Friday, March 17, 2017

আজ অনেকদিন পর রাতে ছাদে বসে আছে নাবিলা

আজ অনেকদিন পর রাতে ছাদে বসে আছে নাবিলা। সে সচরাচর রাতে ছাদে আসেনা কিন্তু আজ একটি বিশেষ দিন। আজ নাবিলার জন্মদিন। আগে জন্মদিনের দিনটা ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় দিন। এই দিন বাবা-মা, মামা-খালা, কাজিনরা সবাই একসাথে হয়ে সেলিব্রেট করতো। ছোট্ট নাবিলা সবার স্নেহ-ভালবাসার কেন্দ্রে থাকতো।
কিন্তু আজ আর সেই সময় নেই। ওর মায়ের মৃত্যুর পর তার জীবন অবিশ্বাস্য ভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের কাছের মানুষদের অনেকেই আজ
দূরে চলে গেছে। মানুষের ভালো সময়ের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে যায়। সে এখন আর আগের মত নেই। সারাদিনের হাসিখুশি,হাস্যোজ্জ্ব­ল,চঞ্চল নাবিলাকে কবর দিয়ে নতুন নাবিলার জন্ম
নিতে হয়েছে। একদম চুপচাপ ঠান্ডা এক নাবিলা।

নাবিলার মা রাজিয়া আহমেদ মারা গেছেন অনেক বছর হলো। ব্লাড ক্যান্সার তাকে নাবিলার কাছ
থেকে কেড়ে নিয়েছে। রাজিয়া আহমেদের শেষ সময়টা বেশ কষ্টেরই ছিল। ক্যান্সার ধরা পরার পর
একমাত্র ট্রিটমেট ছিল ৩ মাস পর পর রক্ত পাল্টানো। নাবিলার বাবা আতিকুর আহমেদ একজন
বড় মাপের ব্যবসায়ী। স্ত্রীর চিকিত্সার কোন ত্রুটি তিনি করেন নি। তবুও যে যাওয়ার সে তো চলে যাবেই। তিনিও চলে যান।রেখে যান সদ্য
কিশোরে পা দেয়া অবুঝ এক মেয়েকে। আতিকুর আহমেদ স্ত্রীর মৃত্যুকে সহজভাবে নিতে পারেন নি।
বিষন্নতায় ভুগে অনেকটা পাগলামীই শুরু করেন। ছেলের এরকম আচরণ দেখে আতিকুরের
বাবা তাকে আবার বিয়ে দেন। বিয়ের পর আস্তে আস্তে তিনি সুস্থ হতে থাকেন। একসময় পুরোপরি সুস্থ হয়ে উঠেন। দ্বিতীয় সংসারে তার দুটো ছেলেও আছে। চারজনে দিব্যি ভালো জীবন
কাটাচ্ছে।

সত্ মায়ের কাছে নাবিলাকে রাখতে রাজি হননি তার নানা আবদুল করিম। নিজের কাছে নিয়ে আসেন নাতিনকে। নিজের কাছে রেখেই বড় করে ওকে তোলেন।

সকালে আতিকুর আহমেদ নাবিলাকে ফোন দিয়ে উইস করেছে। সকালে পি.এস কে দিয়ে গিফটও পাঠিয়েছেন।
বাবার ফোন এখন আরে ভালো লাগে না। গিফটটা খুলেও এখনো দেখা হলো না। সত্ ভাইয়েরাও ফোন দিয়েছে। ওদের সাথে আগে সম্পর্ক ভালো ছিল।
এখন আর ভালো নেই। ওদের সাথেও
কথা বলতে ভালো লাগে না। ওদের কথায় আবেগ নেই,
সামাজিকতার করুন বাধ্যবাধকতা আছে। সারাদিনের
অনেকগুলো অনিচ্ছাকৃত ফোনে উইস,আর টেক্সট ম্যাসেজ পড়ে এখন সে ক্লান্ত। রাতের আঁধারের
নিস্তব্ধতায় ক্লান্তি গুলো হারিয়ে যেতে চায়। জীবন থেকে ক্লান্তি ঝেরে ফেলা দরকার।

হঠাত করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। বৃষ্টি নাবিলার খুব প্রিয়। আজ অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভিজছে সে। ওর
মা ও বৃষ্টি ভালবাসতেন। মায়ের রুম
থেকে যে ডায়রী পেয়েছিল সেখানে লেখা আছে। বৃষ্টিতে ভেজার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এই যে, বৃষ্টির পানিতে চোঁখের জল বোঝা যায় না। এসময়
কাঁদলে কেউ বুঝতে পারে না। তাই এসময় প্রায়ই কাঁদে সে, কেউ তা বুঝতে পারে না। এখন
কাঁদতে ইচ্ছে করছে না বরং জন্মদিনের
সবচেয়ে সুন্দর উপহার পেয়ে সে খুব খুশি। বৃষ্টি অসম ধারায় সে ভিজেই যাচ্ছে। চোঁখ বন্ধ করে সে কল্পনার দুনিয়ায় হারিয়ে গেল। সেখানে ওর
মা আছে। নাবিলা ছাদে ভিজছে আর তার মা দূর থেকে তাকে বকুনি দিচ্ছে।
সে মাকে বৃষ্টিতে নিয়ে এলো। মা-মেয়ে দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজছে।
কল্পনা থেকে সে বাস্তবে ফিরে আসে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় সে মায়ের ভালবাসা খোঁজ করছে।
মায়ের ভালবাসা খোঁজ করতে হয় না। এদের ভালবাসা নিঃস্বার্থভাবে সহজলভ্য। কিছু মানুষ এটা পেয়েও বোঝে না আর কিছু মানুষ প্রতিটা মুহূর্তে এ ভালবাসার খোঁজ করে যায়।

No comments:

Post a Comment