Friday, March 17, 2017

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়

একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়
একদিন কোন এক নির্জন রাস্তায়
লিখেছেনঃ রিদওয়ান এইচ ইমন

বিকেলটা ছিল বিষন্ন। বিষন্ন দিনে গুমোট ভাব নিয়ে বিষন্ন বনে যাওয়াটা আমার একদম ভাল লাগেনা। তাই প্রকৃতির এরুপ বিরুপ আচরনেও গ্যারেজ থেকে নিজের ২০০৩ মডেলের করোলা জি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লং ড্রাইভিং এর উদ্দেশ্যে।

আমার সারাটা সময় রচনাকে ঘিরে আবর্তিত হলেও বিষন্ন দিনে তাকে আমার সঙ্গী করিনা। রচনা ব্যানার্জী আমার স্ত্রী। দীর্ঘ তিন বছর অক্লান্ত ভালবেসে লাভ করা আমার অমূল্য রতন।

জীবনের ঝড়-তুফানের প্রতিটি মোড়ে দক্ষ সঙ্গীর মত আমাকে পাশে রাখলেও আমি এসব সিচুয়েশানে তাকে আমার যাত্রাসঙ্গী করিনা। একারনে রচনা ব্যানার্জীর অনেক ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের সীমা যখন সহ্যের বাঁধ ভেঙে নিঙড়ে পড়ে, রচনা তখন তার বাপের বাড়ি গমন করে। সাধারনত তিন-চার দিনের বেশী রাগের ব্যাপ্তি বাড়েনা। ব্যাপ্তি কমলে আবার এই অধমের মাঝে ফিরে এসে মাথা গুজায়।

এবার রচনা গেল দিনপঞ্জিকার পাতায় পাতায় প্রায় এক বছর হয়ে গেল, সেই যে গেল জীবনের প্রতিটি মোড়ে তাকে খুঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু আমার প্রাণপাখিটাকে সঙ্গে করে নিয়ে কোথায় যে লুকিয়ে গেল আর খুঁজেই পায়নি। শ্বশুরের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে দেখি দরজায় 'তিন রিংয়ের' সেই ঐতিহাসিক তালা ঝুলছে।

প্রথম দিকে বারকয়েক এভাবে খুঁজাখুজি করলেও এখন আর করিনা। যে চলে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও যখন ফিরে পাওয়া যায়না, তখন তাকে তার মতই থাকতে দেয়া উচিত। আমিও মানুষ। সুতরাং এর ব্যতিক্রম আমিও করতে পারলাম না।

আষাঢ়ে মাস। বৃষ্টি বাদল দিন। ব্রেকটা ঠিকমত কাজ করছেনা। তাই নির্জন গাছের ছায়ায় ঢাকা পিচঢালা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই গাড়িটা 'ঠাস' করে শব্দ করে উঠল। বামে ইন্ডিকেটর শো করে রাস্তার এক পাশে গাড়িটা সাইড করে দেখি সামনের ডান সাইডের চাকায় লিক করেছে।

বেজায় মুশকিলে পড়ে গেলাম। আশেপাশে যতটুকূ চোখ যায় তাতে একটা ছোট ঝুপড়ি টাইপের চায়ের দোকান ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায়না। এদিকে বৃষ্টিটাও ঝুম করে বেড়ে গেছে। এভাবে জানালা বন্ধ করে গাড়ির ভেতর বসে থাকলে দম বন্ধ করে নির্ঘাত মারা যাব। উপায়ান্তর না দেখে তাই ছোট ঝুপড়িটার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

ঝুপড়িটাতে ঢুকেই এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। মেঘেদের গর্জনের সাথে তাল মিলিয়ে চামচ দিয়ে কাপে টুংটাং শব্দ করেই দোকানদার আমাকে এক কাপ গরম চা উপহার দিল। বৃষ্টির সাথে সাথে এবার হাওয়াটাও বাড়তে লাগল। বেশ কাঁপন লাগানো হাওয়া। হাতে এক কাপ গরম চা থাকাতে শীতল হাওয়াটাকে বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। এই ধরনের রোমাঞ্চের সাধ আজ থেকে কয়েক বছর আগে আরো একবার পেয়েছিলাম, যেদিন রচনাকে প্রথম ভালবাসার কথা বলেছিলাম।

চায়ের কাপ খালি করে ফেলেছি প্রায় আধঘন্টা হল। বৃষ্টি এখনো থামেনি। এদিকে সকাল থেকে সূর্য্যের কড়া রৌদের দেখা না মিললেও বিকেল যে হয়ে আসছে তা বেশ আন্দাজ করতে পারছি। দিগন্ত জোড়া আকাশ, বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ। তার মাঝ ঝুড়ে ছোট একটা পরিসরে এই চায়ের দোকান আর তার খালিকটা দূরেই হাতের বা পাশে আমার করোলা জি এর রাজত্ব। গাড়িটার দিকে চোখ যেতেই মনে হল এই বৃষ্টি বাদল দিনে কাউকে না পেয়ে গাড়িটা মনের দুঃখে একা ভিজছে, ঠিক যেন রচনাবিহীন আমার মত.…

No comments:

Post a Comment