Friday, March 17, 2017

"প্রতিশোধ" "প্রতিশোধ"

"প্রতিশোধ"
"প্রতিশোধ"
লিখেছেনঃ অনলী দিগন্ত (dipto sarkar)

সানাইয়ের সুর এত করুন হয় কেন? মনে মনে রিয়াকে বিয়ে করতে চাইছিলাম।

আজ সত্যি সত্যি বিয়ে করে ঘরে তুললাম, তবুও সানাইয়ের সুর এত করুন লাগছে আমার?

রিয়া আমাকে বিয়ে করতে চায়নি। চাইবে বা কেন? আমি যে ওদের আশ্রিত ছিলাম। কে আমার বাবা, কে আমার মা, আমি জানি নাহ। শুধু এটুকু জানি রিয়ার বাবা তথা আশরাফ তালুকদার আমাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে নিজ সন্তানের মতো মানুষ করেছে।

রিয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা অন্যরকম। ছোটবেলায় যেমন রিয়া আমার সাথে কিছু খেলত না। ঠিক বড় হয়েও কখনো আমার সাথে হাঁটতে বের হয়নি। প্রয়োজন ছাড়া কখনো একে অপরের সাথে কথা বলিনি। আমাদের দেখা সাক্ষাত্‌ হত কম। ছোটবেলা থেকে, হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া শেষ করছি। শুধু ছুটির দিন গুলোতে রিয়াদের বাসায় থাকতাম। চাকুরি নেওয়ার পর নিজের একটা বাসা হয়েছে। একা একা থাকি, কাজের বুয়া রান্না করে দেয়। রিয়ার বাবা আমাকে সন্তান স্বরূপ দেখলেও, আমি রিয়ার কাছের মানুষ ছিলাম না, আবার দূরের মানুষ ও ছিলাম না।

হঠাৎ একদিন আশরাফ আঙ্কেল ডেকে বলল.. -শুভ, বিয়ে করবে না? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। -পছন্দের কোন মেয়ে আছে? না, তেমন কেউ নেই

হঠাৎ বলে বসল

-রিয়াকে বিয়ে করবে

আস্তে করে বললাম রিয়া কি রাজি হবে?

-রাজি থাকা না থাকা কোন ব্যাপার না, তুমি রাজি থাকলে হল।

আপনি আমার অভিভাবক, যা ভালো বুঝেন।

দুই দিন পর, রিয়া আমার সাথে দেখা করে জানায় দিল, ও আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। যেভাবে হোক বিয়ে বন্ধ করতে হবে। আমি বললাম কারন ছাড়া মানা করে দিব কিভাবে? রিয়া জানাল ও রাজ নামে একজনকে ভালবাসে, তাকে বিয়ে করবে। রাজকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।

আঙ্কেলকে সব জানালাম, উনি রাজকে দেখতে চাইলেন। রিয়া অনেক চেষ্টা করেও, রাজকে আঙ্কেলের সামনে নিয়ে আসতে পারল না। পারবে কি করে? রাজের সাথে অনলাইনে পরিচয় রিয়ার, বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। রাজকে রিয়া কখনো চোখে দেখেনি, শোনেনি তার কণ্ঠ। তবুও ভালবাসে পাগলের মত। তাঁদের ভালোবাসা শুধু অনলাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবুও রাজের সাথে একদিন চ্যাট না হলে রিয়া ঠিক থাকতে পারে না, এতটাই গভীর ভালবাসা।

আঙ্কেল ভেবে অস্থির, কোথাকার কোন রাজ, সামনেও আসে না। রিয়ার মা বেঁচে নেই, এদিকে একরোখা ও জেদি মেয়ে। তার উপর এক মাত্র সন্তান। রিয়ার পাগলামো দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই বাধ্য হয়ে জোর করে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ের আগ মুহূর্তে রিয়া ওর বাবার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে দিব্বি দিল, -আমার মুখ কোন দিনেও দেখতে চাইবেনা আর, যদি দেখ সেটা যেন আমার মরা মুখ হয়। এরপর রিয়া এক ফোঁটা চোখের জল বিসর্জন না দিয়ে আমার বৌ হয়ে এল।

আমি সন্তপনে বাসর ঘরে ঢুকলাম। রিয়া বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আমাক দেখতে চেঁচিয়ে উঠল, -খবরদার, আমার কাছে আসবেন না। আমি দ্রুত দরজা লাগায় দিলাম। -দরজা লাগালেন কেন? বিয়ে করা বৌয়ের রুমের দরজা লাগাবো না তো কার লাগাবো। রিয়া ভীতু ভীতু চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়ার পাশে বসলাম

রিয়া দূরে সরে গেল। -আমি আপনার সাথে থাকব না। জানেন তো আমি রাজকে ভালবাসি। আপনি অন্য রুমে চলে যান।

আজ রাত আমাকে এই রুমে থাকতে হবে...... -কেন থাকবেন? আপনি কি আমার উপর জোর করবেন?

জোর করবো কেন? আমার কয়েক জন বন্ধু রয়ে গেছে। তাই বৌ রেখে অন্য রুমে শুতে পারি না। বিষয়টা খারাপ দেখাবে। চিন্তা করোনা আমি মেঝেতে শোবো, তুমি উপরে থেকো। বলে বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরলাম।

বিয়ের তিন দিন হয়ে গেল, আঙ্কেল মানে আমার শ্বশুর ফোন দিয়ে বার বার রিয়াকে নিয়ে যেতে বলছে। রিয়া যাবে না কোনোদিন ওই বাড়ি সেটাই বলছে বার বার। বাধ্য হয়ে একাই গেলাম। রিয়া যায়নি তাই শ্বশুর জানাল কয়েকদিন পর উনি নিজে আসবেন।

অফিসে কাজ করছিলাম, শ্বশুরের কল, -বাসায় এস তো এখনে, আমি তোমার বাসায়, রিয়া আমাকে দেখে রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। কিছুতেই রুমের দরজা খুলছে না। দ্রুত চলে এলাম বাসায়, আমাক দেখে রিয়ার বাবা বলল তুমি একটু দেখত, আমি অনেক ডাকা ডাকি করলাম রিয়ার সারা শব্দ নেই। আমিও অনেক ডাকলাম, সারা পেলাম না।

অবশেষ রুমের দরজা ভেঙ্গে ফেলে দেখতে পেলাম রিয়ার লাশ, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলতেছে..............

রিয়াকে দাপনের দুই দিন পর, রিয়ার বাবার সাথে দেখা করতে গেলাম, আমাক কাঁদতে কাঁদতে বলল, -রিয়া মরার জন্য আমি দায়ী, তোমার বাসা না গেলে রিয়া মরত না। আসলে এগুলা আমার পাপের শাস্তি।

এভাবে বলছেন কেন? -শুভ, আমি তোমাকে রাস্তায় কুঁড়ে পাইনি।(কেঁদে কেঁদে) আমি সব জানি, আপনি আমার বাবাকে খুন করছেন। চমকে উঠে বলল -তুমি কিভাবে জানো? তিন বছর আগে, লেখা পড়া শেষ করে যখন এ বাড়িতে আসলাম, তখন আপনার একটা ডায়েরী আমি পড়েছিলাম কৌতূহল বসত, আর সেখানে সব লেখা ছিল। আমার সব সমায় ইচ্ছা হতো আপনাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। তাই এই বাসা ছেড়ে আমি আলাদা বাসা ভাড়া করে একা একা থাকি। -আমাক মারলে না কেন? আমি তো ভাবছিলাম আমার সম্পত্তিতে তোমার লোভ নেই, তাই মেয়ের বিয়ে দিলাম তোমার সাথে।

আপনাকে মারি নাই, কারন আমার মা আপনাকে ভালবাসত, তাছাড়া মেরে ফেললেও আপনার উপযুক্ত শাস্তি হত না। আর আপনার সম্পত্তিতে আমার লোভ নাই। -তোমার মাকে অনেক ভালবাসতাম, কিন্তু আমার বাবা মেনে নিতে চায়নি আমাদের সম্পর্কটা, তাই তোমার মায়ের বিয়ে অন্য খানে হয়ে গেল।

আমি সব পড়ছি.. -বাবা মারা যাওয়ার পর চাইছিলাম তোমার বাবাকে মেরে ফেলে তোমার মাকে বিয়ে করবো। মেরেও ফেললাম, কিন্তু তোমার মা তোমার বাবার শোকে পাগলী হয়ে গেল...... ওই অবস্থায় তোমার মা তোমার জন্ম দিয়ে মারা গেল। আমি জানতাম না তোমার মা pregnant ছিল, জানলে মারতাম না তোমার বাবাকে।

আমার বাবা, মা দু জনে মারা গেল আপনার জন্য। আপনি আমার দায়িত্ব নিয়ে পাপ মোচন করতে চাইছিলেন? -হ্যাঁ, আমি অনুতপ্ত। আপনি অনুতপ্ত? এতে আপনার পাপ মোচন হয়ে গেল? আপনাকে আমি তিলে তিলে মারব। -আমি আজ বড় নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ, আমাক আর কি মারবে তুমি?

নিঃসঙ্গতা দিয়ে তো কেবল শুরু করছি, এই যন্ত্রণায় মারব আমি আপনাকে। আপনার মেয়েকে কেড়ে নিছি। আর আপনাকে উপহার দিছি নিঃসঙ্গতা যা আপনাকে প্রতিটা মুহূর্তে কুঁকড়ে মারবে। -তুমি কেড়ে নিছ মানে?

রাজ কে জানেন? আমি রাজ। আপনার মেয়ে সেটা জানে না। অনলাইনে প্রেমের জালে আমি ফাঁসিয়েছি ওকে। রিয়ার ভাল লাগার দিক গুলো জানতাম, তাই সহজে আমার জালে আটকায় ফেলছি। এর পর দু বছর ধরে প্রেম করে, আমার উপর পাগল বানিয়ে দিয়েছি। বিয়ের দিন থাকে রাজ যোগাযোগ করেনি। যে মেয়ে একদিন রাজকে ছাড়া থাকতে পারত না সে একটানা ৭ দিন কাটিয়ে দিল। এসবের জন্য আপনাকে দায়ী করছে। আপনি গেছেন আমার বাসায়, ওর মুখ দেখছেন। ওর দিব্বি ছিল আপনার উপর তাই পৃথিবী থেকে চলে গেছে।

তাই আপনি রিয়ার মিত্যুর জন্য দায়ী। যে খেলা আপনি শুরু করছিলেন আমার বাবাকে খুন করে, আমি সেই খেলার সব কষ্ট আপনার উপর চাপিয়ে দিয়ে শেষ করছি সেই খেলা। এখন আপনি মিত্যু পর্যন্ত এই কষ্ট নিয়ে ধুকে ধুকে বেড়ান।

আমি চলে আসার সমায় পিছনে খুব জোরে কান্নার আওয়াজ পেলাম। মনে মনে বললাম আশরাফ তালুকদার কাঁদ, জোরে জোরে কাঁদ, যত বেশী কাঁদবে তত আমার বাবা, মায়ের আত্মা শান্তি পাবে........ (সম্পুন্য কাল্পনিক)

No comments:

Post a Comment