Friday, March 17, 2017

" নীল রঙয়ের ভালোবাসা " লিখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

নীল রঙয়ের ভালোবাসা
" নীল রঙয়ের ভালোবাসা "
লিখেছেনঃ  যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

বৃষ্টিতে আটকা পড়ে টিএসসিতে ১ ঘন্টা ধরে একা বসে আছে আবির ।
পকেটে থাকা বেনসন সিগারেট পানিতে ভিজে নেতিয়ে গেছে ।
মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে ।
ঘণ্টা খানিক ধরে একটা অদ্ভুত দৃশ্য লক্ষ্য করছে আবির । ওর অপজিটে একটা মেয়ে বৃষ্টির পানিতে পা ভিজিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে মতন ।
প্রথম দেখাতেই মেয়েটির প্রতি কেমন যেন টান অনুভব করছে আবির!
লম্বা চুলের অধিকারী মেয়েটির, মুখের স্নিগ্ধতা যে কোন ছেলেকেই প্রথম দেখাতেই আকর্ষন করতে বাধ্য ।
বাম পায়ে পায়েল পড়েছে মেয়েটি ।
আবির একা একা ভাবে, মেয়েটি পাগল নাকি ?!
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি...এই বৃষ্টিতে ভেজা আর অসুখকে নিমন্ত্রন করে নিয়ে আসা একই কথা!
কিন্তু মেয়েটার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নাই ।
কি ব্যাপার আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন ?
আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করেই ফেলল আবির ।
আপনার কোন সমস্যা ?
না মানে, মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজলে অসুস্থ্য হওয়ার চান্স থাকে !
তো আপনার কি ?!
আপনি ডাক্তার নাকি ?
না...ইচ্ছে হলো তাই বললাম । আপনি কি আমাদের ক্যাম্পাসের ?
হুম...।
কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন ?
ইকোনমিক্স...সেকেন্ড ইয়ার । আপনি ?
আমি আবির...সমাজবিজ্ঞান...সেকেন্ড ইয়ার ।
ঘড়িতে দেখুন তো কয়টা বাজে ?
তিনটা ।

আচ্ছা থাকুন...পরে কথা হবে, বলেই মেয়েটি খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল ।
ধুর শালা নামটাই তো জানা হলো না মেয়েটার !

এরপর মেয়েটির সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো ক্যাম্পাসে । চোখে চোখ পড়লেই হাই-হ্যালো।

ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল ।
আবির পরে ওর এক বান্ধবীর কাছে শুনেছিল মেয়েটির নাম তিথি ।
সেদিন সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে দেখা হয়ে গেল তিথির সাথে ।
আরে কি অবস্থা ! কেমন আছেন ?
এই তো...ভালই ।
চলুন চা খাওয়া যাক ।
তিথিকে চা খাওয়ার অফার করে বসে আবির ।
আপনার বয় ফ্রেন্ড আবার কিছু মনে করবে নাতো ?!
আমার কোন বয় ফ্রেন্ড নাই...ভাবছি আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কিছু মনে করবে কিনা!
আমার গার্ল ফ্রেন্ড ?! হো হো করে হেসে দেয় আবির!
সেদিনই ওদের ফোন নাম্বার বিনিময় হলো ।
এরপর ফোনে প্রায়ই কথা হতো দুজনার ।
মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় দুজনে ক্যাম্পাসে আড্ডা মারত ।
দুজন দুজনার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল খুব তাড়াতাড়ি ।
এমন কোন কথা নেই যা হতো না ওদের মধ্যে ।
আবিরের মুখে পলাশীর সেলিম মামার রং চায়ের গল্প শুনতে শুনতে একদিন তিথি আবদার করে বসল পলাশীতে রং চা খাবে ।
সেদিন সন্ধ্যায় আবির তিথিকে পলাশীতে রং চা খাইয়ে এনেছিল ।
এরপর তারা কখনো টিএসসি, কখনো হাকিম চত্বর, কখনো বুয়েট, কখনো ধানমন্ডি লেক, কখনো স্টার সিনেপ্লেক্সে চুটিয়ে ঘুরে বেড়াত ।
তাদের বন্ধুত্ব্যকে বাকা চোখে দেখার মানুষের অভাবও ছিল না ।
অনেকে ফোড়ন কাটত কিরে শুধু বন্ধু, না কি ভেতরে ভেতরে ইয়ে টিয়ে চলছে !
কিন্তু ওরা এসব কথায় পাত্তা দিত না ।
সমস্যা শুরু হলো যখন তিথি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে গেল ।
আবিরের কিছুই আর ভাল লাগে না ।
ওদিকে তিথির অবস্থাও একই । দিন গোনে কবে ছুটি শেষ হবে!
আবির বুঝতে পারল সে তিথির প্রেমে পড়েছে!
প্রথমে সে এই চিন্তা মাথা থেকে উড়িয়ে দিতে চাইল । কিন্তু যতই এভোয়েড করে ততই তিথির চিন্তা আরো মাথায় চেপে বসে ।
সিগারেট খাওয়ার মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গেছে আবিরের ।
কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। রাতে ঘুম হয় না ।
শান্তিতে আর রাতে ঘুম আসে না...ঘুম আসে ক্লান্তিতে !
ডিসিশন নিয়েই ফেলে যেদিন তিথি ঢাকায় ফিরবে সেদিনই অফার করবে ।
যা থাকে কপালে !
ক্যাম্পাসের পিচ্চি টোকাই গুলাকে খুজে বের করে আবির ।
একটাই কাজ কদম ফুল এনে দিতে হবে ।
পিচ্চিরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে নেমে পড়ে কদম ফুলের সন্ধানে ।
তিথি যেদিন ঢাকায় ফিরল, সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি।
কদম ফুল ম্যানেজ হয়ে গেল সেদিনই ।
পিচ্চি গুলোকে ৫০০টাকা বকশিশ দিল আবির ।
কিন্তু সারাদিনে বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই ।
সন্ধ্যায় তিথির হলের সামনে গিয়ে ফোন দিল আবির ।
আমি তোর হলের সামনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয় ।
তিথি নিচে নেমে আবিরকে দেখে হাসতে হাসতে শেষ !
অগোছালো আবির আজ ব্যাপক স্মার্ট হয়ে আসছে!
কিরে খ্যাত! তুই আবার এত সেজে-গুজে আসছিস ঘটনা কি ?
আবির নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ।
ফাজলামো বাদ দে...তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে ।
এখানে বলবি নাকি গোল টেবিল বৈঠক করতে হবে ?!
এখানে বলব...শুধু তুই আমার কথা গুলো সিরিয়াসলি শোন।
বল...
আবির অনেক কষ্টে শুধু এইটুকু বলল, আমি তোর পাশে থেকে সারাজীবন বৃষ্টি দেখতে চাই।
আবির কদম ফুল গুলো বাড়িয়ে দিল তিথির দিকে ।
বিমর্ষ মুখে কদম ফুল নিয়ে তিথি হলে চলে গেল । একটা কথাও বলল না আবিরের সাথে ।
আবির তাকিয়ে থাকল তিথির চলে যাওয়ার পথে ।
টপ টপ করে বৃষ্টি পড়া শুরু করল ।
হাতের ছাতাটা বন্ধ করে ফেলল আবির ।
আজ সে বৃষ্টিতে ভিজবে ।
অনেকেই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল, একটা ছেলে বন্ধ ছাতা হাতে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে!
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এক ঘন্টা পর হলে ফিরল আবির ।
রাতে প্রচন্ড জ্বর আসলো আবিরের ।
দুদিন কোন জ্ঞান ছিলনা আবিরের ।
আবিরের রুমমেট তিথিকে ফোনে জানিয়েছিল আবিরের অবস্থা ।
এদিকে তিথি এই দুইদিন টেনশনে শেষ ।
তৃতীয় দিন তিথি ফোন দিয়ে বলল, আমি তোমার হলের গেস্ট রুমে বসে আছি তাড়াতাড়ি আসো।
আবির চিন্তা করছে কি ব্যাপার তিথি আমাকে তুমি করে বলল কেন!
গেস্ট রুমে গিয়ে দেখল তিথি শাড়ি পড়ে বসে আছে ।
নীল শাড়ি । আবিরের পছন্দের রং নীল । এটা তিথি জানে ।
আবির মনে মনে ব্যাপক উত্তেজিত ।
আবিরকে দেখে উঠে দাঁড়ালো তিথি ।

তিথির চোখে পানি, ধরা গলায় আবিরকে বলল, চলো বৃষ্টিতে ভিজি!
আবির খুশিতে লাফিয়ে উঠল...চলো !

আবির ভুলেই গেল তার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর!
কিন্তু মেয়েটা কাঁদছে কেন ??

এই সময়ে ৬/০৮/২০১৩ ১১:৩৩:০০ AM 

No comments:

Post a Comment