Friday, March 17, 2017

ভালবাসার গন্ধ লিখেছেন- মুহাইমিনুল ইসলাম অভি

ভালবাসার গন্ধ
ভালবাসার গন্ধ
লিখেছেন- মুহাইমিনুল ইসলাম অভি

আজ অনেকদিন পর দেখা সুমীর সাথে। এখনো আগের মতোই আছে সুন্দর, স্নিগ্ধ। এইতো আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে, রাস্তার ওপাশেই। ভার্সিটিতে আমার ডিপার্টমেন্ট ছিলো এপারেল আর ওর ইয়ার্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সবাই যখন সবার সাথে নতুন বন্ধুত্ব পাতাতে মশগুল আমার তখন ত্রাহি অবস্থা। একে তো সবার সাথে মিশতে পারি না তার উপর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজনের আগমন, বিভিন্ন উচ্চারণের কথাবার্তা আমাকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তাই যখন ভার্সিটি লাইফের দুইমাস পার করার পরও অন্যদের বন্ধুর সংখ্যা দুই অঙ্ক ছুয়ে ফেলেছে আমার তখন কোন বন্ধু নাই। ক্লাসে যাই, ক্লাস করি, বাসায় ফিরে আসি। এইভাবেই চলছিলো। একদিন বারান্দা দিয়ে হাঁটছি তখন ইয়ার্নের রুম থেকে ডাক, এই এইদিকে আয় তো। যা বিটাক মোড় থেকে আমার জন্য এই নোটটা ফটোকপি করে এনে দে। আমিও আদেশ পালনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। শত হোক বড় আপু বলে কথা। ভার্সিটিতে সিনিয়রদের কথা অগ্রাহ্য করবে এমন সাহস কার আছে? তো আমিও ছুট দিলাম, নোট কপি করার জন্য।
আমার সিনিয়র যিনি আমাকে নোট ফটোকপি করতে দিয়েছিলেন তারই নাম সুমী। আমার অবশ্যই তাঁকে আপু বলে ডাকা উচিত কিন্তু কি করবো বলুন, আপু বলে ডাকতে তো মন সায় দেয় না ।
ঐদিন নোট কপি করে এনে দেওয়ার পর ও মিষ্টি করে হেসে যখন থ্যাংক ইউ বলেছিলো তখন আমাকে আর পায় কে? এরপর প্রতিদিনই ওর সাথে দেখা হতো। ওর টুকিটাকি কাজ করে দিতাম। ওর কাজ করতে আমার বেশ আনন্দই হতো। এভাবে দেখা হতে হতে আর কথাবার্তা বলতে বলতে ওর সাথে বেশ ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। ও একটা পারফিউম মাখতো, বেশ মিষ্টি একটা গন্ধ ছিলো ওটার। ক্লাস শেষ করে যখন বাসায় যাওয়া লাগতো তখন ওর জন্য রিকশা করে দেয়ার দায়িত্বটুকু আমার। ক্যাম্পাস থেকে মোড় পর্যন্ত হেঁটে আসার সময়টাই ছিলো আমার দিনের সবচেয়ে আনন্দময় উপলক্ষ। এসময় আমরা পাশাপাশি হাঁটতাম। সারাদিনের ব্যস্ততার সাথে ওর পারফিউমের গন্ধ মিলে এক বুনো গন্ধ তৈরি করতো। ভার্সিটি বন্ধের দিনও আমি এই বুনো গন্ধ খুঁজে বেড়াতাম, বন্ধের দিনেও ক্যাম্পাসে চলে যেতাম এই বুনো গন্ধটার টানে।
এভাবেই চলছিলো বেশ। দিন দিন ভালোবাসার গাছটা মনের মধ্যে আরো শেকড় গেড়ে বসলো। দিন দিন গাছের শাখা প্রশাখা বাড়তেই থাকলো। একদিন শুনলাম কোন এক ভাইয়ার সাথে নাকি ওর রিলেশন চলছে। ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। কথাচ্ছলে একদিন বলেই ফেললাম ঐ ভাইয়ার সাথে ওর রিলেশনের কথাটা। মুচকি হাসি দিয়ে ওর উত্তর তুই এটা এতোদিন পরে জানলি?
কিছুই ভালো লাগতো এরপর থেকে। সবসময় চাইতাম এড়িয়ে চলতে। দেখা হলেও খুব একটা কথা বলতাম না। একদিন ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলো ভাইয়ার সাথে। ভাইয়া ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। আমাদের ভার্সিটির টপারদের একজন। জি স্টারের সাথে অলরেডি চুক্তি হয়ে গেছে। পাশ করে বেরোলেই চাকরি। ভার্সিটিতে যতোদিন ছিলাম ততোদিনই ওর কথা মনে পড়লে মন খারাপ হয়ে যেতো ।
সময়ের চেয়ে বড় স্বার্থপর আর কেউ নেই। ও কারো পরোয়া করে না। স্বার্থপর সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমরাও স্বার্থপর হয়ে ওঠি, আর তখনই ভালোবাসা আবেগ একপাশে সরে যায়। আস্তে আস্তে আমিও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠি আর ভালোবাসা একপাশে সরে যায়। কিন্তু ওকে ভোলা কখনো সম্ভব ছিলো না কিংবা ভোলার চেষ্টাও করিনি হয়তো ।
আজ অনেকদিন পর ওকে দেখে বেশ আনন্দ লাগছিলো। কাছে যেতেই ঐ বুনো গন্ধটা ঝাপটা মারলো নাকে। আহ!কতদিন পর পরিচিত গন্ধটা আবার পেলাম।
সুমী আপু, কেমন আছো?
ঘুরে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, আরে তুই কেমন আছিস?
ভালো, এই স্কুলের সামনে দাড়িয়ে কি করছো?
আরে আমার মেয়েটা এই স্কুলে পড়ে, এ বছরই ভর্তি করালাম।
বেশ ভালো। তো কি করছো? ইন্জ্ঞিনিয়ারিং ফলাচ্ছো কোথাও না পুরোপুরি হাউজওয়াইফ।
নারে এখন পুরোপুরি হাউজওয়াইফ। চল, বাসায় যাই । তোর ভাইয়ার সাথে দেখা করবি। ওর দুপুরে আসার সময় হয়ে গেলো। পাঁচটা মিনিট অপেক্ষা কর। স্কুলটা এখনই ছুটি হয়ে যাবে।
আরে আপু আজকে যাওয়া তো অসম্ভব । কাজ আছে । তুমি তোমার বাসার ঠিকানা দিয়ে যাও আমি অবশ্যই তোমার বাসায় যাবো কথা দিলাম।
কি কাজ এতো? আচ্ছা এই নে ঠিকানা । বাসায় আসিস কিন্তু । যাই রে এখন । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ।
আচ্ছা ঠিক আছে । যাও, আসবো বাসায় ।
চলে যাচ্ছে সুমী । আমি এই দুপুরের চিড়বিড় রোদে ঠিকানা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি । একদম খারাপ লাগছে না । বরং ভালোই লাগছে । শুধু সুমীকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে, খুব ইচ্ছা করছে, সুমী তুমি জানো কি এখনো সময় পেলে আমি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে যাই তোমার বুনো গন্ধটার খোঁজে।

No comments:

Post a Comment