Friday, March 17, 2017

ঊপসংহারহীন অবতরণিকা

ঊপসংহারহীন অবতরণিকা
ঊপসংহারহীন অবতরণিকা
লিখেছেনঃ Mongovirer Mounota

তোমাকে প্রথম দেখা কলেজে। জানি না কেন, তোমাকে দেখলে চোখটা কিছুক্ষনের জন্য স্থির হয়ে যেত। তোমার কি দেখে আমি এত মুগ্ধ হয়েছিলাম, তা আজ ও বুঝতে পারলাম না। হয়তোবা তোমার পারসোনালিটিটাই আমাকে মুগ্ধ করেছিল! জানি না, কি সেটা। কেন যেন তোমাকে দেখলে মনে হতো, তুমি প্রফেশনাল লাইফে অনেক ঊন্নতি করবে। অন্য কিছু তখন মনে আসেনি। কারন, তোমার নাম জানতাম না। তাই দ্বিধায় ছিলাম তুমি অন্য ধর্মের যদি হও। চাইলেই নামটা জানা যেত, কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে করেই নামটা জানতে চাইলাম না। কিন্তু হায়! উপরওয়ালা ও বোধ হয় আমার পিছে লেগেই আছেন যে নামটা জানিয়েই ছাড়বেন।

হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর কাছে তোমার নামটা শুনলাম। বুঝলাম, তুমি আর আমি এক ই ধর্মের। পুরো নামটা জানার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু কারও কাছে জানতে চাইনি। সেটা ও দেখি উপরওয়ালা নিজ দায়িত্বে একদিন জানিয়ে দিলেন! তো আর কি করা! ঊনি নিজ দায়িত্বে কার্য সমাধান করলে আমার কি করার আছে! যাই হোক, সব যখন নিজে নিজেই হয়ে যাচ্ছে তখনতো আমার কিছু না করলে ও হয়। তাই আমি শুধু দেখাতেই সীমাবদ্ধ থাকলাম।

আর ও সুবিধা রেখেছেন উনি আমার জন্য! তোমাকে উনি ঠিক আমার আশেপাশেই বসাতেন ক্লাসে। যেন আমাকে কষ্ট করে খুঁজতে না হয়! কি যে শুরু করছে উপরওয়ালা আমার সাথে! কিন্তু আমার সাথে ওসব করে লাভ নেই, আমি এসবে নাই। আমার দ্বারা এসব প্রেম-টেম হবে না। সব্সময় নিজেকে এসব থেকে ১০০ হাত দূরে রেখেছি। তাই উনি যতই চাইতেন, আমি ততই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু হায়! উপরওয়ালার সাথে কি আর আমি পারি! ধীরে ধীরে তোমার প্রতি আর ও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়লাম। একদিন তোমার চেহারাটা একটু না দেখলে ভাল লাগতো না। অবশ্য তুমি প্রতিদিনই ক্লাস করতে, সেই সুবাদে এ না দেখতে পাওয়ার সমস্যাটা ছিল না।


ক্লাসের সবাই সবার সাথে অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলাম, অনেক দুষ্টুমি করতাম সবাই মিলে। শুধু তোমার সাথেই কখনও সামনাসামনি কথা হয়নি। তবে সরাসরি না হলে ও অন্যভাবে মাঝে মাঝে কথা হতো। একদিন সবার আড্ডায় দুস্টুমি করে তোমার একটা নাম দেই। আড্ডায় কিছু না বললে ও এর পর তুমি অনেক বকেছিলে আমায়। বুঝতে পারছি তুমি এসব পছন্দ কর না, তোমার মাথা তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়, কিন্তু একটু ফান করলে দোষ কি! আমি অনেকভাবে তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তুমিতো একটা ঘাড়ত্যাঁড়া। নিজে যা বুঝ, তা। কারো কথা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন ই মনে কর না। একটা পর্যায়ে যেয়ে আমার ও মাথা গরম হয়ে গেলো। তখন আমি ও তোমায় কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। কিন্তু সেগুলো ছিলো শুধুই অভিমান করে বলা। আর তুমিতো তুমি ই!

এরপর থেকে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিলে। খুব খারাপ লেগেছিলো তখন, জানো? আর একটাই উপায় ছিল, ফেইসবুক। অন্য নাম দিয়ে তোমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিলাম। এরপর তোমার সাথে মেসেজ এ সব্সময় কথা হতো সকাল থেকে রাত পর্য্ন্ত যখন ই সময় হতো। বুঝতে পারনি, কারণ পুরো পরিচয় ই যে মিথ্যে বলেছিলাম। অনেক কিছুই জানতে পেরেছিলাম তোমার সম্পর্কে। অনেক কিছু বের করতে চেয়েছিলাম তোমার মুখ থেকে। কিন্তু পারিনি। আচ্ছা, তুমি এমন কেন বলতো? নিজের আবেগ কে এভাবে লুকিয়ে রাখতে কিভাবে পারো? তাই মাঝে মাঝে তোমার পাত্তা না দেয়া টাইপ কথাবার্তা শুনলে মাথা গরম হয়ে যেত। কিন্তু, কিছুই বলতে পারতাম না, পাছে না আবার ধরা পড়ে যাই। তুমি এত অদ্ভুত কেন বলতো? এভাবে না বললে হয় না? সবসময় এত কঠিন হয়ে কথা বল কেন? মাঝে মাঝে প্রচণ্ড রাগ হয় তোমার উপর।

তখন ইচ্ছে করে তোমার মাথার চুলগুলো সব ছিঁড়ে দেই। আজব মানুষ তুমি! তোমার এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারলাম না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। বুঝতে পারলাম মানসিকতা বা চিন্তাভাবনার দিক থেকে আমি উত্তর মেরু আর তুমি দক্ষিণ মেরু। আমার চিন্তাধারার সাথে তোমারটা কখনই মেলে না। আমার ভাবনার সাথে তুমি কখনই একাত্ম হতে পারো না, সব্সময় সব কথার বিপক্ষে তুমি যাবেই। তাই ভালোলাগাটা শুধু তার জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকল। ভালোবাসা পর্যন্ত আর যেতে পারল না। আর আমিও বুঝলাম, ভালোবাসা শব্দটির অর্থ কত নিগুঢ়। ভালো অনেককেই লাগে, কিন্তু সবাইকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাটা শুধুই একজনের জ্ন্য, যে তোমাকে বুঝতে চাইবে, তোমার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিবে, তোমার সাথে তার সব সুখ-দুঃখ গুলো শেয়ার করবে। পারস্পরিক বোঝাপড়াটা অনেক জরুরী এক্ষেত্রে। আর তাইতো আমার গল্পটি তার উপসংহারে পৌঁছাতে পারলো না। ঊপসংহারহীন অবতরণিকা হয়ে রয়ে গেলো জীবনে…...

No comments:

Post a Comment