Thursday, January 21, 2016

Karaoke

http://hack-tech4u.blogspot.com/2012/07/video-tutorial-dont-miss-it.html

It's a game

বন বন পৃথিবীটা ঘুরছে ঘুরছে শুধু,
চলছে নানান রঙের খেলা
ট্র্যাপিজের সরু তারে হয়তো দুলছে কেউ
রাজনীতি, পাশা কারো জনসমুদ্রে ঢেউ
লক্ষ্য তো একটাই, ভাগ্য মুঠোতে চাই
ছুটছে সবাই সারা বেলা।
জিতে গেলে হিপ হিপ হুররে শুনবে তুমি
হেরে গেলেই শেম শেম
ইটস এ গেম, ইটস এ গেম।।


বিজয়ীরা বরাবর ভগবান এখানেতে,
পরাজিতরাই পাপী এখানে
রাম যদি হেরে যেত, রামায়ন লেখা হত
রাবন দেবতা হত সেখানে
কেন পথ নিয়ে মাথাব্যাথা?
কেন পথ নিয়ে মাথা ব্যাথা, জেতাটাই বড় কথা
হেরে গেলেই শেম শেম
ইটস এ গেম, ইটস এ গেম।।


ভালোবাসা আসলেতে একটা চুক্তি জেনো,
অণুভূতি টনুভূতি মিথ্যে
কেউ দেবে নিরাপত্তা, কেউ বিশ্বাস
আসলে সবাই চায় জিততে
ভালোবাসা!
ভালবাসা আসলেতে পিটুইটারীর খেলা
আমরা বোকারা বলি প্রেম।
ইটস এ গেম, ইটস এ গেম।।

Monday, January 18, 2016

How To Use Free Whatsapp On
your Grameenphone Sim.
জিপ্রিতে ফ্রী Whatsapp চালানোর
নিয়ম।।।।।.
Code :
*5000*0*4*3#
ডায়াল করে আপনার
ইন্টারনেট প্যাক বন্ধ করুন।।।পরে!
Code :
*5000*55#
ডায়াল করে Easy নেট চালু করেন ।।।।পরে
ইসি
নেট থেকে ম্যাসেজ এসে ইজি নেট চালু
হবে।।তারপর মোবাইল Restart করুন এবং
ফ্রি Whatsapp Calan””
Plz Plz Vist My Site TopTuneBD.Com

Sunday, January 10, 2016

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন,
শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন,
জীবন প্রসব করে চলাই জীবন,
শুধু যোগ-বিয়োগের খেলাই জীবন।
শুধু সূর্যের পানে দেখাই জীবন,
জীবনকে ভোগ করে একাই জীবন ।
একই কক্ষপথে ঘোরাই জীবন,
স্বপনের সমাধি খোঁড়াই জীবন,
মনের গোপন ঘরে যে শ্বাপদ ঘর করে,
তাকেই লালন করে চলাই জীবন।
ফুটপাথে বেওয়ারিশ শিশুরা জীবন,
রাম, ইসলাম আর যিশুরা জীবন ।।
ওষুধের বিষপান করাই জীবন,
চিকিৎসাহীন হয়ে মরাই জীবন।
যে মেয়েটা রোজ রাতে, বদলায় হাতে হাতে,
তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন।
প্রতিবাদ প্রতিরোধে নামাই জীবন,
লক্ষ্যে পৌঁছে তবে থামাই জীবন ।।
স্বপ্নের বেচাকেনা করাই জীবন,
দেয়ালে ঠেকলে পিঠ লড়াই জীবন,
প্রতিদিন ঘরে ফিরে,
অনেক হিসেব করে,
‘এ জীবন চাই না’, তা বলাই জীবন।
এই বেশ ভাল আছি! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
এই বেশ ভাল আছি ! এই বেশ ভাল আছি,
কর্ম কাজ নেই, গাড়ি ঘোড়া কিছু নেই,
অফিস-কাচারী নেই, হাজিরা-কামাই নেই,
শব্দ বা পরিবেশ দূষণ বালাই নেই,
সময় দেই না বলে তেলে বেগুনে জ্বলে –
গিন্নীর রাগ নেই, টেলিফোনে ডাক নেই,
শহরেতে কারফিউ, লোকজন কেউ নেই,
এক-চার-চার ধারা, ফুটপাথে থাকে যারা,
কেউ কোথ্থাও নেই, নেই নেই কিছু নেই;
তবুও তো আছে কিছু বলতে যা বাধা নেই–
দু’নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে,
ঐ ধর্মের বাঘ হেসে, আবার উঠোনে এসে,
আশ্রয় চেয়ে যায় মানুষেরই কাছে!
তাই, ভয় আছে দু’নয়নে ভয় আছে,
মনে সংশয় আছে।
ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ,
ভাঙা কাঁচ, ভাঙা মন যায় না,
রাম আছে, শ্যাম আছে, কোরান-ইসলাম আছে,
রক্তলোলুপ কিছু হায়েনা।।
এদেশটা ফাঁকা আছে, বিদেশের টাকা আছে,
ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে।
তাই, ভয় আছে দু’নয়নে ভয় আছে,
মনে সংশয় আছে।
এই বেশ ভাল আছি!
ভাবার সময় আছে, তবুও ভাবনা নেই,
পার্কে তে ঘোরা নেই, সিনেমায় যাওয়া নেই,
উঠতি যুবকদের যাতনার সীমা নেই,
শিহরণ আনে প্রেমে এমন বাতাস নেই,
যুবতীর কটাক্ষ চিঁড়ে দেয় এ বক্ষ, হায়রে!
এমন দিনে সেই অবকাশ নেই,
চাল নেই, ডাল নেই, পয়সার দাম নেই,
তবুও টিভিস্ক্রীনে খেলার বিরাম নেই।
নেই নেই কিছু নেই, তবুও তো আছে কিছু, বলতে যা বাধা নেই –
যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
যখন সময় থমকে দাঁড়ায়
নিরাশার পাখি দু’হাত বাড়ায়
খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ
কী আর করে তখন,
স্বপ্ন দেখে মন।
যখন আমার গানের পাখি
শুধু আমাকেই দিয়ে ফাঁকি
সোনার শিকলে ধরা দেয় গিয়ে
আমি শূন্যতা ঢাকি
যখন এঘরে ফেরে না সে পাখি,
নিস্ফল হয় শত ডাকাডাকি
যখন এ মনে প্রশ্নের ঝড়
ভেঙ্গে দেয় যুক্তির খেলাঘর,
তখন বাতাস অন্য কোথাও
শোনায় তার উত্তর।
যখন আমার ক্লান্ত চরণ
অবিরত বুকে রক্তক্ষরণ,
খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ ….
চোর ! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
ভীড় করে ইমারত, আকাশটা ঢেকে দিয়ে-
চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ।
ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে-
গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ।
এরপর চুরি গেলে বাবুদের ব্রিফকেস
অথবা গৃহিণীদের সোনার নেকলেস-
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে,
চিৎকার করে বলে—
চোর ! চোর !! চোর !!!
প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা,
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা।
কিছুটা মূল্য পেয়ে ভাবি বুঝি শোধ-বোধ,
ন্যায় নীতি ত্যাগ করে-
মানুষ আপস করে,
চুরি গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ।
এরপর কোনো রাতে, চাকরটা অজ্ঞাতে,
সামান্য টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতে নাতে-
প্রতিদিন চুরি যায় দিন বদলের আশা,
প্রতিদিন চুরি যায় আমাদের ভালোবাসা।
জীবনী শক্তি চুরি গিয়ে – আসে নিরাশা।
সংঘাত, প্রতিঘাত দেয়ালে দেয়ালে আঁকা,
তবু চুরি যায় প্রতিবাদের ভাষা।
কখনো বাজারে গেলে,
দোকানী কিশোর ছেলে কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে,
ওজনেতে কম দিলে-
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে
চিৎকার করে বলে—
চোর ! চোর !! চোর !!!
সারে জাঁহা সে আচ্ছা ! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
আমার পরিচয়– বেকার যুবক আমি,
সম্বল একটাই- দৈন্য।
ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে,
পকেটের ভাঁড়ারটা শূন্য।
যেদিকেই তাকাই না দেখি জন-অরণ্য
সে অরণ্যেই দেখি মানুষেরা বন্য,
বধূকে পোড়ানো হয়, অধর্ম জয়ী হয়-
মানুষের রক্তে দিনলিপি সই হয়।
হাসপাতালের বেডে টি.বি. রোগীর সাথে –
খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা,
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
লাঞ্ছনা গঞ্জনা মাখা অভিযোজনে-
রপ্ত করেছি নিজেকে,
অসৎ হবার বহু বহু প্রচেষ্টায়,
ব্যর্থ করেছি নিজেকে।
চাকরির সন্ধানে শুকতলা ক্ষয়ে যায়,
গঙ্গার জল তবু একইভাবে বয়ে যায়,
ঘুষ, ঘুষের এক ঘুষ-ঘুষে জ্বরে,
গোটা দেশ চিৎকার করে ডাকে ‘ডাক্তার’,
ডাক্তার উড়ে আসে ঋণের ওষুধ নিয়ে,
গঙ্গার পূজো হয় গঙ্গার জল দিয়ে।
বছরের অন্তে, বাজেটের যন্ত্রে –
পিষে দেই জীবনটা গচ্চা।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
প্রার্থীর যোগ্যতা অথবা অভিজ্ঞতা,
এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দীনতা,
কোনো কিছুই কোনো কিছুকেই ঢাকে না।
আর, ‘লোক’ অথবা ‘বিধান’-
যে দিকেই তাকান,
রাজনীতিক হতে যোগ্যতা লাগে না।
হাজার প্রতিশ্রুতি বাতাসেই বয়ে যায়,
‘চলছে না, চলবে না’-
তবু তা ই হয়ে যায়।
কত শত শয়তান, হতে চায় ভগবান,
“আল্লাহ না বড় রাম?”- এই চলে অবিরাম।
খুনোখুনি লাঠালাঠি, অবিরাম অনুক্ষণ,
এদিকে তোমার-আমার পেটেতে ছুঁচোর ডন।
সমাজবিরোধী কিছু, করে বলে মাথা উঁচু-
“সমাজবাদের পথই সাচ্চা”।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
শুধু বিষ দাও , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
শুধু বিষ দাও অমৃত চাইনা।
অমরত্বের লোভ করুক বিক্ষোভ,
জীবনকে যদি দাও নীল বিষাক্ত ছোপ
থাকবে না থাকবে না ক্ষোভ
আমার মৃতদেহে ঝুলবে নোটিসবোর্ড-
“কর্তৃপক্ষ দায়ী না” !
ধ্বংসের ব্যবসায় মগ্ন যে সভ্যতা, তার অমৃত চাই না,
বিভেদ মন্ত্রে দীক্ষিত যে সভ্যতা, তার অমৃত চাইনা,
সবুজ পৃথিবীটাকে যন্ত্রের কালো হাতে শ্বাসরোধ করে যে প্রগতি-
পরিসংখ্যানে মাপে জীবনের ক্ষয়ক্ষতি,
এমন প্রগতি চাইনা।
তুমি কি আমায় ভালবাস ? , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
হেই! তুমি কি আমায় ভালবাস?
যদি না বাসো, তবে পরোয়া করি না।।
আমি সূর্যের থেকে ভালোবাসা নিয়ে
রাঙাবো হৃদয়, তার রঙ দিয়ে;
পোশাকি প্রেমের প্রয়োজন বোধ করি না।
আমি তোমার জন্য
সস্তা প্রেমের নাটুকে নায়ক পারবোনা,
হতে পারবো না।
আমি তোমার জন্য
কোনো কুমারের ধার করা গান গেয়ে –
গায়ক পারবোনা হতে পারবো না।
যখন আমার ঘরেতে আঁধার
নেই একফোঁটা কেরোসিন,
পাওনাদারের অভিশাপ শুনে
জেরবার হয় বুড়ো বাপ,
আমিতো তখন পারবোনা খেতে –
চাইনিজ বারে চাওমিন, হে !
হেই! তুমি কি আমায় ঘৃণা করো?
যদি ঘৃণা করো, তবে পরোয়া করি না।।
আহা বয়ে গেছে সেই ভালোবাসা ধরে,
বহুকে হারানো স্বপ্নকে ছেড়ে-
সবাইতো আর নিজেকে বেচতে পারেনা!
আমি তোমার দু’পায়ে
আমার চেতনা-স্বাধীনতা সঁপে
পারবো না দিতে পারবো না।
আমি তোমার জন্য সবকিছু ছেড়ে-
তোমার আঁচলে মুখ ঢাকা দিতে পারবো না।
আমার চলার পথের বাঁকেতে
পড়ে জীবনের দাম।।
যেসব মানুষ সেই দাম খোঁজে
সবকিছু জেনে সবকিছু বুঝে
মুছে দাও যদি আঁচলেতে সেইসব মানুষের ঘাম;
হেই, তবেই আমায় পেতে পারো।
যদি তাই পারো,
তবে পরোয়া করি না।।
জেনো তোমার জন্য ধুলোমাখা পথ
অপলকে চেয়ে জীবনের রথ –
সবকিছু ছেড়ে তুমি কি আসতে পারোনা?
বুড়ো ভাম, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
কেউ বলে বুড়ো ভাম, কেউ বলে পাঁজি !
কেউ বলে, “এইবার ব্যাটা মরলেই বাঁচি;
“ঘরে গুঞ্জন, বরাদ্দ ভ্রূকুঞ্চন,
দেখলেই মুছে যায় ছেলের হাসি।
অপরাধ একটাই জেনে রাখো সব্বাই-
আমার বয়স হল আশি !
বাসে ট্রামে ওঠা দায়,বসলে লেডিস সীটে –
মামণিরা মনে মনে বিরক্ত হয় !
কেউ বা দেয় আওয়াজ- বুড়োটা ধান্দাবাজ,
মেয়েদের কোলে বসে যাচ্ছে মজায় !
বৃথা হয় প্রতিবাদ, বয়সটা বাঁধ সাধে
ছানিপড়া দু’টি চোখ পলক নামায়।
সভ্য এই পৃথিবী অসভ্য দংশনে-
ছিঁড়ে ফেলে আমাদের এবং আমায়।
পরিণতি একই জেনে, তবু তারই অবকাশে
“ঘুঁটে যায় পুড়ে তবু গোবর হাসে!”
যৌবন যার নাম, কাল সেতো বুড়ো ভাম
আজকের ফুলমালা কালকেই বাসি।
পরিণতি একটাই, জেনে রেখো সব্বাই-
সবার বয়স হবে আশি।
কলকাতা, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
তিনশ’ বছর বুকে নিয়ে পথ চলে অম্লান মুখে,
ও কলকাতা !
চাণক্যের/চার্নকের তুমি মানসী গো, জীবনানন্দের প্রিয়া;
কল্লোলিনী, তিলোত্তমা, তুমি সকলের হিয়া।
তবুও যৌবন ধুঁকে ধুঁকে মরে তোমার জীর্ণ বুকে।
স্বপ্নমাখা শহর যেন ডাকে হাতছানি দিয়ে,
ভিক্টোরিয়া, শহীদ মিনার, প্ল্যানেটরিয়াম নিয়ে।
তবুও ফুটপাথে মেলা ভিখারীর, দেখেও দেখে না লোকে।
কত গুণীজন, বিরাট প্রাণ তোমার ছবি আঁকে,
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন আরো কত ভুলবে কাকে ?
তবুও ঋত্বিক, সুকান্ত মরে জানতে পারেনা লোকে।
কতনা উন্মাদনা ক্রিকেট আর ফুটবল খেলায়,
রদ্যাঁর ভাস্কর্য, ফিদা হুসেনের চিত্রকলায়।
তবুও খেলার মাঠে অকারণে মরে কত লোকে।
মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেই জন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেই জন,
বড় হয়ে গাড়িঘোড়া চড়বে সে জন!
মুছে যাবে অভাব, সব অনটন,
হবে রাশি রাশি হাসি মাখা তোমার জীবন।
বাংলা না ইংরেজি? সে প্রশ্ন থাক থাক
সিলেবাস দেখে প্রাণ- ‘বাপ বাপ’ ছাড়ে ডাক !
বিজ্ঞান দু’প্রকার, আটখানা বই তার,
ভূগোলটা গোলমেলে, গোটা দুই বই তার।
ইতিহাসে জানা বেশি, বই তার থেকে বেশি
বইয়ের ভারেতে বুঝি ঢিলে হয়ে যাবে পেশী।
অঙ্কটা আতঙ্ক, টিউটার নিয়ে নিই,
সে যদি স্কুলেরই হয় তবে ফ্যান্টাস্টিক !
কতশত আঁকা আছে, আঁকিয়ে কে ডাকা আছে,
কর্ম শিক্ষে আছে, সেলাই ভিক্ষে আছে,
মাথা বন বন পিতা হেসে কন, মাতা হেসে কন-
কী ???
বাচ্চা হবেই শুনে চারিদিকে খোঁজ খোঁজ-
কোথা ভাল স্কুল আছে, আলোচনা রোজ রোজ।
কারা ক’টা ফর্ম দেবে, কারা ক’টা ছেলে নেবে
প্রোপার এডুকেশন, মোটামোটা ডোনেশন-
ক্ষতি নেই যদি দাও ওভার-ওভারডোজ !
রাত জেগে বাবাদের লাইন দিয়ে ফর্ম তোলা,
ডোনেশন দিলে পরে পিছন দরজা খোলা।
ছেলে কি প্রতিভাবান ?
হক কথা শুনে যান,
প্রতিভা ট্রতিভা সব নাথিং বাট ফান
রাম নাম মনে করে জপে যান বার বার-
একটি ছোট্ট কথা ‘ম্যানিপুলেশান’!
এরপর পড়ে থাকে ভর্তির পরীক্ষা;
ছেলে নয়, মা-বাবার অগ্নিপরীক্ষা !
চুকে জীবনের দাম্পত্যের সুখ
গ্রামদেশে বিয়ে করা বাবা আনে হাতে ধরা-
মায়েদের জন্যে ইংরেজি ওয়ার্ডবুক !
তিনজনে শিক্ষিত হতে চায় রাতারাতি
শিক্ষাই সত্যি তলোয়ার প্রাণঘাতী !
বাচ্চার হয়ে গেলে মা-বাবার প্রতীক্ষা,
কবে স্কুলটাকে নিতে তাঁদের পরীক্ষা !
সব কিছু ভালভাবে যদি শেষ হয়ে যায়,
বাবা গর্বিত হয়ে মুখ দেখে আয়নায়
বাচ্চাটা আয়নাতে দেখে শুধু আনমনে
হয়ত কোনো শপথ করে সে মনে মনে
শিক্ষার আয়নায় সমাজকে চেনা যায়
সমাজ কি দেখে মুখ শিশুদের আয়নায় ?
যে শিশু জন্ম নিল শিক্ষার বহু দূরে
শিক্ষা কি আলো দেয় তার কালো মুখ ভরে?
কে বলবে তার কানে সুর আর গানে গানে
আশার বাণী, প্রবাদ কথন, মধুর ভাষণ ?
শুনবনা গান, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
শুনবনা গান, গান শুনবনা !
গান গেয়ে, গান শুনে ভরেনা তো পেট;
খালি পেটে হাঁটাচলা করে মাথা হেঁট।
গান যদি খাওয়া যেত, তবে বড় ভাল হত-
রেশনের লাইনেতে ভীড় যেত কমে,
দোকান বাজার উঠে যেত প্রত্থমে !
তা যখন হয়না, কিছু বদলায়না,
কেন শুনব- ‘একঘেঁয়ে ঘ্যান ঘ্যান ?’
একঘেঁয়ে ঘ্যান ঘ্যান, বিরহ প্রেমের গান –
আমি তুমি, তুমি আমি আমি তুমি! –
পারমুটেশ্যান আর কম্বিনেশ্যান।
অথবা, “শোষকদের কালো হাত ভেঙে দাও”-
এই বলে চিৎকার এটাও তো গান।
শোষকের ক’টা হাত, ক’টা মাথা, ক’টা দাঁত,
এর কোনো উত্তরও দেয়না যে গান।
উত্তর একটাই, ‘নিজে খুঁজে নাও’!
নিজে যদি খুঁজবো, নিজেদেরই বুঝব।
প্রয়োজন নেই, গান শুনবনা।
চারিদিকে আতঙ্ক, বম বম !
ভয়ে আধখানা হয় দিল্লী কা বিল্লি।
লাগেনা কোনো কম্মে।
ওষুধের সাথে মানুষের সহবাস,
প্রশাসন তবু দিয়ে আশ্বাস।
পেনশন দিয়ে ছোট মেয়েটার বিয়ে
মাস্টার গেম আর মাস্টার প্লাস।
ধর্ম নেমেছে পথে রাজনীতি কী ভীষণ,
মানুষ মুখোশে মোড়া, সবাই তো বিভীষণ
একটাই সান্তনা বসে বসে দিন গোনা
না নানা গুনবোনা, দিন।
হেই,
তুমি চুপ করে বসে ভাবো কার কথা, প্রেম?
আরে মোটা মানিব্যাগ দেখে
তোমাকে সাইডে রেখে সোজা দৌড়বে প্রেম।
ইট ,কাঠ, পাথরেতে ঢাকা-
এই শহরেতে হৃদয়ের কারবার ?
লোকসান বারবার !
বেকার যুবকদের সান্তনা একটাই,
চাকরির বদলাতে আছে প্রেম
রুজির ঠিকানাহীন আঁকাবাঁকা পথ ধরে,
আশাকে বাঁচিয়ে রাখা অনেক যত্ন করে,
তারপর একদিন পথচলা সারা হলে-
ঝুলি হাতড়িয়ে দেখা নেই প্রেম।
অনেক অনেক দাম, জীবন’ যে তার নাম,
তারই পথের বাঁকে হারিয়েছে প্রেম।
প্রেম তাই খাঁটি সোনা এ কথা অনেক শোনা,
বসে বসে শুধু বসে মিথ্যার জাল বোনা
নানা না বুনবোনা, জাল।
নীলাঞ্জনা , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
লাল ফিতে সাদা মোজা স্কু-স্কুল ইউনিফর্ম
ন’টার সাইরেন সংকেত; সিলেবাসে মনোযোগ কম
পড়া ফেলে একছুট– ছুটে রাস্তার মোড়ে,
দেখে — সাইরেন মিস করা দোকানীটা দেয় ঘড়িতে দম
এরপর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া
স্কুল বাসে করে তার দ্রুত চলে যাওয়া
এর পর বিষণ্ন দিন বাজে না মনোবীণ
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন
হাজার কবিতা বেকার সবইতা।
তার কথা কেউ বলেনা—
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা। ।
সন্ধ্যা ঘনাত যখন পাড়ায় পাড়ায়,
রক থাকত ভরে কিছু বখাটে ছোঁড়ায়.
হিন্দী গানের কলি, সদ্য শেখা গালাগালি
একঘেয়ে হয়ে যেত সময় সময়
তখন উদাস মন ভোলে মনোরঞ্জন
দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনতে চায়
তখন নীলাঞ্জনা প্রেমিকের কল্পনা –
ও মনের গভীরতা জানতে চায়
যখন খোলা চুলে হয়ত মনের ভুলে
তাকাত সে অবহেলে দু’চোখ মেলে ।
অঙ্কের খাতা ভরা থাকত আঁকায়,
তার ছবি তার নাম পাতায় পাতায়
হাজার অনুষ্ঠান, প্রভাত ফেরীর গান
মন দিন গোনে এই দিনের আশায়,
রাত জেগে নাটকের মহড়ায়,
চঞ্চল মন শুধু সে ক্ষণের প্রতীক্ষায়।
রাত্রির আঙ্গিনায়
যদি খোলা জানালায়
একবার একবার যদি সে দাঁড়ায় !
বোঝেনি অবুঝ মন,
নীলাঞ্জনা তখন-
নিজেতে ছিল মগন প্রাণপণ ।

Nachiketa ambition

অ্যাম্বিশান, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার,
কেউ হতে চায় ব্যবসায়ী, কেউ বা ব্যারিস্টার,
কেউ চায় বেচতে রূপোয়- রূপের বাহার, চুলের ফ্যাশান।
আমি ভবঘুরেই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !
ঠকানোই মূল মন্ত্র, আজকের সব পেশাতে,
পিছপা নয় বিধাতাও, তেলেতে জল মেশাতে।
ডাক্তার ভুলছে শপথ, ঘুষ খায় ইঞ্জিনিয়ার,
আইনের ব্যবচ্ছেদে, ডাক্তার সাজে মোক্তার।
যদি চাও সফলতা, মেনে নাও এই সিস্টেম-
ফেলে দাও স্রোতের মুখে- আদর্শ, বিবেক ও প্রেম।
এ সমাজ মানবে তোমায়, গাইবে তোমারই জয়গান।
আমি কোনে বাউল হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !
বড় যদি চাইবে হতে, সেখানেও লোক ঠকানো।
‘সৎ ভাবে বাঁচো বাঁচাও’, একথা লোক ভোলানো।
সৎ ভাবে যাবে বাঁচা, বড় হওয়া যাবে নাকো।
শুধু কথা না শুনে, বড়দের দেখেই শেখ।
এ সবই থাক তোমাদের, আমি বড় চাই না হতে,
ধুলো মাখা পথই আমার, তুমি চড় জয়রথে।
শত লাঞ্ছণা দিও, করো আমায় অসম্মান।
তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !
আমি ভবঘুরেই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !
আমি কোনে বাউল হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !!
তবু আমি বোকাই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশান !!!!

একদিন ঝড় থেমে যাবে, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
একদিন ঝড় থেমে যাবে,
পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
বসতি আবার উঠবে গড়ে,
আকাশ আলোয় আবার উঠবে ভরে,
জীর্ণ মতবাদ সব ইতিহাস হবে।
পৃথিবী আবার শান্ত হবে
আজ অশান্ত দিন,
বেঁচে থাকা আশা ক্ষীণ;
তবু পথ চাওয়া অবিরাম।
ধূসর আকাশ আজ,
কাল নেবে বধূ সাজ
এই বিশ্বাসেই সংগ্রাম।
একঘেয়ে একটানা অভ্যেসে তাই-
গান গেয়ে স্বপ্ন বেচে যাই
প্রশ্নেরা তবু শুধোয়- কবে,
পৃথিবী আবার শান্ত হবে ?
দু’চোখ আষাঢ় হায়!
খরা আজ চেতনায়,
প্রত্যাশা ফানুসে বদলায়।
ভাষা আর সেতু নয়,
ভাষা আজ অন্তরায়
কাব্যেরা কাঁদে যন্ত্রণায়।
এই শরশয্যায় আজ অর্জুন,
নেভাতে এসে তৃষার আগুন –
বহুপ্রাণ যদি মিশে যায়, তবে-
পৃথিবী আবার শান্ত হবে।
কে যায় ! , অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
দিনকে রাত করে, রাত্রিকে দিন,
সময় তবলায় বাঁজিয়ে তা ধিন
কৌমার্য হরণ ফুলশয্যায়-
তবুও কনে দেখা মেঘে সন্ধ্যায়।
দেখা বা না দেখায় মিশে একাকার
রেসের মাঠে কভু মহা শনিবার
পঁচিশে বৈশাখ সৃষ্টি মিছিলে
শ্যাম্পেন সূধা আকন্ঠ গিলে
আতলামি সম্বল কথা মালায়,
ধরণী দ্বিধা হয় সে লজ্জায় !
আইগুম বাইগুম তাড়াতাড়ি
যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি।
শ্বশুরবাড়ি ভারি মজা,
শ্বশুর ব্যাটার মাথায় বোঝা।
পণের টাকা যোগাড় করে
শুধছে সে ধার বছর ধরে।
গোঁদের ওপর বিষের ফোঁড়া,
জামাই ষষ্ঠী’র ইলিশজোড়া
তবু শ্বশুর মনটা কালো
যদু আমার মাস্টার ভালো
ছাত্র পড়ায় কড়া শাষণ
শেখায় সে নীতিকথার ভাষণ।
চুরি বা শ্রম চুরি যাহোক এবার
কোনটা জোচ্চুরি আসল ব্যাপার !
সমাজতন্ত্রের ছাতার তলায়-
ওই দম্পতি কেন বাসর সাজায় ?
না, তবুও ভালবাসা,
না, সত্যিকারের আশা
শুধু তোমাকে ভালবাসি
শুধু তোমার মধুর হাসি
পুরনো একথাও গানের মত
চেনা চেনা স্লোগানের মত
বিশ্বাসহীনতায় কে বাঁচতে চায়
বিশ্বাস বোঝায় যেন কন্যাদায় .
হোক না যত বাড়াবাড়ি
হোক না যতই মারামারি
হোক না যতই বম ব্লাস্টিং
সংবাদপত্রে নেইম কাস্টিং
ভোটের সময় হাল্লাগুল্লা
গানের বিষয় রসগোল্লা !
অমুক কুমার তমুক কুমার,
সাত, ছেলের বাপ চিরকুমার !
দেশটা চালায় ডন মাফিয়া
দূর্নীতি রাজনীতি পরকীয়া
ডানে মন্ত্রী বাঁয়ে মন্ত্রী-
মন্ত্রী তো নয় ষড়যন্ত্রী !
অনিবার্ণ (আমার বন্ধু) , অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
“অনিবার্ণ আমার বন্ধু। অনির্বাণের সাথে যখন আমার দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল, তখন সময়টা ছিল বড় অদ্ভুত! আমরা হাইওয়ের উপর দিয়ে, অনেক দূরে একটা অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি। লাল আকাশ, সন্ধ্যে হয়ে আসছে, দুপাশে ফাঁকা মাঠ। আমরা চা খাব বলে গাড়িটা দাঁড় করিয়েছি একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত চায়ের দোকানে। এমন সময় দেখতে পেলাম, লাল আকাশকে পেছনে রেখে, একটা ছেলে মাঠ পার হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললঃ “চিনতে পারছিস ?”
আমি বললামঃ “না।”
ও বলেঃ “ভালো করে দেখ।”
আমি সেই চুরি যাওয়া আলোতে ওকে চিনলাম- আমার বন্ধু অনিবার্ণ। আমার চোখের সামনে পুরনো দিনগুলো ছায়াছবির মত ভেসে উঠছে।
আমি ওকে প্রশ্ন করলামঃ “অনিবার্ণ, তুই এখানে?”
ও বললোঃ “তাইতো কথা ছিল বন্ধু। আমাদের তো এখানেই থাকার কথা ছিল।”
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি খুব বোকার মত ওকে প্রশ্ন করলামঃ অনিবার্ণ, কি করছিস এখন?
ও বললোঃ “যা কথা ছিল বন্ধু, মানুষের মাঝখানেই আছি।”
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা। একটা অপরাধ বোধ আমাকে গ্রাস করছে। ও বললোঃ “তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
ও জানালার কাছে এসে বললোঃ “এখন তো তোর নাম হয়ে গেছে-তুই তো বিখ্যাত হয়ে গেছিস! সুখেই আছিস, কি বল?”
আমার গাড়ি স্টার্ট নিয়ে নিয়েছে, অনিবার্ণ আমার জীবন থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে। অনির্বাণের শেষ কথা গুলো আজোও আমার কানে আলপিনের মত বেঁধে-
“সুখেই আছিস”…”সুখেই আছিস”….”
দেখে যা, যা অনিবার্ণ,
কী সুখে রয়েছে প্রাণ।
কী সুখে রয়েছি আমি,
কী সুখে বেচেছি গান।
সেদিনের মিটিং এর মাইক
সেদিনের কলেজের স্ট্রাইক
সেদিনের মাতাল পদক্ষেপ
বেঠিক সিদ্ধান্তের আক্ষেপ-
আজকের এই মাপা পদচারণ
সেদিনের তালের কাছে ম্লান।
শ্রমিকের মুক্তির গান,
কৃষকের হাতিয়ারে শাণ,
শ্রেণীহীন সমাজের স্বপ্ন,
ঘৃণার প্রতিপালনেতে যত্ন-
আজ তোর ঘামে
ভেজে যে পথের ধুলো
হয়তো সেথায় আমার হত স্থান।

বারো টাকা, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
যখন ঘনায় রাত্রি পাথুরে শহরে
যখন ছড়ায় দীর্ঘশ্বাস আকাশ অধরে,
ঠিক তক্ষুনি সস্তার মেকাপেতে মুখ ঢেকে
লাজ লজ্জার সংস্কারকে পিছে রেখে;
এই সাধারণ মেয়েটাই শহরে-
বিলোতে প্রেম রাস্তায় এসে দাঁড়ায়,
প্রেমহীন শহরের কদর্য লোকগুলো
তার কাছে প্রেম চেয়ে দু’হাত বাড়ায়।
ঠিক তক্ষুনি, মন্দির মসজিদ গীর্জায়
শুরু হয় পূজো-আরাধনা,
বিশ্বপ্রেমের পাঠে শিক্ষিত হয় লোক,
আঁকে প্রেমের আল্পনা;
সব পাপ দিয়ে আসে মানুষ দেবস্থানে
দেবতারা হাসে তুলে মাথা
মাঝ রাত্তির হলে ফিরে যায় সেই মেয়ে
ঘরে রোজগার বারো টাকা।
সারা গায়ে কালশিটে, ও খিদের মাশুল
জীবন তরণী বায় স্রোত প্রতিকূল,
মুখ চেয়ে সন্ততি- হাঁড়ি চড়েনা;
বেজন্মা গালা গালে পেট ভরেনা।
ঠিক তক্ষুনি এনে দিলো-
এক রাশ সুবাতাস সেই রোজগার বারো টাকা
নেভাতে পেটের জ্বালা অবতার হয়ে এলো
সেই রোজগার বারো টাকা
ঠিক তক্ষুনি গোনা হয়-প্রণামীর থালা,
লাভের ভাঁড়ার হয় পূর্ণ;
দেবতাকে দিয়ে ঘুষ
জমা রেখে সব পাপ
মানুষ বাড়ায় তার পূণ্য !
সেই মেয়ে ভোর হলে শত বিদ্রুপ সয়
দেবতারা দেখে তুলে মাথা ;
সত্যি বিলোয় প্রেম সেই মেয়ে নিঃসারে
প্রণামী মাত্র বারো টাকা!
নীলাঞ্জনা ii (হয়ত কারোর বুকে মাথা রেখে) , অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
হয়ত কারোর বুকে মাথা রেখে,
দীর্ঘশ্বাস হাসি দিয়ে ঢেকে,
নিরাপত্তার উষ্ণতা দিয়ে-
ঢাকবে যন্ত্রণা, নীলাঞ্জনা।
স্বামী-সন্তান, ফ্ল্যাট আর গাড়ি;
সুখের অসুখ আজ মহামারী।
চেনা চেনা গান, চেনা অভিমান,
চেনা বিছানায় জুড়ি সম্মান,
পুরনো স্বপ্ন শত পাখি হয়ে –
সুদূরে দিয়েছে পাড়ি।
লাগে মাসকারা দু’চোখ আঁকতে
ক্লান্তির কালো রঙকে ঢাকতে
রাতের চাদরে মুখ ঢেকে খোঁজো
কিসের সান্ত্বনা ?
স্বাধীনতা, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
এক মুঠো স্বপ্নের নাম স্বাধীনতা,
প্রত্যাশা পূরণের নাম স্বাধীনতা
আমাদের রক্তের দাম স্বাধীনতা,
লড়াই অন্তে পরিণাম স্বাধীনতা
আমাদের পোড়া দেশে স্বাধীনতা মানে হলো,
রাশিরাশি ব্যর্থতা আর শূন্যতা।
উর্বর জমি তবু হায় স্বাধীনতা
কৃষকের বাঁচবার নেই স্বাধীনতা
দিগন্ত বিস্তৃত সোনারঙা ধানে
দেশেতে অবাধ মৃত্যুর স্বাধীনতা
বহু স্লোগানের ঢাক,
ঢাকে মাছ দিয়ে শাক
তবুও দেশেতে শ্মশাণের স্তব্ধতা…
পাঁচশালা ব্যবস্থা তবু স্বাধীনতা
লুটেপুটে খায় সব শালা স্বাধীনতা
হাজার প্রাণের দামে এলো স্বাধীনতা
তাদের জন্যে দু’মিনিট নীরবতা!
এরপর চুরি-ঘুষ, আবার আবার চুরি
প্রগতি শৈশবেই দিচ্ছে হামাগুড়ি
একটি ছুটির দিন তুমি স্বাধীনতা।

রোজ ঘুম থেকে ওঠা, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
রোজ ঘুম থেকে ওঠা আর দাঁত মাজা,
খবর কাগজে দু:সংবাদ খোঁজা।
দারুণ ব্যস্ততায় স্নান-খাওয়া সারা হয়,
জীবনে আরেকদিন আবার বাড়তি হয়।
আবার রাত্রি হবে তাইতো সকাল হয়
আশাকে পণ্য করে তবুও ব্যবসা হয়
তবুও তো নিশি রাতে শহর বাঈজী সাজে,
ধর্মতলার মোড়ে অধর্ম গান গায়।
বাসে তে আর ট্রামে, গরমে আর ঘামে,
ঘৃণা অসন্তোষ বেচাকেনা কম দামে
তবুও নন্দনে দৃষ্টি নন্দনে
প্রয়াসে মতে শত বরাহ নন্দনে।
রাজবাড়ী অবরোধে হাজারটা প্রাণ যায়
নেতারা মন্ত্রী হতে মানুষের বলি চায়
তবুও আকাশতলে মানুষ মিছিলে চলে
নেতাদের খ্যাতিটাই সবার কন্যাদায়।
স্বপ্ন সাদা কালো,
মন্দ আর ভালো
দ্বন্দ্ব সন্ধানে মোমবাতি জ্বালো
গৃহিণী পাশে শুয়ে, একে একে দুইয়ে !
ঘাড়েতে পাউডার হালকা ভাবে ছুঁয়ে।
বয়ে চলে জীবনের এক সুর-এক ধারা
কবিতার বইয়ে শুধু রাত্রির কড়া নাড়া –
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন বলে-
দূষণেতে ভরা মন্দ দখিনা বায়।
আমাদের তো কিচ্ছুই নেই ! , অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
(আমাদের তো কিচ্ছুই নেই আমাদের সন্তুষ্টি একটুতেই!)
স্বপ্ন দেখি পাশাপাশি
ওভারটাইমে ভালবাসি !
(আহ্বান তাই সব্বাইকে!)
জীবন যে গেছে সামনে থমকে
শেষ সম্বল বাঁচাও প্রেমকে।
যদি বাঁচতে চাও,
দুনিয়ার প্রেমিক এক হও।
প্রেমিকের ঠাঁই নেই রাজপথে,
গলির অন্ধকারে কোনোমতে,
লুকিয়ে বাবার চোখ, শত বার গিলে ঢোক;
দু’তিন পা পথ চলা, গুটি কয়েক কথা বলা,
সিগারেট খেয়ে ভোলা বিচ্ছেদ শোক।
(উৎকন্ঠায় মাখা প্রেমের দু’চার ক্ষণ –
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রোমন্থন,)
যদি করতে না চাও-
দুনিয়ার প্রেমিক এক হও।
যদি যাও ময়দানে রয়েছে পুলিশ !
টাকা যদি পকেটে তে থাকে ভাগ্যিস-
রক্ষে তবেই পাবে; বাঁচবেনা কোনভাবে-
প্রেমিকের ঠাঁই হবে হাজত ঘরে
চোর, খুনি, ডাকাতেরা বুক চিতিয়েই ঘোরে
প্রেমিকেরা মুখ ঢাকে চোরের মতন
খুনি হয় দেশনেতা, দেশপ্রেম বিক্রেতা,
প্রেমিকেরা সাজা পায় খুনির মতন।
( প্রেমের নিরাপত্তা রক্ষার্থে, প্রেমহীন আজকের পৃথিবীর স্বার্থে)
সংবিধানেতে প্রস্তাব নিয়ে যাও।

কালো মেয়ে, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
এই মেয়ে !
তোর খ্যাঁদা নাক, কালো রঙ,
সব্বাই বলে সঙ,
আসল অন্তরায়- বাবার পকেট ফুটো,
তনুবতী না রূপবতীও না
তুইতো মুক্ত আসলে ঝুটো !
এই মেয়ে,
বিয়েতো হবেনা, কথাও কবে না
আইবুড়ী বলে শুধু দূর দূর ছাই ছাই!
আসলে দিলে পণ দেবেরে তনু-মন
তোকেই সুন্দরী বলবে সব শালায়।
সোনা চাই, দানা চাই, পুরোবালী খানা চাই
ফ্রিজ টিভি গাড়ী বাড়ী চাই চাই চাই
তুইতো উপরি যেন পণ্যের ক্যাশ মেমো !
কেউ বলবে না “শুধু তোমাকে, তোমাকে চাই”
রাত জেগে জেগে শুধু আয়নায় মুখ দেখা
হাজার লোকের ভীড়ে তবুও তবুও একা;
লাজে তোর হেঁট মাথা, সমাজের যারা মাথা-
তাদেরইতো লজ্জার নেইকো বালাই।

নীলাঞ্জনা iii (দুলছে হাওয়ায়) , অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
দুলছে হাওয়ায়, না না না ফুল নয় !
দখিনা বাতাসে এ নাগপাশে সময় নয়।
খোলা বারান্দায়, এই নির্জনতায়
সিলিংয়ের বন্ধনে, মাটির ব্যবধানে
দুলছে স্খলিত বসনা
নীলাঞ্জনা ।।
প্রেমিকের স্পর্শ আনবেনা শিহরণ আর ঐ মনে,
‘কেয়ার অফ: ফুটপাথ, নচিকেতা, দুটি হাত-
শূন্যে ছুড়বে ফাঁকা আস্ফালনে,
উড়ছে মাছি, না না না অবুঝ নয়
সে আজো একা তাই ঘিরে মাছিরাই রয়..
লাশকাটা ঘরে যদি চেরা হয় তার বুক সঙ্গোপনে,
দেখবে সেখানে রাখা বিবর্ণ একমুঠো স্বপ্ন যতনে !
যে স্বপ্ন কোন কিশোরের দেয়া উপহার গানের ভাষায়,
যে স্বপ্ন প্রথাগত মিথ্যে কপট সংসারের আশায়।
এখন সময়,না না না রাত্রি নয় !
সে আজ জীবনরাত্রি পেরিয়ে গেছে হায় ।

এই তো জীবন, অ্যালবাম: কে যায় ! (১৯৯৪)
এই জীবন আছে বল কতক্ষণ ?
জীবনের বাজি ধরা,
কভু জেতা কভু হারা।
আজ আমি নচিকেতা
কুলীন সঙ্গীত বিক্রেতা,
কাল হরিজন।
এই তো জীবন !
আসলে আরেক ঢেউ,
দেখবেনা ফিরে কেউ
বলবে গাইত গান –
এখন সে স্মৃতি ম্লান,
‘এই বেশ ভালো আছি’ বলত তখন।
আবার না ভোর হতে,
বাজারের থলি হাতে –
মধ্যবিত্ত হয়ে জীবন যাপন;
চাইবেনা কেউ সই,
বলবে অবশ্যই,
আজকের গাওয়া গান পুরনো তখন।
ডাকবে না আর কেউ-
আর কোনো জলসায়,
উত্তেজনায় ঘেরা আর কোনো সন্ধ্যায়,
নেবেনা অনুষ্ঠানে কেউ উদ্যোগ।
যদি আসে সেই দিন,
সব্বাই জেনে নিন,
থাকবে না কোনো অভিযোগ।

Saturday, January 9, 2016

ঈশিতা কি যেন একটা ফাইল দেখছিল তখন আমি ওর ডেস্কের সামনে গিয়ে দাড়াই । কি বলব কিভাবে বলব এই সব যখন ভাবছি তখন ও মুখ তুলে তাকালো । এবং আমি ওর চেহারায় এক অবিশ্বাস আর বিশ্মিত ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম । অবাক কেন হবে না বলুন । যে মানুষটা গত এক বছরে একবার তার কাছে আসে নি আর আজ যদি নিজ থেকে সামনে এসে দাড়ায় আবাক হবারই কথা ।
আমি খানিকটা ইতস্ততঃ ভাব নিয়ে বললাম “আপনার সাথে কি কয়টা কথা বলা যাবে?”
বিশ্মিত ভাবটা কাটিয়ে উঠে ঈশিতা বলল “হ্যা অবশ্যই । অফিসিয়াল কিছু ?”
“ না অফিসিয়াল না । আন অফিসিয়াল । বলা যাবে ?”
“ হ্যা যাবে না কেন ? বসুন । বসে বলুন ।“
আমি বসলাম ।
কিভাবে বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । আসলে এরকম পরিস্থিতিতে আগে পড়ি নি তো । আর এর জন্য আমি নিজেই দায়ী । আমি নিজেই আমার চারিদিকে এমন আবহাওয়া তৈরী করে রেখেছি যে এরকম করাটা আমার জন্য বেমানান ।
ঈশিতা বলল “কোন সমস্যা হয়েছে নাকি ?”
“ না না কোন সমস্যা হয় নি । আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম যে আগামী কাল কি আপনার কোন স্পেশাল প্রোগ্রাম আছে ?”
“ কালতো ছুটির দিন । না তেমন কিছু নাই । কেন বলুন তো ?”
আমি খানিকটা শংঙ্কা নিয়ে বললাম “আগামীকাল দুপুরে কি আমার সাথে লাঞ্চ করা যায়? ইফ ইউ ডোন্ড হ্যাভ এনি প্রবলেম ! আমার কিছু বলার ছিল আপনাকে"
ঈশিতা এবার সত্যি সত্যি অনেক অবাক হল । খানিকটা খুশিও হল মনে হল ।
“ওকে । নো প্রোবলেম ।"
“ গ্রেট । তাহলে কাল দেড়টা দুইটার দিকে । স্টার কাবাবে ।“
ঈশিতা মাথা নাড়ালো । “আমি পৌছে যাবো ।“
“ থ্যাঙ্কস ।“
নিজের ডেস্কে ফিরে এলাম । খানিকটা হালকা লাগছিল মনের ভিতর । যদিও এখনও জানি না কাল ঈশিতাকে সব কিছু বলতে পারবো কিনা ! যদি না বলতে পারি মনের মধ্যে শান্তি পাবো না কিছুতেই । আমি জানি এসব কথা বলার কোন মানে নেই । তবুও নিজের মনের শান্তির জন্য এটা আমাকে করতে হবে । জীবনে দ্বিতীয়বার আমি আর আফসোস করতে চাই না ।
ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চুপচাপ স্বভারের ছিলাম । চুপচাপ থাকা একটা কারন হল আমি কিছু বললে মানুষ কি ভাবে এটা খুব একটা ভাবার বিষয় ছিল । বিশেষ করে মেয়েদের এটা বেলায় এই বোধটা ছিল । আমি যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে যাই মেয়েটা কি না কি ভাববে ? যদি ইগনোর করে ! যদি ... এই রকম হাজারও "যদি"র কারনে কারো সাথেই ঠিক ভাবে মেশা হয়নি । তাই বলতে গেলে একা একাই কেটেছে আমার দিন গুলো । এখনও কাটছে । কলেজে পড়ার সময়ও আমি এরকম একাই ছিলাম ।
কিন্তু একটা পরিবর্তন আসল আমার মধ্যে সেটা হল হুট করে আমি একটা মেয়ে প্রেমে পড়ে গেলাম । মেয়েটার নাম ছিল লাবনী । লাবন্য । কিন্তু নিজের স্বভাবের কারনে কোন দিন লাবনীকে আমি বলতে পারি নি সে কথা । একা একাই ভালবাসতাম একা একাই কষ্ট পেতাম । দেখতে দেখতে আমাদের কলেজের দিন শেষ হয়ে গেল ।
আমাদের এইচএসসি পরীক্ষার আগেই লাবনীর বিয়ে হয়ে যায় । সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । তার থেকে বেশী কষ্ট পেলাম আর একটা কথা জানার পর ।
ভার্সিটিতে আমাদের কলেজেরই একটা মেয়ে আমার ডিপার্টমেন্টে পড়তো । এই মেয়েটা লাবনীর বান্ধবী ছিল । একবার বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময় ঐ মেয়ে সাথে একসাথে এসছিলাম । ওর কাছ থেকে আমি জানতে পারি যে লাবনী মনে মনে আমাকে পছন্দ করতো । কিন্তু আমার দিক থেকে কোন সাড়া পাইনি বলে ও আর এগোই নি । কথাটা জানার পর বুকের মাঝে যেন হু হু করে উঠল । যদি আমি একটু সাহস করে আমার পছন্দের কথা বলতাম তাহলে আজ জীবনটা কত সুন্দর হত । তারপর এই আফসোসটা আমাকে খুব পীড়া দিত ।
আবার আর একটা আফসোসের কারন হতে চলেছে । একটু দেরি যদিও হয়ে গেছে তবুও মনকে এইটুকু বলতে তো পারবো যে আমি বলতে পেরেছি আমার মনের কথা । আমি ঈশিতাকে বলতে পেরেছি । হোক না একটু দেরি !
ঈশিতা বছর খানিক আগে আমাদের অফিসে জয়েন করেছে । তারপর আবার সেই একই কাহিনী হল । একা একাই কেটে যাচ্ছিল জীবন । তবুও ঈশিতা নতুন ভাবেই আবার আমার হৃদয় ছুয়ে গেল । আমি ঈশিতার প্রেমে পড়লাম । কিন্তু বলতে পারলাম না কিছু । একা একাই ওকে নিয়ে ভাবতাম । আর ওকে অনেক চিঠি লিখতাম । চিঠি না মেইল করতাম । কিন্তু মেইল গুলো পাঠানো হয়নি কোন দিন । হয়তো পাঠানো হবে না কোন দিন । কেবল সেভ করে রাখতাম ।
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । কিন্তু কয়দিন আগে শুনতে পেলাম যে ঈশিতার বাগদান হয়ে গেছে । হায় হায় ! এবারও একই ঘটনা ঘটবে ? আমার কথা গুলো ওকে বলা হবে না ? আবার সেই আফসোস করতে হবে ?
তখনই সিদ্ধান্ত নেই যে ঈশিতাকে অন্তত আমার মনের কথাটা আমি জানাবো । ও যাই ভাবুক ! বাকী জীবন আমি আর একটা আফসোসের বোঝা আমি আমি বইতে পারবো না ।
-------------
স্টার কাবাবে যেতে যেতে ভাবছি যে ঈশিতা কখন যে আসবে কে জানে । কিন্তু গিয়ে দেখলাম ও আমার আগে চলে এসেছে । আমাকে আসতে দেখে এগিয়ে এল হাসি মুখে ।
"একটু কি দেরি হয়ে গেল ?"
" না না ঠিক আছে । মাত্রই এলাম আমি ।"
দু'তালায় প্রচুর ভীড় । তিন তালায় বসলাম কোনার দিককার একটা টেবিলে । মুখোমুখি ।
" কি যেন বলবেন বলেছিলেন ।"
আমি তখনই কোন কিছু বলতে পারি না । বললাম "হ্যা বলব । এই জন্যই আসা ।"
" আচ্ছা তার আগে আমার একটা কথার উত্তর দিন । আপনি এতো গম্ভীর হয়ে থাকেন কেন ? আমি আমার জীবনে এতো কম কথা বলার মানুষ দেখি নি । প্রত্যেকটা কথা মেপে মেপে । দরকারের একটা বেশি কথা না । এরকম কেন ?"
আমি কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না । একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
"আমার কি মনে হয় জানেন ?" ও আবার বলল শুরু করল "আপনার এমন একটা বাচাল মেয়ের সাথে বিয়ে হবে যে আপনাকে কথা বলে বলে বিরক্ত করে ফেলবে ।"
বলেই ঈশিতা হাসি শুরু করলো ।
"রাগ করলেন না তো ? আপনার বউকে বাচাল বললাম !"
এবার আমি একটু হাসলাম ।
"বউ?"
" আচ্ছা জানেন আমি না খুব অবাক হয়েছিলাম যথন কাল আপনি এলেন । শুধু আমি পুরো অফিস এটা নিয়ে আলোচনা করছে ।"
" কি বলেন এসব ? সত্যি ? কেন ?"
" কেন মানে ? এটা কোন আলোচনার বিষয় না ? যে মানুষটা কখনও বিনা প্রয়োজনে করো সাথে একটা কথাও বলে না সে যদি কাউকে লাঞ্চ করার জন্য নিজে থেকে বলে এটা আলোচনার বিষয় হবে না ?"
আমার খানিকটা অস্বস্তি লাগে । আল্লাহই জানে কাল অফিসে কি হবে ?
" আচ্ছা সেই কখন থেকে আমি বকবক করে যাচ্ছি । বলবেন তো আপনি ।"
" হু "
আজ অনেক কথা বলার আছে মনে শান্তির জন্য আমাকে বলতে হবে । আমি আমার কথা শুরু করি । একদম ছোট বেলা থেকে । কেমন ছিলাম । কেন এতো কম কথা বলি । তারপর লাবনীর কথা বললাম । সব কিছু শুনে ও বলল
"আপনার জন্য খারাপ লাগছে । লাবনীর জন্যও । বেচারী কখনও জানলোও না যে আপনি তাকে পছন্দ করতেন ! আর একটু চেষ্টা করলে আজ সব কিছু অন্য রকম হতে পারতো !"
আমি বললাম "কিন্তু ও আমাকে বলতে পারতো ! ও তো আমাকে পছন্দ করতো !"
" আপনি কেন বলেন নি ।"
" আমি তো এমনই ।"
" দেখুন অপু , একটা কথা শোনেন নি ? মেয়েদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটে না । আমরা মেয়েরা সব সময় প্রোপজ পেতে চাই । প্রোপজ করতে নয় । এটাই স্বাভাবিক নিয়ম । এমনই হয়ে আসছে । আর আমাদের কালচার টাও এমন কথা বলে । যদিও মন কোন কোন কথা শোনে না তবুও মেয়েদের পক্ষে আগ বাড়িয়ে মনের কথা বলার বড় কঠিন ।"
আমি বুঝলাম ঈশিতা কি বলতে চাইছে । যা বলার আমাকেই বলতে হবে ।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ও বলল "আমাকে এতো কথা বললেন, ভাল লাগল । এভাবে নিজের মনের কথা গুলো মানুষের সাথে শেয়ার করবেন । বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে তাহলে দেখবেন ভাল লাগবে ।"
খানিক নিরবতা ।
তরপর ও বলল "আর কিছু বলবেন না ?"
মনে মনে বললাম বলব না মানে । আসল কথা তো বলাই হয়নি ।
আমি যে তোমার প্রেমে পড়েছি । এটাতো বলতেই হবে ।
কিন্তু কিভাবে বলবো ?
কিভাবে ?
"আসলে আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলাম ।"
ঈশিতা খুশি খুশি গলায় বলল "বলুন । আমি তো শোনার জন্য এসেছি । যদিও আমি অনেক কথা বলি । কথা শুনতেও আমার অনেক ভাল লাগে । আর আপনার কথা শুনতেও আমার অনেক ভাল লাগছে ।"
" আসলে ..."
বলতে চাইলাম আমি তোমাকে ভালবাসি কিন্তু মুখ দিয়ে বের হল "আপনার নাকি বাগদান হয়ে গেছে ?"
" কে বলল আপনাকে ?"
" হয় নি ?"
না হোক ! আল্লাহ যেন না ঠিক হয় ।
ও হাসলো । "না মানে এখনও হয়নি । তবে হবে ।"
আশার যে আলো জ্বলেছিল তা আবার নিভে গেল ।
তবে এখনও তো হয়নি ।
এখন যদি বলি ?
ও কি রাজি হবে ?
চান্স কি আছে ?
না হলে না হবে । বলবই । এখনই বলবো ।
"ঈশিতা ?"
" বলুন ।"
এবার বলতেই হবে । বলব ।
" খাবারের অর্দার দেই ?"
" হ্যা । দেওয়া যায় ।"
যাস শালা ! কি বলতে চাইলাম আর কি বের হল ।
আমি তোমাকে ভালবাসি ।
আমি তোমাকে পছন্দ করি ।
এই লাইন গুলো বলা এতো কঠিন কেন ? না আমাকে বলতেই হবে । হবে ।
আবার চেষ্টা করা যাক । ওকে রেডি ১ ২ ৩.....
" কি খাবেন কাচ্ছি নাকি অন্য কিছু ?"
মনে হল নিজের গালে জোড়ছে একটা চড় মাড়ি । ব্যাটা বেকুব ! এই সহজ কথাটা বলতে পারিস না ।
খাওয়ার সময়ও চেষ্টা করলাম । দুবার বলতে গেছি দুবারই গলায় ভাত আটকে গেছে । ভাত না বিরানী আটকে গেছে ।
খাওয়ার সময় ও টুকটাক কথা বলছিল । ওর পরিবারের কথা , বন্ধুদের কথা । শুনে ভাল লাগছিল বাট কামের কাম তো হচ্ছে না কিছুই ।
ওকে কি তাহলে বলতে পারবো না ?
এমন কেন ?
স্টার কাবাব থাকে যখন বের হলাম তখন প্রায় বিকেল ।
ঈশিতা এখনই চলে যাবে ।
ওকে কি বলতে পারবো না ?
ও হাটছে । আমি ওর পাশে ।
ওর জন্য রিক্সা ঠিক করতে যাবো এমন সময় ঈশিতা বলল "অপু সাহেব ।"
আমি ওর দিকে তাকালাম ।
"জি ।"
"আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আমাকে যা বলতে চেয়েছিলেন তার সবটা বলেন নি ।"
হ্যা তোমাকে বলা হয়নি যে তোমাকে ভালবাসি । কথাটা বললাম, মনে মনে । আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।
ও বলল "কোন কাজ নেই তো আর ?"
আমি মাথা নাড়াই ।
"চলুন লেক পাড়ে গিয়ে বসি । আরো কিছুক্ষন গল্প করা যাক আপনার সাথে !"
ওর সাথে হাটতে খুব ভাল লাগছিল । আমি আসলে ভাবতেই পারি নি যে ও লেক পাড়ে আসতে চাইবে । আমার তো মনে হল গেল , আর বুঝি ওকে বলা হল না । অবশ্য এখনও যে ওকে বলতে পারবো তার কোন নিশ্চয়তা নাই ।
“ এ জায়গাটা সুন্দর না ?”
“ হু ।সুন্দর ।“
“ আসুন ঐ জায়গাটায় বসি ।“
গাছের নিচে একটা ফাঁকা বেঞ্চ দেখিয়ে বলল । নিজের মনের মধ্যে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে । আমরা এখানে বসে কথা বলছি । আর পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন যাচ্ছে । আমাদের কে দেখে ভাবছে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা । ঠিক যেমন টা আমি ভাবতাম যখন এখানে আসতাম । জোড়াদের কে দেখে ভাবতাম কত সুখেই না ওরা আছে ! আর আজ আমাদের কে একসাথে দেখে ওরা নিশ্চই এক কথাই ভাবছে ।
ইস্ ওদের ভাবনা টা যদি সত্যি হত !
“ কি এতো ভাবছেন ?”
“ কিছু না । এমনি ।“
“অপু সাহেব আপনি তো আজ অনেক কথা বললেন । যদিও আমার মনে হচ্ছে এখনও কিছু বলার বাকি আছে । এবার আমি কিছু কথা বলি ?”
“ হ্যা অবশ্যই ।“
“ কিন্তু আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি রাগ করবেন না ।“
“ রাগ করবো কেন ?” আমি খানিকটা অবাক হলাম ।
“না কথাটা রাগ করার মতই । আমি খানিকটা অন্যায় করেছি । অনেক দিন আপনাকে বলার চেষ্টা করেছি আপনাকে বলার জন্য কিন্তু আপনার গম্ভীর্যের জন্য সাহস হয় নি । আজ বলার একটা সুযোগ এসেছে । বলবো ?”
“ বলুন ।“
“ কিন্তু কথা দিন রাগ করবেন না ।“
“ আচ্ছা কথা দিলাম ।“
“ তবে আমি একটা কথা দিতে পারি যে আমার কথা গুলো শোনার পর আপনি আপনার বাকী থাকা কথা গুলো মনে হয় বলতে পারবেন ।“
ঈশিতার কথা শুনে আমি খানিকটা ধাঁধায় পড়ে গেলাম । বাকী থাকা কথা ? ও কি তাহলে বুঝতে পেড়েছে । গড নোজস ! আমি বললাম “আপনি নির্ভয়ে বলুন ।“
ঈশিতা খানিকটা সময় নিলো । তারপর ওর কথা শুরু করলো ।
“আপনার কি মনে আছে প্রায় মাস দুয়েক আগে আপনি ছুটি নিয়ে ছিলেন ?”
“ হু । নিয়ে ছিলাম ।“
“তখন আপনার কাজ সামলানোর দায়িত্ব আমার উপর এসে পড়ে । আমি দরকার পড়লে মাঝে মাঝে আপনার ডেস্কে যেতাম । একদিন আমার পিসির নেট কানেকশনটা কেন চলে গেল । সবার টা ঠিক কেবল আমার টা নাই । তাই আমি আপনার পিসিতে বসে কাজ করছিলাম । এটা আমার আমার প্রথম অন্যায় ।“
ও খানিকটা চুপ করল ।
“আমি মেইল চেক করার জন্য ইয়াহু ওপেন করি কিন্তু আপনি আপনার একাউন্ট থেকে সাইন আউট করেছিলেন না তাই সরাসরি আপনার একাউন্টে ঢুকে পড়ি ।“
ঈশিতে আমার দিকে তাকায় । মনে হয় বোঝার চেষ্টা করে আমার মনের অবস্থা ।
“দেখুন এটা কিন্তু আপনার ভুল । আপনি সাইন আউট কেন করেন নি ?”
“ তারপর আপনি কি করলেন ?”
“ আমি সাইন আউট করতেই যাচ্ছি লাম তখন ....” ও চুপ করে যায় ।
“ তখন ?”
“ তখন আমার চোখ গেল ড্রাফট ফোল্ডারের দিকে ।“
OMG!!! ঈশিতা এসব কি বলছে ওখানে তো সব মেইল গুলো সেভ করা আছে যেগুলো আমি ওকে পাঠাতে চেয়ে ছিলাম । কিন্তু পাঠাই নি ।
“ তারপর ?” আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে ততক্ষনে ।
ও বলল “ড্রাফটে ১৭১ টা মেসটজ ছিল । খুব কৌতুহল হল দেখার জন্য জানেন । জানি এটা অন্যায় । তবুও না করে পারলাম না । ফোল্ডার ওপেন করে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । ১৭১ মেসেজই আমার কাছে লেখা । আমি এতো অবাক হলাম । এতো গুলো মেসেজ । প্রায় বছর খানেক ধরে আপনি লিখেছেন কিন্তু একটাও সেন্ড করেন নি । সেদিন সারা দিন আমি ঐ মেসেজ গুলো পড়েছি । আর অবাক হয়ে । আমি কোন দিন কি পরে এসেছি কি খেয়েছি কার সাথে কথা বলেছি । সব আপনি লক্ষ্য করেছেন । সত্যি বলছি আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি । আপনি কিভাবে আমাকে দেখতেন বলেন তো ?”
আমি কি বলব ! আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না । ওর দিকে তাকাতেই আমার লজ্জা লাগছে । মেইল গুলোতে এমন কোন কথা নেই যে আমি লিখি নি । তারমানে ও সব জানে ।
ও বলল "আমি জানার পরও আমি লক্ষ্য করতাম । কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারি নি" ।
“এটা কি ঠিক করেছেন আপনি ?” কোন মতে বললাম কথাটা ।
“ ঠিক করিনি ঠিক , কিন্তু …..” ও কথাটা শেষ করল না । রহস্যময় হাসি দিলো ।
আমার একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করল ।
বললাম “একটা কথা জানতে চাইবো ?”
“ আমার এনগেইজমেন্ট ?” ও হেসে ফেলল ।
“হু ।“
“ ওটা সত্যি না আমি কেবল দেখতে চেয়ে ছিলাম যে কথাটা আপনার কানে গেলে কি হয় ? এবং ফলাফল দেখতেই পাচ্ছেন ।“
আমি অপ্রস্তুতের মত খানিকটা হাসি ।
ঈশিতা বলল “তবে……….. !”
আবার কি হল ? আমি বললাম “ তবে ?”
“ তবে কথাটা কিন্তু আপনাকে বলতে হবে মুখ ফুটে ।“
আমি আবার ঝামেলায় পড়ে গেলাম ।
“কিন্তু তুমি তো জানো ।“
ও হাসল খানিকটা । বলল “এইটা ভাল । কিন্তু ঐ লাইনটা বলতেই হবে । তোমাকেই বলতে হবে ।“
আমার চেহারা দেখে ও আবার বলল “এরকম চেহারা করে লাভ নাই । যদি বল ভাল । না বললেও ভাল , আমাদের মধ্যে কলিগের রিলেশনই থাকবে । তুমি মেইল লিখে লিখে ফোল্ডার ভরে ফেলবে । এভাবেই চলতে থাকবে ।“
আমি যে কিভাবে বলি কথাটা । তবে পরিস্থিতি এখন আমার অনুকুলে । কেবল একটা লাইনই আমাকে বলতে হবে । আমি কিছু বলছি না দেখে ও বলল
“ তুমি বলবে না ? সব কিছু তোমার ফেভারে । তবুও এই একটা লাইনটা বলা এতো সমস্যা ? ওকে ফাইন । অপু সাহেব আমি যাই । অফিসের কলিগের সাথে এতো সময় বাইরে থাকাটা ঠিক না । আর শুনো সারা জীবন বসে বসে আফসোসই করো । টাটা ।“
ও উঠে যেতে চাইল । তখন ঠিক কি হল আমি জানি না আমি ঠিক বলতেও পারবো না ফট করে ওর হাত ধরে ফেললাম । “ভালবাসি ।“
একটু মনে জোড়ে বলে হয়ে গেছে । দেখি যে কয়েকজন ঘুরে তাকিয়েছে আমার দিকে ।
“কি বললে ?”
ওর হাত তখনও ধরা । এবার আস্তে বললাম “ভালবাসি ।“ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ।
ও বসল আমার পাশে । হাসি মুখে বলল “আবার বল ।“
“ ভালবাসি । তোমাকে । ভালবাসি ।“
(পুরাতন পছন্দের একটি গল্প)