Friday, March 17, 2017

এটা একটা অসম্পূর্ন গল্প

এটা একটা অসম্পূর্ন গল্প
এটা একটা অসম্পূর্ন গল্প
লিখেছেনঃ odhora chowdhury meghla (আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন)

চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে সাইফুলের|বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা একটা ঘুপচিঘরে যতটুকু আলো আসা সম্ভব,ঠিক ততটুকুই আলো সাইফুলের ঘরে|আবছা আলোতে ওর মনে হচ্ছে হয়ত এটা বিকেল বেলা| বিছানা ছেড়ে উঠে যে ঘরের দড়জাটা খুলে দেবে সেই শক্তিটুকুও শরীরে নেই|তিন দিনের জ্বরে এখন পর্যন্ত একটা ওষুধ পর্যন্ত পড়েনি|তবু কষ্ট করে উঠে কোনরকমে দড়জাটা খুলে দিল|আরে তাইতো,বিকেল তো হয়ে গেছে|

সাইফুলের মনে হচ্ছে এটাই তার জীবনের শেষ বিকেল|কারন গতবার এমন জ্বরেই সে তার বাবা মা কে হারিয়েছে| ওর মনে হচ্ছে ইতিমধ্যে জমদূতও তাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে|বুঝতে পারছে এটাই মৃত্যুযন্ত্রনা|হয়ত এটাই তার শেষ বিকেল,তবু আল্লাহর কাছ থেকে আর কিছুটা সময় চেয়ে নেয় সে| চোখটা কিছুতেই খোলা থাকতে চাইছে না, তারপরেও সাইফুল আপ্রানচেষ্টা করছে যাতে সে আর কিছুক্ষনবেঁচে থাকতে পারে|কারন ঠিক এই সময়টাতে শহরের সবচেয়ে সেরা কলেজটা ছুটি হয়,আর একটা বিশাল কালো গাড়ি এসে দাড়ায় সাইফুলের ঘরের সামনের রাস্তাটায়|আর তার ভেতর থেকে নামে ওর স্বপ্নের রাজকন্যা| মেয়েটার চেহারায় আহামরি কিছু নেই|তবে অসম্ভব রকম সুন্দর একটা কাঠিন্য আছে| মনে মনে ভাবে এত বড়লোকের মেয়েদেরমাঝে এমন একটু কাঠিন্য ভাব থাকেই|তবে সাইফুলের কাছে এই কাঠিন্যই ভাল লাগে|মেয়েটার নামটা এখনো বলা হয়নি|সাইফুলের সেই স্বপ্নকন্যার নাম মেঘলা|

রাস্তার ওপাশেই বিশাল বড় বাড়িটা|তার দোতলায় থাকে মেঘলা|মেঘলার ঘরটা আর রাস্তার এপারে সাইফুলের ঘরটা একদম সামনাসামনি|মেঘলা বেলকুনিতে এসে দাড়ালেই সাইফুল ওকে দেখতে পায়| মেঘলা যতক্ষন দাড়িয়ে থাকে সাইফুল ঠিক ততক্ষন তার ভাঙ্গা কুটিরের থেকে ওকে দেখতে থাকে|তবে এই দু-তিন বছরেও মেঘলা বুঝতে পারেনি কেউ তার দিকে এভাবেতাকিয়ে থাকে|রোজ নির্দিষ্ট একটাসময়ে মেঘলা বেলকুনিতে আসে|মাঝে মাঝে সাইফুলের মনে হয় হয়ত ও মেঘলাকে দেখবে তাই মেঘলা আসে|আবার নিজেই নিজেকে শাসন করে এইসব ভুলভাল ভাবার জন্য|আবার নিজেকে প্রশ্ন করে,“আমি কি মেঘলাকে ভালবাসি?” ওর মন ওকে জবাব দেয়,“না|মেঘলাকে ভালবাসার সাহস তোর নেই,আর অধিকারও নেই|” আবার নিজেকে সান্ত্বনা দেয়,“মেঘলার মুখের ঐ কাঠিন্যই আমার ভাল লাগে|আর কিছুই না…“

উফ!!বুকের যন্ত্রনাটা তো বেড়েই চলছে,কমছে কই?তবুও মেঘলাকে ভাবতে ভাল লাগছে ওর|এই মেয়েটাকে ভাবতে ভাবতে যদি মরা যায় মন্দ হয়না|“প্রথম কবে মেঘলাকে দেখেছিলাম যেন?ওই তো যেদিন প্রথম আসলাম এই এলাকায়|মেঘলার বাবাই তো দয়া করে আশ্রয় দিয়েছিলেন,একটা চায়ের দোকান করে দিয়েছেন|ওর হঠাত মনে হয়,মেঘলা যদি আমাকে ভাল নাই বাসে তবে আমি যে দুদিন গ্রামে ছিলাম,তখন কেন মেঘলা তার চায়ের দোকানে এসেছিল?
উত্তরটা তার জানা নেই|তবে সাইফুল মেঘলার ব্যাপারে অনেক কিছু জানে|মেঘলার বাড়ির ছুটা কাজের বুয়ার থেকে সব শুনেছে|মেয়েটা কতটা ছেলেমানুষ,বাবার কত আদুরে,সারাদিন কি কি করে সব জেনেছে| তবে সবথেকে ভাল লেগেছে এটা জেনে যে মেয়েটার মনটা খুব নরম|

গাড়ির হর্নে বাস্তবে ফেরে সাইফুল|এই তো গাড়িটা এসে গেছে|মেঘলা নামছে গাড়ি থেকে|আহা সম্পূর্ন সাদা ইউনিফরমে মেঘলাকে তার মনের মতই লাগছে|মেঘলা চলে যাচ্ছে তার বাড়ির পথে|কোনদিন মেয়েটা এদিকে তাকায়না,তবুও সাইফুলের আজ খুব ভাবতে ইচ্ছে করছে,”আজ মেঘলা তাকাবে|তার দিকে এগিয়ে আসবে|”

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সাইফুল|মেঘলা সত্যিই এগিয়ে আসছে তার দিকে|মুখে কোন কাঠিন্য নেই,বরং মুখটা হাসি হাসি|ঈশ হাসলে কি সুন্দর দেখায় মেয়েটাকে!! মেঘলা সাইফুলের ঘরের দড়জায় এসে দাঁড়াল|সাইফুল জানেনাএই অসম্ভবটা কি করে সম্ভব!এর নামহ্যালুসিনেশন|বুকের যন্ত্রনাটাআরো তীব্র হচ্ছে|চোখের কোনে একফোটা পানি চলে এসেছে ওর|খুব ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে মেঘলার হাত টা ধরে ভালবাসি বলতে|কিন্তু পারছে না|চোখের সামনেটা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে|ঝাপসা হচ্ছে মেঘলাও…
আর কিছু ভাবতে পারলনা সাইফুল|তবুও জীবনের শেষ অসম্পূর্ন বাক্যটা উচ্চারন করল,“মেঘলা,তোমাকে সত্যিই…|”

গল্পটা শেষ|আমি এই গল্পের রাইটার|তাই আমি সাইফুলকে মরতে দেবনা|সাইফুল বাঁচবে…
ঐদিন শেষ বিকেলে সত্যিই একজন আসবে|সে সাইফুলের সেবা করে সুস্হ করে তুলবে|তারপর একটু একটু করে মেঘলার অস্তিত্ব ওর মন থেকে মুছে দেবে|তারপর??
আমিও আর জানিনা…
তবে আমি একটু কাঁদব|

No comments:

Post a Comment