Friday, March 17, 2017

আবেগ ও ভালোবাসা

আবেগ ও ভালোবাসা
আবেগ ও ভালোবাসা
লিখেছেনঃ অনলী দিগন্ত (dipto sarkar)

ফোন বাজছে, শুনতে পাচ্ছ না?
-বাজুক, বাজতে দাও

মানে কি? আন্টি ফোন করছে মনে হয়
-জানি তো মায়ের কল

তো? এখনি ফোন ধরো।
-পারবো না, পারবো না, পারবো না

বলছি ধরো, আদিখ্যেতা দেখাবে না
-সব সময় mastergiri দেখাবে না একদম

বেয়াদপ, দিব একটা থাপ্পড়
-হা তাই দাও, থাপ্পড় না গলা টিপে মেরো ফেলো আমায়।

ফোন টা ক্রমাগত বেজে চলছে। . . .

হাল্লো আসসালামুয়ালিকুম, আন্টি আমি আকাশ, ওপাশ থেকে rahela বেগম জিজ্ঞেস করল আকাশ? নিশি'র ফোন তোমার কাছে?
-হা আন্টি, ও আমার সাথে দেখা করতে এসেছে ।

ওতো কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। আচ্ছা তাড়াতাড়ি বাসায় পাঠিয়ে দেও।
-জ্বি আচ্ছা ।

আকাশ, গ্রামের এক মেধাবী ছাত্র। বাবা মা অনেক গরিব কিন্তু তাদের অনেক স্বপ্ন এক মাত্র সন্তান আকাশ কে নিয়ে। তাই বাবা মায়ের স্বপ্ন পূর্ণ করতে শহরে পড়তে আসা। আকাশ যে কয়েকটা টিউসনি করে তার মাঝে নিশি একটা ।

নিশি'র বাবা আরিফুল হাসান শহরের সব থেকে বড়লোক ও খমতাধর ব্যাক্তি। সবাই এক নামে চিনে। নিশি তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। অনেক আদুরে তাই অনেক জেদি স্বভাব। যা বলবে তাই করবে। সেটা না হলে শুরু হয় ভাংচুর। ভাবে মা আর ওই স্বভাব কে prosroy দেয়।

নিশি ক্লাস ১০ পড়ছে আর আকাশ নিশি কে দু বছর ধরে পরাচ্ছে, প্রথম দিকে সপ্তাহে ৩দিন পড়ালেও কিছু দিন পর নিশি'র জেদ এ সপ্তাহে ৬দিন পড়ায় ...

পার্ক এর এক কোনে আকাশ ও নিশি বসে :- তুমি আন্টি কে না বলে বাসা থেকে বেরিয়েছ?
-হ্যা, পালিয়ে আসছি। আর পালিয়ে গেলে কাউ কে বলে আসতে হয় না।

পালিয়ে আসছ? কেন?
-তোমায় বিয়ে করবো তাই। এই দেখো বাসা থেকে সব গয়না নিয়ে আসছি। পালিয়ে বিয়ে করবো বলে। শুধু তাই না বাসায় আমার বালিশ এর নিচে চিঠি রাখছি যেটা তা লিখে রাখছি তোমার সাথে পালিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি।

আকাশ অবাক হয়ে নিশি'র পানে তাকিয়ে ভাবতে লাগল, প্রথম যেদিন পড়াতে গেছিলো নিশি'র মা রাহেলা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলো বাবা আমার এই একটা মেয়েই অনেক জেদী তুমি মানিয়ে নিয়ে ওকে একটু পড়াইও। এর আগে অনেক টিচার টিকতে পারে নি ওকে পড়াতে। সেই যে মানিয়ে নেওয়া শুরু, আজ অবধি নিশির সব ন্যায় অন্যায় মানিয়ে নিয়ে চলছে।

নিশি পরীক্ষায় রেসাল্ট ভালো করতেছে তাই ওর মা আকাশকে অনেক আদর করত। আকাশ নিশিকে পরাতে পারত কারন আকাশ নিশির সম্পূন্ন উল্টাটা, শান্ত, ভদ্র। কিন্তু এই ছেলে তার উল্‌টা স্বভাবের মেয়ে নিশির প্রেমে পরে গেলো। নিশির সব পাগলামি, আবদার রাখতে রাখতে নিশিকে ভালো লাগা শুরু। যার জন্য হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছে। আকাশ জানত নিশিকে ভালোবাসা অন্যায়, ওকে পাবে না, তবুও ভালবাসে গোপনে। হঠাৎ একদিন নিশি প্রপোস করে বসে আকাশ কে, আকাশ অবাক হয়ে যায় এবং মানা করে দেয়। সেই থেকে নিশির জেদ, পড়বে না, পরীক্ষা দিবে না। সামনে ক্লাস ৯ এর বার্ষিক পরীক্ষা আর এদিকে নিশির পাগলামি তাই বাধ্য হয়ে বলে আগে পরীক্ষা দাও। নিশি বলে না, আগে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আকাশ জিজ্ঞেস করে কি রকম? আমি ২০টা কাগজে আমাদের প্রেম এবং বিয়ের উপর লিখছি, তুমি তার থেকে একটা কাগজ তুলবা যেটা উঠবে আমরা সেটা করব। উপায় না দেখে একটা কাগজ তুলে যেটাতে লেখা আজকের এই তারিখে পালিয়ে বিয়ে! যার জন্য নিশি পালিয়ে এসেছে বিয়ে করতে।

নিশি পাগলামির একটা সীমা আছে। আমি তোমাকে পারবো না বিয়ে করতে, আমাকে লেখা পড়া শেষ করতে হবে। বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। অনেক পাগলামো দেখছি তোমার আর না। তুমি এখনে বাড়ি যাও।
-না যাবো না। তুমি সেদিন কাগজ তুলছিলে কেন?

বাধ্য হয়ে, তোমার পরীক্ষা, পড়বে না, পরীক্ষা দিবে না, তাই কাগজ তুলছি।
-তুমি আমায় ভালবাসো না?
নাহ, আমি আমার বাবা, মা ছাড়া কাউকে ভালবাসি না, চিঠিটা এখনো আন্টি দেখে নাই, তুমি দ্রুত চলে যাও।
-তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো না?

হ্যা সত্যি ভালবাসি না।

নিশি ডুকরে কেঁদে উঠল। . . . .

নিশি কেঁদে চলছে.......
নিশি কান্না থামাও মানুষ দেখছে
-দেখুক........
বুঝতে চেষ্টা কর তোমার সাথে আমার মিলে না। এই সম্পর্ক মূল্যহীন। তোমার বাবা, মা মেনে নিবে না। মাঝখানে আমার লেখা পড়া শেষ করতে পারবো না। তাছাড়া.....
-তুমি যদি আমায় আজ বিয়ে না কর আমি আত্মহত্যা করবো।
কর আত্মহত্যা? আমার কি? তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও। জীবন ও আমার সামনে আসবে না। তোমার মত মেয়েকে বুঝাতে যাওয়াটা বকামি। যত্ত সব নেকামো...
-ওকে আমি মরতে গেলাম

এটা বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড় শুরু করলো। আকাশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগলো যা জেদি অঘটন ঘটাতে পারে। সেও পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো।

আকাশ পিছন থেকে অনেক চিৎকার করেও নিশিকে থামাতে পারলো না। বড় রাস্তা দৌড়ে পার হতে একটা ট্রাক নিশির উপর দিয়ে চলে গেলো।
আকাশ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো, আবার দৌড়ে এসে নিশির রক্তে মাখা দেহটা কোলে নিলো। ততক্ষণে নিশি আর এই পৃথিবীতে নেই।তখন চার দিকে আকাশের কান্নার আওয়াজ ও চিৎকার ছড়িয়ে পড়লো...

রাহেলা বেগম বালিশের নিচে চিঠি পেয়ে আরিফুল হাসানকে দিলেন, উনি সেটা পরে রেগে আগুন। ঠিক তখনি খবর পেলেন নিশি আর বেঁচে নাই। কয়েক মুহুর্ত নির্বাক থেকে ঘোষণা করলেন, ছোট লোকের বাচ্চাকে ফাঁসিতে ঝোলাবো। বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

পরদিন খবরের কাগজ গুলোতে খবর বেড়ালো, গৃহ শিক্ষকের হাতে ধর্ষণ হলো ইস্কুল ছাত্রী, হাত পা বেঁধে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে হত্যা।

আকাশ গেরেপ্তার হলো। চার দিক থেকে একটাই স্লোগান ধর্ষক আকাশের ফাঁসি চাই..

অতঃপর এরূপ ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি স্বরূপ ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো।

আজ রাতে একটু পর আকাশের ফাঁসি হবে। আকাশ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, অনেক তাঁরা জ্বলছিল সেখানে। হঠাৎ মনে পড়ে গেলো মানুষ মারা গেলে নাকি আকাশের তাঁরা হয়ে যায়। ঐ যে উজ্জ্বল তাঁরাটা ওটা কি নিশি?

আকাশ চিৎকার করে বললো যে ভয়ে তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি সে, ভয় এখন আর নাই।
নিশি আজ আমি আসছি তোমার কাছে, তোমায় ভালোবাসতে।
তখনি আকাশের মনে পরে গেলো বাবা মায়ের কথা। নিজেকে অপরাধী লাগছে তাঁদের স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারল না।
উপরের তাঁরা থেকে চোখ নামিয়ে আকাশ মাটির দিকে তাকিয়ে আ

No comments:

Post a Comment