Sunday, January 10, 2016

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)

অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন,
শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন,
জীবন প্রসব করে চলাই জীবন,
শুধু যোগ-বিয়োগের খেলাই জীবন।
শুধু সূর্যের পানে দেখাই জীবন,
জীবনকে ভোগ করে একাই জীবন ।
একই কক্ষপথে ঘোরাই জীবন,
স্বপনের সমাধি খোঁড়াই জীবন,
মনের গোপন ঘরে যে শ্বাপদ ঘর করে,
তাকেই লালন করে চলাই জীবন।
ফুটপাথে বেওয়ারিশ শিশুরা জীবন,
রাম, ইসলাম আর যিশুরা জীবন ।।
ওষুধের বিষপান করাই জীবন,
চিকিৎসাহীন হয়ে মরাই জীবন।
যে মেয়েটা রোজ রাতে, বদলায় হাতে হাতে,
তার অভিশাপ নিয়ে চলাই জীবন।
প্রতিবাদ প্রতিরোধে নামাই জীবন,
লক্ষ্যে পৌঁছে তবে থামাই জীবন ।।
স্বপ্নের বেচাকেনা করাই জীবন,
দেয়ালে ঠেকলে পিঠ লড়াই জীবন,
প্রতিদিন ঘরে ফিরে,
অনেক হিসেব করে,
‘এ জীবন চাই না’, তা বলাই জীবন।
এই বেশ ভাল আছি! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
এই বেশ ভাল আছি ! এই বেশ ভাল আছি,
কর্ম কাজ নেই, গাড়ি ঘোড়া কিছু নেই,
অফিস-কাচারী নেই, হাজিরা-কামাই নেই,
শব্দ বা পরিবেশ দূষণ বালাই নেই,
সময় দেই না বলে তেলে বেগুনে জ্বলে –
গিন্নীর রাগ নেই, টেলিফোনে ডাক নেই,
শহরেতে কারফিউ, লোকজন কেউ নেই,
এক-চার-চার ধারা, ফুটপাথে থাকে যারা,
কেউ কোথ্থাও নেই, নেই নেই কিছু নেই;
তবুও তো আছে কিছু বলতে যা বাধা নেই–
দু’নয়নে ভয় আছে, মনে সংশয় আছে,
ঐ ধর্মের বাঘ হেসে, আবার উঠোনে এসে,
আশ্রয় চেয়ে যায় মানুষেরই কাছে!
তাই, ভয় আছে দু’নয়নে ভয় আছে,
মনে সংশয় আছে।
ভেঙে গেলে জোড়া যায় মন্দির মসজিদ,
ভাঙা কাঁচ, ভাঙা মন যায় না,
রাম আছে, শ্যাম আছে, কোরান-ইসলাম আছে,
রক্তলোলুপ কিছু হায়েনা।।
এদেশটা ফাঁকা আছে, বিদেশের টাকা আছে,
ধর্ম না গ্রাস করে আমাদের পাছে।
তাই, ভয় আছে দু’নয়নে ভয় আছে,
মনে সংশয় আছে।
এই বেশ ভাল আছি!
ভাবার সময় আছে, তবুও ভাবনা নেই,
পার্কে তে ঘোরা নেই, সিনেমায় যাওয়া নেই,
উঠতি যুবকদের যাতনার সীমা নেই,
শিহরণ আনে প্রেমে এমন বাতাস নেই,
যুবতীর কটাক্ষ চিঁড়ে দেয় এ বক্ষ, হায়রে!
এমন দিনে সেই অবকাশ নেই,
চাল নেই, ডাল নেই, পয়সার দাম নেই,
তবুও টিভিস্ক্রীনে খেলার বিরাম নেই।
নেই নেই কিছু নেই, তবুও তো আছে কিছু, বলতে যা বাধা নেই –
যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
যখন সময় থমকে দাঁড়ায়
নিরাশার পাখি দু’হাত বাড়ায়
খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ
কী আর করে তখন,
স্বপ্ন দেখে মন।
যখন আমার গানের পাখি
শুধু আমাকেই দিয়ে ফাঁকি
সোনার শিকলে ধরা দেয় গিয়ে
আমি শূন্যতা ঢাকি
যখন এঘরে ফেরে না সে পাখি,
নিস্ফল হয় শত ডাকাডাকি
যখন এ মনে প্রশ্নের ঝড়
ভেঙ্গে দেয় যুক্তির খেলাঘর,
তখন বাতাস অন্য কোথাও
শোনায় তার উত্তর।
যখন আমার ক্লান্ত চরণ
অবিরত বুকে রক্তক্ষরণ,
খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ ….
চোর ! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
ভীড় করে ইমারত, আকাশটা ঢেকে দিয়ে-
চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ।
ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে-
গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ।
এরপর চুরি গেলে বাবুদের ব্রিফকেস
অথবা গৃহিণীদের সোনার নেকলেস-
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে,
চিৎকার করে বলে—
চোর ! চোর !! চোর !!!
প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা,
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা।
কিছুটা মূল্য পেয়ে ভাবি বুঝি শোধ-বোধ,
ন্যায় নীতি ত্যাগ করে-
মানুষ আপস করে,
চুরি গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ।
এরপর কোনো রাতে, চাকরটা অজ্ঞাতে,
সামান্য টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতে নাতে-
প্রতিদিন চুরি যায় দিন বদলের আশা,
প্রতিদিন চুরি যায় আমাদের ভালোবাসা।
জীবনী শক্তি চুরি গিয়ে – আসে নিরাশা।
সংঘাত, প্রতিঘাত দেয়ালে দেয়ালে আঁকা,
তবু চুরি যায় প্রতিবাদের ভাষা।
কখনো বাজারে গেলে,
দোকানী কিশোর ছেলে কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে,
ওজনেতে কম দিলে-
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে
চিৎকার করে বলে—
চোর ! চোর !! চোর !!!
সারে জাঁহা সে আচ্ছা ! , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
আমার পরিচয়– বেকার যুবক আমি,
সম্বল একটাই- দৈন্য।
ডিগ্রির ভাঁড়ারেতে তবু কিছু মাল আছে,
পকেটের ভাঁড়ারটা শূন্য।
যেদিকেই তাকাই না দেখি জন-অরণ্য
সে অরণ্যেই দেখি মানুষেরা বন্য,
বধূকে পোড়ানো হয়, অধর্ম জয়ী হয়-
মানুষের রক্তে দিনলিপি সই হয়।
হাসপাতালের বেডে টি.বি. রোগীর সাথে –
খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা,
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
লাঞ্ছনা গঞ্জনা মাখা অভিযোজনে-
রপ্ত করেছি নিজেকে,
অসৎ হবার বহু বহু প্রচেষ্টায়,
ব্যর্থ করেছি নিজেকে।
চাকরির সন্ধানে শুকতলা ক্ষয়ে যায়,
গঙ্গার জল তবু একইভাবে বয়ে যায়,
ঘুষ, ঘুষের এক ঘুষ-ঘুষে জ্বরে,
গোটা দেশ চিৎকার করে ডাকে ‘ডাক্তার’,
ডাক্তার উড়ে আসে ঋণের ওষুধ নিয়ে,
গঙ্গার পূজো হয় গঙ্গার জল দিয়ে।
বছরের অন্তে, বাজেটের যন্ত্রে –
পিষে দেই জীবনটা গচ্চা।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
প্রার্থীর যোগ্যতা অথবা অভিজ্ঞতা,
এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের দীনতা,
কোনো কিছুই কোনো কিছুকেই ঢাকে না।
আর, ‘লোক’ অথবা ‘বিধান’-
যে দিকেই তাকান,
রাজনীতিক হতে যোগ্যতা লাগে না।
হাজার প্রতিশ্রুতি বাতাসেই বয়ে যায়,
‘চলছে না, চলবে না’-
তবু তা ই হয়ে যায়।
কত শত শয়তান, হতে চায় ভগবান,
“আল্লাহ না বড় রাম?”- এই চলে অবিরাম।
খুনোখুনি লাঠালাঠি, অবিরাম অনুক্ষণ,
এদিকে তোমার-আমার পেটেতে ছুঁচোর ডন।
সমাজবিরোধী কিছু, করে বলে মাথা উঁচু-
“সমাজবাদের পথই সাচ্চা”।
তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে–
সারে জাঁহা সে আচ্ছা…!
শুধু বিষ দাও , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
শুধু বিষ দাও অমৃত চাইনা।
অমরত্বের লোভ করুক বিক্ষোভ,
জীবনকে যদি দাও নীল বিষাক্ত ছোপ
থাকবে না থাকবে না ক্ষোভ
আমার মৃতদেহে ঝুলবে নোটিসবোর্ড-
“কর্তৃপক্ষ দায়ী না” !
ধ্বংসের ব্যবসায় মগ্ন যে সভ্যতা, তার অমৃত চাই না,
বিভেদ মন্ত্রে দীক্ষিত যে সভ্যতা, তার অমৃত চাইনা,
সবুজ পৃথিবীটাকে যন্ত্রের কালো হাতে শ্বাসরোধ করে যে প্রগতি-
পরিসংখ্যানে মাপে জীবনের ক্ষয়ক্ষতি,
এমন প্রগতি চাইনা।
তুমি কি আমায় ভালবাস ? , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
হেই! তুমি কি আমায় ভালবাস?
যদি না বাসো, তবে পরোয়া করি না।।
আমি সূর্যের থেকে ভালোবাসা নিয়ে
রাঙাবো হৃদয়, তার রঙ দিয়ে;
পোশাকি প্রেমের প্রয়োজন বোধ করি না।
আমি তোমার জন্য
সস্তা প্রেমের নাটুকে নায়ক পারবোনা,
হতে পারবো না।
আমি তোমার জন্য
কোনো কুমারের ধার করা গান গেয়ে –
গায়ক পারবোনা হতে পারবো না।
যখন আমার ঘরেতে আঁধার
নেই একফোঁটা কেরোসিন,
পাওনাদারের অভিশাপ শুনে
জেরবার হয় বুড়ো বাপ,
আমিতো তখন পারবোনা খেতে –
চাইনিজ বারে চাওমিন, হে !
হেই! তুমি কি আমায় ঘৃণা করো?
যদি ঘৃণা করো, তবে পরোয়া করি না।।
আহা বয়ে গেছে সেই ভালোবাসা ধরে,
বহুকে হারানো স্বপ্নকে ছেড়ে-
সবাইতো আর নিজেকে বেচতে পারেনা!
আমি তোমার দু’পায়ে
আমার চেতনা-স্বাধীনতা সঁপে
পারবো না দিতে পারবো না।
আমি তোমার জন্য সবকিছু ছেড়ে-
তোমার আঁচলে মুখ ঢাকা দিতে পারবো না।
আমার চলার পথের বাঁকেতে
পড়ে জীবনের দাম।।
যেসব মানুষ সেই দাম খোঁজে
সবকিছু জেনে সবকিছু বুঝে
মুছে দাও যদি আঁচলেতে সেইসব মানুষের ঘাম;
হেই, তবেই আমায় পেতে পারো।
যদি তাই পারো,
তবে পরোয়া করি না।।
জেনো তোমার জন্য ধুলোমাখা পথ
অপলকে চেয়ে জীবনের রথ –
সবকিছু ছেড়ে তুমি কি আসতে পারোনা?
বুড়ো ভাম, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
কেউ বলে বুড়ো ভাম, কেউ বলে পাঁজি !
কেউ বলে, “এইবার ব্যাটা মরলেই বাঁচি;
“ঘরে গুঞ্জন, বরাদ্দ ভ্রূকুঞ্চন,
দেখলেই মুছে যায় ছেলের হাসি।
অপরাধ একটাই জেনে রাখো সব্বাই-
আমার বয়স হল আশি !
বাসে ট্রামে ওঠা দায়,বসলে লেডিস সীটে –
মামণিরা মনে মনে বিরক্ত হয় !
কেউ বা দেয় আওয়াজ- বুড়োটা ধান্দাবাজ,
মেয়েদের কোলে বসে যাচ্ছে মজায় !
বৃথা হয় প্রতিবাদ, বয়সটা বাঁধ সাধে
ছানিপড়া দু’টি চোখ পলক নামায়।
সভ্য এই পৃথিবী অসভ্য দংশনে-
ছিঁড়ে ফেলে আমাদের এবং আমায়।
পরিণতি একই জেনে, তবু তারই অবকাশে
“ঘুঁটে যায় পুড়ে তবু গোবর হাসে!”
যৌবন যার নাম, কাল সেতো বুড়ো ভাম
আজকের ফুলমালা কালকেই বাসি।
পরিণতি একটাই, জেনে রেখো সব্বাই-
সবার বয়স হবে আশি।
কলকাতা, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
তিনশ’ বছর বুকে নিয়ে পথ চলে অম্লান মুখে,
ও কলকাতা !
চাণক্যের/চার্নকের তুমি মানসী গো, জীবনানন্দের প্রিয়া;
কল্লোলিনী, তিলোত্তমা, তুমি সকলের হিয়া।
তবুও যৌবন ধুঁকে ধুঁকে মরে তোমার জীর্ণ বুকে।
স্বপ্নমাখা শহর যেন ডাকে হাতছানি দিয়ে,
ভিক্টোরিয়া, শহীদ মিনার, প্ল্যানেটরিয়াম নিয়ে।
তবুও ফুটপাথে মেলা ভিখারীর, দেখেও দেখে না লোকে।
কত গুণীজন, বিরাট প্রাণ তোমার ছবি আঁকে,
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন আরো কত ভুলবে কাকে ?
তবুও ঋত্বিক, সুকান্ত মরে জানতে পারেনা লোকে।
কতনা উন্মাদনা ক্রিকেট আর ফুটবল খেলায়,
রদ্যাঁর ভাস্কর্য, ফিদা হুসেনের চিত্রকলায়।
তবুও খেলার মাঠে অকারণে মরে কত লোকে।
মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেই জন, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
মন দিয়ে লেখাপড়া করে যেই জন,
বড় হয়ে গাড়িঘোড়া চড়বে সে জন!
মুছে যাবে অভাব, সব অনটন,
হবে রাশি রাশি হাসি মাখা তোমার জীবন।
বাংলা না ইংরেজি? সে প্রশ্ন থাক থাক
সিলেবাস দেখে প্রাণ- ‘বাপ বাপ’ ছাড়ে ডাক !
বিজ্ঞান দু’প্রকার, আটখানা বই তার,
ভূগোলটা গোলমেলে, গোটা দুই বই তার।
ইতিহাসে জানা বেশি, বই তার থেকে বেশি
বইয়ের ভারেতে বুঝি ঢিলে হয়ে যাবে পেশী।
অঙ্কটা আতঙ্ক, টিউটার নিয়ে নিই,
সে যদি স্কুলেরই হয় তবে ফ্যান্টাস্টিক !
কতশত আঁকা আছে, আঁকিয়ে কে ডাকা আছে,
কর্ম শিক্ষে আছে, সেলাই ভিক্ষে আছে,
মাথা বন বন পিতা হেসে কন, মাতা হেসে কন-
কী ???
বাচ্চা হবেই শুনে চারিদিকে খোঁজ খোঁজ-
কোথা ভাল স্কুল আছে, আলোচনা রোজ রোজ।
কারা ক’টা ফর্ম দেবে, কারা ক’টা ছেলে নেবে
প্রোপার এডুকেশন, মোটামোটা ডোনেশন-
ক্ষতি নেই যদি দাও ওভার-ওভারডোজ !
রাত জেগে বাবাদের লাইন দিয়ে ফর্ম তোলা,
ডোনেশন দিলে পরে পিছন দরজা খোলা।
ছেলে কি প্রতিভাবান ?
হক কথা শুনে যান,
প্রতিভা ট্রতিভা সব নাথিং বাট ফান
রাম নাম মনে করে জপে যান বার বার-
একটি ছোট্ট কথা ‘ম্যানিপুলেশান’!
এরপর পড়ে থাকে ভর্তির পরীক্ষা;
ছেলে নয়, মা-বাবার অগ্নিপরীক্ষা !
চুকে জীবনের দাম্পত্যের সুখ
গ্রামদেশে বিয়ে করা বাবা আনে হাতে ধরা-
মায়েদের জন্যে ইংরেজি ওয়ার্ডবুক !
তিনজনে শিক্ষিত হতে চায় রাতারাতি
শিক্ষাই সত্যি তলোয়ার প্রাণঘাতী !
বাচ্চার হয়ে গেলে মা-বাবার প্রতীক্ষা,
কবে স্কুলটাকে নিতে তাঁদের পরীক্ষা !
সব কিছু ভালভাবে যদি শেষ হয়ে যায়,
বাবা গর্বিত হয়ে মুখ দেখে আয়নায়
বাচ্চাটা আয়নাতে দেখে শুধু আনমনে
হয়ত কোনো শপথ করে সে মনে মনে
শিক্ষার আয়নায় সমাজকে চেনা যায়
সমাজ কি দেখে মুখ শিশুদের আয়নায় ?
যে শিশু জন্ম নিল শিক্ষার বহু দূরে
শিক্ষা কি আলো দেয় তার কালো মুখ ভরে?
কে বলবে তার কানে সুর আর গানে গানে
আশার বাণী, প্রবাদ কথন, মধুর ভাষণ ?
শুনবনা গান, অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
শুনবনা গান, গান শুনবনা !
গান গেয়ে, গান শুনে ভরেনা তো পেট;
খালি পেটে হাঁটাচলা করে মাথা হেঁট।
গান যদি খাওয়া যেত, তবে বড় ভাল হত-
রেশনের লাইনেতে ভীড় যেত কমে,
দোকান বাজার উঠে যেত প্রত্থমে !
তা যখন হয়না, কিছু বদলায়না,
কেন শুনব- ‘একঘেঁয়ে ঘ্যান ঘ্যান ?’
একঘেঁয়ে ঘ্যান ঘ্যান, বিরহ প্রেমের গান –
আমি তুমি, তুমি আমি আমি তুমি! –
পারমুটেশ্যান আর কম্বিনেশ্যান।
অথবা, “শোষকদের কালো হাত ভেঙে দাও”-
এই বলে চিৎকার এটাও তো গান।
শোষকের ক’টা হাত, ক’টা মাথা, ক’টা দাঁত,
এর কোনো উত্তরও দেয়না যে গান।
উত্তর একটাই, ‘নিজে খুঁজে নাও’!
নিজে যদি খুঁজবো, নিজেদেরই বুঝব।
প্রয়োজন নেই, গান শুনবনা।
চারিদিকে আতঙ্ক, বম বম !
ভয়ে আধখানা হয় দিল্লী কা বিল্লি।
লাগেনা কোনো কম্মে।
ওষুধের সাথে মানুষের সহবাস,
প্রশাসন তবু দিয়ে আশ্বাস।
পেনশন দিয়ে ছোট মেয়েটার বিয়ে
মাস্টার গেম আর মাস্টার প্লাস।
ধর্ম নেমেছে পথে রাজনীতি কী ভীষণ,
মানুষ মুখোশে মোড়া, সবাই তো বিভীষণ
একটাই সান্তনা বসে বসে দিন গোনা
না নানা গুনবোনা, দিন।
হেই,
তুমি চুপ করে বসে ভাবো কার কথা, প্রেম?
আরে মোটা মানিব্যাগ দেখে
তোমাকে সাইডে রেখে সোজা দৌড়বে প্রেম।
ইট ,কাঠ, পাথরেতে ঢাকা-
এই শহরেতে হৃদয়ের কারবার ?
লোকসান বারবার !
বেকার যুবকদের সান্তনা একটাই,
চাকরির বদলাতে আছে প্রেম
রুজির ঠিকানাহীন আঁকাবাঁকা পথ ধরে,
আশাকে বাঁচিয়ে রাখা অনেক যত্ন করে,
তারপর একদিন পথচলা সারা হলে-
ঝুলি হাতড়িয়ে দেখা নেই প্রেম।
অনেক অনেক দাম, জীবন’ যে তার নাম,
তারই পথের বাঁকে হারিয়েছে প্রেম।
প্রেম তাই খাঁটি সোনা এ কথা অনেক শোনা,
বসে বসে শুধু বসে মিথ্যার জাল বোনা
নানা না বুনবোনা, জাল।
নীলাঞ্জনা , অ্যালবাম: এই বেশ ভাল আছি (১৯৯৩)
লাল ফিতে সাদা মোজা স্কু-স্কুল ইউনিফর্ম
ন’টার সাইরেন সংকেত; সিলেবাসে মনোযোগ কম
পড়া ফেলে একছুট– ছুটে রাস্তার মোড়ে,
দেখে — সাইরেন মিস করা দোকানীটা দেয় ঘড়িতে দম
এরপর একরাশ কালো কালো ধোঁয়া
স্কুল বাসে করে তার দ্রুত চলে যাওয়া
এর পর বিষণ্ন দিন বাজে না মনোবীণ
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন
হাজার কবিতা বেকার সবইতা।
তার কথা কেউ বলেনা—
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা। ।
সন্ধ্যা ঘনাত যখন পাড়ায় পাড়ায়,
রক থাকত ভরে কিছু বখাটে ছোঁড়ায়.
হিন্দী গানের কলি, সদ্য শেখা গালাগালি
একঘেয়ে হয়ে যেত সময় সময়
তখন উদাস মন ভোলে মনোরঞ্জন
দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনতে চায়
তখন নীলাঞ্জনা প্রেমিকের কল্পনা –
ও মনের গভীরতা জানতে চায়
যখন খোলা চুলে হয়ত মনের ভুলে
তাকাত সে অবহেলে দু’চোখ মেলে ।
অঙ্কের খাতা ভরা থাকত আঁকায়,
তার ছবি তার নাম পাতায় পাতায়
হাজার অনুষ্ঠান, প্রভাত ফেরীর গান
মন দিন গোনে এই দিনের আশায়,
রাত জেগে নাটকের মহড়ায়,
চঞ্চল মন শুধু সে ক্ষণের প্রতীক্ষায়।
রাত্রির আঙ্গিনায়
যদি খোলা জানালায়
একবার একবার যদি সে দাঁড়ায় !
বোঝেনি অবুঝ মন,
নীলাঞ্জনা তখন-
নিজেতে ছিল মগন প্রাণপণ ।

No comments:

Post a Comment