Friday, March 17, 2017

বৃষ্টির বুকের ভিতর

১.
বৃষ্টির বুকের ভিতর টা হঠাত করে কেপে উঠলো। আজকে নতুন না, এরকম প্রায় প্রতি রাতেই হয়। পাশ ফিরে রাতুলের মুখটা একবার দেখল। কতটা ভালবাসে ওকে রাতুল। কি অবুঝ নিস্পাপ শিশুর মত লাগছে ওকে। রাতুলের মুখটা দেখেই মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল বৃষ্টির। এই মানুষটাকে কত কষ্ট দেয় ও। একটুও প্রতিবাদ নেই। কত পার্থক্য রাতুলের সাথে ওই মানুষটার যাকে সে হারিয়েছে আরো একটা বছর আগে। কাল ওদের বিবাহ বার্ষিকী। এই এক বছর এ কিছুই করেনি এই মানুষটার জন্য। এসব ভাবতে ভাবতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে অন্য এক জগতে।

২.
কলেজ লাইফ টা আসলেই খুব সুন্দর। তার উপর ফাইয়াজ এর মত প্রেমিক থাকলে সবকিছুই অন্য রকম লাগে। এক মাস হল সম্পর্কটা হয়েছে। ও অনেক কেয়ার করে বৃষ্টির।বৃষ্টি যা বলে তাই। ওর কথার বাইরে যায় না। একটু রাগ করলে সুন্দর করে রাগ ভাঙায়।  এভাবে দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেল।এর মাঝে ফাইয়াজ কে ও পাগলের মত ভালবাসে ফেলেছে। ওকে একটুকু চোখের আরাল হতে দিতে ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে সারাদিন ওর পাশে থাকতে। ওকে ওর পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াতে। ও কোন মেয়ের সাথে কথা বললে মনে হয় ও হারিয়ে ফেলছে ফাইয়াজকে। একটু কথা না হলে দম বন্ধ হয়ে আসে ওর।

৩.
ফাইয়াজ এই বছর ভার্সিটি শেষ করে সেখানেই লেকচারার হিসেবে চাকরি পেয়েছে। একদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় গিয়ে দেখে ওদের পাসের বাসায় নতুন এসেছে একটা মেয়ে এসেছে। ওর বাবা মা আর ছোট একটা ভাই। মেয়েটাকে এক দেখাতেই প্রেমে পরে যায় সে। মাঝে মাঝে ভার্সিটি থেকে আসার সময় দেখত সে। সে খেয়াল করত মেয়েটাও ওকে মনে হয় পছন্দ করে। একদিন ছোট ভাইটাকে ওর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলল এটা তোমার আপুকে দিও। দুইদিন পর ফাইয়াজ এর মোবাইল এ একটা ফোন এল।বৃষ্টির ফোন...... এভাবেই দেখতে দেখতে সম্পরক টা হয়ে গেল। বৃষ্টি মেয়েটা খুব ভাল। কোন প্যাঁচ নাই মনে। খুব সহজ সরল। কিন্তু একটু বেশিই বোকা। আর সব কিছুতে বেশি সিরিয়াস।

৪ .
ভালই চলছিল সব। এর মধ্যে বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। ছেলে ডাক্তার। বৃষ্টি ফাইয়াজ কে বলল। ফাইয়াজ শুনেও না শুনার ভান করল। বৃষ্টি বলল তুমি তোমার বাসায় বল না প্লিজ। বৃষ্টি আমি এখন ই বিয়ে করতে চাই না,তুমি তোমার বাবা মার কথা শুনো। বৃষ্টি অনেক বুঝাতে চাইল। কোনভাবেই সে বুঝাতে পারল না ফাইয়াজ কে।

৫.
রাতুলের সাথে বৃষ্টির বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের রাতে রাতুলকে ওর সব বলে বৃষ্টি। সাথে গর গর করে বলে গেল ওর দেয়া চিঠি, ছবি কোনটাই ও নষ্ট করবে না। ও ভেবেছিল রাতুল খুব রেগে যাবে। রাতুল ওকে বলে যদি ওকে কখন ভুলতে পার তবে নষ্ট কর। আমি তোমার হাত ছারব না কখনো। সেই থেকে শুরু ওর সংসার জীবন। ব্যস্ততার ভিরে সে তার এই জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছে। আর এই দেবতার মত মানুষটা এত ভাল। ওকে এত ভালবাসা দিয়েছে যে ওর এখন আর খুব একটা মনে পরে না ফাইয়াজ আর কথা। এই মানুষটার সব কিছুই ওর ভাল লাগে। মানুষটার হাসি, কথা বলা, মানুষটার কবিতা, চলাফেরা। সব কিছু ভাল লাগে আজ বৃষ্টির। এই মানুষটার ভালবাসায় সে আজ ভুলেই গিয়েছে এক বছর আগের সেই ছেলেটিকে যে একদিন ছেড়ে দিয়েছিল বৃষ্টির হাত। তবে কি এই মানুষটাকে ভালবেসে ফেলেছে বৃষ্টি? হ্যা, তাই সে সত্তিই ভালবাসে এই মানুষটিকে। প্রায় কয়েকদিন ধরেই ওর বুকটা কেপে ওঠে, এই মানুষটাকে কষ্ট দেয় এই ভেবে। এই মানুষটাকে বলা হয়নি যে সে তাকে অনেক ভালবাসে। সারা রাত ঘুমায় না বৃষ্টি। রাতুল প্রতিদিনের মত ওর হসপিটালে চলে যায় সকালে ওঠে। একটু পর ওর ফোনে একটা মেসেজ বিছানার পাসের ড্রয়ের টা খুলো। বৃষ্টি খুলেই পেল একটা হিরার আংটি,আর এক গুচ্ছ গোলাপ। আর একটা কাগজে লিখা- অনেক ভালবাসি তাই বিবাহ বার্ষিকীতে ফুলগুলো দিয়েছি, জানি তুমি খুব রাগ করেছ। জানি তুমি আমাকে ভালবাস না। তবুও আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। সরি...

বৃষ্টি ওই কাগজ টা বুকে জরিয়ে পাগলের মত কাঁদতে লাগল।

৬.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে রাতুল এখন ই চলে আসবে। বৃষ্টি একটা নিল শাড়ি পরল। রাতুলের প্রিয় রং। আলমারি থেকে বের করল সেই পুরনো জিনিস গুলো। কি আশ্চর্য এখন আগের মত আর ওর চোখের কোনে পানি আসছে না। কষ্টে বুকের ভিতর কোন ব্যথাও হচ্ছে না। রাতুল চলে এসেছে। দৌরে গিয়ে দরজা খুলল বৃষ্টি। রাতুল অবাক। বৃষ্টি রাতুলের হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেল। রাতুল বলল কি করছ? এগুলো কি করবে? বৃষ্টি ছাদে গিয়ে কেরোসিন আর আগুন দিয়ে পুরিয়ে দিল তার সব পুরনো সৃতি। সে রাতুল কে জরিয়ে ধরে বল্ল।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি। আমাকে মাফ কর। খুশিতে রাতুল নিজের কান্না আটকাতে পারল না। সেও জরিয়ে ধরল বৃষ্টিকে। সে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু শুনছে আজ বৃষ্টির সব কথা।

No comments:

Post a Comment