর সে একদম মাঝ রাস্তায় চলে এলো । রাজ শুধু দেখতে পেলো একটা বড় বাস ওর দিকে এগিয়ে আসছে । এরপর শুধুই অন্ধকার ......

হঠাৎ চোখ খুলে গেলো । খেয়াল করলো একজন লোক ওকে বার বার ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে তুলতে চেষ্টা করছে ।
“এইযে ভাই উঠুন । ট্রেন চট্টগ্রাম চলে এসেছে । আর কত ঘুমাবেন? সবাই তো চলে গিয়েছে, পুরো বগি খালি এখন । আপনি বাসায় যাবেন না?”
চোখ মুছতে মুছতে এদিক ওদিক একবার ভালো করে তাকাল,কেউ নেই । লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করল । এরপর ব্যাগ নিয়ে ট্রেন হতে নেমে সোজা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।

রিকশায় চড়া অবস্থায় হাসছে আর ভাবছে, “ নাহ! অহনা ঐদিন কোন ধাক্কা মারে নি । একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল বটে পরে আবার সব ঠিক হয়ে যায় । এটা নিছক একটা দুঃস্বপ্ন ছিল । তবে ভালোই হল এই সুবাদে অহনার কথাও মনে পড়ে গেলো”
কতদিন যে দেখা হয় নি পুরনো বন্ধুগুলোকে । ট্রেন যাত্রায় একে একে সবার কথাই মনে পড়ে গেলো । এবার সবার সাথেই একত্রে দেখা করবে সে কিন্তু কাউকে কিছু জানাবে না । সে চায় এবার সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে ।

বাসায় ফিরতেই পাশের বাসার তাউসিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো । তাউসিফ বলল,
“কিরে কি খবর তোর? কখন এলি?”
“এইতো এলাম মাত্র । তোর কেমন যাচ্ছে? আচ্ছা শোন, আমি এখন অনেক টায়ার্ড তাই কথা বাড়াচ্ছি না । কাল আমি অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনার সাথে একত্রে দেখা করবো । আমি যে এসেছি এটা কাউকে জানাবি না। তুই সবাইকে কাল কল দিয়ে ডেকে আনবি”।
“সবার সাথেই তো দেখা করার কথা বললি। আচ্ছা সবাইকে ডাকবো কিন্তু ওর কথা .........। কি ভেবে যেন তাউসিফ এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলো ।
“সরি, তোর কথা বুঝলাম না । আর কেউ বাকি আছে নাকি? এই চার জনই তো।” রাজ অনেকটা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ।
“আরেহ না , আর কেউ বাকি নেই । আমি বলছিলাম কি আসলে আমি তো কালকে.........”
“দেখ আমি এতো কথা বুঝি না কাল তুই সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করবি বেস। এখন আমি যাই, টাটা”।
তাউসিফ হাসিমুখে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ ঠিক আছে । আগামীকাল সবার সাথেই দেখা হবে।আল্লাহ্‌ হাফেজ” ।

ঘরে ঢুকতেই দেখে বাসায় শুধু আম্মু-আব্বু আছেন । বড় আপু একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছে । রাতের খাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে ভাবছে,
“কোথাও যেন কিছু একটা বাদ পড়ে আছে,তাউসিফের কথায় মনে হচ্ছে আরও একজনের অস্তিত্ব এখনও বাকি আছে কিন্তু কে সে ? নাহ! এমন হলে তো তাউসিফ আমাকে বলতো”।

বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় হাঁটা শুরু করলো । হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন রাজকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো, গালে একটা উষ্ণ চুমু অনুভব করলো রাজ । আচমকা পেছন ফিরতেই দেখে বড় আপু । ছোট ভাইটার সাথে কিছুক্ষন গল্প আর আদর করলো, শেষে “লাভ ইউ মাই সুইটু”বলে ঘুমুতে চলে গেলো ।

এক মুহূর্তের জন্য পুরো ব্যাপারটাই কেমন পরিচিত মনে হল । এর আগেও যেন ঠিক এইভাবেই কেউ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরত, গালে চুমু দিতো।“ লাভ ইউ মাই সুইটু” এই ধরণের কিছু একটা এর আগেও রাজ কাউকে বার বার বলতো । খুব ভয়ানক একটা অস্থিরতা রাজকে মনে মনে খেয়ে যাচ্ছে এখন । কি হচ্ছে এসব? প্রত্যেকটা স্মৃতি এখন এক একটা প্রশ্ন রাজের কাছে । দরজাটা বন্ধ করে পুরো রুমে ছটফট শুরু করে দিলো । সারাটা রাত ঘুম হল না শুধুমাত্র এই কটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ।

পরদিন তাউসিফের সাথে দেখা হতেই পুরো ব্যাপারটা ওকে জানায় । তাউসিফ কিছুক্ষন চুপ করে ছিল তারপর বলল, “আচ্ছা ওটা নিয়ে পরে কথা হবে আগে সবার সাথে তোর দেখা করিয়ে আনি”।
দুজনেই একটা রিকশায় উঠে পড়লো । রিকশা থামল একটা নির্জন জায়গায় । তাউসিফ রাজের হাত ধরে ধীরেধীরে সামনে হাঁটছে । রাজ বুঝে উঠতে পারলো না তাউসিফ ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । রাজ বলে উঠলো,
“কিরে এই কোথায় নিয়ে এসেছিস আমাকে? অপূর্ব, অধরা, অরণ্য আর অহনা ওদের কাউকেই তো দেখছি না । ওরা সবাই কোথায় ?”
কিছুদূর আসার পর তাউসিফ আঙ্গুল দিয়ে সামনে দেখিয়ে দিলো । এক পলক সামনে তাকাতেই রাজের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হল । চারটা কবর । কবরের উপর খুদাই পাথরে একে একে লেখা আছে অপূর্ব, অহনা, অরণ্য আর অধরার নাম । রাজ কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছিল ওর সাথে, পুরো ব্যাপারটাই উলটপালট লাগছে ওর কাছে । তাউসিফ রাজের কাঁধে হাত রেখে এবার মুখ খুলল ।

“দেখ দোস্ত এখন আমি যা বলব তা হয়তো মেনে নিতে তোর খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সত্যটা জানা তোর প্রয়োজন । গত দুই বছর আগে তোরা সবাই একটা জীপে করে পিকনিকে যাচ্ছিলি । তুই ড্রাইভ করছিলি আর বাকিরা গান-আড্ডায় মেতে ছিল । কিন্তু মধ্যপথে তোর একটা ভুলের কারনে গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে । সবাই ওই এক্সিডেন্ট এ মারা যায় , শুধু বেচে যায় তুই আর অপ্সরা”।
“অপ্সরা” নামটা শুনে রাজের খটকা লেগে যায় । এখন অনেকটা আঁচ করতে পারছে কার স্মৃতি গত রাতে তাকে এতোটা চিন্তিত করেছিল । অপ্সরা রাজের প্রেমিকা । কীভাবে কি হল এখনও রাজের মাথায় আসছে না । রাজ কীভাবে ওকে ভুলে গেলো, অপ্সরা যদি বেচেই থাকে তাহলে কই এখন? আর যোগাযোগ কেন হল না আমাদের মাঝে? একের পর এক নিজেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে নিজেকে ।

“তোদের দুইজনকে হসপিটালে নেয়া হয়েছিল । তুই আর অপ্সরা অনেকটা সুস্থ হয়েছিলি । কিন্তু পরে জানতে পারলাম কেউ একজন এসে অপ্সরাকে ডিসচার্জ করে নিয়ে যায় । এরপর থেকে অপ্সরা আর ওর ফ্যামিলিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।নাম্বারটাও অফ ছিল । মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়াতে তুই অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছিলি । এতোগুলো কষ্ট তুই সহ্য করতে পারবি না জেনে আমরা কেউ তোকে আর কিছু জানাই নি । আজ দুই বছর পর তোর অনেক কিছুই মনে পড়ে যাওয়াতে ভাবলাম সত্য আর চাপা দেয়াটা ঠিক হবে না, তাই সব জানিয়ে দিলাম”।

রাজ পুরোপুরি নির্বাক হয়ে মাটিতে বসে পড়লো । চোখ দিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে । যাদেরকে সাথে দেখা করবে বলে এতোটা পথ পাড়ি দিলো, পুরো যাত্রা জুড়ে যাদের স্মৃতিতে মনটা উচ্ছল হয়ে উঠেছিল, একটা ভুলের কারনে আজ তারা সবাই ওর উপর অভিমান করে ওকে ছেড়ে চলে গেলো । কিন্তু অপ্সরা কেন এমন করলো? কি দোষটা ছিল যে এভাবে কিছু না বলে চলে গেলো? সব কিছুই তো জানা হয়ে গেলো কিন্তু এরপরও হাজারো প্রশ্ন হৃদয়ের কোঠরে ছুরি দিয়ে চির চির করে ছিদ্র করে যাচ্ছে । বুকফাটা আর্তনাদ গুলো চিৎকার করে বলতে চাইছে কেন এমন হল? কেন আমার সব মনে পড়ে গেলো? ভালোবাসার মানুষগুলো কীভাবে এতোটা অভিমানী হয়ে গেলো?

রাজ এখনও মাটিতে বসে আছে । ওর চারপাশটা জানি কেমন ভারি হয়ে উঠেছে । আকাশটা আজ কাঁদছে, কাঁদছে রাজের চোখজোড়া । এই দুই কান্নার মিলনে রাজের অশ্রুগুলো আর খুঁজে পাওয়া গেলো না । আজ কোথাও কেউ নেই। চারিদিক কেবল শুন্যতা আর শুন্যতা ।

গল্পটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন!!

ღjrk
এই সময়ে ৫/১০/২০১৩ ০৭:৫১:০০ PM 

বন্ধু আমার একলা প্রহর লিখেছেন- sesh rater adhar

বন্ধু আমার একলা প্রহর
বন্ধু আমার একলা প্রহর
লিখেছেন- sesh rater adhar

- বের হচ্ছিছ না কেন এখনও ? তুই কি ওখানে ঐ কাজই করতে যাস না অন্য কিছু ? কি করিস এতক্ষণ ধরে ?

চিৎকার করছে বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আবির। প্রতিদিনকার রেগুলার রুটিন। কত যে সময় লাগে সাব্বিরের? বাথরুমে একবার ঢুকলে আর বের হবার খবর থাকে না। কি করে আল্লাহই জানে!

আবির আর সাব্বির ৩ রুমের একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ওরা ২ জন এক রুমে । বাকি ২ রুমে ৫ বড় ভাই থাকেন । সাব্বির আর আবির স্কুল কলেজে একসাথে পড়ত। এখন সাব্বির পড়ে একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে computer science and engineering আর আবির পড়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানে। হলে সিট পেয়েছিল আবির। কিন্তু হলে উঠার পর থেকেই প্রতিদিন রাতে মিটিং-এ ডাক পড়ত। আর সেখানে বড় ভাইদের দেশ উদ্ধারের লেকচার শুনার জন্য বসে থাকতে হত।একদিন লেকচার শুনতে শুনতে হঠাৎ-ই তন্দ্রা চলে আসাতে হাই তুলেছিল আবির।আর সেই হাই তোলার অপরাধে কান ধরে ১ ঘণ্টা রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তারপর হল থেকে চলে আসল। আর গেল না ।

এরপর কয়েকজন বড় ভাইয়ের সাথে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিল। ৩ রুমেই অ্যাটাচড বাথরুম। কারও সমস্যা হয় না। যত সমস্যা এই দুজনের। তাও সাব্বিরের জন্য।এই যে এখনও বের হওয়ার খবর নাই।আবির আবারও চিৎকার করে উঠল- তুই বের হবি নাকি দরজা ভেঙ্গে ফেলব?
- ছিঃ আবির , তুই এমন অশ্লীল কথাবার্তা বলতেছিস কেন? দরজা ভাঙ্গি মানে ? আমার লজ্জা শরম নাই নাকি ?
- তুই আবারও বাথরুমে বসে কথা বলতেছিস ? আমি বলছি না তোকে এই কাজ না করতে ?
-হেহ ! দুনিয়ার সব জায়গায় বসে কথা বলা সিদ্ধ থাকলে,বাথরুমে বসে কেন নিষিদ্ধ থাকবে ?আমি বলব , আরও বেশি বেশি বলব। গান গাইব আমি বসে বসে। ওহো ...হো....আহা ...আহা ... হাহা ....
-সাব্বির ,আমি তোরে খুন করে ফেলব।আমার ভার্সিটিতে যেতে হবে। বের হ।

সাব্বির বের হয়ে আসল। রাগে তাকিয়ে আছে আবির।
সাব্বির উলটা রাগ দেখিয়ে বলল - তোর জন্য একটু শান্তি মত .....যাহ্‌, তোকে বলে লাভ নেই। মানুষের অনুভুতি তুই বুঝিস না।
- বাথরুমে ২ ঘণ্টা ধরে বসে থাকার মধ্যে কী অনুভুতি আছে? আমি তো দেখছি না কিছু।
-তুই always এমন। আমি তোর বন্ধু না শত্রু মাঝে মাঝে বুঝি না। যা যা। এতক্ষণ চিৎকার করছিস আর এখন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?

আবির লুঙ্গি নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। আবির প্রতিদিন ২ বার গোসল করে। ঠাণ্ডা গরম সবসময় । সকালে একবার বিকালে একবার।আর সাব্বির ২-৩ দিন পর পর। ঠাণ্ডার সময় সপ্তাহেও একবার করে না। তবে কেউ যেন না বুঝে তাই গোসল করার কথা বলে শুধু মাথা ভিজিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বের হয়ে আসে। কত্ত বুদ্ধি !!!!

আবির আর সাব্বির সারাদিনই ঝগড়া করে। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে। মানুষ তার কাছের মানুষের সাথেই ঝগড়া করে বেশি। বন্ধুত্ব যত বেশি ঝগড়ার মাত্রাটাও তত বেশি। ছোট খাটো বিষয়ে দোষ ধরা ,সব কিছুতে খারাপ দিক খোঁজা, আর তা নিয়ে ঝগড়া। হালকা পাতলা মারামারি। এইতো বন্ধুত্ব। আবির এর রাগ বেশি , কিন্তু মারামারি পারে না। সাব্বির অনেক মোটা, সাব্বিরকে আবির মারলে সাব্বিরের কোনো feelings ই হয় না।

আবির গোসল করে বের হল। সাব্বির সঙ্গীত চর্চা শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিন সকালের নিয়মিত কাজ। বারান্দায় বসে একটা গিটার নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় সাব্বির। প্রতিদিন একই গান.... আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি..
গিটার হাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত , আবিরের খুব একটা ভাল লাগেনা জিনিসটা। তবুও সহ্য করতে হয়। কারও তো ভাল লাগে!!সাব্বিরের গানের একজন নিয়মিত শ্রোতা আছে। আবিরদের ফ্ল্যাটের সোজা এক ফ্ল্যাটে এক মেয়ে থাকে।বারান্দায় বসে সাব্বিরের এই গান সেই মেয়ে প্রতিদিন শুনে। এই গানও কারও ভাল লাগে?যে গলা !!!!মেয়েই নাকি সাব্বিরকে একদিন বলেছে-" ভাইয়া, আপনি সেদিন, 'আমার হিয়ার মাঝে' গানটা গাচ্ছিলেন, খুব ভাল লাগছিল।আমার অনেক প্রিয় গান । আমি প্রতিদিন আপনার গান লুকিয়ে লুকিয়ে শুনি।আপনার ভয়েসটা অনেক sweet . "
সেই থেকে ঐ একই গান। আগে তাও একেক দিন একেক গান ছিল। আর এখন গিটার হাতে প্রতিদিন আমার হিয়ার মাঝে।

আবির শার্ট পরতে পরতে বলল- হইছে, থাম এখন। সারারাত তো ফুছুর ফুছুর করে একজনের সাথে প্রেম করলি মোবাইলে। এখন সকালে উঠে আর একজনকে গান শুনাইতেছিস। তুই যে কী!!!
- তুই এত রাগ করিস কেন?তুই এক নিরামিষ । আর আমারেও চাস নিরামিষ বানাইতে। দোস্ত, একটু enjoy কর life. দেখ আমাকে দেখ। শিখ কিছু আমার থেকে।খালি তো পারিস, ঐ সার্কিট মিলাইতে আর বই নিয়া বসে থাকতে।একটু মজা কর ।
- আমি অনেক enjoy করি লাইফ।
- কত যে করিস জানি। একটা গার্লফ্রেন্ড, তার সাথে দিনে ১০ মিনিটও কথা বলতে দেখি না ।
- চুপ কর। তুই গান গা। ঐটাই ভাল ছিল।

আবার শুরু আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে...

আবির বের হয়ে গেল কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।যাবার সময় দেখল বড় ভাইরা সবাই ঘুমাচ্ছে। এরা সারারাত card খেলে আর movie দেখে।দিনের বেলা দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। উঠে দুপুরের খাবার খায় একবারে। আবিরের তা করলে চলে না। সকালে বুয়া আসেন না। তাই বাহিরে খেতে হয়। প্রতিদিন একই দোকানে সকালের নাস্তা করে।একটা কলা , একটা রুটি।খাবার পর প্রতিদিন দোকানদার বলবে - মামা , কোনটা দিব ?
-মামা, আপনাকে এক কথা প্রতিদিন বলতে হয়? আমি smoke করি না।
- ও, মামা মনে থাকে না।

আবির একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটিতে যায়।আজ একটা মাত্র ক্লাস।
ক্লাস শেষ করে বের হল।অরিন অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছে। মেয়েটার কি কোন কাজ নেই নাকি ? আর মাত্র কয়েকদিন পর admission test.পড়াশুনা কিছু করে বলে তো মনে হয় না। অরিন ঢাকাতে এসেছে intermediate এর সময়। ঢাকার একটা কলেজে পড়ত, কলেজের হোস্টেলে থেকে।এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছে। থাকে একটা গার্লস হোস্টেলে।অরিনের এক বান্ধবী জেনিকে প্রাইভেট পড়াত আবির।মাঝে মাঝে অরিন যেত জেনিদের বাসায়।জেনির থেকেই নাম্বার নিয়ে পরে আবির এর সাথে মাঝে মাঝে কথা বলা।খুবই ভাব ধরা ছেলে আবির, অরিনের ধারণা।ফোন দিলেই একটা busy busy ভাব দেখাত।অনেক কিছুর পর রিলেশন হল।
আবির ফোন ধরল।
অরিন বলল - কি খবর? কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি?
-আমার কি আর কোন কাজ নেই নাকি ? ক্লাসে ছিলাম।আর তোমাকে এত বার কল করতে মানা করছি না?আমার ইচ্ছা হলে আমি তোমাকে এমনিই ফোন দিব ।
-সবসময় এমন করে কথা বল কেন?
- এক type কথা always . আমি রাখি, ভাল লাগছে না।
- আমি TSC তে । তুমি আস।
-তোমার কি আজ আসার কথা?
-না, তুমি আস। সবসময় যেখানে থাকি , সেখানেই আছি।আস ।

আবিরের এসব ভাল লাগেনা। ভাল-বাসা-বাসি ওর কাছে ন্যাকামি লাগে। কোন পাগলে পেয়েছিল , রিলেশন করতে গেল। প্রতিদিনই ঝগড়া হয়। মেয়েরা কথায় কথায় অভিমান করে, রাগ করে। আর আবির কখনই অন্য বয়ফ্রেন্ডদের মত রাগ ভাঙ্গাতে যায় না। বরং যে কয়টা দিন ঝগড়া ,ঐ দিনগুলোই ভাল থাকে মনে হয়। অভিমান পর্ব শেষ করে অরিন নিজেই আসে কথা বলতে। আবির মাঝে মাঝে ভাবে ,না এত রাগ ভাল না। রাগ কমাতে হবে। কিন্তু হয়ে উঠে না।

- আবির , এই দিকে আয়।

ইলিয়াস ডাক আবিরকে। ইলিয়াস আবিরের ক্লাসমেট , কবিতা লিখে। আবির ছাড়া কেউ ওর কবিতা শুনে না । আবিরের কবিতা কখনই ভাল লাগে না। তাও শুনে। বন্ধুর লেখা বলে কথা। কোন ছন্দ নাই , শুনে বুঝা যায় না গল্প না কবিতা । তবুও আবির কখনও বিরক্ত হয় না।আবিরকে কবিতা শুনানোর পর ইলিয়াস বলে সবসময় - "কেমন হইছে রে?"
আর আবিরের কথা -অনেক সুন্দর দোস্ত। তুই বই বের কর। অনেক চলবে।তোর কবিতার সাথে জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনেক মিল । আমার তো মনে হয় তোর কবিতা তার চেয়েও সুন্দর হয়। খালি বের কর বই , famous হয়ে যাবি।
ইলিয়াস কথাগুলো শুনলে ওর মুখটা লাজুক ভাবে ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। ইলিয়াসকে এত খুশি দেখতে আবিরের অনেক ভালই লাগে।
আবির ইলিয়াসের কাছে গিয়ে বলল - কবি, কি খবর?নতুন কবিতা আছে?
- হ্যাঁ রে , নতুন একটা লিখলাম।আমাদের ক্লাস এর নদীকে চিনিস না? ওকে নিয়ে লিখlলাম। তুই কিন্তু আবার ওকে বলে দিস না। ওকে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগে। সব উলট-পালট হয়ে যায়।
- দোস্ত , কি বলিস? আচ্ছা শুনা তারাতারি।
-
ও নদী,
জানো কি,
তোমাকে ভালবেসে
আমি কাঁদি?

তুমি এমন
একবারও দেখ না ,
আমাকে মনে
রাখো না।

আমি বসি
তোমার পিছনে ,
চুল দেখি
ঘ্রাণ শুকি।

তবুও তুমি
বুঝ না,
ভালবাসি
বুঝ না।

- দোস্ত, তুই তো ফাটাইয়া দিছিস। কি লিখলি এইটা? অসাধারণ হইছে। তুই যে এত ভাল লিখতে পারিস আমি জানতাম না, খালি একবার নদীর সামনে যাবি,আর কবিতাটা পড়ে শুনাবি। দেখবি ও পাগল হয়ে গেছে।
-তুই সত্যি বলছিস?
-আমার মিথ্যা বলে লাভ কি বল?তোর মত কেউ কি ওকে কবিতা লিখছে নাকি ? একবার গিয়ে বল, রাজি না হলে আমার রিস্ক।
-নদী কি লাইব্রেরিতে আছে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে আমি যাই। ওকে কবিতা শুনিয়ে আসি।তুই একটু দোয়া কর।
-ok, যা দোস্ত। কি হয় জানাস।

ইলিয়াস দৌড়ে চলে গেল নদীকে কবিতা শুনাতে। আবিরের কারনে ওর কোন বন্ধুর মন ভাল হয়ে গেল। ভাবতেই ভাল লাগছে। আবিরেরও মন ভাল।
আবির TSC তে আসল। অরিন দাঁড়িয়ে আছে। আবির গিয়ে দাঁড়াল অরিনের সামনে। অরিনের চোখ ছল ছল। অরিন বলল- তুমি সবসময় আমাকে দাড় করিয়ে রাখো। তুমি এমন কেন?আমার কষ্ট হয় না?
- ওহ! আবার এই টাইপ কথা? আমার শুনতে ভাল লাগছে না । অন্য কিছু বলার থাকলে বল। এসব ন্যাকামি আমার ভাল লাগে না।
-তুমি সারাজীবন এমন থাকবে? সারাদিনে একটু খোঁজখবরও নাও না। একটা sms কখনও কর না। কথা বলতে গেলে ৫ মিনিটের পর বল তোমার বিরক্ত লাগছে।আমি কি দেখতে এতই খারাপ?
-তোমাকে কখন বললাম, তুমি দেখতে খারাপ?এসব কথা ছাড়া আর কিছু বলতে পার না? শুনতে একদমই ভাল লাগছে না।চুপ করে থাক।
- তুমি আমাকে ভালবাস না, আমি জানি ।
-হ্যাঁ, ভাল হয়েছে ভালবাসি না।যাও এখান থেকে।আমি ভালবাসি না তাহলে আমার সাথে কথা বলছ কেন?বিরক্তিকর।

অরিন কিছু বলল না।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কাঁদতে শুরু করে দিল।নিঃশব্দ কান্না। মেয়েরা কখনই তাদের প্রতি অবহেলা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু অরিন অনেক সহ্য করেছে। আর না । এভাবে কারও সাথে থাকা যায় না। অরিন চলে গেল চোখ মুছতে মুছতে আবিরের সামনে থেকে।আবিরের কিছুই মনে হল না। মনে হচ্ছে সব আগের মতই আছে।

বাসায় চলে আসল আবির। রুমে গিয়ে দেখল সাব্বির সাজ-গোঁজে ব্যস্ত। ছেলে মানুষ ও কত সাজগোজ করে !!
আবিরকে দেখে বলল- যাবি চল।
-কোথায়?
-এই একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাব। কয়েকদিন ধরে কথা হচ্ছে ফেসবুক এ ।দেখতে না জোস।চল না ।
-এসব কি বাদ দিবি তুই?কোনদিন কোন ঝামেলায় পরিস দেখিস।এতগুলো মেয়ের সাথে তোর relation.
- দোস্ত, তুমি বুঝবা না। আমার তো মনে হয় তোমার প্রবলেম(!!!) আছে,তাই মেয়ে ভাল লাগে না ।
-ভাল হইছে।তোর মত অত মেয়ে আমার লাগে না।
- কি করা বল? কোন মেয়ে একটু সুন্দর করে কথা বললে আর ঠিক রাখতে পারিনা নিজেকে।আর মেয়েরাও আমাকে চায়।
-হ্যাঁ,থাক মেয়ে নিয়ে। যেদিন ঝামেলায় পড়বি সেদিন বুঝবি। তখন আমারে ডাকিস,যাব নি তোমাকে ভাল মত উদ্ধার করতে!!
- তুই কি বন্ধু নাকি?তুই তো আমার শত্রু। তাই বরদোয়া করিস।

এক গাদা body-spray শরীরে দিয়ে বের হয়ে গেল সাব্বির।পুরো রুম এত এলোমেলো হয়ে আছে। দেখলে মনে হয় যেন কিছুক্ষণ আগে ঝড় বয়ে গিয়েছে এখান দিয়ে।আবির সারাদিন রুম গুছিয়ে রাখে,আর সাব্বিরের দায়িত্ব তা এলোমেলো করা । এই ছেলেটা এত অগোছালো আর এত এমন কি করে???আবির খুঁজে পায় না।সারাদিন মেয়ে নিয়ে থাকে। আর কোনদিকে কোন মনোযোগ নেই ।
আবির গিয়ে বারান্দায় বসল। আজ অরিনের সাথে এতটা করা উচিৎ হয়নি।মেয়েটা এত ভালবাসে আর আবির কিনা সবসময় অপমান করে।আবিরও তো ভালবাসে, তাইতো রাগারাগি করে।আবির যাদের ভালবাসে তাদের ভালবাসা দেখাতে পারে না কখনও।তাদের সাথেই বেশি খারাপ ব্যবহার করে।সাব্বিরের সাথে করে, অরিনের সাথে করে।কিন্তু ওরা ভাবে আবির ওদের ভালবাসে না।নাহ! নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।
আবির যেই কাজ কখনই করেনি সেই কাজ আজ করল। অরিনকে কল করল । কল করে আরও একটা অবাক করা জিনিস করল,অরিনকে sorry বলল।

-অরিন, তুমি রাগ করনি তো?
-না।
- তুমি কোথায় এখন?
- রেল-স্টেশনে। টিকেট কাঁটি।
- কেন? কোথায় যাবে?
-আম্মুকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে।তাই একটু বাসায় যাব।
-ওও..আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম।আচ্ছা তুমি ২ টা টিকেট কাটো। আমরা দুজন একসাথে যাব। তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।আমি আবার বাস এ চলে আসব ঢাকা।
- সত্যি, বলছ তুমি?
-হ্যাঁ, সত্যি। আমি কি ভাল কিছু করতে পারিনা নাকি? আচ্ছা ট্রেন কয়টায় ?
- সন্ধ্যা ৬ টা আর ৭ টায়।
- ৭ টার টিকেট কিনো। আমাক মেসেজ করে সিট নাম্বারটা বলে দিও। আমি এইদিকে একটু কাজ শেষ করে চলে আসব।
- আচ্ছা।

আবিরের ভাল লাগছে খুব।কিছু পড়াশুনা করে নিল।আবির কিছুটা excited. মনে হচ্ছে জীবনে এই প্রথম ডেটিং-এ যাবে। তাও আবার ট্রেন-এ।

..............................................................................

সাব্বির ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে আছে। যেই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা তার আরও ১ ঘণ্টা আগে আসার কথা। এখনও আসেনি। মোবাইল-এ টাকাও নেই যে কল করবে ।

-সাব্বির ...চলে এসেছি।

সাব্বির দেখল ইমা এসে পড়েছে।

- ওহ আস, বস।আমি কখন থেকে ওয়েট করছি। এত দেরি করলে কেন?
-বোলোনা আর। ভাইয়া এত ঝামেলা করল।বের হতে দিবেই না। কত মিথ্যা বলে বের হলাম।
- ও আচ্ছা। জানো, আমি না কখনও কোন মেয়ের হাত ধরিনি। তোমার হাত গুলো অনেক সুন্দর। আমি ধরি?
- ধর,আমিও কখনও কোন ছেলের হাত ধরিনি।

সাব্বির ইমার হাত ধরল। এর আগেও অনেকেরটা ধরেছে।

- কি সফট তোমার হাত। ইমা তুমি না খুব সুন্দর। i love you. আমার তোমার আগে অন্য কোন মেয়েকে এত ভাল লাগেনি।কত্ত মেয়ে ঘুরে আমার পিছনে ।পাত্তাই দেই না।
-তাই?
- হ্যাঁ, তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে অনেক। ধরব কি আমি?
- জানিনা। (লাজুক ভাবে)

সাব্বির ইমাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কোনভাবেই ইমাকে কাছে পাচ্ছে না। ইমা চোখ বুঝে আছে।সাব্বির শক্ত করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু মনে হচ্ছে পিছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে সাব্বিরকে।হ্যাঁ, সত্যি একটা অনেক লম্বা মোটাসোটা ছেলে সাব্বিরকে ধরে আছে।সাব্বির ও অনেক মোটা। তবুও ওকে টেনে তুলে ফেলল। তুলেই এক ঘুষি নাকে।
ইমা চোখ খুলেই অনেক ভয় পেয়ে গেল। ওর বড় ভাই সাব্বিরের গলা ধরে মারছে। ইমার বড় ভাই বলল- ইমা,তুই বাসায় যা। আমি আসছি।তারাতারি যা। একবারও তাকাবি না পিছনে।

ইমা দৌড়ে ছুটে গেল। সাব্বিরের দিকে তাকালও না।
সাব্বির বলল- ভাইয়া আর মারবেন না। আর জীবনে প্রেম করব না। মাফ করে দেন।
-কেন রে? প্রেম করার সখ শেষ?এখনও কিছুই হয়নি।চল তোমারে সাইজ করতেছি।

বলেই ছেলেটা সাব্বিরকে আরও কয়েকটা ঘুষি মারল। তারপর কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে?সাথে আরও ৩ জন।মোবাইল এ টাকাও নেই যে আবিরকে কল করবে। বড় অসহায় লাগছে নিজেকে।

আবির রেডি হয়ে নিল।নতুন একটা শার্ট আর প্যান্ট পরল।ফার্স্ট ডেটিং বলে কথা।নিজেকে পরিপাটি করে নিল। ৬ টা বাজে এখন। একটু দেরি হয়ে গেল।অবশ্য এখনি বের হলে ৭ তার আগেই যাওয়া যাবে।অরিন ফোন করল আবিরকে।আবির বলল- তুমি ট্রেন-এ গিয়ে বস, আমি রওয়ানা দিয়েছি। আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আবির বের হয়ে একটা রিকশা নিল।কমলাপুর যাবে।কতদুর যাবার পর একটা unkonown নাম্বার থেকে কল আসল।unknown নাম্বার এর কল আবির এখন ধরে না।কিন্তু আজ ধরল যেন কি মনে করে।আবির হ্যালো বলার আগেই সাব্বিরের কান্না জড়ানো কথা - আবির দোস্ত,আমাকে বাঁচা। আমি ধানমণ্ডি আবাহনী মাঠের সামনে। আমাকে মারতেছে।please, দোস্ত আয়।

আবির কিছু বলার আগেই কল কেটে গেল।আবির অস্থির হয়ে উঠল।তারাতারি রিকশা থেকে নেমে একটা সিএনজি নিল। আবাহনী মাঠে যেতে বলল- মামা, তারাতারি যান। ডাবল ভাড়া দিব মামা। তারাতারি।

২০ মিনিট পর ওখানে পৌঁছে আবির। কয়েকজন ছেলের সাথে সাব্বির দাঁড়িয়ে আছে।ওরা সাব্বিরকে ধরে রেখেছে। আবির ওখানে গিয়ে বলল- ভাইয়া, ওকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন? কি হইছে?

-আরে, আবির তুমি? ওকে চিন নাকি?

ইমার বড় ভাই আবিরকে বলল। উনি আবিরের ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই।

- হ্যাঁ ভাইয়া। ও আমার বন্ধু।
- ও, তুমি এত ভদ্র। তোমার ফ্রেন্ড এমন কেন? আজ আমার বোনের সাথে ধরলাম ধানমণ্ডি লেকের ওখানে। যাও নিয়ে যাও।ভাল হয়ে যেতে বইল। তোমার ফ্রেন্ড, তাই কিছু বললাম না।

সাব্বিরকে নিয়ে আসল আবির। দুজন হাঁটছে রাস্তায়।৭ টা বাজতে ২০ মিনিট বাকি। মাঝে অরিন কতবার ফোন দিল।ধরা হল না।দুজনই চুপচাপ হাঁটছে, কেউ কিছু বলছে না। কতক্ষণ পর আবির বলল- দোস্ত চল, রেল-স্টেশন থেকে ঘুরে আসি।

সাব্বির হ্যাঁ না কিছুই বলল না। একটা সিএনজি নিয়ে রেল-স্টেশন এর দিকে যাচ্ছে দুজন।আবিরের মোবাইল বেজেই চলছে। ধরছে না। ধরে কি হবে?৭ টা পার হয়ে গেছে।রেল-স্টেশন এ যখন নামল তখন ৭ টা ১৫ । ট্রেন তো লেট ও করতে পারে।সাব্বিরকে নিয়ে দৌড়ে আবির অরিনের ট্রেন এর দিকে যাচ্ছে।কিন্তু না, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।সাব্বির বুঝছে না আবির কেন এমন করছে।

- দোস্ত কি হইছে তোর? এমন করছিস কেন?
- কিছু নারে। চল কিছুক্ষণ মানুষ দেখি রেল-স্টেশন এর।দেখ কত মানুষ , সবাই কত ব্যস্ত।

আবিরের মোবাইল বেজেই চলেছে। সাহস হচ্ছে না ধরার। মেয়েটা আবার অভিমান করল।ট্রেন চলে যাচ্ছে।আসতে আসতে গতি বাড়ছে।দূরে সরে যাচ্ছে। হয়ত এর থেকেও অনেক দূরে অরিন চলে যাচ্ছে, আবিরের জীবন থেকে।প্রথম কাউকে ভালবাসতে ইচ্ছা করল। তাও হল না আবিরের।

সাব্বির পাশে এসে বলল- sorry, আবির। আমার জন্যই হল।
- কি হইছে?
- অরিন মেসেজ করল। তোর ওর সাথে যাবার কথা। আমাকে মাফ করে দে।আমি না অনেক খারাপ।আমি তোর কাছে promise করছি আমি ভাল হয়ে যাব। বিশ্বাস কর ,আর এমন থাকব না।আমি ভাবতাম তুই আমাকে দেখতে পারিস না। কিন্তু তুই আমাকে এতটা ভালবাসিস আমি জানতাম না। অরিনের সাথে যাওয়া হল না সে জন্য তুই মন খারাপ করিস না, please.
-ঐ, এত ভাব ধরিস না। বন্ধুর কাছে মাফ কিরে?তুই না বলিস, মেয়ে লাইফ এ একটা গেলে হাজারটা আসবে।
- হাহা, তুই অমন না আমি জানি।ঐ মেয়েকেই তোর জন্য ঠিক করে দিব। অরিন তোকে অনেক ভালবাসে।সব রাগারাগি manage করব আমি।তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

একটু হেসে আবির বলল- বুঝলাম। সাব্বির একটা গান শুনা তো। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে ...ঐটা।

সাব্বির গান গাচ্ছে আর আবির মুগ্ধ হয়ে শুনছে।

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি

বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে
আমার হৃদয় পানে
চাইনি আমি .......

দুজন হেঁটে চলছে। অনেক দিনের চেনা বন্ধু তবুও এতদিন অচেনা ছিল। আজ থেকে অনেক বেশি আপন লাগছে।অরিনের জন্য মন খারাপ লাগছে একটু।কিন্তু সাব্বির যখন বলেছে, সব ও ঠিক করে দিবেই। এই বিশ্বাস আছে আবিরের। বন্ধুত্ব মানেই তো বিশ্বাস!!কখনও অন্ধ বিশ্বাস, কখনও দৃশ্যমান!!!!
এই সময়ে ৫/১৮/২০১৩ ১২:৫৫:০০ AM 

ভালবাসা শিরোনামহীন লিখেছেন- sesh rater adhar

ভালবাসা শিরোনামহীন
ভালবাসা শিরোনামহীন
লিখেছেন- sesh rater adhar

- আমি একটা কথা বলব।

বলে হঠাৎ করে মিষ্টির সামনে এসে বসল হৃদ্য।

- এতক্ষণও তো বলতেছিলা।
- হ্যাঁ, অন্য কথা।
- আচ্ছা বল।

মিষ্টি অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাল হৃদ্যর দিকে। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি। যে হাসি খুব খেয়াল করে না তাকালে দেখা যায় না। হৃদ্য অনেক খেয়াল করেই তাকিয়েছে তাই চোখে পরেছে। অনেক দিন থেকে বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না কথাটা। রিলেশন হয়ে গেল আজ ৩ মাস, এখন পর্যন্ত বলা হল না। ছিঃ,ছিঃ !কি লজ্জার কথা।

মিষ্টি বলল- কি হল? বল। অমন গাধার মত তাকিয়ে আছ কেন? আমাকে দেখনি কখনও?
- হ্যাঁ বলব। একটু সাহস দাও না আমাকে। খুব ভয় লাগছে।
- খুব সিরিয়াস কোন কথা?
- হ্যাঁ । আমি তোমাকে অনেক ভয় পাই।
-এইটাই তোমার কথা?
- না।
- আসো বুকে ফুঁ দিয়ে দেই। ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না? আমি তো আর তোমাকে খেয়ে ফেলব না। বল। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যেতে হবে।
- i love you.

মিষ্টি কতক্ষণ তাকিয়ে রইল হৃদ্যর দিকে। কথাটা পুরোপুরিও মুখ থেকে বের হয়নি হৃদ্যর, বলার মাঝে আটকে যাচ্ছিল। সামনাসামনি আজ প্রথম বলল ভালবাসার কথা। মোবাইল এ মেসেজ এ কত কিছু বলে, সামনে আসলে চুপ। কোন কথাই বের হয় না।

মিষ্টি বলল- এই কথাটা বলার জন্য এত কিছু?এমন পাগল কেন তুমি? জানো, তোমাকে দেখলে আমার ভালবাসার চেয়ে মায়া হয় অনেক বেশি। তুমি কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতন আচরন করো।সামনাসামনি i love you বলবা, তাও এত কিছু....... পাগল একটা।

মিষ্টি হৃদ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। হৃদ্য হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টি আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে, ঠোঁটের কোণায় সেই হাসি নিয়ে বলল- " এই, উঠ। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যাব।"

হৃদ্য উঠে বলল-আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
- আমি জানি। চল এখন।

দুজন হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা ধরে।আশেপাশে অনেক মানুষ।কেউ কেউ ওদের দিকে আড়-চোখে তাকাচ্ছে, কেউ কেউ ফ্যালফ্যাল করে। সুন্দরী মেয়ের পাশে ছেলে মানুষ দেখলেই মানুষ ভাবে, কি দেখে এই ছেলের সাথে প্রেম করেছে? তার চেয়ে ভাবনাকর্তা নিজেই কত সুন্দর !!!!

- হৃদ্য, তুমি যাও এখন। রাত হয়ে যাবে বাসায় যেতে তোমার। আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি।
- আমি আসি সাথে?তোমার হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত যাই?
-না না। ওখান দিয়ে বাজে ছেলেরা বসে থাকে। তোমার সাথে দেখলে উল্টাপাল্টা কথা বলবে।
- একা থাকলে আরও বেশি বলবে। চল আমি যাই।
- লাগবে না।
- আরে লাগবে। চল তো।

হৃদ্য মিষ্টির সাথে ওর হোস্টেলের সামনে পর্যন্ত গেল। রাস্তায় বখাটেগুলো ছিল। কয়েকটা বাজে কথাও বলল। সবগুলো গা জ্বালা করার মত। মিষ্টিকেই বলেছে কথাগুলো।

হোস্টেলের সামনে এসে হৃদ্যকে বলল মিষ্টি - শুধু শুধু আসলা তুমি। এসে কি হল? ঐ ছেলেগুলো বাজে কথা বলল আর তুমি বেকুবের মতন শুনলা। তুমি তো দেখতে একেবারে পালোয়ান বীরপুরুষের মতন না যে তোমাকে দেখে কিছু বলবে না ওরা। তুমি ইচ্ছা করলেও ওদের কিছু করতে পারবা না।মানা করলাম, তারপরও আসলা।

হৃদ্যর নিজেকে কিছু সময়ের জন্য অনেক ছোট মনে হতে লাগল। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল শুধু।

- আমি দেখতে পালোয়ানের মতন হলে তুমি খুব happy হতে?
- সব মেয়েই চায় তার বয়ফ্রেন্ড এর তাকে সেভ করার মতন, security দেবার মতন abilty থাকুক। তোমার মতন হাবাগোবা বয়ফ্রেন্ড এর সাথে শুধু কোথাও বসে থাকতেই ভাল লাগে, কোথাও চলাফেরা করতে না।
- তুমি কি আমাকে নিয়ে unhappy?
-না যা হবার হয়ে গেছে। আমি তোমাকে আমার লাইফ এ মেনে নিছি। যাও বাসায় যাও।
- না বাসায় যাব না।ভার্সিটি খোলা , একেবারে হল এ যাব।
- আচ্ছা দেখে শুনে যেও ।

হৃদ্য চলে গেল।
--------------------------------------------

মিষ্টির খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আগে থেকেই হৃদ্যর উপর রাগ উঠে ছিল। তার উপর আবার মোবাইল রিসিভ করছে না। এমনি সারাদিন ২৪ ঘণ্টা মিষ্টিকে কল করতে থাকে হৃদ্য। আজ কি হল? না দিচ্ছে কল না ধরছে। কি বলেছে সন্ধায়? তাতেই এত রাগ করতে হবে? যাহ্‌ না ধরল। মিষ্টিও কথা না বলে থাকতে পারবে।মিষ্টি মোবাইলটা বন্ধ করে রাখল।

হৃদ্য হাসপাতালের বেড এ শুয়েই ডাক্তারকে বলল- ডাক্তার আংকেল, আমার মোবাইলটা ?
- রেস্ট নিন। হাত পা নাড়াতে পারছেন না, মোবাইল চাচ্ছেন। চুপচাপ ঘুমান।
- please, আমার মোবাইলটা খুব দরকার। একটু দিন না।

ডাক্তার টেবিল এর উপর থেকে মোবাইলটা হৃদ্য কে দিল। মোবাইল পেয়েই মিষ্টিকে ফোন করল। switched off মোবাইল। অনেক বার চেষ্টা করল। নাহ, মোবাইল বন্ধ। পরে একটা মেসেজ করল মিষ্টিকে।

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠল সকাল ১১ টার দিকে। মোবাইলটা অন করল। সাথে সাথেই হৃদ্যর মেসেজ- আমি হাসপাতালে । তোমাদের medical college hospital এ। একটু দেখতে আস না আমাকে ।আব্বু আম্মুকে ভয়ে বলিনি। তুমি please আসো। আমার উপর রাগ করে থেকো না, প্লিজ।

মিষ্টি কিছু সময়ের জন্য অনুভুতিশূন্য হয়ে গেল। তারপর তারাতারি হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেল। হাসপাতালে গিয়ে দেখল হৃদ্য বেড এ শুয়ে আছে। নাক, গাল, বাম হাত, ডান পা, মাথায় ব্যান্ডেজ। আর ডান হাত দিয়ে আপেল খাচ্ছে। মাথার কাছে ওর বন্ধু শিমুল বসে বসে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টি দৌড়ে গিয়ে হৃদ্যর পাশে বসল।কাঁদোকাঁদো গলায় বলল- কি হইছে তোমার? কিভাবে এই অবস্থা?

হৃদ্য মুখ থেকে আপেল বের করে চুপ করে রইল। মিষ্টি বলল- কি হল? কথা বল না কেন?

শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দাঁড়াল। বলল- তোমরা কথা বল। আমি আসতেছি।

মিষ্টি আবারও জিজ্ঞাসা করল- বল,প্লিজ কি হইছে?কিভাবে?

হৃদ্য এতক্ষণে মুখ খুলল- তোমাকে যে ছেলেগুলো বাজে কথা বলেছিল, তাদের মারতে গিয়েছিলাম। একটাও মারতে পারি নায়। ওরাই উল্টা আমাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিসে। এলাকার মানুষ এনে পরে হাসপাতালে ভর্তি করে দিছে।
- তোমাকে ওদের সাথে মারামারি করতে যেতে বলছে কে?
- ওরা তোমাকে বাজে কথা বলল আর আমি শুনব? তুমিই তো বলছ যে তোমার সাহসী বীরপুরুষ ছেলে পছন্দ।আমি না মারতে পারলাম, সহ্য তো করি নায় কথাগুলো। কাপুরুষের মত চলে আসি নায় ওদের ভয়ে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। আমি তোমার জন্য সব করতে পারব।বিশ্বাস করো আমি অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আমি তো একা ওরা অনেকগুলা ছিল,সবগুলোর পাঠার মত শরীর,তাই মেরে দিছে আমাকে । আমাকে ছেড়ে যেও না, please.

মিষ্টি মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।দু চোখ দিয়ে টলটল পানি করে পড়ছে।
মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বলল-তুমি এমন পাগল কেন?আমি কি না কি বলছি তাতেই তুমি এমন করবা? তোমার যদি আরও খারাপ কিছু হয়ে যেত? আমাকে এত ভালবাস তো কষ্ট দাও কেন?আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি জানি তুমি অনেক ভাল। তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক happy. আমাকে মাফ করবা না বল? আমি অমন কথা আর কখনও বলব না। আর এমন পাগলামি করো না !!!!
- এই কাঁদছ কেন? আমার খারাপ লাগছে।
- আচ্ছা কাঁদবো না আর। তুমি আমাকে শুধু ভালবাসবা অনেক বেশি বাসবা, তাতেই হবে। বাসবা না বল?
- হ্যাঁ, বাসব।
- তাহলে i love you বল।
- i love you.তুমি আমকে ছেড়ে যাবে নাত কখনও?
- কখনও না।

মিষ্টি হৃদ্যর হাত ধরে বসে রইল।হৃদ্য বলল- আপেল খাব। হাত ছাড়ো।
- না ছাড়ব না। আমি খাইয়ে দেই।এই যে হাত ধরেছি, সারাজীবনের জন্য। আর কখনও ছাড়ব না।

ღjrk
এই সময়ে ৫/১৮/২০১৩ ০১:১০:০০ AM 

অদ্ভুত ভালোবাসা! লিখেছেনঃ আমি প্রান্ত

অদ্ভুত ভালোবাসা!
অদ্ভুত ভালোবাসা!
লিখেছেনঃ আমি প্রান্ত

শনিবার সকাল। আমার নাম মেঘ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে English ডিপার্টমেন্টে ৩য় বর্ষে পড়ছি। রোজকাল সকালের মতই ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে শাটল ট্রেন ধরা । ট্রেনের বগি তে আড্ডা , গান, দুষ্টামি... এভাবেই প্রতি টা দিন শুরু হয় আমার । আজও সেই ভাবে শুরু করেছিলাম। ঠিক শেষ মুহুর্তে ট্রেন টা ধরতে পারলাম । বন্ধুদের সাথে দেখা। তারপর তুমুল আড্ডা। কখন যে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে চলে এসেছি খেয়াল করি নাই।

কিচ্ছুক্ষন পর খেয়াল করলাম আমাদের বগির একেবারে শেষে একটি ছেলে বসে আছে।
জানালার পাশে...মাথা ভর্তি চুল,মুখে দাঁড়ি। খুব চেনা চেনা মনে হল। জানালার বাইরে উদাস চোখে তাকিয়ে আছেন। হ্যাঁ! চিনতে পারলাম!

এটা তো আকাশ ভাই! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। কিন্ত এমন অবস্থা কেন উনার? চিনতে কষ্ট হচ্ছে! উনার চোখে পানি! নিশব্দে কাঁদছেন! অবাক হলাম খুব। অনেক দিন উনাকে ক্যাম্পাসে দেখি নাই।
কিন্তু আজকে উনি একা কেন? উনার সাথে তো মিলি আপার থাকার কথা!
আরো বেশি অবাক হলাম! খুব কথা বলতে ইচ্ছা করল উনার সাথে। খুব ভাল সম্পর্ক আমার সাথে উনার। কিন্তু এই অবস্থায় কথা বলা টা কি উচিত হবে? ভাবনার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম এমন সময় তার ডাক শুনলাম।
"এই মেঘ!!
এইদিকে আয়!!"
গেলাম তার কাছে।
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছি। তারপর অনেক কথা বললাম। একসময় সাহস করে জিজ্ঞাসা করলাম তার এই হাল কেন?
মিলি আপা কই? ও আচ্ছা! বলা হয় নাই!
মিলি আপা আর আকাশ ভাই একজন আরেকজন কে মন প্রান দিয়া ভালবাসত । দুই জন সবসময় একসাথে থাকত। মিলি আপাও আকাশ ভাইয়ের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ত।
একসাথে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করত। আজ নেই! তাই অবাক হয়েছিলাম।

আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলেন না। একটা সিগারেট ধরালেন। আমাকেও সাধলেন। আমি খাই না বলে নিলাম না। বললেন মিলি আপার খবর তিনি জানেন না! আমি আকাশ ভাই এর কথায় আকাশ থেকে পড়লাম! কেন???
তারপর আমাকে বলতে শুরু করলেন সেই কাহিনি যা শুনে আজও আমি অবাক হই!
নার্গিস আপা ছিলেন আকাশ ভাই আর মিলি আপার সব থেকে কাছের মানুষ। তাদের সাথেই পড়ত। দুই জনেরই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল নার্গিস আপা। ভালই চলছিল সব কিছু।

আকাশ ভাই আর মিলি আপার প্রেম ভালোবাসা, সব কিছুই ছিলো স্বাভাবিক। প্রতিদিন এর মতই নাকি তাদের জীবন টা চলছিল । দুই জনের অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে। আকাশ ভাই ভাল ঘরের ছেলে। মা আইনজীবী। বাবা ডাক্তার। মিলি আপাও অনেক ভাল ঘরের
মেয়ে।
আকাশ ভাই অনেক মেধাবী ছাত্র। এটা ক্যাম্পাস এর সবাই জানে। দুই জনের পরিবার থেকে যে প্রবলেম হবে ভবিষ্যতে এমন কোন সম্ভাবনাও নাকি ছিল না।

আমরা সবাই নিশ্চিত ছিলাম মিলি আপা আর আকাশ ভাই এর বিয়ে আমরা খাব! খাবই খাব! যেদিন থেকে আকাশ ভাইয়ের জীবনটা এমন
হয়ে গেলো আমি সেই কাহিনি আজকে বলছি: সেই দিনও প্রতি দিন এর মত মিলি আপা স্টেশন এ এসেছিলেন ক্যাম্পাসে যাবেন বলে। প্রতিদিন এর
মতই আকাশ ভাই অপেক্ষা করছিলেন মিলি আপার জন্য। প্রতিদিনের মতই একই বগি তে একই বেঞ্চ এ পাশাপাশি বসা । গল্প, দুষ্টামি । ক্যাম্পাসে ক্লাস, ঘুরাঘুরি । সব কিছুই ছিল সাধারন ।

মিলি আপার ফুচকা ছিল খুব প্রিয় । ওইদিন দুইজন মিলে ফুচকাও খেয়েছিলেন । তারপর একইভাবে ক্যাম্পাস থেকে ফিরে আসা! কিন্তু
তখনও আকাশ ভাই জানতেন না তার জীবনের সব থেকে ভয়াবহ
দিনটি ছিল সেইদিন। ওইদিন রাতে অনেক ট্রাই করেও মিলি আপার ফোন টা বন্ধ পাচ্ছিলেন তিনি।

তারপর...
আকাশ ভাই কোনরকমে রাতটা পার করলেন।

সারা রাত ছটফট করে কাটালেন।
পরেরদিন খুব সকালে উঠে স্টেশনে এসে বসে রইলেন মিলি আপার অপেক্ষায় । একসময় তিনি আসলেন । সুন্দর একটি নীল সালোয়ার কামিজ পড়ে । তাকে নাকি অপূর্ব লাগছিল।

আকাশ ভাই যেন একটু শান্তি পেল। সব কিছুই নরমাল ছিল। নার্গিস আপা যেহেতু মিলি আপা আর আকাশ ভাই দুই জনেরই খুব ভালো বন্ধু ছিলেন সেহেতু নার্গিস আপাও তাদের সাথে একই বগিতে আসা যাওয়া করতেন। সেই দিন আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা কেন জানি একটু অদ্ভুত আচরন করছে। পাত্তা দিলেন না।

মিলি আপা কে পেয়ে সব ভুলে তিনি শুধু মিলি আপাতেই মগ্ন। প্রতিদিনের মতই ক্লাস আড্ডা। একসময় আকাশ ভাই খেয়াল করলেন নার্গিস আপা তাকে কিছু একটা বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা......

ওইদিন অনেক খুশি দেখাচ্ছিল মিলি আপাকে। আকাশ ভাইও মিলি আপার এমন খুশি দেখে আটখানা। দুই জন মিলে অনেকখন ছিলেন । একসময় যাওয়ার সময় হল ।

ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে আসলো নার্গিস আপা, আকাশ ভাই, মিলি আপা । হঠাৎ মিলি আপা একটা কাজ করে বসলেন যা আকাশ ভাই কখন স্বপ্নে ভাবেন নি ।
প্রতিদিন আকাশ ভাই এর সাথে এই বিষয় নিয়া তুমুল ঝগড়া হত। সেটা হল
সিগারেট খাওয়া! মিলি আপা নাকি অনেক মানা করতেন না খাওয়া এর জন্য। কিন্তু ওইদিন মিলি আপা নিজেই আকাশ ভাই কে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দেন !!!

আকাশ ভাই অবাক হলেন বললে ভুল হবে!
তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি যে মিলি আপা এমন একটা কাজ করতে পারেন। ট্রেন আসল। মিলি আপাকে নিয়া উঠতে যাবেন এমন সময় নার্গিস
আপা ভাই কে পিছন থেকে ডাকলেন। বললেন ভাই এর সাথে তার পড়ালেখা নিয়া কিছু কথা আছে। একটু পর যাতে যায়। মিলি আপা আজকে একা গেলে কিছু হবে না......

ভাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলেন। মিলি আপাকে একাই ট্রেন এ উঠাই দিলেন । নার্গিস আপার সাথে বসলেন এক পুকুর পাড়ে। অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর আকাশ ভাই বিরক্ত হলেন।

তারপর আবার জিজ্ঞাসা করলেন কি ব্যাপার। নার্গিস... আপা এতক্ষনে মুখ খুললেন ।

তার কথার সারমর্ম হল. . .
(গতকাল রাতে মিলি আপার বাগদান হয়ে গেছে। মিলি আপা এখন আর আকাশ ভাই এর নেই। সে এখন অন্য একজন এর স্ত্রী!)

আকাশ ভাই প্রথমে বিশ্বাস করলেন না! করার কথাও না! আজকে ৪ বছর এর সম্পর্ক! যে মেয়ে তাকে এত বেশি ভালবাসে সে কখনো এমনকাজ করতে পারে না!

অনেক বুঝালো নার্গিস আপা। আকাশ ভাই কোন ভাবেই বিশ্বাস করলো না! এক সময় নার্গিস আপা মিলি আপার বাগদান এর একটা ছবি দেখালো!
আকাশ ভাই আকুল হয়ে কাঁদলেন। অনেক বেশী!

একসময় অজ্ঞান হয়ে যান। সেই দিনই তিনি এই দুনিয়ার মায়া ছাড়তে চেয়েছিলেন। একসময় মিলি আপার ফোন আসলো। আকাশ ভাই শুধু এতটুকু জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তার সাথে এমন করা হল?

সেই মেয়ে যদি তাকে ভাল নাই বাসত তাইলে কেন তার সাথে এমন করল? কি দোষ ছিল তার? আর যদি মিলি আপার ফ্যামিলি থেকে কোন প্রবলেম থাকত তাইলে সেটা আকাশ ভাই কে জানাইলেই পারত!

এভাবে লুকিয়ে তার লাইফটা কে নষ্ট করে কি লাভ ছিল তার? কেন এই ছলনা? বাগদান হওয়ার পরের দিন পর্যন্ত কিভাবে এই মেয়ে নরমাল ভাবে আবার প্রেমের অভিনয় করল? নার্গিস আপা যদি না জানাত তাহলে হয়ত আর জানাই হত না এই চরম কথা টা! নার্গিস আপার খারাপ লেগেছিল এই
ভেবে যে এভাবে একটা মানুষ এর সাথে প্রতারনা করা যায় না! তাই তিনি সব বলে দিয়েছিলেন। জানি না মেয়েরা কেন এত টা ছলনাময়ী!

সব শেষে আকাশ ভাই আমাকে একটা কথাই বলেছিলেন!... "জানিস
আমাকে তো মিলি ছেড়ে চলে গেল কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে একটা চরম উপহার দিয়া গেল! সিগারেট । ও ছেড়ে গেছে কিন্তু এই সিগারেট আমাকে ছেড়ে যাবে না! "

আমি আকাশ ভাই এর কথা গুলো শুনছিলাম আর মনের মাঝে কোথায় যেন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম। তখন ও আকাশ ভাই এর দুই চোখের পানি অঝর ধারায় ঝরছিল!

উনার জীবনের কাহিনী শুনতে শুনতে বাইরের প্রকৃতি দেখছিলাম। দুই চোখ যেন বার বার প্রকৃতের মাঝে অতীত খুঁজে ফিরছিল!! জানি না এরই নাম কি ভালবাসা???

গল্প টা কোন বানানো গল্প না। এটি একটি সত্য কাহিনী । মিলি আপা বর্তমানে তার স্বামী নিয়ে সুখেই আছে বলে শুনেছি । এখনও মাঝে মাঝে আকাশ ভাইকে ক্যাম্পাসে দেখি ।

একমনে সিগারেট খেতে খেতে একা হেটে বেড়ান। মাঝে মাঝে ফুচকার
দোকানে দেখা হলে একটা কথা বলেন, "এই আমার সামনে থেকে সর! আমার সামনে ফুচকা খাবিনা। আর যা ইচ্ছা খা, কিন্তু ফুচকা খাবি না!!"

আর কেও না বুঝলেও আমি জানি কেন তিনি এই কথা বলেন!! সেইদিন, সেই মিলি আপা, সেই মিলি আপার ফুচকা!! সবই মনে পড়ে যায়!!

(সঙ্গত কারনেই গল্পে চরিত্র গুলোর নাম এবং ডিপার্টমেন্টের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে । কিন্তু এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সত্য ঘটনা। মেয়েদের কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই গল্প আমি লেখি নাই । তবে কিছু মেয়ে আছে যাদের জন্য আজকে এই আকাশ নামের ছেলেগুলোর জীবন অনেকটাই এলোমেলো আজ! আমি নতুন লেখক। আগে কখনো গল্প লেখি নাই। যদি কোন ভুল, অথবা অসঙ্গগতি চোখে পড়ে তাহলে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করছি!! সবাইকে ধন্যবাদ!)

এডমিনঃ আজ রাতেও কেন জানি ঘুমাতে পারছিলাম না, তাই বন্ধুদের পাঠানো গল্প গুলো পরছিলাম, আর হঠাৎ ই চোখে পড়লো এই গল্পটি, গল্পটি পরে মনের অনেকটা যায়গা জুড়ে ফাকা ফাকা লাগছে!!

সত্যি কিছু বাস্তবতা চোখের কোনে অঝর শ্রাবণ ধারাও এনে দিতে পারে!!

আজকের গল্পটি আপনার মনে যদি একটুও অনুভুতির দোলা দিয়ে থাকে, তাহলে আপনারাই বলুন কত লাইক হবে???

ღজয় রাজ খান

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা লিখেছেন- Sesh rater adhar

এই ভালবাসা নেই ভালবাসা
এই ভালবাসা নেই ভালবাসা
লিখেছেন- Sesh rater adhar

রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগটা বের করল সিফার। হাতটা ধরে বাধা দিল নীরা।

- এই আমি দেই। আমার কাছে ভাংতি আছে। মানিব্যাগ রেখে দাও।
- আমার কাছেও ভাংতি আছে।
- চুপ। কম কথা বল। আমি দিচ্ছি না? এত কথা বল কেন?

সিফার চুপ করে মানিব্যাগ রেখে নীরার দিকে মুখ তুলে তাকাল। নীল রঙের একটা ড্রেস পরে আছে নীরা। দেখেই বোঝা যায় অনেক দামি ড্রেস। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নীরার পাশে নিজেকে মাঝে মাঝে খুব বেমানান লাগে। সিফারের জুতা জোড়াও ছেঁড়া। নিউ মার্কেট এর সামনে থেকে সস্তায় কিনেছিল জুতা জোড়া। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই শেষ। সেই কবে থেকে একই জামা কাপড় পরে দেখা করে সিফার। আর নীরাকে এখন পর্যন্ত এক ড্রেস ২ দিন পরতে দেখেছে বলে মনে হয় না। এমন কি জুতাগুলোও মনে হয় প্রতিদিন নতুন নতুন। নীরা কখনও জিজ্ঞাসা করেনি প্রতিদিন একই ড্রেস পরে আসে কেন? করবেও না কখনও। কিন্তু সিফার নিজে থেকেই বলে - জানো? আমার এই জামাটা অনেক প্রিয়। খুব ভাল লাগে জামাটা পরতে। জামাটা পরলে নিজেকে হিরো হিরো মনে হয়। দেখ দেখ, এখনও কালার একদমই ডিসকালার হয়নি। সেই আগের মতই আছে।

নীরা হাসে কথাগুলো শুনে। আর বলে - আসলেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে এই ড্রেস এ।

মেয়েটা অনেক ভাল। সব কিছু কত সহজে মেনে নেয়। ভাবতেই ভাল লাগে। ইচ্ছা করলেই সিফার এর চেয়ে অনেক ভাল ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে। কিন্তু না, এই অপদার্থের সাথেই পড়ে আছে। মেয়েটা একটু বোকাও মনে হয়। তবে নীরা ভাবে সিফার অনেক বোকা। দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝে না ছেলেটা। বোকা হোক, পাগল হোক, অসম্ভব সুন্দর একটা মন আছে সিফার এর। তাতেই চলবে। বেশি কিছু দরকার নেই।

রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে দেখে সিফার হাত ধরে থামাল নীরাকে। থামিয়ে বলল - কই যাও?
- সকাল থেকে কিছু খাইছ বলে তো মনে হয় না। ঘুম থেকে উঠেই চলে আসলা। চল কিছু খাওয়া দাওয়া করে আসি।
- না। খেয়ে আসছি সকালে। এখন ক্ষুধা নাই।
- আবার মিথ্যা বলে। আমি মোবাইল দিলাম আর চলে আসলা। আর বলে কি খেয়ে আসছি।
- এই রেস্টুরেন্টেই যাবে?
-হ্যাঁ।
- আসলে কি জানো, তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে। বলব কি করে বুঝছি না।
- এত লজ্জায় লাল হবার কিছু হয়নি। ছেলে মানুষ, এত লজ্জার কি আছে? বল কি হইছে?
- আমার loose motion কাল রাত থেকে। এর মধ্যে যদি এই ফাস্টফুড খাই, নির্ঘাত মারা যাব। এমন কি রেস্টুরেন্টেও কাজ করে দিতে পারি।

নীরা নাকটা উঁচু করে সিফারের দিকে তাকাল। পরক্ষনেই স্বাভাবিক হয়ে বলল - ছিঃ , কি সব কথা বল তুমি। loose motion মানে? সকাল থেকে তুমি আমার সাথে। একবারও তো যাও নায়।
- আসলে ব্যাপারটা হল, সকাল থেকে emotion এর মধ্যে আছি তো , তাই loose motion কাজ করছে না। তুমি পাশে থাকলে আমার emotion বেড়ে যায়।

নীরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল- হইছে। খুব বুঝছি। এখন চল। আমি খাইয়ে দিব। so emotion এর মধ্যে থাকবা। loose motion এ প্রবলেম হবে না। চল।

সিফারের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নীরা। সিফার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নীরার সাথে গেল। আসলে loose motion না, পকেটের অবস্থা খুব একটা ভাল না। তাই আসতে চাচ্ছিল না সিফার। সত্যিই খুব সমস্যা চলছে ফ্যামিলিতে। বাসা থেকে যতটা সম্ভব বাহিরে থাকা যায়, তাই থাকছে সিফার। ঘরে এলেই এটা নাই, ওটা নাই, এই সমস্যা , ঐ সমস্যা, হাজারটা ঝামেলা। উফ!! বাবা খুবই কম বেতনের একটা চাকরি করেন। তার উপর কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। নিজেকে মাঝে মাঝে কাপুরুষ মনে হয়। পরিবারের কাছেও একটা অপদার্থ, নীরার কাছেও।

রেস্টুরেন্টে খাবার পর নীরা বলল - আমি বিলটা দিয়ে দিচ্ছি। আমার কাছে টাকা ভাংতি নাই তো। টাকাটা ভাংতি করা দরকার।

সিফার আবারও অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে। জমানো টাকাগুলো নিয়ে আসলেই হত। কিন্তু ঐ টাকা তো অন্য কাজের জন্য।

মেয়েগুলো হয়ত নীরার মত এত ভাল হয় না। এত সহজে সব কিছু মেনে নেয় না। নীরা জানে সিফারের ফ্যামিলিতে সমস্যা চলছে একটু। তাই একেকটা অজুহাতে সিফারের টাকাগুলো বাঁচিয়ে দিচ্ছে। বাসায় আসার ভাড়াটাও দিয়ে দিল নীরা। তখন খুব বেশিই লাগল নিজের আত্মসম্মানে সিফারের। তাই বলেই ফেলল নীরাকে - কি ব্যাপার ? কি শুরু করছ তুমি?আমার কাছে ভাড়া দেওয়ার টাকাটাও নাই নাকি? আমাকে এভাবে অপমান করার মানেটা কি ?

আবারও নীরা সেই মিষ্টি হাসি মুখে নিয়ে বলল- উহ। এত বুঝে ছেলেটা। বিয়ের আগ পর্যন্তই তো mutual খরচপাতি। বিয়ে হোক তারপর থেকে সব তোমার। আমার থেকে ১ টাকাও বের করতে পারবা না। জামাই হয়ে বউয়েরটা নিবা? তা হবে না। এখন তো ভালবেসে দিচ্ছি। আর তখন কিছু না পেলে ঝাড়ু দিয়ে পিটাব। বাচ্চাকাচ্চা বউ সংসার সব তোমাকেই দেখতে হবে। তুমি শুধু দিবা আর আমরা বসে বসে খাব। হি হি হি হি।

কি সরল হাসি মুখে। আর কিছু বলার পেল না সিফার। বাসে করে চলে আসল বাসায়। আসার সময় জানালা দিয়ে দেখল নীরা হাত নেড়ে যাচ্ছে এখনও। বাসের শব্দে শোনা যাচ্ছে না কি বলছে। হয়ত টাটা বাই বাই।

রুমে এসে ঢুকার পরই মায়ের ডাক,
- সিফার, সারাদিন থাকিস কই তুই? বলেও যাস না। তুই তো আগে এমন ছিলি না।

কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে সিফার। কথা বলতে গেলেই মায়ের সাথে ঝগড়া বেধে যাবে। ইদানীং খুব খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাচ্ছে। অল্প কিছুতেই রাগ উঠে যায়।

পরশু বার্থডে নীরার। জমানো টাকাগুলো বের করল সিফার। অনেক কয়েক মাস ধরেই জমাচ্ছে টাকাগুলো। রিকশাতে না গিয়ে হেঁটে গেছে। একটা কিছু খুব খেতে ইচ্ছা করল, না খেয়ে টাকাটা রেখে দিছে। অনেক দিনের শখ, একটা ভাল ব্রান্ড এর বডি স্প্রে কিনবে সিফার। কিন্তু তাও কিনেনি। আগে নীরার বার্থডেটা যাক তারপর। মেয়েটা অনেক ভাল। কখনও ভাল কোন গিফট দেয়নি সিফার। শুধু কিছু গোলাপ ছাড়া। কিন্তু সেই গোলাপ নিয়েই মেয়েটা কত খুশি। কখনও মুখ বাকিয়ে বলে না, তুমি তো আমাকে কিছুই দাও না।
অন্য মেয়ে হলে কবেই ভেগে যেত। সিফার টাকাগুলো গুনল। না খারাপ হয়নি। নীরাকে পিংক কালারের ড্রেস এ খুব মানায়। ওকে একটা সুন্দর দেখে ভাল পিংক কালারের ড্রেস কিনে দিবে সিফার। বার্থডে গিফট। অসাধারণ লাগবে সেই ড্রেস পরলে ওকে।
সিফার হঠাৎ হেসে উঠল। মনে পড়ছে যে সিফারের বার্থডেতে নীরা একটা কবুতরের বাচ্চা এনে সিফারকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল - Happy Birthday To You, জান। এই নাও, বার্থডে গিফট। তোমার গায়ে তো রক্ত কম। দেখেই বোঝা যায়। কবুতরের বাচ্চা রোস্ট করে খাবা। গায়ে রক্ত বাড়বে, শক্তিও বাড়বে। একটু তো মোটাসোটা হও।

এরপর নীরা ব্যাগ থেকে কত্তগুলা আপেল বের করে বলল- নাও, এগুলাও খাবা। শক্তি বাড়বে।

বাসায় এসে কবুতরের বাচ্চা মাকে দিয়ে বলেছিল- আম্মু, এটা রান্না কর। আমার বন্ধু এটা উপহার দিছে আমার জন্মদিনে। এটা খেলে নাকি অনেক শক্তি পাওয়া যায়, শরীরে রক্ত বাড়ে।

এরপর ঘরে এসে এক এক করে সবগুলো আপেল একসাথে খেয়েছিল সিফার। ১০ টার মতন হবে। সবগুলো। শক্তি বাড়াতে হবে শরীরে তাই।
নীরা এত কিছু দিল। আর নীরাকে একটা কিছু দিবে না, তা কি হয়?তাই তো সেই কবে থেকে টাকা জমাচ্ছে। মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছে। কাল পছন্দ মতন ড্রেসটা কিনবে সিফার।

মা ঘরে হাতে একটা প্লেট নিয়ে ঢুকল। সিফারের কাছে এসে বলল- মুড়ি মাখলাম। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে। আয় তোকে খাইয়ে দেই। কতদিন তুই আমার হাতে খাস না।

মা খাইয়ে দিচ্ছে সিফারকে। খুব কান্না পাচ্ছে। সবাই এত ভাল কেন? মা টা না পাগল একটা। ভেবেছে আমি রাগ করে আছি।
সিফার মাখানো মুড়ি খাচ্ছে আর গাল বেয়ে পানি পড়ছে। মা পানি মুছে দিয়ে বলল- কাঁদিস ক্যান বাবা ? মানুষের অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। আমাদেরও থাকবে না। তোর কষ্ট হয় বুঝি। তোর যা লাগবে চাবি। যেভাবে হোক আমরা জোগাড় করে দিব। তুই আমাদের এত আদরের ছেলে।

সিফারের কান্না থামার পরিবর্তে আরও বেশি পাচ্ছে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এই মানুষগুলোর ভালবাসা ফেরত দেবার মতন ক্ষমতা নেই ওর। কেঁদে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া আর কি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

মা বলল- আজও বাড়িওয়ালা এসেছিল। মানুষগুলোকে যে আর কত ঘুরাব!! তোর বাবা বেতনও পাচ্ছে না। আর যে কয়টা টাকা বেতন পায় তাতে কিছুই হয় না।
- মা, আমি একটা কথা বলি?
-বল, বাবা।
- আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে। তুমি নিবে সেগুলো ? আমি তো কিছুই করতে পারি না। অন্তত এক মাসের ঘর ভাড়াটা দিয়ে দাও তা দিয়ে।
- আরে না। কি বলিস? তোর জমানো টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিব কেন? তুই বড় হইছিস। এখন তোর একটা হাত খরচ আছে না?তোকে তো ওভাবে টাকা আর দেওয়া হয় না। তোর টাকা রেখে দে। কি একই শার্ট পরে ভার্সিটিতে যাস প্রতিদিন। তার চেয়ে ২ টা শার্ট কিনিস। জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে দেখলাম। কম দামের মধ্যে একটা জুতাও কিনিস। তোর বাবা বেতন পেলেই ঘর ভাড়া দিয়ে দিব। আর এতদিন ধরে থাকি আমরা এখানে। বাড়িওয়ালাকে একটু বুঝিয়ে বললেই বুঝবে।

সিফার ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। হঠাৎ মায়ের পায়ের কাছে পরে বলল - মা, আমাকে মাফ করে দাও না। আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিছি। আমি অনেক খারাপ। টাকাটা নাও না। না নিলে আমার ভাল লাগবে না। আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি। এই কথাটা অনেকদিন বলতে চাইছি, বলতে পারি নায়। আমার নতুন জামা কাপড় জুতা কিছু লাগবে না। আমি বড় হয়ে যখন চাকরি করব তখন আর কষ্ট থাকবে না আমাদের। তখন ভুরি ভুরি জামা কাপড় কিনতে পারব।
- এই সিফার, কি হইছে বাবা? এই তাকা এইদিকে। কি হইছে? এমন পাগলামি করতেছিস কেন?আচ্ছা দে। নিচ্ছি টাকা। তোর বাবা বেতন পেলে নতুন জামা কাপড় কিনে দিব তোকে আচ্ছা?

সিফার চোখ মুছে মায়ের হাতে টাকাটা দিয়ে বলল- নাও, ঘর ভাড়া দিয়ে আসো।

মা ছেলের কপালে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলেন।

সিফার জানালার পাশে বসল এসে। হালকা হালকা হাওয়া বইছে। চোখের পানিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে সেই হাওয়ায়। নিজেকে প্রথম বারের মতন মানুষ বলে মনে হচ্ছে। নীরার জন্য গিফট কেনা হল না এবারও। মেয়েটা অনেক অনেক ভাল। হয়ত রাগ করবে না কিছু না দিলেও। হঠাৎ চোখ পড়ল শার্টটার দিকে। একটু খানি ছিঁড়ে গেছে শার্টটা। কিভাবে ছিঁড়ল কে জানে!!! ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সিফার। মনে মনেই ভাবল, প্রেম ভালবাসা, নীরা, এগুলো নিম্নবিত্তদের জন্য না। এদের সুখ ঐ মা বাবার একটু হাসি। অল্প কিছু টাকা, বেঁচে থাকার জন্য। ছেঁড়া শার্ট সেলাই করে পরা। সস্তা জুতা। ২ বেলা পেট ভরে ভাত খাওয়ার মধ্যেই।
ভালবাসা সবার জন্য না হয়ত। নীরা ভাল মেয়ে অনেক। কিন্তু কতটা দিন এভাবে মানিয়ে নিবে? একটা সময় হয়ত ক্লান্ত হয়ে যাবে। নিম্নবিত্তদের ছেঁড়া শার্টের সাথে নীরার মত মেয়েদের মানানো আসলেই খুব কঠিন !!!

ღjrk