Friday, March 17, 2017

আমার বন্ধু ও একজন বোরকাওয়ালি লিখেছেনঃ Ami Sopnil

আমার বন্ধু ও একজন বোরকাওয়ালি
আমার বন্ধু ও একজন বোরকাওয়ালি
লিখেছেনঃ Ami Sopnil

বন্ধুদের মধ্যে রাজু আমার খুব কাছের, কাছের এই কারণে সে আমার বাসার কাছেই থাকে, কারণে অকারণে বাসায় এসে পেইন দেয়। বিরক্ত হয়ে কত গালিগালাজ করি তারপরও ব্যাটা দাঁত বের করে হাসে। ছোট বেলা থেকেই দুজন একসাথে পড়ি,স্টুডেন্ট ও দুজন সেইম মানের। ক্লাসে বই পড়ার বদলে তিন গোয়েন্দা পড়ে সময় কাটাতাম। ভার্সিটিতেও এক সাথে ভর্তি হলাম। আমি টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিং এ আর ওই ব্যাটা সি এস ই তে।কারণ কি? কারণ কিছুনা সি এস ই নাকি তার চেহারার সাথে যায়, চেহারায় নাকি প্রোগ্রামার প্রোগ্রামার ন্যাচারাল ভাব আছে। যাই হোক বন্ধু আমার প্রেম টেম করে না, আমার মত অবস্থা। সুখে দুখে আমার বাসায় এসে পেইন দেয়া ছাড়া সে এমনি ব্যাপক ভাল, সহজ সরল ছেলে। যদিও আজকাল ভদ্র ভাষায় বোকা ছেলেদের সহজ সরল বলে থাকে। এক্সাম শেষে সবাই বাড়ি থেকে ঘুরে আসে কিন্তু সে বাড়ি যায়না, বেশ কিছুদিন আমার বাসায় ও আসে না। কাহিনী কি ? খোজ নিয়ে জানলাম ফেসবুকে তার একজন ফ্রেন্ড হয়েছে তার সাথেই সারাদিন চ্যাটে ব্যস্ত থাকে। একদিন জরুরী কল দিয়ে বাসায় এনে জিজ্ঞেস করলাম কিরে কি ব্যাপার কাহিনী কি? বাসায় আসিস না, কি করিস সারাদিন। ও একটু লাজুক ভঙ্গিতে বলল দোস্ত ফেসবুকে একজনকে ভালো লাগসে তার সাথে চ্যাট করি। আমি বলি কস কি দোস্ত। কেমনে কি হইল? ছবি দেখা তো। দাড়া ফেসবুক আইডি বল খুঁজে বের করি। মেয়েটার ফেসবুক আইডিতে তে গিয়ে দেখি, প্রোফাইলে আপাদমস্তক বোরকাপরা একজন খালি চোখ দেখা যায়। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে এইডা কি ! স্ক্রিন তো পুরাই ব্ল্যাক। তুই কি আর ছবি দেখছস নাকি এই চোখ দেখেই প্রেমে পিছলা খাইসস? ও আমাকে বলল আরে চেহারা দিয়ে কি হবে, আমি তো তার মন মানুষিকতা, তার আচার ব্যবহার কে পছন্দ করি। চেহারায় কি আসে যায়। তো আমি বললাম ঠিক আছে তর এতই যখন ভালোবাসা দরকার তাইলে আমাদের বুয়ার মেয়েকে বিয়ে করে ফেল, মেয়েটাও তোকে অনেক ভালবাসবে, জোছনা রাতে বলবে এই হুনো, জানালাডা খুইলা দেও, চানডা কত সুন্দর উঠছে দেখস! তাছাড়া বুয়ার গ্রামে এক খন্ড জমিও তোরে দিবে, চাষ করে খেতে পারবি। যাই হোক ও এই লোভনীয় অফার গ্রহণ করল না, বলে ফাইজলামী রাখ, প্রেম স্বর্গীয় ব্যাপার তোর মত মুর্খ মানব তাহার কি বুঝিবে! তো এখন আমারে হেল্প কর, মেয়েটা কে কেমনে জিগাই তার বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি, যদি কিছু মনে করে।তুই কিছু টিপস দে, কিভাবে তাকে বলি বোরকা ছাড়া ছবি দিতে। আমি বললাম দাড়া ও অনলাইনে আছে? বন্ধু আমাকে তার ফেসবুক আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। দেখলাম মেয়েটা অনলাইনেই আছে।টেক্সট দিলাম কি ব্যাপার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে বিজি নাকি? মেয়েটা আনসার দিল, আমার বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি লিখলাম হুহ, সবাই এমনি বলে অথচ চার পাঁচটা বয়ফ্রেন্ড মেইন্টেইন করে করে এমন ভাব নেয় সে এখনো সিঙ্গেল। মেয়ে রেগে গিয়ে বলল আমার সাথে এভাবে বলবা না, আমি ওইসব ফালতু মেয়ে না, প্রেম গুনার কাজ। আমি প্রেম পছন্দ করিনা। বন্ধু তো খেপে বলে যা তোর চ্যাট করতে হবে না, ও খুব রেগে গেছে, তোকে আইডি টা দেয়াই ভুল হইছে, আমি বললাম আরে ব্যাটা তুই না জানতে চাইলি তার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, এখন তো জেনে গেলি বয়ফ্রেন্ড নাই, আর থাকলেও অন্যের সাথে টাঙ্কি মারতে আপত্তি নাই। এ শুনে রাজুর মুখে হাসি। সেদিনের মত বিদায় নিল। তারপর আর খোজ খবর নাই। ভার্সিটিতে একদিন দেখা হল, বলল দোস্ত সে আমাকে তার ছবি দিছে। জিজ্ঞেস করলাম বোরকাঅয়ালী ছবি দিছে? তা বোরকা ছাড়া নাকি সহ? বলল বোরকা ছাড়া । মোবাইল বের করে দেখানোর আগে বলল এমনিতে অনেক সুন্দর সামান্য মোটা এই আরকি। ছবি দেখে আমি আঁতকে উঠলাম, কিরে এ সামান্য মোটা কই? এ জলহস্তী হলেও তো কম বলা হবে, ডাইনোসর এর বাচ্চা কাচ্চার মত দেখতে। দোস্ত আর যাই হোক তুই যা হাল্কা পাতলা মানুষ, তোদের দুইজন কে এক সাথে দেখলে মনে করবে, দেশে দুর্ভিক্ষ আর তার কারণ পাশে নিয়ে ঘুরিস। বাদ দে! দেখলাম বন্ধুর মুখ মলিন। বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, তা মেয়ে নাম্বার দিছে? বলে না দেয়নাই এখনো তবে মেয়েরও আগ্রহ আছে। সে আমাকে প্রতিদিন অফলাইনে থাকলে মেসেজ দেয়,অনেক কেয়ার করে, বাবা মার খোজ খবর নেয়। ও অনেক কেয়ারিং, এমন মেয়ে এই সময়ে পাওয়া অনেক টাফ। দেখতে তেমন নাহলে তাকে আমার ভালো লাগছে, জানিনা তুই কিভাবে নিস, দেখ লাইফে চাওয়ার কি আছে, সুন্দরী বেশি হলে তার ডিমান্ড ও বেশি থাকবে, থাকবে অনেক ছেলের ভিড়। এত কিছু উপেক্ষা করে সে কি আমার জন্য আসবে? আসবে না। আর যাদের পেছনে পোলাপান ঘুরে বেশী তারা এমনিতেই অহংকারী হয়ে যায়, ভাবে একটা গেলে তো আরেকটা তো পাবই। আমার দরকার একজন ভালো মানুষ। ভালো চেহারার না। ও যেমন আমি তাতেই খুশি। বুঝলাম বন্ধু মেয়েটার প্রতি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছে, তাই আর খোঁচালাম না, বললাম কোন হেল্প লাগলে জানাইস। আবার অনেক দিন দেখা নেই। একদিন শুনি মেয়ে নাম্বার দিছে, দেখা করতে বলছে। মিরপুর গিয়ে দেখা করে আসতে হবে। ফাস্ট ডেটিং এ যাবে চরম নার্ভাস। কি পরে যাবে, কি বলবে অবস্থা খারাপ। বললাম গুগলে সার্চ দে, ওমা সে দেখি সত্যি সত্যি গুগলে সার্চ দিল। যাই হোক সেদিন ডেটিং থেকে আসল, মন খুব খারাপ। কিরে কাহিনী কি? বলল বোরকাওয়ালী তাকে একটা বই গিফট দিছে, ফাস্ট ডেটিং এ এমন বই পেয়ে বেচারা শকড। কি বই? হাতে নিয়ে দেখি বইয়ের নাম শয়তানের আসর প্রেম রোমান্টিকতা। হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পরার মত অবস্থা, ডেটিং এ গিয়ে এমন বই হবু গার্লফ্রেন্ড এর কাছে থেকে পেলে শকড হবারি কথা। বললাম দোস্ত তুই টেনশন নিস না, মেয়ে দেখবি ঠিক ই কল দিবে। তুই বাসায় গিয়ে ঘুম দে,দেখা করার টেনশনে ঘুমাস নাই। রাতে রাজুর কল পেয়ে অবাক, কারণ রাত বাজে সাড়ে তিনটা। ফোন ধরে বললাম কিরে এত রাতে, কোন ইমার্জেন্সি নাকি? হাসতে হাসতে বলে আরে না, বোরকাওয়ালী কল দিছে। বুঝছিস টি এস সি তে দেখা করতে কইছে। মেজাজ যা খারাপ হল কয়েকটা গালি দিয়ে বললাম শালা এই নিউজের জন্য আমার ঘুমের ১২টা বাজাইলি? তোর বোরকাওয়ালীরে পাইয়া লই। তারপর বন্ধু ডেটিং মেরে বেড়ায়, আজকে ধানমন্ডি লেক তো কালকে সংসদ ভবন। একদিন জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা বোরকাওয়ালী কি ডেটিং এ বোরকা পরে আসে? মুখ দেখা যায়? নাকি চোখের দিকে চেয়েই তোর দিন চলে যায়? ও হেসে বলে না,আমি যে ড্রেস পরতে বলি সেটা পরে আসে। বল্লা বাব্বাহ তোর দেখি উথাল পাথাল প্রেম তা কিস করছিস? অ লজ্জা পেয়ে বলে আরে দুর হাত ই ধরি নাই এখনো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোর গার্ল-ফ্রেন্ড তুই হাত ধরবি না? ও বলে আরে পরহেজগার মানুষ কি না কি মনে করে। বললাম এমন পরহেজগার যে ডেটিং মেরে বেড়ায় না। নেক্সট টাইম দেখা করলে হাত ধরবি। তবে হা হাত ধরার আগে তুই ডাম্বেল নিয়ে প্র্যাকটিস করিস বাসায়, বলা যায় না যদি আলগাতে না পারিস। ইস্পাত কঠিন দৃষ্টিতে আমি অফ হয়ে গেলাম। কয়েকদিন পর হঠাত ফোন, ফোনে বন্ধুটা কাঁদছে। জিজ্ঞেস করলাম কাহিনী কি? তোর কি হইছে তুই এখন কই? বলে দোস্ত মেয়েটা আমার সাথে চিট করছে, সে নাকি আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি, বন্ধু হিসেবে দেখেছে, আমার খারাপ লাগবে বলে বলেনি এতদিন। বললাম তোর সাথে দেখা করার আগ্রহ তো সেই দেখাত, ক্লাস বাদ দিয়ে দেখা করতে বলত। এই মেয়ে তো মহা ফাজিল। তোর সাথে অভিনয় করছে এত দিন? রাজু হ্যাঁ বলে জবাব দেয়। এখন নাকি মেয়েটা রাজুর অন্য বন্ধুদের কাছে ওর বদনাম করে,বলে ও ভালো ছেলে না, ও এই সেই। মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়ে গুলো এমন করে কেন? ভালো ছেলেগুলো কে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে কিছু দিন পর লাইফটাকে বরবাদ করে দেয়। কি লাভ হয় তাদের, সাময়িক কিছু ভালোলাগা ছাড়া। আমার কেনও জানি মনে হয় এই মেয়ে গুলো জীবনে সুখ তেমন একটা পাবেনা। সময় ই তাদের কে সেই শিক্ষা দিবে। আজ আমার বন্ধু টা অসুস্থ, কোনভাবেই ঘুমাতে পারছেনা। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন প্লীজ।


ღ গল্পটি ভালো লাগলে লাইক ও কমেন্টস দিয়ে লেখককে আরো নতুন নতুন নতুন গল্প লিখতে উৎসাহিত করুন। ღ

No comments:

Post a Comment