Friday, March 17, 2017

একটা স্টুপিড-এর গল্প সফিক এহসান

একটা স্টুপিড-এর গল্প
একটা স্টুপিড-এর গল্প
সফিক এহসান
(১৪ এপ্রিল ২০০৮ইং)

চরিত্রসমূহঃ
১। শিমুল ২। মিরা ৩। জেরিন ৪। সোনালী
৫। মিরার মা ৬। মাসুদ ৭। রিক্সাওয়ালা ৮। আইসক্রিমওয়ালা



দৃশ্য-১

(একটি সরকারী কলেজের ক্লাস রুম। ক্লাস হচ্ছে না। ছাত্ররা ক্লাসরুমে যে যার মত গান গাইছে, গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাসের একমাত্র ছাত্রী মিরা দরাজার পাশেই একটা সীটে বসে বই পড়ছে। হঠাৎ ঝড়ের বেগে শিমুল এসে ঢুকলো। )

শিমুল: (ক্লাসে ঢুকেই মিরার সামনে থেকে বইটা টেনে নিয়ে বন্ধ করে ফেলল। ব্যস্তভাবে বলল) মিরা! একটু শুনে যা তো।
মিরা: (বই বন্ধ করে ফেলায় একটু বিরক্ত হয়ে) কীরে বাবা!
শিমুল: (মিরার হাত ধরে টেনে তুলে) খুব জরুরী। আয় না, বলছি।
মিরা: (বিরক্তি ও অনিচ্ছায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে) উহ্ কী হয়েছে বলবি তো?
শিমুল: (মরিয়া হয়ে টানতে টানতে) আরে যেতে যেতে বলছি। খুব জরুরী।
মিরা: (থমকে দাঁড়িয়ে) হাত ছাড়, ব্যথা লাগছে। (জোর করে হাত ছাড়িয়ে নেবে) আগে বল কি ব্যাপার? কোথায় যেতে হবে?
শিমুল: জাহান্নামে! কোন সমস্যা?
মিরা: বিশাল সমস্যা! আমার পড়া আছে।
শিমুল: আয় না দোস্ত (চোখ টিপে) একটু প্রক্সি দিতে হবে। জাস্ট দুই মিনিট লাগবে!
মিরা: (দু’হাত বুকে বেঁধে, গম্ভীরভাবে) কিসের প্রক্সি?
শিমুল: (একটু চারদিকে তাকিয়ে) সেটা যেতে যেতে বলি? এখানে বলা যাবে না।
মিরা: আশ্চর্য! ক্লাস আছে না?
শিমুল: (ঝট করে মিরার ডান হাতে কুনুইয়ের ওপড় ধরে) মাত্র দুই মিনিটে ক্লাস শেষ হয়ে যাবে না! আয় তো। (বারান্দায় দাঁড়ানো মাসুদের দিকে তাকিয়ে) মাসুদ! দোস্ত স্যার আসলে একটা মিস্ দিস তো।
মাসুদ: কই যাস?
(শিমুল মাসুদের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। তারপর মিরাকে নিয়ে সিঁড়ির দিকে হাঁটতে থাকে।)



দৃশ্য- ২

(সিঁড়ির নীচে শিমুল মিরা দাঁড়িয়ে। মিরা উত্তেজিত, শিমুল বোঝাচ্ছে...)
মিরা: কী বললি! আমি দুই মিনিটের জন্য তোর লাভার সাজবো? ফাইজলামী পেয়েছিস!
শিমুল: আরে বাবারে তুই বুঝতে চেষ্টা কর- মেয়েটা দুনিয়ার ফাউল। মাত্র সাত দিন মোবাইলে পরিচয়; চেনে না জানে না ভাল করে, অথচ কলেজে এসে হাজির প্রোপোজ করতে! চিন্তা কর কত বড় ফাউল!
মিরা: প্রোপজ করতেই এসেছে কিভাবে বুঝলি? এমনি দেখা করতেও তো আসতে পারে!
শিমুল: যা করতেই এসে থাকুক, আমি চাই না ব্যাপারটা বেশি দূর গড়াক। মোবাইলে ক’দিন কথা বলেই যে সব মেয়ে প্রেমে পড়ে যায় এদেরকে আমি দু’চোখে দেখতে পারি না।
মিরা: তো এখন আমি কি করব?
শিমুল: তুই জাস্ট এক মিনিটের জন্য যাবি। আমি ওর সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দেব- জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার গার্লফ্রেন্ড। আর এ হচ্ছে জেরিন। ঐযে সেদিন তোমাকে বললাম না? ব্যস, তুই হায় হ্যালো করে হ্যান্ডশ্যাক করে চলে আসবি। ক্লিয়ার!
মিরা: কিন্তু তাতে লাভটা কী হবে?
শিমুল: লাভ কী মানে? আরে আমার গার্ল ফ্রেন্ড আছে শুনলে নগদে ফুটবো না! তোর কি ধারনা, আমার লাভার আছে শুনেও ও আমার পিছে পিছে ঘুরবে?
মিরা: (দুষ্টু হেসে) আমি তা বলি নাই। এসব করলে আমার লাভ কি? উঁ? কী খাওয়াবি?
শিমুল: ছুছা কোথাকার! জীবনে খাস নাই! আচ্ছা যা, তোরে হাবুর দোকানের সিঙ্গারা খাওয়ামনে।
মিরা: সিঙ্গারা! যা ফোট্! অন্য কাউকে মেনেজ কর, আমি পারব না।
শিমুল: আরে কয় কি! আইচ্ছা যা, তুই যা খাইতে চাস খাইস। তুই আমার ধর্মের মা, এখন চল।
মিরা: কী! আমি তোর কী লাগি?
শিমুল: হইল তো বাবা, তুই আমার ধর্মের বউ; এখন চল।
মিরা: খাওয়ার কথাটা মনে থাকে যেন।



দৃশ্য- ৩

(জেরিন ক্যাম্পাসের চত্বরে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখছে। দূর থেকে শিমুল মিরাকে দেখিয়ে দিয়ে কিভাবে কী বলতে হবে তা আরেকবার বুঝিয়ে দিয়ে দু’জনে একসাথে সেদিকে এগুলো)

শিমুল: আমি যদি ভুল করে না থাকি তবে আপনিই জেরিন, রাইট? (হাত বাড়িয়ে দিয়ে) নাইস টু মীট ইয়্যু।
জেরিন: (বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরে) ঢং করার জায়গা পাও না! আমাকে তুমি চেনো না? ফেসবুকে আমার ছবি তুমি দেখ নি?
শিমুল: তা দেখেছি; তবে তুমি ছবির থেকেও অনেক সুন্দর কিনা! একটু কনফিউসড্ ছিলাম।
জেরিন: যাহ্!
শিমুল: (মিরাকে দেখিয়ে দিয়ে) পরিচিত হও- মিরা, এ হচ্ছে জেরিন ঐ যে তোমায় সেদিন বললাম না? আর জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার... গার্লফ্রেন্ড এবং...
(শিমুল কথা শেষ করল না। মিরার দিকে জেরিনের বাড়ানো হাতটা একটু কেঁপে উঠলো। হঠাৎ মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং ইলেক্ট্রিক শক্ খাওয়ার মত কেঁপে উঠে এক পা পিছিয়ে গেল। মিরা একরকম জোর করেই যেন জেরিনের ঠান্ডা হয়ে আসা হাতটা ধরে মৃদু ঝাকুনি দিল। জেরিনের চোখ ছলছল করে উঠছে। কান্না লুকোনোর জন্য তাড়াতাড়ি বলল)
জেরিন: অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে, আজ তাহলে আসি?
শিমুল: আরে না না; সেকি! এখনি চলে যাবে কেন? আসো কোথাও বসি। এটলিস্ট ‘ফাস্ট মীট’টা সেলিব্রেট করা দরকার না। কি বল মিরা?
জেরিন: না ঠিক আছে। আরেকদিন না হয়...
মিরা: আরেকদিন কেন? চলুন কিছুক্ষণ আড্ডা দিই। তাছাড়া আপনি আমাদের ক্যাম্পাসের গেষ্ট, আপনাকে ক্যাম্পসটাও ঘুরিয়ে দেখাই। আমাদের ক্যাম্পাসটা কিন্তু এমনিতে খুব সুন্দর...
জেরিন: না মানে আজ সময় হাতে নিয়ে আসিনি তো। এমনিতেই এদিকে একটা কাজ ছিলো। ভাবলাম শিমুল ভাইয়ের সাথে একটু দেখা করে যাই...তাছাড়া আজ একটু তাড়া আছে... নাইস টু মীট ইয়্যু... (বিষণœ হেসে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে এলো)



দৃশ্য-৪

(কলেজের বাগানের পাশের বেঞ্চে বসে আছে শিমুল আর মিরা। শিমুল প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়ছে। সে বার বার জেরিনের মর্মাহত হয়ে এক পা পিছিয়ে যাবার দৃশ্যটা নকল করে মিরাকে দেখাচ্ছে।)
মিরা: (বিরক্ত স্বরে) ইটস্ ঠু মাচ শিমুল! হাসি থামা।
শিমুল: কেন? কি হয়েছে?
মিরা: বেচারী সত্যি কষ্ট পেয়েছে।
শিমুল: আহারে বেচারী! (বলে আবার হাসতে থাকে)
মিরা: শিমুল! এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! আর যাই হোক একটা মেয়েকে তুই আমার সামনে এভাবে অপমান করতে পারিস না।
শিমুল: তুই হঠাৎ এরকম রেগে যাচ্ছিস কেন?
মিরা: তুই ওর চোখ খেয়াল করেছিস? কথাটা শুনে ওর চোখে পানি এসে পড়েছিল! আমার মনে হয় ও সত্যি তোকে ভালবাসে।
শিমুল: যাহ্!
মিরা: যাহ্ মানে! আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা তোদের পরিচয়টা যেন কিভাবে হল?
শিমুল: ঐযে বললাম- কোন এক প্রোগ্রামে আমার কবিতা আবৃতি শুনেছিল। তারপর নাকি অনেক খুঁজে টুজে আমার নাম্বার জোগার করেছে। গত সাত-আট দিন মোবাইলে বকর বকর, ফেসবুকে চ্যাট আর আজ তো নিজের চোখেই দেখলি।
মিরা: আমি শিওর ও আর দশটা আলাপি মেয়ের মত মোবাইলে বয়ফ্রেন্ড খুঁজে বেড়ানো মেয়েদের মত না। ও সত্যি অনেক কষ্টে তোর মোবাইল নাম্বার যোগার করেছে। মোবাইলে টাইম পাস করা ফালতু মেয়েদের কথাবার্তা, মুভমেন্ট এরকম হয় না। তাই আমার মনে হয় ও সত্যি তোকে...
শিমুল: বাসলে বাসে; হুজ কেয়ার!
মিরা: বাসলে বাসে মানে! একটা মেয়ের মন ভেঙ্গে দিয়ে তুই বলছিস হুজ কেয়ার! ওকে তাহলে প্রথমেই বলে দিতি যে তুই এ ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড না। মেয়েটা তো দেখতে শুনতেও খারাপ না। সাত আট দিন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার কী দরকার ছিল?
শিমুল: দেখ তুই যা ভাবছিস ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। আমি মোটেও ওকে মিষ্টি কথায় ভুলাই নি। তুই আমাকে খুব ভাল করেই চিনিস। আমি আর দশটা ছেলের মত- মেয়ে দেখলেই আইসক্রিমের মত গলে যাওয়া ছেলে না।
মিরা: আমি জানি শিমুল। তুই খুবই ফ্রেস একটা ছেলে। বাট তুই বলতো, মোবাইলে তুই একদিনও ওকে কবিতা শোনাস নি? মোবাইলে কোন কবিতা এস.এম.এস করিসনি? তুই স্বভাবজাত যে ধরনের সততা-সাহিত্য-আদর্শ-দেশপ্রেম-দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলিস, সেসব ওর সাথেও বলিস নি?
শিমুল: হ্যাঁ বলেছি! কিন্তু সেসব তো আমি তোদের সাথেও বলি। মোবাইলে কবিতা তো আমি তানভিরের বার্থ ডে-তেও পাঠিয়েছি। আমি তো এরকমই- না?
মিরা: হ্যাঁ, তুই তোর মতই কথা বলেছিস। এবং তুই সত্যি অনেক এট্রাক্টিভ পার্সোনালিটির ছেলে। আর সে কারণেই তোর সাথে কথা বলে একটা মেয়ে প্রেমে পড়তেই পারে। তাতে দোষের কি আছে?
শিমুল: আছে। দেখ জীবনটা “হঠাৎ বৃষ্টি” ছিনেমা না। একজনের সাথে ক’দিন মোবাইলে কথা বলেই তার সম্পর্কে সব জানা যায় না। আমার কথায় তো ভানও থাকতে পারতো। এই সব স্টুপিড টীন এজার মেয়েরা মোবাইলে ছেলেদের সাথে কথা বলে প্রেমে পড়ে। তার পর ছ্যাঁকা খেয়ে পুরো পুরুষ জাতিকে প্রতারক বলে গালাগাল করে! কারও কারও কাছে এটা মজার খেলা! এন্ড আই হেট দিস টাইপ অব গেম!
মিরা: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) আচ্ছা শিমুল- সত্যি একটা কথা বলবি? তুই কি কোন দিনই কোন রিলেশনের ব্যাপারে সিরিয়াস হবি না?
শিমুল: হব না কেন? দেখ ভালবাসা আমার কাছে স্বর্গীয় একটা ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করি লাভ ইজ গড! তাই কারও সম্পর্কে ভাল করে না জেনে না বুঝে ছেলেমানুষী ইমোশন নিয়ে যখন কেউ বলে- আমি তোমাকে ভালবাসি... তখন...। আরে এটা কি ছেলে খেলা!
মিরা: তেমন সত্যিকারের ভালবাসা তুই বুঝবি কিভাবে?
শিমুল: বোঝা যায়! দেখ রিলেশন একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর ব্যাপার। যাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি, যার সাথে আমি অনেক মিশেছি, যার ব্যক্তিত্ব আমাকে সত্যি ছুঁয়ে যায় তাকে ভালবাসাটা...
মিরা: তাহলে লাভ এট ফাস্ট সাইট্?
শিমুল: ফালতু। আমি মনে করি- লাইক এট ফাস্ট সাইট্, লাভ হওয়ার জন্য সময় দরকার। আজকাল লাভ ম্যারেজগুলো বেশির ভাগই টেকে না এই জন্যেই।
মিরা: আচ্ছা একটা কথা বলতো- সত্যি তোকে ভালবাসে এমন কাউকে কি পেয়েছিস? বা কখনও মনে হয়েছে যে...
শিমুল: (অন্য দিকে তাকিয়ে) কি জানি! কেউ তো কোনদিন বলেনি মুখ ফুটে।
মিরা: (একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে) এই তো একটা মেয়ে বলল। মানে বলতে এসেছিল। কিন্তু তুই তো তাকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফিরিয়ে দিলি। দেখ ও যে প্রোপজ করতেই এসেছিল সেটা কিন্তু তোর ধারনা। হতেও তো পারতো- ও আসলে তোর সাথে মিশতে চাইছে। তোকে আরও ভালভাবে জানতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনাটা আগেই নষ্ট করে দিলি কেন? এমন তো নয় তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস?
শিমুল: তাহলে তুই আমাকে কি করতে বলছিস?
মিরা: দেখ তুই শুধু শুধুই মেয়েটাকে কষ্ট দিলি। আমার কাছে কিন্তু ওর ইমোশনটাকে ট্রু বলেই মনে হয়েছে। মানলাম সেটা তোর সজ্ঞায় ভালবাসা নয় কিন্তু ইমোশনটা ট্রু। ওকে এভাবে কষ্ট দেয়াটা ঠিক হয়নি। তোর ওকে সবকিছু খুলে বলা উচিৎ। আচ্ছা সত্যি করে বলতো ওর প্রতি কি তোর এ ক’দিনে একটুও দুর্বলতা তৈরী হয়নি?
শিমুল: এতোদিন টের পাইনি। কিন্তু তোর কথা শুনে তো এখন সত্যি উইক হয়ে যাচ্ছি!
মিরা: তাহলে তুই যা, ওকে গিয়ে সব খুলে বল। আমি চাই না আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটা কারও ভালবাসাকে অপমান করুক।
শিমুল: কিন্তু আমি এখন ওকে পাব কোথায়? আমি কি ওর বাসা চিনি নাকি?
মিরা: তাহলে ওকে ফোন দে। দেখ কোথায় আছে! বেশিদূর গেছে বলে তো মনে হয় না। যেভাবেই হোক দেখা কর!
শিমুল: (পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল করল। প্রথমবার কেটে দেবার পর আবার চেষ্টা করল) হ্যালো! হ্যালো জেরিন! জেরিন তুমি কোথায়? আরে বাবারে তুমি কোথায় সেটা বল না। বনানী? বাসে? তুমি বাস থেকে এক্ষুণি ফাল দিয়া নামো। তোমার সাথে আমার কথা আছে। খুব জরুরী! প্লীজ তুমি নামো, আমি আসছি। না না, ফোনে না সামনা সামনি বলতে হবে। প্লীজ নামো তুমি, দোহাই তোমার। নয়তো বিরাট সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি নামো, নেমে রাস্তার পাশে কোন রেস্টুরেন্টে পাঁচ মিনিট বসো। আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি! আচ্ছা আচ্ছা থ্যাঙ্ক য়্যু, আমি আসছি...। (লাইন কেটে দিয়ে) বনানীর কাছাকাছি আছে। আমি গেলাম তাহলে।
মিরা: আমিও আসবো?
শিমুল: উঁম...; থাক লাগবে না। তুই ক্লাসে যা, আমি পরে ফোন দিম্নে।
শিমুল ব্যস্ত ভঙ্গিতে গেটের দিকে রওয়ানা হল। মিরা সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি সেটা মুছে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত করজোর করে বুকের কাছে জড়ো করে ফিসফিস করে বলল: গড ব্লেস মি। প্লিজ ব্লেস মি। আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও, ধৈর্য দাও... প্লীজ গড ব্লেস মি...প্লীজ...!



দৃশ্য-৫

(শিমুল গেট দিয়ে দ্রুত বের হল। তারপর হঠাৎ ব্যস্ততা কমিয়ে পেছন দিকে ফিরে মুচকি হাসল। ধীরে সুস্থে একটা চলন্ত রিক্সা থামল)
শিমুল: ঐ খালি যাইবা?
রিক্সাওয়ালা: কই যাইবেন?
শিমুল: সংসদ ভবন। জিয়া উদ্যানের গেটে।
রিক্সাওয়ালা: ওঠেন।
শিমুল: কত?
রিক্সাওয়ালা: যা আছে দিয়েন।
শিমুল: না মামা, বলে নাও। পরে “চাইলের দাম বাড়তি, রাস্তা ভাঙ্গা” এসব শুনতে পারবো না।
রিক্সাওয়ালা: চল্লিশ ট্যাকা দিয়েন।
শিমুল: এইতো লাইনে আইছো। বিশ টাকা, যাইবা?
রিক্সাওয়ালা: না মামা, রোদ্দের মদ্দে পুষায় না। ত্রিশ ট্যাকা দিয়েন!
শিমুল: বিশ টাকায় গেলে ঘুরাও।
রিক্সাওয়ালা: না মামা- পঁচিশ!
শিমুল: তাইলে ফুটো! (রিক্সা সত্যি চলে যেতে শুরু করলে) ঐ খাড়াও! (রিক্সায় উঠে) রাগ করলা ক্যান!
(রিক্সায়ালা নিরব হেসে সামনে যেতে শুরু করল।)



দৃশ্য-৬

(জেরিন চন্দ্রিমা উদ্যানে একটা বড় গাছের নিচে বেঞ্চিতে বসে ঘড়িতে সময় দেখছিল। এর মধ্যে শিমুল আসল।)
জেরিন: তুই না, অলওয়েস লেট। পাঁচ মিনিট বলে আধা ঘণ্টা! এরকম জায়গায় এতোক্ষণ বসা যায়? পাবলিক সব একলা একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে।
শিমুল: সরিরে বাবা; রিক্সায় করে এলাম। প্লেন নিয়ে তো উড়াল দেই নাই!
জেরিন: হয়েছে, আর অজুহাত দেখাতে হবে না। গরমে গলা শুকিয়ে গেছে, এখন আইসক্রিম খাওয়া।
শিমুল: তোরা না, খাওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝলি না! (দূরে একটা আইসক্রিমওয়ালা পিচ্চিকে দেখে এদিকে ডাকল) একটা চকবার দেতো।
পিচ্চি: দুইজনে একটা খাইবেন ছার?
শিমুল: এতো পাকনামী করিস কেন? আচ্ছা যা দুইটাই দে। কত?
পিচ্চি: পঞ্চাশ ট্যাকা।
শিমুল: সব জায়গায় ২২ টাকা, তোরটা ২৫ কেন?
পিচ্চি: পার্কে বইসা খাইবেন, একটু বেশি দিবেন না?
শিমুল কথা না বাড়িয়ে ৫০ টাকার নোট বের করে দিল। জেরিন এক মনে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
শিমুল: কিরে তুই কি আইসক্রিম খেতে এসেছিস এখানে নাকি কাজের কথা কিছু বলবি?
জেরিন: কথা তো সব তোমার কাছে। আমি চলে আসার পর মিরা আপু কি করল তাই বল।
শিমুল: সেটা পরে শুনিস, আগে তুই কি বুঝলি সেটা বল। আর তুই অমন তাড়াহুড়ো করে চলে আসলি কেন? আমি না বলেছি একসাথে চা-টা খাব, গল্প করব। একটু সময় না নিলে ব্যাপারটা বুঝবি কিভাবে?
জেরিন: সমঝদারকে লিয়ে ঈশারা কাফি হে...! তোর সাথে কি কি কথা হয়েছে ডিটেলস বল। একটা লাইনও বাদ দিবি না।
শিমুল: আচ্ছা ঠিক আছে (বলেই হেসে ফেলবে) তোর অভিনয়টা কিন্তু জটিল হইছে। ওতো পুরা বিশ্বাস করে ফেলছে। আমারে বলে কি- কোনটা অভিনয় আর কোনটা ট্রু ইমোশন তা নাকি ও খুব ভাল করেই বোঝে! বোঝে ঘোড়ার ডিম! তোর চোখে পানি দেখে ভেবেছে তুই সত্যিই আমাকে ভালবাসিস... স্টুপিড একটা!
জেরিন: (একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অন্য দিকে তাকিয়ে) স্টুপিড ও না, স্টুপিড হচ্ছিস তুই। তোরা ছেলেরা ট্রু ইমোশন কখনই ধরতে পারিস না।
শিমুল: মানে কি! ছেলেদের নিয়ে বিশাল থিসিস করছিস মনে হয়?
জেরিন: বাজে বকবি না। ও কী কী বলল ভাল করে খুলে বল।
শিমুল সময় নিয়ে ডিটেলস্ জেরিনকে বলল। সব শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে জেরিন ম্লান হাসলো।
জেরিন: এভাবেই কথা বলল?
শিমুল: হ্যাঁ। এবং তোর কাছে মাফ চাওয়ার জন্য বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠাল!
জেরিন: তুই সত্যিই খুব ভাগ্যবান রে। আমার বিশ্বাস মিরা আপু তোকে প্রচন্ড ভালবাসে।
শিমুল: কি বলছিল তুই! ধুর! তুই বুঝেছিস ঘোড়ার ডিম। এক ফোঁটাও বাসে না। বাসলে অন্তত আজ সেটা স্বীকার করতো। আরেকটা মেয়েকে দেখিয়ে দিয়ে বলতো না “ওকে কষ্ট দিস না”। মেযেরা যা জেলাস!
জেরিন: এ জন্যই বলছি- ও তোকে খুব ভালবাসে। আর সেটা তোকে ইঙ্গিতও করেছে। তুই স্টুপিড বলে ধরতে পারিসনি।
শিমুল: আরে! কখন বলল?
জেরিন: বলেছে, তুই বুঝিস নি। একটা মেয়ে হয়ে তো ও আর মুখ ফুটে বলবে না!
শিমুল: তাহলে তুই কিভাবে বুঝলি?
জেরিন: আমি ওর চোখের ভাষা থেকে বুঝেছি। তুই যখন ওর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবার সময় বললি- “জেরিন, এ হচ্ছে মিরা। আমার... গার্লফ্রেন্ড এবং...” তখন ওর চোখে মুখে যে আনন্দের ঝিলিক, শরীরে যে শিহরন দেকেছি তার অর্থ একটা মেয়ে হিসাবে আমি খুব ভাল করেই ফীল করতে পারি।
শিমুল: কিন্তু তাহলে ও তোর ব্যাপারে এরকম ধারনা করল কেন? আর...
জেরিন: (খুব বিষণœ স্বরে আরেক দিকে তাকিয়ে) সেটা তোর মত স্টুপিড কোন দিনই বুঝতে পারবে না। দেখ- ও ভালবাসাকে মূল্য দিতে জানে। জানে বলেই ও... তুই বললি না মেয়েরা অনেক জেলাস! তুই ঠিকই বলেছিস, মেয়েরা অনেক জেলাস। কিন্তু মিরা আপু সেই জেলাসিকেও ওভারকার করেছে। কজ সী রিয়েলি নো- হোয়াট ইজ ট্রু লাভ!
শিমুল: আরে বাবা আমি বুঝতে পারছিলাম না বলেই তো তোকে নিয়ে যাওয়া। তুই যদি শিওর হোস...
জেরিন: কেন? আমার শিওরিটির ওপর এতো ডিপেন্ড করতে হবে কেন? আমি জীবনে তোর মত স্টুপিড প্রথম দেখলাম যে একটা ফেক নাটক সাজায় একটা মেয়ে তাকে ভালবাসে কিনা জানার জন্য! তুই না এতো বড় বোদ্ধা! কবি মানুষ- তুই বুঝতে পারিস না? আচ্ছা সত্যি করে বলতো- তুই মিরা আপুকে ভালবাসিস কিনা?
শিমুল: আমি ঠিক জানি না! ওর সাথে অনেকদিন ধরে মিশছি। খুব ভাল মেয়ে। আমারা খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু... আমি সত্যি কনফিউসড্! কখনও আলাদাভাবে ফীল করিনি। কিন্তু ও যদি আমাকে... তাহলে আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে।
জেরিন: মিরা আপু খুব ভাল মেয়ে। এবং সে তোকে সত্যি ভালবাসে। এর বেশি কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করিস না...



দৃশ্য-৭

রাত দেড়টা। মিরা তার কম্পিউটারের সেভ করা বন্ধুদের ছবি দেখছে। বিশেষ করে শিমুলের ছবিগুলো। ছবি তোলার সময় খুব জোকারী করে শিমুল। একটাতে জিব বের করে চোখ টেরাঁ করে রেখেছে। আরেকটায় মিরার চুলের রাবার দিয়ে মাথায় ঝুটি করেছে। এমনি আরও অনেক ছবি। নবীন বরন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায়, র‌্যাগ ডে’র অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃতিসহ নানা ফাংশানের ছবি।
কম্পিউটার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট টিনের কৌটা বের করে মিরা। কৌটার ভেতর থেকে বের করলো মরে শুকিয়ে যাওয়া একটা গোলাপ, একটা গলে নষ্ট হয়ে যাওয়া মিমি চকলেট, একটা চুলের কাঁটা, এক জোড়া মাটির কানের দুল...। এগুলো বিভিন্ন অকেশনে শিমুল তাকে গিফট্ করেছিল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব গুছিয়ে রেখে কম্পিউটার অফ করে দিল।



দৃশ্য- ৮

(অস্থির ভঙ্গিতে কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে শিমুল। হঠাৎ সোনালীকে করিডোরে পেয়ে গেল।)
শিমুল: এই সোনালী শোন!
সোনালী: কি খবর বস্! ভালো তো?
শিমুল: আছি আরকি। আচ্ছা একটা জরুরী কথা ছিল। মিরার কোন খোঁজ খবর জান?
সোনালী: আরিব্বাস! মিরা পড়ে তোমার ডিপার্টমেন্টে আর খোঁজ নিচ্ছ আমার কাছে? এই প্রশ্ন তো আমার করার কথা। আসলেই- কি হয়েছে ওর? তিন-চার দিন ধরে ক্যাম্পাসে দেখছি না যে?
শিমুল: বুঝতে পারছি না। ডিপার্টমেন্ট-এ তো ও একাই মেয়ে। তাই আমরা কেউ কিছু জানি না। মোবাইলও অফ! তাই ভাবলাম তোমারা তো ক্লোজ ফ্রেন্ড। তুমি কিছু জান কিনা!
সোনালী: না। আমিও কাল ফোন দিলাম। বন্ধ! কি জানি কি হয়েছে। কেন খুব দরকার?
শিমুল: হ্যাঁ, ছিল একটু।
সোনালী: (চোখ টিপে) কি বস! ডাল মে কুচ কালা হায়...! কি ব্যাপার? অ্যাঁ?
শিমুল: আরে দূর! সামনে এক্সাম না। প্র্যাকটিকেলে ও আবার আমার গ্রুপে। সেসনাল ওয়ার্ক জমা দিতে হবে আবার। তাই...
সোনালী: ওঁ। আমি আরও ভাবলাম কি না কি! তা গ্রুপের বাকি পাঁচজনের কোন মাথা ব্যথা নাই, তুমি একা সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজছো?
শিমুল: আরে গ্রুপ লিডার হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না। কেউ ফেল করলে তো পুরো গ্রুপের প্রেস্টিজ!
সোনালী: সরি বস! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনি আবার ফাস্ট বয়, ডিপার্টমেন্টের প্রাণ, কলেজের গর্ব, আমাদের...
শিমুল: থাক ভাই, আর পাম দিও না। কাজের কথায় আসি। তুমি তো মিরার বাসা চেন। আমাকে একটু নিয়ে যাবে?
সোনালী: তা নেয়া যায়। আমি এমনিতেও কাল নাগাদ যেতাম। না হয় কাল ওর বাসায় গিয়ে আমি দেখি কি অবস্থা। আমিই ওকে বলব নে যে প্র্যাকটিক্যাল-এ...
শিমুল: না, একটু আর্জেন্ট! আজই যাওয়া দরকার। তুমি প্লীজ একটু মেনেজ করো...
সোনালী: আসলে সমস্যা কি শিমুল...। ওর তো বাবা নেই, বড় ভাই আর দুলাভাই-ই লোকাল গার্জিয়ান। ওনারা আবার একটু কনজারভেটিভ মাইন্ডেড। তো বুঝতেই পারছো... তুমি বাসায় গেলে... তাই বলছিলাম যে...
শিমুল: আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ওর সাথে আমার দেখা হওয়াটা খুব জরুরি। আমি ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারবো না... প্রয়োজনে আমি বাসায় ঢুকবো না, গেটের বাইরে...
সোনালী: না না ঠিক আছে। আই গট ইয়্যু। ঠিক আছে, আজ ছুটির পর...
শিমুল: এখন তোমার কি ক্লাস?
সোনালী: এখন গ্যাপ, এরপরে সোসাল রিলেশন... প্র্যাকটিক্যালটা আজ হবে কিনা...
শিমুল: দূর, বোগাস সাবজেক্ট! তুমি বাসায় পড়ে নিও। নয়তো পরীক্ষার আগে এসো সাজেশন দিয়ে দেব। এখন চল...
সোনালী: কোথায়!?
শিমুল: মিরাদের বাসায়!
সোনালী: পাগল! এখনি যেতে হবে? ক্লাসটা শেষ করে যাই...
: (সোনালীর চোখের দিকে তাকিয়ে) সোনালী প্লীজ। আমার ঘুব আর্জেন্ট!
সোনালী: (কয়েক সেকেন্ড স্থির তাকিয়ে থেকে) ওকে, চল।



দৃশ্য-৯

(দুইবার দরজা নক করার পর মিরা দরজা খুলল।)
মিরা: আরে সোনালী! কি খবর?
সোনালী: আছি তো ভালই। তোর খবর কী? তিন দিন ধরে কোন খোঁজ খবর নাই।
মিরা: এই একটু ঠান্ডা লেগেছিল। মাথা ধোয়ার সময় মোবাইলটাও পড়লো পানিতে। ডিসপ্লে অফ হযে গেছে। এখন মোবাইল বন্ধ না খোলা তাও বুঝি না! আয় ভেতরে আয়। কাল থেকে অবশ্য এমনিতেই কলেজে যেতাম।
সোনালী: আন্টি বাসায় নেই?
মিরা: শুধু আন্টিই বাসায়। ভাইয়া দুলাভাই অফিসে। আপু গেছে মেঝো খালার বাসায়।
সোনালী: ও মিরা! আমার সাথে কিন্তু একজন গেস্ট আছে!
মিরা: গেস্ট! গেস্ট আবার কে?
সোনালী: (ভ্রু রাচিয়ে) বলতো কে?
মিরা: আমি কিভাবে বলব? কে? সোমা?
সোনালী: আরে না! সোমা আবার গেস্ট নাকি? শিমুল!
মিরা: শিমুল! ও হঠাৎ আমার বাসায়?
সোনালী: কি জানি? বলল খুব জরুরী। মারাত্মক এক্সাইটেড!
মিরা: কারণ কি?
সোনালী: আমি কি জানি? তুই কিছু বলেছিস নাকি?
মিরা: আমি আবার কি বলব?
সোনালী: ইশ! নেকু! সত্যি কিছু বলিস নি? তহলে অন্য কোনভাবে বোধহয় টের পেয়েছে বা জেনেছে। খুবই এক্সাইটেড! রিতিমত আউট অব মাইন্ড! আমি শিওর ঐ কেস?
মিরা: যাহ্ গাধা! ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। কইরে পাগলায়?
সোনালী: গার্ল ফ্রেন্ড! কই আগে তো জানতাম না?
মিরা: জানবি কিভাবে। এখনও অন দ্যা ওয়ে। আমিই জানলাম সেদিন! বাদ দে, কই ও?
সোনালী: রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবলাম বাসায় যদি কোন সমস্যা...
মিরা: আরে না, সমস্যা আবার কিসের! নিয়ে আয়।
সোনালী: আচ্ছা দাঁড়া (বলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর শিমুলকে নিয়ে আসলো) মিরা তুই শিমুলের সাথে কথা বল, আমি যাই।
মিরা: যাই মানে! ঘরে আয়!
সোনালী: না রে। আজ যেহুতু আগে এসেছি, বাসার কিছু জরুরী কাজ জমে আছে সেগুলো সেরে ফেলি গে। কাল ক্যাম্পাসে দেখা হবে। আর আমি কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। পরে সব খুলে বলিস।
মিরা: আচ্ছা বাই!
শিমুল: আরে, তুমি চলে গেলে আমি একা যাব কিভাবে? যদি হারিয়ে যাই?
সোনালী: সমস্যা নাই, আপনাকে রাস্তা দেখানোর লোককে তো রেখেই গেলাম!
শিমুল ঘরে ঢুকলে মিরা দরজা আটকে দিল।
মিরা: কিরে, হঠাৎ কি মনে করে?
শিমুল: তোকে দেখতে এলাম। কেমন আছিস তুই? তিন দিন ক্যাম্পাসে যাস না!
মিরা: এই একটু ঠান্ডা-জ্বর লেগেছে। কাল এমনিতেই...
শিমুল মিরার কপালে চট করে হাত রাখল। কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে বলল: কই এখন তো জ্বর নেই!
মিরা চোখ বন্ধ করে স্পর্শটুকু অনুভব করে।
মিরা: নাহ্ এখন নেই। সেরে গেছে। কাল থেকেই ক্যাম্পাসে যাব।
শিমুল: তা জ্বর হয়েছে জানাবি না? ফোনও অফ করে রেখেছিস!
মিরা: মাথা ধোয়ার সময় মোবাইল পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে হেছে। মাত্র তো দুই দিন হলো এইজন্যে কাউকে তেমন কিছু বলিনি। তা তুই হঠাৎ বাসায়, খুব জরুরী কিছু?
শিমুল: হ্যাঁ তোকে দেখা খুব জরুরী ছিল।
মিরা: তারপর জেরিনের কি খবর। সব খুলে বলেছিলি? কি অবস্থা এখন?
শিমুল: আমি ঐ ব্যাপারেই তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। খুবই পার্সোনাল!
মিরা: কি? বল!
শিমুল: (কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বড় করে একটা নিশ্বাস নিল। তারপর মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে) তুই আমাকে ভালবাসিস?
মিরা: আরে আস্তে মা বাসায়! তুই...
শিমুল: (গলার স্বর আরও নামিয়ে) তুই আমাকে ভালবাসিস?
মিরা: (হালকা হেসে) বাসব না কেন? বন্ধুকে বন্ধু ভালবাসবে না। এটা কেমন কথা! তুই আমাকে বাসিস না? মাসুদ-সাগর-তানভির ওরা...
শিমুল: (হাত উচিয়ে থামিয়ে দিয়ে মিরার দু’হাত চেপে ধরে) আমি সেকথা বলিনি...
মিরা: (হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে) তুই পাগল হলি! ঘরের মধ্যে... মা যদি...
শিমুল: (একটুও বিচলিত না হয়ে) ডু ইয়্যু লাভ মি?
মিরা: (কয়েক মুহূর্ত শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কোমল গলায়) ইয়েস আই লাভ ইয়্যু। আই লাভ ইয়্যু সো মাচ! সো?
শিমুল: সো! সো হোয়াট?
মিরা: আর জেরিন?
শিমুল: বাদ দে জেরিন। তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন?
মিরা: কী বলব? সব কথা বলতে হবে কেন? তুই চোখে দেখিস না? কিচ্ছু বুঝিস না! স্টুপিড কোথাকার! (বলতে বলতে চোখ ছলছল করে)
শিমুল: বুঝতাম। কিন্তু কনফার্ম ছিলাম না। ডিরেক্টলি বলিস নি তো কখনও।
মিরা: আমি কেন প্রোপজ করব? একটা মেয়ে হয়ে!
শিমুল: কেন? এটাই বা কোন আইন- যে সব সময় একটা ছেলেকেই আগে বলতে হবে?
মিরা: বাদ দে। জেরিন কেমন আছে বল। ও আমার চেয়েও তোকে বেশি ভালবাসে। দেখলি না প্রোপজ করতে চলে এসেছিল!
শিমুল: ধুর গাধা! জেরিন হচ্ছে আমার কাজিন। তোর কেসটা শিওর হবার জন্য ওকে নিয়ে এসেছিলাম। ও-ই তো সব কনফার্ম করলো!
মিরা: হোয়াট!
শিমুল: ইয়েস ম্যাম।
মিরা: তার মানে তোর নিজের কোন ফিলিংস নেই? আমাকে বোঝার জন্য তোকে রিতিমত স্পাই লাগাতে হল! তোর কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তুই প্লীজ আমার সামনে থেকে বিদায় হ।
শিমুল: আরে এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি ফীল করছিলাম বলেই না ওকে এনে... একটা ভুল বুঝাবুঝি হলে কেমন হতো না ব্যাপারটা?
মিরা: তাই বলে... তুই এতো দিনেও কনফার্ম হতে পারলি না আর জেরিন এসে এক মুহূর্তে সব বুঝে গেল!
শিমুল: কি করব বল- ছেলেগুলো তো একটু স্টুপিডই, তাই না!
মিরা: তাই বলে তোর মত স্টুপিড আমি জীবনে দেখি নাই।
শিমুল: দেখলে তো আগে ঐটার প্রেমেই পড়তি!
মিরা: জাস্ট শাট আপ!
(এই সময় রান্না ঘর থেকে মিরার মা মিরাকে ডাকল।)
মিরা: মা আমি ড্রইং রুমে। একটু এদিকে আসো তো।
শিমুল: কেন? কি হয়েছে?
মিরা: আসই না। একজন গেস্ট এসেছে।
শিমুল: কে এসেছে?
শিমুল: স্লামালাইকুম আন্টি
মিরার মা: ওয়ালাইকুম আসসালাম!
মিরা: মা, ও হচ্ছে শিমুল। আমাদের ক্লাসের ফাস্ট বয়। তোমাকে বলেছিলাম না! আমি কলেজে যাইনি বলে দেখতে এসেছে।
মিরার মা: ওহ্ তুমিই শিমুল? বসো বাবা। ভাল আছ? তোমার বাবা মা কেমন আছেন?
শিমুল: জ্বি আন্টি ভাল, আপনি ভাল আছেন?
মিরার মা: এই তো বাবা, বেঁচে আছি আরকি। তোমরা বস, আমি রান্না চুলায় রেখে এসেছি তো। তুমি কিন্তু দুপুরে খেয়ে যাবে।
শিমুল: আজ না আন্টি, আরেক দিন।
মিরার মা: আরেক দিনেরটা আরেকদিন। আজকেরটা খেয়ে যাও। খবরদার যাবে না কিন্তু! বস চুপচাপ।
শিমুল: এই রে, আন্টি আবার কিছু শোনেননি তো!
মিরা: না, কিছু শোনে নি। তবে মা সব জানে।
শিমুল: সব জানে মানে?
মিরা: জানে মানে- জানে! আমি মাকে কখনও কিছু লুকাই না। লাস্ট থ্রি ডে’স এর আগ পর্যন্ত সবই মাকে বলেছি।
শিমুল: সর্বনাশ! কি বলিস? আমার তো শুনেই লজ্জ্বা লাগছে।
মিরা: (শিমুলের হাত ধরে) সো- ডু ইয়্যু লাভ মি?
শিমুল: (মিরার গালে একটা হাত রেখে) নো!
তারপর দু’জনেই হাসতে লাগলো।



দৃশ্য- ১০

জেরিন এফ.এম এ গান শুনছিল। মোবাইলটা বেজে ওঠায় নাম্বার দেখে বিরক্তির সাথে লাইনটা কেটে দিল। দ্বিতীয়বার আবার রিং হল। এবার বিরক্তির সাথেই ফোন ধরল।
জেরিন: ওই, তুই আর ফোন দেওয়ার সময় পাস না? সুন্দর একটা গান হচ্ছিল!
শিমুল: রাখ তোর গান! গান তো সারা দিনই শুনিস। এখন ব্রেকিং নিউজ শোন- আজ মিরার বাসায় গেছিলাম। এতোক্ষণ ওখানেই ছিলাম, মাত্র বের হলাম।
জেরিন: ওঁ!
শিমুল: তোর ধারণা মোটেই ঠিক না। ও মোটেই শকড্ হয়ে ঘরে বসে ঠিল না। জ্বর হয়েছিল।
জেরিন: তাই নাকি!
শিমুল: হ্যাঁ তাই। গিয়ে সব খুলে বললাম। ওর মার সাথে পরিচয় হল।
জেরিন: ওঁ!
শিমুল: জানিস! ওর মা নাকি আগে থেকেই সব জানতো। আমাকে পেয়ে না খাইয়ে ছাড়লোই না!
জেরিন: তাহলে তো ভালই।
শিমুল: ভাল না ছাই। এমন জামাই আদর করল- আমি তো লজ্জ্বায় শেষ!
জেরিন: তাই নাকি?
শিমুল: তাই নাকি মানে? তুই এমন কাটা কাটা কথা বলছিস কেন? গান আর কোনদিন শুনতে পারবি না?
জেরিন: কই, আমি তো ঠিক ভাবেই কথা বলছি। তুই-ই বেশি এক্সাইটেড হয়ে আছিস।
শিমুল: এক্সাইটেড! হতে পারে। ইন ফ্যাক্ট ফাস্ট লাভ তো!
জেরিন: তাই! ফাস্ট লাভ-এ এতো এক্সাইটমেন্ট? টের পাইনি তো কখনও!
শিমুল: তার মানে কি? তুই আবার কার প্রেমে পড়লি?
জেরিন: না কিছু না। আমি প্রেমে পড়তে যাব কোন দুঃখে! প্রেম করতে কপাল লাগে। তোর কথাই বলছিলাম...
শিমুল: ও, তাই বল। আচ্ছা একটা প্রবলেম আছে। ওর কিন্তু বাবা নেই! বড় ভাই আর দুলাভাই-ই গার্জিয়ান। আব্বু-আম্মু রাজি হবে কিনা তাই নিয়ে টেনশন হচ্ছে। এই ব্যাপারটাতে কিন্তু তোর মাস্ট হেল্প লাগবে!
জেরিন: (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) দেখ তোর এই ব্যাপারটায় আমাকে আর জড়াইস না। আমি আর পারব না...
শিমুল: আরে বলে কি! তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল?
জেরিন: আচ্ছা দেখা যাবে।
শিমুল: দেখা যাবে না, দেখতে হবে। আচ্ছা শোন- সন্ধ্যায় আমি তোদের বাসায় আসছি। সামনা সামনি কথা হবে। এখন রাখি।
জেরিন: ভাইয়া শোন!
শিমুল: কী?...হ্যাঁলো!...কিরে? কথা বলিস না কেন!
জেরিন: কনগ্র্যাচুলেশন!
শিমুল: ওহ্ থ্যাঙ্কস্! আসলে সব তোর জন্যই। থ্যাঙ্ক য়্যু ভেরি মাচ। তুই কিন্তু একটা খাওয়া পাওনা আছিস। তোকে আইসক্রিম...? না চাইনিজ... আচ্ছা যা তুই যা খেতে চাস তাই খাওয়াবো। ওকে? মিরাও বলেছে একদিন তোকে নিয়ে আড্ডা দিবে। একসাথেই খাব সেদিন- কি বলিস? রাখছি এখন; বাই!
লাইন কেটে যাবার পরও জেরিন অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। এফ.এম-এ তখন বাজছিল-
আমারও পরানও যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো.....
মনের অজান্তেই জেরিনের চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। জেরিন সেটা না মুছে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। দু’হাত করজোর করে বুকের কাছে জড়ো করে ফিসফিস করে বলল: গড ব্লেস মি। প্লিজ ব্লেস মি। আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও, ধৈর্য দাও... প্লীজ গড ব্লেস মি...প্লীজ...!

1 comment: