Friday, March 17, 2017

" রংধনু " লেখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

রংধনু
" রংধনু "
 লেখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

পুকুরের দক্ষিণ পাড়টা বিকেলে বসে থাকার জন্য আদর্শ জায়গা ।
রাফির অন্তত তাই মনে হয় ।
এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ রয়েছে ।
মাস ছয়েক আগে পুকুরের উত্তর কোনের দোতলা বাড়িটায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে ।
ঘটনা সেটা না...ঘটনা হচ্ছে ভাড়াটিয়ার বড় মেয়ে তুলি ।
তুলি মাঝে মাঝে বিকেলে জানালায় দর্শন দেয় ।
পুকুরের দক্ষিন পাড় থেকে সেটা দেখা যায় ।
তুলি যখন দর্শন দেয় বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে রাফির!
এটা হচ্ছে আসল কারন ।
বয়সে প্রায় সমবয়সী হলেও তুলি মেয়েটাকে রাফির বাচ্চাই মনে হয় ।
উদাস একটা ভঙ্গিতে বসে থাকে ।
তাকিয়ে আছে হয়তো কোন জিনিসের প্রতি, কিন্তু মন সেখানে নেই ।
বাবার চাকুরী সূত্রে বছরের মাঝামাঝি সময় এসেছে, ভর্তি হয়েছে রাফির কলেজেই ।
ছেলেদের সাথে কথা-টথা বলে না খুব একটা ।
এই বয়সে অন্য মেয়েরা যেমন চটপটে হয়, তুলি তার উল্টো ।
প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়...নিজ থেকে কিছু বলে না ।
তুলির নির্লুপ্ততা রাফিকে ওর প্রতি আগ্রহী করে তোলে ।
তাই রুটিন করে বিকেলবেলা পুকুর পাড়ে বসে থাকা ।
তুলিকে নিয়ে কত রকম যে ভাবনা মাথায় ঘোরে !
রাফি মাঝে মাঝে ভাবে, নোট নেয়ার অজুহাতে তুলিদের বাসায় যাবে ।
কিন্তু তুলির বাবার মুখখানা যখন ভেসে উঠে ইচ্ছে উবে যায়!
কেমন রাগি রাগি চেহারা, কখনো হাসে বলে মনে হয় না !
মেয়েদের বাপ গুলো এমনই হয় ।
ছেলেদের দেখলে এমন ভাবে তাকায় যেন, এই বুঝি আমার মেয়ের সাথে প্রেম করতে আসছে! এই বুঝি নিয়ে পালিয়ে যাবে !
তাদের ধারনা, এই যুগের ছেলেরা মুরুব্বিদের সম্মান করতে জানে না, বদের হাড্ডি ।
রাফি ভাবে, তুলির বাবা তাদের বয়সে অনেক আকাম করে বেড়িয়েছে তো তাই উনি ছেলেদের দেখলেই উনার সাথে মিলিয়ে দেখেন!
ভাবখানা এমন, বাবা তুমি যতই ভাল মানুষ সেজে থাকোনা কেন...সব বুঝি !
কলেজে বেশ কয়েকবার তুলির সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করেছে রাফি, খুব একটা পাত্তা পায়নি ।
তুমি কি জানো আমি তোমার প্রতিবেশী ?
জানি ।
তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলো না কেন ?
এই তো বলছি ।
সাময়িক হাল ছেড়ে দিলেও, রাফি আশা ছেড়ে দেয়নি ।
তাই প্রায়ই পুকুর পাড়ে বসে থাকা ।
কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, তুলির সাইকোলজি বুঝে উঠতে পারছে না রাফি ।
মনমরা হয়ে থাকে সব সময় ।
সামনা-সামনি দেখা হলে সাপের মতো ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকায় রাফির দিকে ।
বুক হিম হয়ে যায় !
সেদিন বিকেলে পুকুর পাড়ে তুলিকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল রাফি ।
রাফিকে দেখেই তুলি প্রশ্ন করে বসল, তুমি প্রায়ই বিকেল বেলা পুকুর ঘাটে বসে থাকো কেন ?
প্রশ্ন শুনে রাফির অস্বস্তি শুরু হয়ে গেল!
না মানে, পুকুর পাড়ে বসে থাকতে আমার ভাল লাগে ।
আমি জানি তুমি কেন পুকুর পাড়ে বসে থাকো!
রাফির হার্টবিট বেড়ে গেল!
দেখো, রাফি আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো । তোমার আচরনে সেটা বোঝা যায় ।
আমাদের এখন যে বয়স তাতে এটা খুবই স্বাভাবিক ।
তোমাকে আমারো ভাল লাগে, কিন্তু আমাদের রিলেশন কখনোই সম্ভব নয় ।
রাফি এবার বুকে সাহস নিয়ে বলেই ফেলল, কেন নয় ?
তোমার সাথে আমার পরিচয় তো বেশিদিনের নয়, তাছাড়া তুমি আমার অনেক কিছুই জানো না ।
সে সব জানলে তুমি কেন, কোন ছেলেই আমার সাথে রিলেশনে জড়াতে চাইবে না ।
রাফি ভেবে পায় না কি এমন সিক্রেট থাকতে পারে এই মেয়েটার!
বলো আমি শুনতে চাই ।
তোমার শুনতে ভাল লাগবে না ।
তবুও আমি শুনব ।
তুলির মুখে রাফি এরপর যা শুনল, সেটা আসলেই সে চিন্তা করতে পারেনি ।
তুলি যখন সবে ক্লাস সিক্সে পড়ে, তখন সে তার কাজিনের দ্বারা রেপ হয়েছিল!
কাজিন ছিল তার থেকে বয়সে প্রায় দ্বিগুণ ।
এই ঘটনা ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জানে না ।
লোকলজ্জার ভয়ে আইনি কোন ব্যবস্থাও তুলির পরিবার নেয়নি ।
সেই থেকে তুলি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা ।
দরকার ছাড়া বাড়ি থেকে বের হয়না ।
বাবা-মা সব সময় চোখে চোখে রাখে ।
ঘরের ভেতর গর্তবাসী হয়ে থাকে ।
অনেক ছেলের কাছে থেকে অনেক অফার সে পেয়েছে, কিন্তু কখনোই রিলেশনের ব্যাপারে এগোয়নি।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।
তুলি আর রাফি বসে আছে চুপচাপ ।
কেউ কিছু বলছে না ।
রাফি শুধু ভাবছে, এটা কি মানুষের কাজ হতে পারে ?
রাতে রাফি আর ঘুমাতে পারল না ।
আকাশ-পাতাল চিন্তা করতে লাগল ।
এই অবস্থায় নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল করবে...নাকি ?
তুলির ঘটনা জানার পর, ওর প্রতি রাফির ভালোবাসায় কোন রকম ভাটা পড়েনি , বরং বেড়েছে বহুগুন ।
এই ঘটনায় তুলির তো কোন দোষ নেই ।
বরং এই যুগে প্রেম করে প্রেমিক-প্রেমিকারা সেক্সসুয়াল রিলেশনে জড়াচ্ছে হরহামেশাই ।
যা রেপের থেকেও নিকৃষ্ট কাজ ।
কে যে ভার্জিন, আর কে যে ভার্জিন না তা বোঝা মুশকিল এখন ।
যা থাকে কপালে তুলিকেই তার চাই ।
পরদিন বিকেলবেলা পুকুর ঘাটে রাফি আর তুলি মুখোমুখি বসে ।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ।
দুজনের মনেও মেঘের ঘনঘটা ।
তুলি, আমি মোটেও ভাল ছেলে নই ।
হয়তো পারফেক্টও নই অনেকের মতো ।
শুধু এইটুকুই তোমাকে বলতে চাই, সব কিছুর পরও আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে বুক ভরে শ্বাস নিল রাফি ।
তুলির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ।
আকাশ থেকে বৃষ্টিও পড়া শুরু হলো সাথে সাথেই ।
দুজনার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে বেশি পানি ঝরাতে পারে ।
রাফি ভাবছে,
এই মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে!
সেই চোখে এখন পানি ঝরছে!
সেই পানি ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে সব কিছু ।
ব্রায়ান এডামসের গানটা রাফির মনে পড়ে গেল, " এভরিথিং আই ডু....................."
রাফি তুলির হাত ধরে গাঢ় গলায় বললো, চলো উঠি ।
তুলি ধরা গলায় বলল, চলো ।

No comments:

Post a Comment