Friday, March 17, 2017

নিয়ন আলো " লিখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

নিয়ন আলো
" নিয়ন আলো "
লিখেছেনঃ যে ছেলেটি বিদ্যুতের বন্ধু

মাঠের এক কোনায় কাশেম মামার চায়ের দোকান ।
সিগারেট খাওয়ার জন্য দোকানের পেছনের অংশটা আদর্শ জায়গা ।
প্রতিদিন গভীর রাতে পরপর তিনটা সিগারেট একই সাথে খাওয়ার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে অপুর ।
একা একা বসে সিগারেটে টান দেয় সে ।
ব্রান্ড বেনসন ।
সিগারেটের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ।
সরকারের খেয়ে দেয়ে কাজ নাই, দেশের এত সমস্যা থাকতে সিগারেটের পেছনে লাগছে ।
অপুর মতো যারা হিসাবের টাকায় চলে, তাদের জন্য বিষয়টা খুবই পেইনফুল ।
সিগারেট ছাড়া অপুর পক্ষে সম্ভব না ।
ভার্সিটি পড়ুয়া কোন ছেলে বেনসন এর চেয়ে নিচের কোন ব্রান্ডের সিগারেট খাওয়া একটা প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু!
অপুর খুব কাছের বন্ধু রনি বলেছিল, দোস্ত সিগারেটটা ছাইড়া দে ।
এই ফালতু জিনিসটা খুব ক্ষতিকর ।
না খাইলে কি এমন ক্ষতি ।
অপুর বিষয়টা সহ্য হয়নি ।
মুখের উপর জবাব দিয়েছে, শালা তুই যদি একদিন তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা না বলিস কেমন লাগে ??
সিগারেট না খাইলে আমারো তেমনই লাগে ।
প্রসঙ্গ অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে, রনি সেদিনই জন্মের মতো চেপে গিয়েছিল ।
আর কোনদিন সিগারেট প্রসঙ্গ তোলেনি ।
উদাস ভঙ্গিতে সিগারেটে টান দিচ্ছিল অপু ।
আউউ!
অন্যমনষ্ক থাকায় সিগারেট যে অন্তিম মুহুর্তে পৌঁছে গেছে বুঝতে পারেনি অপু ।
ঠোটে ছ্যাকা লাগছে!
ফোন বেজে উঠল ।
লিটন ভাই ফোন দিয়েছেন ।
জি ভাই বলেন ।
কই তুই ?
ভাই আমি একটু বাইরে আসছি...ক্যাম্পাসে
এত রাইতে...বিড়ি ফুকতে গেছিস !
না মানে ভাই!
হলের বড় ভাইয়ের মধ্যে লিটন ভাই অপুর সবচেয়ে ক্লোজ ।
শোন, তোর বিড়ির বিল মেটানোর জন্য একটা টিউশনি পাওয়া গেছে ।
ইংরেজি আর অংক পড়াতে হবে ।
কাল রেডি থাকিস নিয়ে যাবো ।
ঠিক আছে ভাই ।
স্যার, আজকে পড়ব না ।
কেন ?
ভাল লাগছে না ।
মেজাজটা খারাপ হলেও, মুখটা স্বাভাবিক রেখে অপু বলল ঠিক আছে, যাই তাহলে আজ ।
যাই মানে ?! বসুন আজ আপনার সাথে গল্প করব ।
আমি গল্প করতে পারি না ।
আপনার পারা লাগবে না!
প্রথম যেদিন সৃষ্টিকে পড়াতে এসেছিল, মোটা কাচের চশমার আড়ালে একজোড়া ধূসর মায়াভরা চোখ অপুকে ভীষন আকর্ষন করেছিল ।
অসম্ভব মেধাবী স্টুডেন্ট সৃষ্টি ।
একবারের বেশি কিছু বলতে হয় না ।
ভীষন মনোযোগী স্টুডেন্ট যাকে বলে আর কি ।
মাঝে মাঝে সৃষ্টির সামনে নিজেকে অসহায় মনে হয় অপুর ।
স্যার, আপনার সব কিছুই ভাল, কিন্তু একটা জিনিস ভীষন বাজে লাগে ।
কি ?
আপনার মুখের সিগারেটের গন্ধটা খুবই বাজে । এটাই আপনার একমাত্র খুত!
পৃথিবীতে কোন মানুষই পারফেক্ট নয় ।
উঠছি আজকের মতো ।
অপু কোনমতে পরিস্থিতি সামলে পালাতে চাইছিল ।
স্যার, আর একটু বসেন...আমি আসছি ।
এটা আপনার জন্য ।
কি এটা ?
খুলে দেখেন ।
ভেতরে কালো রঙয়ের একটা টি-শার্ট......রি-স্টার্ট মাই লাইফ টাইপের কি একটা শ্লোগান লেখা ।
কি উপলক্ষ্যে এটা ?
আর আমি তো নিজেই অনেক কালো!
কোন উপলক্ষ্য-টুপলক্ষ্য না...এমনি ।
এইটা পড়লে তো আমাকে কোকিলের মতো কালো লাগবে !
কোকিল না স্যার...কাক !
আজ হেটেই হলে ফিরবে অপু ।
মনটা ভীষন ভাল ।
এই মেয়েটার জন্য সিগারেট ছাড়া যেতেই পারে ।
মুখ থেকে গন্ধ দূর করাই যায় !
সন্ধ্যা হয়ে আসছে ।
ল্যাম্পপোস্ট গুলো থেকে টিম টিম করে মৃদু আলো জ্বলছে ।
সোডিয়াম আলোর বৃষ্টি হচ্ছে যেন!
সৃষ্টিকে পাশে নিয়ে সোডিয়াম আলোর বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও আপত্তি নেই অপুর ।
শুধু চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিতে হবে ।
ঝাপসা চোখে অবাক হয়ে সৃষ্টি তাকিয়ে থাকবে ।
বাল্বের আলো থেকে ছুটে আসা লক্ষ কোটি ফোটনের বৃষ্টিতে ভিজতে থাকবে দুজন ।
ভিজতে থাকবে...ভিজতেই থাকবে....

No comments:

Post a Comment