Friday, March 17, 2017

আমাদের পথচলা…

আমাদের পথচলা…
আমাদের পথচলা…
লিখেছেনঃ Farzbee

২০০৮ সাল… জুন মাস... কলেজের ১ম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। শান্তি… ঝামেলা শেষ… এর মধ্যে বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম ইংরেজির জন্যে কোচিং করব সাইকি তে, ওখানে পড়া কম, গল্প বেশি। আহা! কি মজা…
সব কোচিং যদি এমন হত… তাই একদিনও কোচিং বাদ দিতাম না। গল্পে গল্পে আমার দিন ভালই যাচ্ছিল, এর মধ্যে নতুন করে যোগ হল mig33.. কে পায় আর আমাকে। মজা আর মজা। বন্ধু, আডডা,চ্যাটিং… কি দিনটাই না ছিল। বন্ধুদের মাধ্যমে একটা ছেলের সাথে চ্যাটে পরিচয়। হুমম, খারাপ না ছেলেটা… ভালই। আমাদের সাথে একই কোচিং এ পড়ে। আর সেখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু। Mig33 বন্ধুরা তোমাকে আর আমাকে নিয়া খেপাতো, এটা নিয়া বিরক্ত হয়ে বোকার মত কাজ করলে, আমিও তোমাকে সাহায্য করলাম। ঠিক করলাম সবাইকে বলবো আমাদের সম্পর্ক আছে, অনেক আগে থেকেই। কাউকে বলিনি, তাই আমাদের নিয়া আর যেন মজা না করে, আর তাই বলে ফেললাম বন্ধুদের, বন্ধুরা বুঝলো আমাদের অভিনয়ের কথা, শুরু হল আরো খেপানো। বুঝলাম বড় বোকামি করে ফেলেছি।

কিন্তু সেদিন বুঝিনি আমরা আসলেই সত্য কথাটাই বলেছিলাম নিজেদের অজান্তে। আস্তে আস্তে তোমার সাথে চ্যাটিং বেড়ে গেল। তোমার প্রতি ভাললাগা শুরু হল। ভাবলাম এটা কিছুই না, এমনি ভাললাগা, ভালবাসা না। আমিতো কাউকে ভালবাসবো না, এভাবে চলে গেল সময়, হঠাৎ করে তোমার ব্যবহার বদলে যেতে থাকলো, আমার সাথে অন্যরকম ব্যবহার শুরু করলে। কোচিংএ একদিন ফি জমা দেয়ার সময় তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু তুমি খেয়াল করোনি বলে সেটা নিয়া আফসোস করা, ঘন ঘন ফোন করে আমার খবর নেওয়া.... সবকিছুই বুঝতে পারছিলাম আমি, কিন্তু আমিতো ভালবাসা চাই না, ভাল বন্ধু চেয়েছি।

উপেক্ষা করার চেষ্টা করলাম, পারলাম না। কারণ নিয়তি যে তোমার সাথেই লেখা ছিল। আগষ্ট মাসের ২০ তারিখ, তুমি হঠাৎ করে বলে ফেললে তোমার ভাললাগার কথা। অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে এটা তুমি না বলো। কারণ আমি জানতাম আমি তোমাকে না বলবো। চাইনি আমার বন্ধুটিকে হারাতে। তুমি দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে, কিন্তু আমার জন্যেই বন্ধুত্বটা ধরে রেখেছিলে। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে আমাকে খুশি করার জন্যে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তুমি আরো কষ্ট পাচ্ছিলে। তোমার কষ্ট আমি বুঝতে পারতাম তবে সাহস ছিল না তোমাকে হ্যাঁ বলার, আবার পারছিলাম ও না তোমার সাথে বন্ধুত্ব ভেঙ্গে ফেলতে। তুমি বুঝতে পারছিলে যে আমিও আস্তে আস্তে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার মুখ থেকে তুমি এই কথাটা শুনতে পারোনি।

আরো দ্বিধায় পড়ে গেলে। আমাকে অনেকবার বলেছ সত্য বলতে, আমি বলিনি। এভাবেই বলবো না করতে করতেই কখন যে তুমি আমার সবচেয়ে আপন জন হয়ে গেলে জানি না। ওইভাবেই আর বলা হয়ে উঠেনি ভালবাসি তোমাকে। দুইজনই বুঝে নিলাম যে আমরা একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারব না। সামনে এইচ.এস.সি পরীক্ষা, অনেক পড়া পড়তে হবে, তোমার সাথে দেখা হতো খুব কম কেননা আমরা একই কলেজে পড়তাম না। যা দেখা হতো কোচিং এ, তেমন কথা বলাও হতো না সামনাসামনি, তারপরও আমাদের নিশ্চুপ ভালবাসা নিজের গতিতে চলতে থাকলো। এইচ.এস.সি দিলাম, রেজাল্ট দিলো। তুমি চলে গেলে ঢাকাতে পড়ার জন্যে। আমি রয়ে গেলাম চট্রগ্রাম।

নিজেদের ইচ্ছাতেই আমরা একসাথে পড়লাম না। তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া শুরু করলে আর আমি মেডিকেলে। কারণ তোমাকে আমার আগেই প্র্তিষ্ঠিত হতে হবে। শুরু হলো “Long distance love story”. সবাই বলতো এভাবে ভালবাসা টিকে না, কিন্তু আমাদের জন্যে এটা কষ্টের ছিল না। আমরা অলপতেই খুশি হতাম। তুমি ঢাকা থেকে বেড়াতে আসতে, তখন দেখা হত দুই কি এক বার। কোন কোন সময় দেখাও হতো না, মেনে নিতাম। খারাপ লাগতো অন্যদের দেখে, কিন্তু মন খারাপ করতাম না। তুমি চট্রগ্রা্ম আসলেই ঈদ ঈদ লাগতো। আবার তুমি যখন চলে যেতে, লাগতো আমার চট্র্রগ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। কান্নাও করতাম, তুমি বুঝাতে। এভাবেই ৪টা বছর কেটে গেল আমাদের। এরপর তোমার আব্বু বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন, সাথে তোমার পুরো পরিবার। আমার চট্রগ্রাম শহর এখন পুরো ফাঁকা। ঈদের সময় ও আর ঈদ ঈদ লাগে না, ভুলাক্কার।

যেবার চলে গেলে তোমরা, তোমার সাথে সেবারো দেখা হয়নি। আমি বাসা থেকে একা বের হতে পারিনি, আর তুমিও বাসার কাজ শেষ করে আমার সাথে দেখা করতে আসতে পারছিলে না। চলে গেলে তোমরা। মন খারাপ করেছিলাম খুব। তোমার চট্র্রগ্রাম আসা হতো না। এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর তুমি এলে এক কাজে। তখন দেখা হলো এক ঘন্টার জন্যে। এবারও আসলে কিন্তু দেখা হলো না, আমার পরীক্ষার জন্যে সময় দিতে পারলাম না। জানি তোমার খারাপ লেগেছে, কিছুই বলোনি।

মাঝে মাঝে লাগে কেন একসাথে পড়লাম না, রাগ ও লাগে, কান্না পায় খুব। জানো, তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে আমি আজো বৃষ্টিতে ভিজিনি। তোমার সাথে রিকশাতে ঘুরবো বলে আমি আজো কোন ছেলেবন্ধুর সাথে রিকশাতে উঠিনি, আমার পাশের সিটটা যে শুধুই তোমার জন্যেই খালি। আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা এসেছে এই ৫টা বছরে, তাও ভেঙ্গে পড়িনি, এসবই সম্ভব হয়েছে শুধু তোমার জন্যে, তোমার ভালবাসার জন্যে আর আমাদের একজন এর প্রতি আরেকজনের শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের জন্যে।

তুমি এত ভাল কেন, আমার সব আবদার মাথা পেতে মেনে নাও, আমাকে বকতেও পারোনা। আর আমি তোমাকে সারাদিন বকি। এটা করো নাই কেন, ওটা কেন করেছ, তোমার ভুলে যাওয়া, আর কত কিছু নিয়া তোমার মাথা খাই, অথচ তুমি আমাকে কিছুই বলোনা। এত কেন ভাল তুমি?

তুমি বলো আমাকে পেয়ে তুমি ভাগ্যবান, বরং আমি তোমাকে পেয়ে ভাগ্যবতী। ভাগিস ৫ বছর আগে আমাকে বলেছিলে তোমার ভাললাগার কথা, তা না হলে এই দিনটা আসতো না আমার জীবনে। আমাদের ভালবাসার সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে কবে এটা শুরু হয়েছে আমরা জানিনা। নিজের অজান্তেই আমাদের একসাথে পথচলা।

তাও প্রতি বছর আমরা ২০শে আগষ্ট একজন আরেকজনকে উইশ করি, যেদিন কিনা আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়াছিলাম। তুমি যদি সেদিন আমাকে তোমার ভাললাগার কথা না বলতে তাহলে আজ আমাদের এই পথচলা হত না।

Thank u so much ভুলাক্কার, আমার জীবনে আসার জন্যে, আমাকে ভালবাসার জন্যে। হয়তো আমরা অন্যদের মতো ঘুরতে পারিনা, সময় দিতে পারিনা, দেখা করতেও পারিনা, তাও আমাদের ভালবাসা অন্যদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। আমাদের অনেক না পাওয়া আছে তাও আমরা হাসিমুখে তা মেনে নেই। একটা সম্পর্কে এটাইতো অনেক বড় পাওয়া, তাই না?

শুধু বলবো অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে। সবসময় আমার ভুলাক্কার হয়ে থেকো। যেমন আছ ঠিক তেমন।

No comments:

Post a Comment