Friday, March 17, 2017

খুনী

খুনী
খুনী
লিখেছেনঃ akjn ami

সকাল থেকে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে । আমি বসে আছি আমার রুমের জানালার ধারে ।আমি বৃষ্টি দেখছি।এই কয়দিনের প্রচন্ড গরম এক পশলা বৃষ্টিতে শান্ত ।খুব ভিজতে ইচ্ছা করছে ।কিন্তু এ দুপুরে ছাদে গিয়ে ভেজা অসম্ভব ।শত চক্ষু গিলে খাবে ।পুরুষদের চেয়ে বেহায়া দুনিয়াতে আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই । সারাক্ষণ খালি ছোক ছোক করে ।বাসে উঠলে অদৃশ্য ধাক্কায় মেয়েদের গায়ে হামলে পড়ে,রাস্তায় বেরোলে চোখ দিয়ে সারা শরীর চাটে । ব্যাতিক্রম একমাত্র আকাশ ।আকাশের মনটা আকাশের মত্ই বিশাল ।আকাশের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে মরতেও আমার ভয় নেই । জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম বৃষ্টি ছোঁব বলে ।ঠিক ছুঁতে পেলাম না।আকাশকে খুব মনে পড়ছে । ও এখন সিলেটে অফিসের কাজে । কি মনে করে হঠাত্ ওর রুমে গেলাম । ঠিক আগের মতোই আছে রুমটা ।ঠিক আগের মতোই অগোছালো ।জুতা জোড়া পড়ে আছে ঠিক দরজার সামনে । অগোছালো স্বভাবের এই ছেলেটা ঘর দোর সব এলোমেলো করে রাখত । আর বলত ,মায়া, এলোমেলো থাকার মধ্যেই জীবনের সৌন্দর্য ।আমি ইচ্ছে করে রুমটা গুছাই না ।অগোছালো থাকলে মনে হয় ও বুঝি আমার খুব কাছেই আছে ।
আগে ভীষণ অভিমান হতো ওর উপর । এতো পাগল কেন ও ? আর দশটা মানুষের মতো কেন নয় ?কেন এতো ভালোবাসে আমাকে ? মা বাবা মারা যাওয়ার পর ওদের বাসাতেই বেড়ে উঠেছি । পড়ালেখা শিখেছি এখন চাকরিও করছি । ও সব সময় আমার পাশে ছিল । আমাকে কখনো পর ভাবেনি । বাবা মার অমতে আমাকে বিয়ে করেছে ।
আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর ঠিক আগের দিন আমার অফিসিয়াল কাজে চট্রগ্রাম যেতে হলো ।পুরোটা দিন চলে গেলেও ও কোন ফোন দেয়নি । চিটাগাং আমাকে থাকতে দেয়া হয়েছে এক ডাক বাংলোতে । বারোটা বাজার ঠিক ১০ মিনিট আগে দরজাটা কেউ ভীষণ জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল ।আমি একটু ভয় পেলাম ।কী হোলে চোখ রেখে দেখি আকাশ । তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখি এক গাদা গিফট হাতে পাগলাটা দাঁড়ায়ে আছে ।

আমার নাম ঈশিতা ।
শোভনের সাথে আমার দেখা হয়েছিল একটা লোকাল বাসে ।কবি কবি চেহারার এ ছেলেটা দুই টাকার জন্য ঝগড়া করছিল কন্ডাক্টরের সাথে ।আমি যাচ্ছিলাম একটা আর্ট গ্যালারীতে । আমার এক বান্ধবীর সাথে ওখানে দেখা হবে ।গিয়ে দেখি বান্ধবী এখনো আসে নাই । ছবিগুলো দেখতে দেখতে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল । আমার ছবি !!! নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।অবাক চোখে অপলক তাকিয়ে আছি । পেছন থেকে একটা ভয়েস ভেসে এলো । ঘুরে দেখি বাসের সেই ছেলেটা ।কোকড়া চুল ঢুলু ঢুলু চোখের ছেলেটাই একেঁছে ছবিটা। জানাল আমাদের পাশের বাড়িতে থাকে ওরা । ছাদে দাঁড়িয়ে থাকত আমায় দেখব বলে । কিছুটা বাস্তবতা আর কিছুটা কল্পনায় তৈরি আমার ছবিটা ।
ওকে আমার খুব ভালো লেগেছিল ।একা একা বাসায় থাকি । একাকি জীবন আমার । ঠিক একা আমি তা বলা যাবে না । আমার একটা দুঃস্বপ্ন আছে । আমার নিত্য সঙ্গী । প্রতি রাতে চোখ বন্ধ করলেই দেখি দুটো হাত আমাকে ঝাপটে ধরেছে ।চারিদিকে শুধু অন্ধকার । আমি চিত্কার করছি ।
শোভনের সাথে বিয়েটা হয়েছিল কাজী অফিসে । বনানীতে নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলাম ।দুঃস্বপ্নটা এখনো আছে তবে তাকে নিয়েই বাঁচতে শিখেছি ।

আমার নাম জারা ।পুরান ঢাকার একটা ছোট ভাড়া বাসায় আমি থাকি। আমি একটা অফিসের রিসেপশনিস্ট হিসেবে কাজ করি ।ছোটবেলায় বাবা মা হারিয়ে আমি একা হয়ে যাই । দূর সম্পর্কের এক মামার বাসায় মানুষ হয়েছি । মামা ছিল একটা জাত পিশাচ । চৌদ্ধ বছর বয়স থেকেই আমাকে জোর করে তার শয্যা সঙ্গী বানিয়েছিল ।তার লালসার শিকার বানিয়েছিল । প্রতি রাতে তাদের রান্না ঘরে পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতাম ।কোন এক দুপুরে ফাঁকা বাসায় আবার ধর্ষিত হলাম । এবার মামার বড় ছেলের হাতে ।আমার চোখে এরপর থেকে সব পুরুষ ই লোভী ।ওদের কত হাতে পায়ে ধরেছি , কত বাপ ডেকেছি তাও ছাড়ে নি আমাকে ।ওরা ওদের কামনার আগুনে দগ্ধ করত আমায় । মামী বুঝে ও না বোঝার ভান করত ।স্বামী আর সন্তানের রাগ ঝাড়ত আমার উপর ।এমন কোন দিন আমার জীবনে আসেনি যেদিন মামীর হাতের মার খাইনি ।আমার হাতে পায়ে অসংখ্য পোড়া দাগ ।মামীর দেয়া গরম ছেঁকার চিহ্ন।কতবার মরতে চেয়েছি , সাহসের অভাবে পারিনি ।ঠিক করলাম মরার আগে ওদের ও মারব । প্রতিশোধ নিবো । ওই বাসায় থেকেই আমি বি এস সি পাশ করেছি ।মাস ছয়েক আগে মামার ভাতের সাথে মিশিয়ে দিলাম অল্প আর্সেনিক । মামার বড় ছেলে আকাশের ব্যবস্হা পরে করার সিদ্ধান্ত নিলাম ।ওই রাতেই মামার কিচ্ছা খতম ।কিছুদিন পর আমি একটা চাকরি পেয়ে যাই ।একদিন কড়াইয়ে তেল গরম করলাম ।মামী তেলাপোকা ভয় পায় ।মামীকে রান্না ঘরে পাঠিয়ে এক গাদা তেলাপোকা ছেড়ে দিলাম রান্না ঘরে ।কিছুক্ষণ পর একটা ভয়ংকর চিত্কার শুনে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি তেল পড়ে পুড়ে গেছে মামীর শরীরের প্রায় অর্ধেকটা ।
মাস দুয়েক আগে অল্প ভাড়ায় পুরান ঢাকায় এই বাসাটা পেলাম।কয়েকদিন থাকতেই টের পেলাম একটা কবি কবি চেহারার ছেলে প্রায় ই বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করে । একদিন সন্ধ্যায় কারেন্ট ছিল না ।মোমবাতি খুঁজছিলাম অন্ধকারে ।হঠাত্ করে ঝাপটে ধরে দুটা হাত ।ধস্তাধস্তি করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না । ততক্ষণে নিজের ভেতর আরেকটি শরীরের অস্তিত্ব ভীষণভাবে টের পাই । কারেন্ট এলে চিনতে পারি ছেলেটাকে ।কোকড়া চুল আর ঢুলু ঢুলু চোখ।পরে জেনেছিলাম ওর নাম শোভন ।
আকাশ আর শোভনকে খুন করার পরিকল্পনা করি আমি ।ঠান্ডা মাথায় খুন ।তারপর পুলিশে ধরা দিবো ।

একরাতেই খুন হলো শোভন ও আকাশ। বনানীতে নিজের বাসায় খুন হলো শোভন ।উত্তরায় আকাশ।খুনের প্যাটার্ন ও একরকম ।ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে পুরুষাঙ্গ ।তারপর কেটে দেয়া হয়েছে হাত ও পায়ের বড় আর্টারিগুলো ।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে দুজন ই।
খুনী মেয়েটা ধরা পড়েছে । পাশে পড়ে থাকা ব্লেডে ফিঙ্গারপ্রিন্টও মিলে গেছে ।মেয়েটার নাম মায়া ।একটা অফিসের রিসেপশনিস্ট । ।মেয়েটার মাথায় মে বি প্রবলেম । তার দাবী সে শোভনকে কখনো দেখেনি ।আর আকাশকে সে ভালোবাসে ।আবার ঘন্টাখানেক পরে দাবী করে তার নাম ঈশিতা । শোভন তার স্বামী।আবার কখনো দাবী করে তার নাম জারা । সে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে ওদের ।প্রতিশোধ নিয়েছে তার নারীত্বের অপমানের ।ডাক্তারদের ধারণা মেয়েটি মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজিজে ভুগছে ।
এই সময়ে ৮/২৬/২০১৩ ১১:০০:০০ PM 

No comments:

Post a Comment