Friday, March 17, 2017

দ্বিধা লিখেছেন- sesh rater adhar

দ্বিধা
দ্বিধা
লিখেছেন- sesh rater adhar

আজ হাটতে খুব ভাল লাগছে । আকাশটা মেঘলা । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । ছাতাটাও সাথে নেই । থাক ভিজলে কিছু হবে না । শুধু একটু আম্মুর বকুনি, এইটুকুই তো আর কিছুই না । আর অসুখ হলে ভালই লাগে রোদ এর। অন্যরকম ভাললাগা । মা বকে না, বাবাও খোজ-খবর নেয় । মা সারাক্ষণ মাথার কাছে বসে থাকে। "বাবা , একটু ভাল লাগতেছে তোমার ? কিছু খাবে বাবা ?",মা দরদ মাখা গলায় বলে । মা সবসময় তুই করে বলে, অসুখ এর সময় তুমিতে নেমে আসে । শুনতে ভাল লাগেনা, একদম না । মা এর মুখে তুই ই সুন্দর। তুমি বললে পর পর লাগে । যেমন রোদ এর গার্লফ্রেন্ডটা ওর পর । তাইতো তুমি করে বলে । আর এই তুমি এর অজুহাতে কতকিছু । রোদ যখনই ফোন দিবে লিমা বলবে -"আম্মু সামনে। কি করে কথা বলি?"
এরপরই ফোন কেটে দিবে ।
রোদ এর ভাগ্য নামক বস্তুটা খুব একটা মোটাসোটা না । খুবই দুর্বল, রোদের মতই । মা খুব করে বলল ছাতাটা নিয়ে যা। মা কেন বোঝেনা ছেলের এখন বৃষ্টিতে ভেজার বয়স হয়েছে। এখনও কি ছোট নাকি রোদ?এক বছর হল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
একদিন খুব গরমের মধ্যে নিজের নামের থেকে বাঁচার জন্য , মানে রোদের থেকে বাঁচার জন্য হাতে করে ছাতা নিয়ে গেল লিমার সাথে দেখা করতে রোদ।
লিমা বলল - এসব কি নিয়ে এসেছ আমার সাথে দেখা করতে ? রোদের ভিতর ছেলেরা ছাতা নিয়ে ঘুরে? এটা মেয়েদের মানায় । next দিন এসব নিয়ে দেখা করতে আসবে না।
ভাগ্য যেহেতু মোটাসোটা না তাই রোদ জানে আজ বৃষ্টি হবে । কারণ ও আজ ছাতা নিয়ে আসেনি । মা কি রোদকে কখনই বড় ভাববে না?
মা বলে - রোদ, তুই এত বোকা কেন বাবা ? তুই কি কখনই চালাক হবি না ?
"মা আমি বোকা নই, তুমি কেন বুঝ না ? "-একাই ভাবল রোদ ।
"ইশ! তোর মাথার চুল এত বড় হয়ে গেছে , তুই চুল কাটিস না কেন ? চুল বড় রাখলে তোকে গুন্ডা মাস্তানের মতন লাগে। চুল একেবারে ছোট ছোট করে কেটে আসবি ।"
ছেলে বড় হলে চুলও বড় রাখতে হয় মা বুঝে না ।
- তুমি আর চুল কাটবে না । চুল এত ছোট করে কাট কেন ? তুমি কি কোন 5 star হোটেল এর দারোয়ান নাকি? চুল ছোট রেখে চেহারায় একটা পুলিশ পুলিশ ভাব আনতে হবে? কেমন বান্দর বান্দর লাগে তোমাকে চুল ছোট রাখলে তুমি জানো? এখন থেকে চুল বড় রাখবে, ঠিক আছে ?"
লিমা কথাগুলো বলেই রোদের মাথায় হাত দেয়- এহ! কি জঘন্য! তুমি মাথায় তেল দাও? মাথায় তেল দিয়ে আর কখনও আমার সাথে দেখা করতে আসবে না। ছিঃ ছিঃ! আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে। তুমি এত বড় হয়ে গেছ তাও মাথায় তেল দাও? এই, তোমার মাথায় এগুলা কি তেল?
-সরিষার তেল ।
- ওহ ! সরিষার তেল মাথায় দিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছ? তুমি কি মানুষ? ছোট বাচ্চারা মাথায় তেল দেয়। তুমি ছোট বাচ্চা নাকি? আর মাথায় তেল দিবে না , ঠিক আছে ?
-আচ্ছা ।
- এইতো ভাল ছেলে।
পরদিন থেকে তেল দেওয়া বন্ধ।
-রোদ তোর মাথার চুল অমন শুকনা শুকনা লাগছে কেন? মাথায় তেল দিস নাই?
-মা, আমি ছোট ছেলে না। আমি বড় হইছি। আমার তেল দিতে ভাল লাগে না।
-কি বলিস? ভাল না লাগলেও দিতে হবে। মাথায় তেল দিলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। তেল দিবি নিয়মিত। তোর বাবার থেকে তুই বড় হয়ে যাস নায়। তোর বাবা এখনও মাথায় তেল দেন।
দুজনকেই ভালবাসে রোদ। তাই বাসায় মাথায় তেল দেয় আর লিমার সাথে দেখা করতে গেলে মাথা শ্যাম্পু করে শুকিয়ে তারপর যায়।
-তুমি গোল গলার টিশার্ট পরে এসেছ আবার? তোমাকে বলেছিলাম কলারওয়ালা টিশার্ট পরতে। কী সব ৫০ টাকা দামের টিশার্ট পর তুমি ?
-৫০ টাকায় টিশার্ট পাওয়া যায় নাকি ? আমারটার দাম মোটেও ৫০ টাকা না ।
- চুপ কর আর কথা বইল না । আমি যা বলেছি তা পরবে এখন থেকে। বেশি কথা বলবে না। তোমার এই ৫০ টাকা দামের টিশার্টগুলো ফেলে দিবে।
বাসায় গিয়ে সব গোল গলার টিশার্ট বের করল রোদ। এক ছেলে রোদের কাছে ২ টাকা চেয়েছিল, ছেলেটাকে ধরে নিয়ে এসেছে রোদ। সব গোল গলার টিশার্ট ছেলেটাকে দিয়ে দিবে। ছেলেটা এতগুলা নতুন ড্রেস পেয়ে খুব খুশি।
- কিরে কি করিস?
-মা, ছেলেটার জামা কাপড় নেই। তাই ওকে আমার সব গোল গলা টিশার্ট দিয়ে দিছি। গরীব মানুষ।
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে।
-হঠাৎ এই কাজ করলি কেন ?
-মাঝে মাঝে ভাল কাজ করতে হয়।
-তা বেছে বেছে ঐ টিশার্ট গুলোই দিলি কেন ? তোর তো অনেক পুরাতন শার্ট আছে। আর ঐ ছেলে কি শুধু টিশার্ট পরেই ঘুরবে? প্যান্ট লাগবে না? গায়ে নতুন টিশার্ট আর নিচে ছেঁড়া প্যান্ট, কেমন লাগবে?
- যা দিছি তাই অনেক । আর পারব না দিতে ।
রোদ গিয়েই কল করল লিমাকে । ১০ বার করল । ধরল না । ৩০ মিনিট পর মেসেজ আসল- আম্মু আর ছোট ভাই সামনে । কথা বলতে পারব না । রাতে কথা হবে । আমি তোমাকে কল করব।
রোদ বাহিরে অপেক্ষা করছে । রাত ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর রুমে চলে গেল ।  ১১.১৫ তে কল করল লিমা । দৌড়ে বাহিরে চলে আসল রোদ । কথা বলল কতক্ষণ হঠাৎ ই বৃষ্টি নামল ।
রোদ বলল - আমি রুমে চলে যাই ? বৃষ্টি নামছে ।
-হ্যাঁ যাও।
-আচ্ছা তাহলে রাখি ?
-রাখবে মানে ? সারাদিন কল করো, আর এখন আমি কথা বলতে চাচ্ছি তুমি বলবে না ?
-রুমে গিয়ে কথা বলব কি করে? আমরা তোমাদের মতন নাকি ? তোমরা ফ্ল্যাটে থাক । তোমার রুম আলাদা। আর আমরা একটা রুম আর একটা বারান্দা নিয়ে ভাড়া থাকি। আমার রুম আলাদা না। রুমে বসে কথা বললে আম্মু শুনে ফেলবে । কি করে কথা বলব ?
-যাও যাও, মায়ের কোলে গিয়েই বসে থাক।
-রাগ করতেছ কেন? সারাদিন আমি কথা বলতে চাই , তখন তো বল না। বল আম্মু সামনে, ছোট ভাই সামনে। আর এখন আমার ব্যাপারটা বুঝবা না ?
-আমাকে কিছু বুঝতে হবে না। যাও তুমি। তুমি আর কখনও আমার সাথে কথা বলবে না। মায়ের কোলেই থাক।

লিমা কল কেটে দিল।
-রোদ, এই বৃষ্টির মধ্যে বাহিরে কি এত রাতে? কার ফোন আসে তোর প্রতিদিন ?
-আম্মু , আমার ফ্রেন্ড।
- ফ্রেন্ড এর সাথে ঘরে বসে কথা বলা যায় না ?
রোদ কিছু বলে না। শুধু চুপচাপ ঘরে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ে। জীবনটা অনেক বিষাক্ত মনে হচ্ছে রোদের। সবার জীবনই কি এত বিষাক্ত? বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছা করছে রোদের। সারাদিন কথা বলতে পারেনা লিমা। রোদ তো রাগ করে না। রাতে কথা বলতে একটু সমস্যা হলেই লিমার এমন করতে হবে ? আর মা-ই বা কেমন? ছেলে বড় হইছে না? কথা বলার মানুষ তো থাকবেই। বুঝে না, লিমাও না, মা ও না। ধ্যাৎ! জীবন এত কষ্টের কেন ? কিছু একটা করতে হবে।
সেই কিছু একটা করার জন্যই হাঁটছে রোদ। এখনও বৃষ্টি নামেনি। লিমা দাঁড়িয়ে আছে বাধানো একটা বট গাছের নিচে। রোদ এসে দাঁড়াল লিমার সামনে।
লিমা বলল-কি জরুরি কথা বলবে বল ।
-মন দিয়ে শুনবা। মাঝখানে রাগারাগি করবা না। ঠিক আছে ?
- আচ্ছা ।
-আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । আমি তোমার সাথে কখনও রাগারাগি করি না । কিন্তু তুমি সারাদিন আমাকে বকাঝকা করো । আমি জানি আমার ভিতর অনেক বিরক্তিকর কিছু আছে যা তুমি সহ্য করতে পার না । তুমি চাও তোমার বয়ফ্রেন্ডটা তোমার মনের মতন হোক। যে কোন মেয়েই এটা চাইবে। আমার ভিতর আরও বিরক্তিকর অনেক কিছু আছে। আস্তে আস্তে তোমার চোখে পড়বে হয়ত। আমি এমনই লিমা। আমি ছোটবেলা থেকে মানুষের সাথে কম মিশি। আমার বেশি মানুষ ভাল লাগে না। আমার কোন বন্ধু ছিল না। আমি কারও সাথে খেলতাম না। খেলতে গেলে আমাকে নিয়ে সবাই হাসি ঠাট্টা করত, মজা করত। আমি খেলা পারতাম না। ছোটবেলা থেকে শুধু পড়ালেখাটাই পারছি। আমার ভিতর আর কোন extraordinary গুন নাই। জানো আমি সেই ছোট বেলা থেকে আমার ঘরে অভাব দেখতে দেখতে বড় হইছি। এখন আমি আমার খরচ চালাতে পারি টিউশনি করে। কিন্তু এমন দিনও গেছে আমি না খেয়ে থাকছি। আমার আব্বু প্রায়ই অসুস্থ থাকত, তাই কাজ করতে পারত না। সেজন্য খাবারও থাকত না ঘরে। কিন্তু কখনও আম্মুকে বলিনি, আম্মু ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও। আমি কষ্ট সহ্য করতে পারি। আমার আম্মু পারে না, আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। একবেলা খাবার না থাকলে আম্মু কাঁদত, আমি খেতে পারতেছি না তাই। আমার আব্বু আম্মু আমাকে অনেক ভালবাসে। এত অভাবের মধ্যেও আমার পড়ালেখা বন্ধ করেনি। আমার ভিতর একটাই ভাবনা ছিল, বড় হয়ে আব্বু আম্মুর কষ্ট দুর করব। প্রেম ভালবাসা এসব নিয়ে ভাবিনি কখনও। কিন্তু আমার জীবনে তুমি আসার পর থেকে আমার ভাবনা বদলে গেল । কিভাবে যেন তোমাকে ভালবেসে ফেললাম। অনেক বেশি ভালবেসে ফেললাম। আমার কোন বন্ধু ছিল না। তাই ছোটবেলা থেকেই আমার আম্মু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি আমার মাকে অনেক ভালবাসি তোমাকেও অনেক ভালবাসি। কাকে বেশি বাসি সে তুলনা এখানে নেই। কারন দুই ভালবাসা পুরোপুরি অন্যরকম। একটার সাথে অন্যটার তুলনা হয় না। কিন্তু তোমার সাথে রিলেশন হবার পর থেকে, দুই ভালবাসায় বার বার তুলনা চলে আসছে। তুমি আমাকে চাচ্ছ একরকম করে, আর আমার মা চাচ্ছে অন্যরকম করে। তুমি চাচ্ছ তোমার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে আর মা চাচ্ছে তার ছোট্ট রোদ হিসেবে। আমি অনেক চেষ্টা করছি বিশ্বাস করো অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে চেঞ্জ করার। তোমার ভালবাসার কারনেই এত চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি পারলাম না। এত তাড়াতাড়ি কেউ বদলে যেতে পারে না । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু আমি আসলেই কারও বয়ফ্রেন্ড হতে পারব না। তবে কারও ছোট্ট রোদ হয়ে থাকতে পারব। আমাকে মাফ করে দিও। আমি আসলেই পারব না চেঞ্জ হতে। আমি এমনই। আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করব। তুমি যদি কখনও এই ছোট্ট রোদটাকে ভালবাসতে পার, এসো আমার কাছে ফিরে ।
রোদ আর লিমা দুজনেরই গাল বেয়ে পানি পড়ছে। লিমা এক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।
লিমা বলল- আমাকে মাফ করে দাও রোদ। তোমাকে চেঞ্জ হতে হবে না।তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো। আমি চেঞ্জ হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসব। তুমি অনেক ভাল ছেলে। আমি তোমাকে হারালে জীবনের অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলব। তুমি জানো একটা ইংলিশ proverb আছে-" every wife finds her 1st son into her husband, but every husband finds his 2nd mother into his wife."আমার মানসিকতা যতদিন পর্যন্ত এমন করতে না পারব ততদিন আমার জন্য অপেক্ষা করো। রোদ, আমি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি ?
-আচ্ছা ।
লিমা রোদকে জড়িয়ে ধরল।
ধরে বলল - আমার জন্য অপেক্ষা করবে তো ?
- হ্যাঁ করব।
- আচ্ছা আমি আসি।
লিমা হেঁটে যেতে লাগল। রোদ সেদিকে তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল লিমা। হয়ত আবার কখনও দৃষ্টির ভিতর চলে আসবে। হঠাৎ আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। রোদ বৃষ্টিতে ভিজছে। লিমার কথা খুব মনে পড়ছে। ও থাকলে একসাথে দুজন হাত ধরে ভেজা যেত। কিন্তু হঠাৎ -ই রোদ দৌড়ে গিয়ে গাছের নিচে দাঁড়াল। না, বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না। মা বকা দিবে। আর অসুখ হলে মা পর পর হয়ে যায়। তুমি করে বলে। আমি আমার মাকে পর করতে চাই না।
আমি শুধু আমার মায়ের ছোট্ট রোদ!!!
বড় হতে চাই না!!!

No comments:

Post a Comment