Friday, March 17, 2017

ভালবাসার নীল কষ্ট লিখেছেনঃ তারিক ইসলাম

ভালবাসার নীল কষ্ট
ভালবাসার নীল কষ্ট
লিখেছেনঃ তারিক ইসলাম

সুন্দর নির্মল নীল আকাশ আজ, কয়েকদিন টানা বৃষ্টি পর আজ সকালে রোদের মুখ দেখলো প্রকৃতি ৷ কিন্তু তপুর মনের অবস্থা প্রকৃতির সাথে কোন মিল নেই৷কারন সেদিন ওর একমাত্র কাছের মানুষটা ওর হাতে ওর বিয়ের কার্ডটা দিয়ে বললো আমার বিয়ে শুক্রবার,আসিস ৷ তুই না আসলে কিন্তু বিয়ে করুম না আমি ৷ তপুর বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে উঠলেও মুখটা হাসি হাসি করে বললো তোর বিয়া আর আমি যামু না, এতদিন পর একটা বিয়ে খাবো তাও আবার তোর, পাচটা না দশটা না একটাই প্রানের বান্ধবী আমার ৷ মুনা বললো , হইছে , আসিস হারামি আমি গেলাম কার্ডগুলা সবাইকে দিতে হবে ৷ তপু হঠাৎ বলে উঠলো দাড়া দাড়া, কার লাইফটা জাহান্নাম বানাচ্ছিস বললি নাতো ৷ আমেরিকার এক সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার, আব্বার বন্ধুর ছেলে, নাম শুভ্র, সেইরাম চেহারা মামা দুষ্টামি ভরা কন্ঠে বললো মুনা ৷ ঐ, তোর লজ্জাশরম নাই কিছু, হবুবরের প্রশংসায় একেবারে ফেটে পড়ছিস চোখটা ছোট ছোট করে বললো তপু ৷ মুনাও মুখটা ছোট করে বললো,
লজ্জার কি আছে আমারই তো বর অন্যকারও তো না ৷ আচ্ছা ঠিকাছে যা তুই মাইক নিয়া সারা শহরে মাইক নিয়া বলতে থাক আমার হবু বর সেইরকম জিনিস, সবাই আমার বিয়েতে এসে জিনিসটা দেখে যাবেন, খোচা মারা গলায় বললো তপু ৷ ওই হারামি তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে জেলাস তুই, খেপে বলো উঠল মুনা ৷ আরে জেলাস কেন হমু, তুই আমার জানের দোস্ত না ! আরেক দিকে তাকিয়ে বললো তপু ৷ হুম, তাই তো, আচ্ছা যাইরে, ফোন দিবনে পরে ৷ বলেই মুনা চলে গেলো ৷ আর তপু ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো একমনে ৷ চোখের সামনে ভেসে উঠলো কত স্মৃতি, কত কথা মুনাকে নিয়ে ৷ সুখে, দু:খে সবসময় ওরা দুজন একজন আরেকজনের সঙ্গী ৷ সেই মুনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আজ অচেনা একজনের সাথে ৷ বিয়ের পর ওরা উড়াল দিবে আমেরিকার পথে ৷ তপু আর ভাবতে পারছে না, বুকের ভিতরটা কেউ যেনো খামচে ধরছে কেউ ৷ ওর এখন ইচ্ছা করতাছে প্রকৃতির সামনে চিৎকার করে বলে কেনো কি কারনে প্রিয় কাউকে হারাতে হবে তার ৷ কি দোষ তার ৷ বাসায় এসেই সিদ্ধান্ত নিল তপু আর এ জীবন রাখবে না ৷ সবার উদ্দেশ্যে একটা চিরকুট লিখলো, আর দেরাজ থেকে এনে রাখা ওর মুক্তির পুরিয়া খেয়ে ফেললো ৷ গল্পটা এখানেই শেষ হওয়ার কথা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটতেই পারে ৷ তপুর নিস্তেজ দেহটা এবং চিরকুটটা পেলো ওর রুমমেট শিহাব ৷ আইসিইউ'র সামনে সবাই দাড়িয়ে, জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষনে তপু ৷ যার জন্য তপুর পৃথিবী মায়া ত্যাগ করতে চাইল সেই মুনা বিয়ের শাড়িতে এক কোনাতে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ৷ যে বাবা মার একমাত্র আদরের ছেলে তারা ফ্যালফ্যাল চোখে মুনার কান্না দেখছে ৷ এর মাঝে কর্তব্যরত ডাক্তার এসে সবাইকে ধৈর্য্যধরতে বলে আবার ভিতরে চলে গেলো ৷ টিক টিক করে সময় এগোচ্ছে আর হয়তবা কঠিন, নিষ্ঠুর কিছু শোনার জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে বলছে ৷
আবারও ডাক্তারটি বের হয়ে এসে বললো যে পেশেন্টের জ্ঞান ফিরছে ৷ যে কোন একজন আসতে পারে ৷ মুনাকে পাঠানো হল ভিতরে ৷ তপুর পাশে যেয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো আর বললো এই হারামি, তুই আমাকে এত ভালবাসিস, একবারও কি বলেছিস, নিজের মনে মনে রেখে মরে যেতে বসলি, একবারও ভাবলি না আমার কথা ৷ দুজনের চোখেই পানি, হয়তবা এই পানি আনন্দ বা দু:খ বা নতুনভাবে বেঁচে থাকার ৷

 উৎসর্গ: সেইসব হতাশাগ্রস্থদের, যারা আত্মহত্যাকে সব সমস্যার সমাধান হিসেবে বিবেচনা করে এই পথে যেতে চেষ্টা করে, মূলত: আত্মহত্যা কোন সমাধান হতে পারে না ৷ কারন এই জীবনটা কোন খেলা নয়৷
এই সময়ে ৮/১১/২০১৩ ০৭:১০:০০ PM 

No comments:

Post a Comment